• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

দৈনিক জামালপুর

হেফাজত ও অধিকার পরিষদের নামে কলকাঠি নাড়ছে জামায়াত-শিবির!

দৈনিক জামালপুর

প্রকাশিত: ২৭ মার্চ ২০২১  

মামুনুল হক কর্তৃক শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেয়ার পরও ২৬ মার্চ বায়তুল মোকাররমে  লাঠিসোঁটা ও ইট পাথর নিয়ে অবস্থান নেয়া হয়েছিল। এসব নেতাকর্মীদের রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে অনেকে দ্বিধায় থাকলেও পরবর্তীতে দেখা যায় অরাজকতা সৃষ্টিকারী অধিকাংশই জামায়াত শিবিরের সদস্য। শিবির নেতা সালাহউদ্দিন আইয়ুবী ও সাবেক শিবির নেতা শফিকুল ইসলাম মাসুদ গত ১৬ মার্চ থেকে সারাদেশের শিবির ক্যাডারদের ঢাকা, চট্টগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও নারায়ণগঞ্জে সমবেত করতে শুরু করেছিল। সময়মতো পদক্ষেপ গ্রহণ করলে হয়তো সহিংসতার মাত্রা কমানো যেত।

গত দুদিনের সহিংসতায় মামুনুল হকের প্রত্যক্ষ সম্পৃক্ততা থাকার কথা অস্বীকার করেছে হেফাজতে ইসলামের একটি সূত্র। সূত্রের মতে, হেফাজতে ইসলামীতে অনুপ্রবেশকারী জামায়াত শিবিরের নেতাকর্মীরা মামুনুল হকের আহ্বানে সাড়া না দিয়ে অরাজকতা সৃষ্টিতে অংশগ্রহণ করে। তবে আরেকটি সূত্রের মতে, কৌশলে গা বাঁচানোর জন্য মামুনুল হক শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির কথা বলেছিল। কিন্তু সহিংসতা সৃষ্টির পরিকল্পনার সঙ্গে সেও জড়িত।
এদিকে ২৫ মার্চ রাতে ছাত্র অধিকার পরিষদের নুরুল হক নুর ২৬শে মার্চের সকল কর্মসূচি প্রত্যাহার করে লাইভে কোনো বিক্ষোভ না করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু তারেক রহমান, আতাউল্লাহ ও হাবিলদার রজব আলী সহ ছাত্র ও যুব অধিকার পরিষদের বেশিরভাগ নেতাকর্মী এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে। ফেসবুকে লাইভ সম্প্রচারের পর আতাউল্লাহর নির্দেশে জামায়াত শিবিরের সমর্থকরা নুরুকে দালাল হিসেবে অভিহিত করে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ শুরু করে। ২৬ মার্চ সকালে প্রচারিত লাইভ সরিয়ে ফেলা হয়।
সুশীল সমাজ অনেক সময়ই কটাক্ষ করে বলে থাকেন সবকিছুতে কেন জামায়াত শিবির খোঁজা হয়। সবকিছুতে কলকাঠি নাড়ার নেপথ্যে যে জামাত শিবির তারা এটি যখন অনুধাবন করবেন তখন হয়তো দেরি হয়ে যাবে।
কোটা আন্দোলন শুরুর পর রাশেদ খান, ফারূক ও আতাউল্লাহ সহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে শিবির সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ উঠেছিল। তারা জামায়াতে ইসলামীর পেইড অনলাইন এক্টিভিস্ট ছিল এবং যুদ্ধাপরাধীদের নিয়ে তৈরি করা বিভিন্ন ফেসবুক পেইজ থেকে কোটা আন্দোলনের প্রাথমিক প্রচারণা চালানো হয়েছিল - এই মর্মে অনেক তথ্য প্রমাণ সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়েছিল। কিন্তু সেগুলো সক্রিয়ভাবে আমলে নেয়া হয় নি। তবে এ কথা অস্বীকার করা যাবে না যে, নুরুল হক নুর জামায়াত শিবিরের সমর্থক নন, অনেক সময় জামায়াতের বিরোধিতা করার চেষ্টাও করেন। কিন্তু নুরু যে একটি পুতুল মাত্র তা হয়তো তারও জানা নেই।
সারাদেশে ছাত্র, যুব ও গণ অধিকার পরিষদের নামে যেসব নেতাকর্মীদের যুক্ত করা হয়েছে তাদের বেশিরভাগই জামায়াত-শিবির, আনসারুল ইসলাম বা হিজবুত তাহরীরের সদস্য। যেমন: যুব অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক আতাউল্লাহ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার স্বাধীনতা বিরোধী পরিবারের সদস্য। তার ভাই শিবিরের শাখা সভাপতি। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় যুব অধিকার পরিষদের সবচেয়ে বড় ঘাঁটি রয়েছে যা শিবির কেন্দ্রিক। চিহ্নিত ক্যাডার ও নাশকতা মামলার আসামিদের নিয়ে বিজয় দিবস পালন করায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া ছাত্রলীগের সঙ্গে সংঘর্ষও হয়েছিল। এবার ২৬ মার্চ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সহিংসতার নেতৃত্ব দিয়েছে পরিষদ নেতা আশরাফুল হাসান ও জুয়েল মিয়া। এছাড়া ঢাকায় ২৫ মার্চ পুলিশের উপর হামলায় নেতৃত্ব দেয় সাবেক শিবির ক্যাডার জাহিদ হাসান, যে হাটহাজারী মাদ্রাসায় শফি বিরোধী আন্দোলনেও নেতৃত্ব দিয়েছিল। 
বর্তমানে যে অরাজকতা সৃষ্টি করা হয়েছে তা জামায়াত শিবিরের কয়েক বছরের পরিকল্পনার ফসল। এ সময়কালে তারা আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগেও পরিকল্পিতভাবে তাদের একনিষ্ঠ অনুগতদের অনুপ্রবেশ করিয়েছে।‌ গত দুদিনে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের পদধারীদের মধ্যে যারা হেফাজতের প্রতি সমর্থন প্রকাশ করেছে বা আওয়ামী লীগের সমালোচনায় মুখর হয়েছে, তা একটি খণ্ডচিত্র মাত্র। আগামীতে এই অনুপ্রবেশকারীদের মাঠে নামানো হবে সর্বাত্মকভাবে।
অতএব, সরকার ও আওয়ামী লীগের অনুধাবন করা উচিত যে অনেক দেরী হয়ে গেছে। এখনো কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ না করলে চরম মূল্য দিতে হবে।

দৈনিক জামালপুর
দৈনিক জামালপুর