• শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৫ ১৪৩১

  • || ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

দৈনিক জামালপুর

শিলকূপ-সরল মধ্যবর্তী জনগোষ্ঠির বাঁশের সাঁকোতেই ২০ বছর পারাপার

দৈনিক জামালপুর

প্রকাশিত: ১৮ জুন ২০২১  

বাঁশখালী উপজেলার শিলকূপ-সরল ইউনিয়নের সংযোগ জালিয়াখালী নতুন বাজারের পশ্চিমে জলকদর খালের উপর নির্মিত শীলকূপস্থ মনকিচর বড় মাদরাসা সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দারা দীর্ঘ ২০ বছর ধরে দাবি জানিয়েও একটি সেতুর ব্যবস্থা করতে পারেননি। 

 

বাধ্য হয়ে বাঁশের সাঁকো দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নদী পারাপার করতে হচ্ছে তাদের। কাঁদামাটির সড়ক থেকে উঠতে হয় সাঁকোতে। বৃষ্টির মৌসুমে কাদামাটিতে পিচ্ছিল হয়ে পড়ে বাঁশের সাঁকোটি। অনেক সময় সাঁকো দিয়ে পারাপার করতে যাওয়া অনেক শিক্ষার্থী সাঁকো থেকে পড়ে গিয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করেছে।

 

জালিয়াখালী জলকদর খালের ওপর নির্মিত সাঁকোটি দুই ইউনিয়নের মধ্যবর্তী অঞ্চলের বাসিন্দাদের একমাত্র যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম। বিগত কয়েক বছর ধরে জোয়ার ভাঁটার প্রভাবে সাঁকোটি আরো নড়বড়ে হয়ে উঠে। প্রতি বর্ষামৌসুমে চার মাসের জন্য স্থানীয়দের আবার নতুন করে সাঁকো মেরামত করতে হয়। এ সাঁকো দিয়ে শিক্ষার্থীসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ যাতায়াত করেন। আর প্রতি বছর সাঁকোর পেছনে খরচ হয় ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা।

 

স্থানীয়রা জানান, 'বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে সাঁকো দিয়ে স্থানীয়দের পারাপার করা খুবই দুঃর্বিসহ হয়ে পড়ে। সরল ইউনিয়নের মধ্যবর্তী জনগোষ্টির সাথে শিলকূপ-মনকিচরের মধ্যবর্তী জনগোষ্টির যোগাযোগের মাধ্যম সাঁকোটি যোগাযোগের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সাঁকো দিয়ে চাম্বল বাংলাবাজারের সাথে স্থানীয় জেলেদের যাতায়ত খুবই সহজ। প্রতিদিন জেলেদের কাছ থেকে সামুদ্রিক মাছ ক্রয় করার জন্য সরল, জলদী সহ বিভিন্ন এলাকার শত শত ব্যবসায়ীকে সাঁকোর উপর দিয়ে শীলকূপ মনকিচর ও গন্ডামারা যেতে হয়। পাশাপাশি সরল এলাকার বহু শিক্ষার্থী পড়াশুনার জন্য শীলকূপ মনকিচরের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্টানে যায়। মারাত্মক ঝুকি নিয়ে ছোট ছোট বাচ্চাসহ বৃদ্ধদের পারাপার করতে হয় এ সাঁকো দিয়ে। তবে সাঁকোটি জীর্ণদশায় হয়ে যাওয়ার করণে স্থানীয় একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যায়নরত ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাওয়া-আসা খুবই কষ্টদায়ক হয়ে পড়েছে। তারা জনগুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগের মাধ্যম সাঁকোটির জায়গায় স্থায়ীভাবে সেতু নির্মাণের দাবী জানান।'

 

এ ছাড়াও সরল এলাকার বহু শিক্ষার্থী পড়াশুনার জন্য বাঁশখালীর ঐতিহ্যবাহী দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মনকিচর ইসলামিয়া এমদাদুল উলুম মাদরাসা এতিম ও হেফজখানা (বড় মাদরাসা), বঙ্গবন্ধু উচ্চ বিদ্যালয়, পশ্চিম মনকিচর আল হুমায়রা বালিকা মাদরাসা, মনকিচর ইসলামি শিক্ষা সেন্টার ও পশ্চিম মনকিচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রায় সহস্রাধিক শিক্ষার্থীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিনিয়ত সাঁকো দিয়ে যাতায়ত করে থাকে। এ সাঁকোর উপর দিয়ে সরল-মনকিচর ও গন্ডামারা অধিকাংশ মানুষ বাঁশখালী উপজেলা সদর ও চট্টগ্রাম শহরে যাতায়ত করে থাকেন। শিক্ষার্থী ছাড়াও এ সাঁকো দিয়ে পারাপার হওয়া উপজেলার সরল ইউনিয়নের জালিয়াখালী গ্রামের ৬০ ঘর পাড়া, খালাইচ্ছ্যার পাড়া, মিনজিরীতলা এলাকা থেকে  শীলকূপ ইউনিয়নের মনকিচর গ্রাম ও গন্ডামারা ইউনিয়নে যাতায়তকারী প্রায় অর্ধলক্ষাধিক মানুষের যাতায়তে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়। এই সাঁকো দিয়ে সেখানকার প্রায় ৫ গ্রামের অধিবাসীরা প্রতিদিন যাতায়ত করে।

 

এদিকে বর্ষাকাল আসলে সেতু নির্ভর যাতায়তকারী শিক্ষার্থীরা স্কুল মাদরাসায় যাতায়ত বন্ধ করে দেয়। সেতুর উত্তরাংশে সরলের মধ্যবর্তী অঞ্চলের যে অভ্যন্তরিণ সড়ক রয়েছে তাও প্রায়ই কাদামাটির। কোন রকম সেতু পার হতে পারলে শিলকূপ দিয়ে পাকা রাস্তায় উপজেলা সদরের সাথে যাতায়ত সহজ হয়। জলকদর খালের উপর সেতু নির্মাণ না হওয়ায় তারা নিজেরাই বাঁশের সাঁকো বানিয়েছেন। গ্রামগুলোতে যানবাহন প্রবেশ করতে না পারায় কৃষকরা ও স্থানীয় শুঁটকি ব্যবসায়ীরা তাদের আবাদি শস্য হাট-বাজারে সঠিক সময়ে নিতে পারেনা। এছাড়া কোনো বয়স্ক মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়লে, কোন গর্ভবতী রোগীকেও বাঁশের মাচায় করে বাঁশের সাঁকো পার হয়ে দীর্ঘ মেঠোপথ পাড়ি দিয়ে বিভিন্ন যানবাহনে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসতে হয়। একটি সেতুর অভাবে মান্ধাতার আমলের দুর্বিসহ যন্ত্রণা ভোগ করতে হচ্ছে যুগ যুগ ধরে।

 

সাঁকো দিয়ে পারাপারকারী মু. নুরুল আলম বলেন, 'এলাকায় রাতে কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে বা গর্ভবতীদের নিয়ে অনেক সমস্যায় পড়তে হয়। তাই এখানে একটি সেতু নির্মাণের দাবি আমাদের দীর্ঘ দিনের। আমাদের ছেলে মেয়েদের পড়াশুনা করতে গিয়ে সাঁকো দিয়ে পারাপার করতে হয় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, এতে আমরা উদ্বিগ্ন থাকি। বর্ষায় এমনিতে কাঁচা রাস্তা, তার উপর বাঁশের সাঁকোতে পারাপার খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। আমাদের এ দূর্ভোগ লাঘবে এখানে একটি সেতু নির্মাণ হোক এমনটাই দাবি কতৃপক্ষের কাছে।'

 

মনকিচর বড় মাদরাসার পরিচালক মাওলানা আবু বকর বলেন, 'নড়বড়ে বাঁশের সাঁকোটি ভেঙে একটি সেতু নির্মাণ সময়ের দাবী। শিলকূপ-সরল এ দুই ইউনিয়নের মধ্যবর্তী অঞ্চলের জনগোষ্টির জীবনমান ও সহজ যোগাযোগের জন্য সেতু নির্মাণের কোন বিকল্প নাই। সাঁকো দিয়ে পারাপার হতে গিয়ে অনেকেই সাঁকো থেকে পড়ে পঙ্গুত্ব বরণ করেন। দীর্ঘ ২০ বছর পেরিয়ে গেলেও জনদূর্ভোগ লাঘবে সেতুর মুখ দেখেনি এ অঞ্চলের ভুক্তভোগী লোকজন। এ বিষয়ে আমি স্থানীয় সাংসদ আলহাজ্ব মোস্তাফিজুর রহমানের সুদৃষ্টি কামনা করছি।'

 

শিলকূপ ইউনিয়নের ইউপি সদস্য ছিদ্দিক আকবর বাহাদুর বলেন, 'আমাদের এ দুই ইউনিয়ের বাসিন্দাদের যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম মনকিচর-সরল জালিয়াখালী জলকদর খালের উপর নির্মিত সাঁকোটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এই সাঁকোটি ভেঙ্গে নতুন করে একটি সেতু নির্মাণের জন্য বাঁশখালীর স্থানীয় সংসদ সদস্য, উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় সহ বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করা হয়েছে। আশা করছি উর্ধ্বতন কতৃপক্ষ জনদুর্ভোগ দূরীকরণে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।'

 

বাঁশখালী উপজেলা প্রকৌশলী আশরাফুল ইসলাম ভূইয়া দৈনিক অধিকারকে বলেন, 'সাঁকোটি প্রায় ৩শত ফুট উঁচুতে এবং দু'পাশের সড়কের মাটির অবস্থাও ভালো না। প্রায় ১২০ ফুট দূরত্বের কারণে ছোট বাজেটে কাজ হবে না। তাই এলাকার লোকজনদের যোগাযোগের সুবিধার্তে এই সাঁকোটি ভেঙ্গে নতুন করে ব্রীজ নির্মানের জন্য আমি মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছি। আশা করি অদূর ভবিষৎতে এটি বাস্তবায়ন হলে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ  লাঘব হবে। তাছাড়া ইদানিং সাঁকোটি নড়বড়ে হওয়ায় আমি প্রাথমিকভাবে মেরামতের জন্য চলতি বছরের জুলাই মাসের বরাদ্দ থেকে সহযোগীতার জন্য প্রস্তাব করেছি।'

দৈনিক জামালপুর
দৈনিক জামালপুর