বড় ভাইকে খুন করে ছোট ভাই নিজেই মামলার বাদী

জায়গা-জমির ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে দুই ভাইয়ের মধ্যে মনোমালিন্য দেখা দেয়। সেই ক্ষোভ থেকে বড় ভাইকে হত্যা করে বস্তাবন্দী করে নদীতে মরদেহ ফেলে দেন ছোট ভাই। ঘটনাক্রমে পুলিশ মরদেহটি অজ্ঞাত পরিচয়ে উদ্ধার করে। মরদেহ উদ্ধারের বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানতে পেরে ঘাতক ছোট ভাই নিজেকে আড়াল করতে নিজেই বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেন। এরকম একটি চাঞ্চল্যকর ও ক্লু-লেস হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। 
পুলিশের দীর্ঘ তদন্তে একটি কাটা রশির সূত্র ধরে এ হত্যা মামলার চাঞ্চল্যকর সকল তথ্য উঠে এসেছে। বুধবার সংবাদ সম্মেলন করে এসব তথ্য জানিয়েছেন সিলেট মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) সুহেল রেজা।

এ হত্যা মামলায় তিনজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতারকৃতরা হলেন লক্ষীপুর সদর থানার রাজাপুর গ্রামের মৃত ছিদ্দেক আলীর ছেলে শাহজাহান (৩৯), জালালাবাদ থানার বসন্তরাগাঁও এলাকার মৃত ছোয়াব আলীর ছেলে মো. সিরাজ আলী (৪২) ও মো. জাহাঙ্গীর আলী (২৭)। ভাই হত্যার দায় স্বীকার করে গত মঙ্গলবার অভিযুক্ত ছোট ভাই মো. জাহাঙ্গীর আলী আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।

পুলিশ জানায়, গত ২০ ফেব্রুয়ারি সকালে দক্ষিণ সুরমায় বরইকান্দির টেকনিক্যাল রোডের একটি অটো রাইস মিলের সামনের নদীর তীর থেকে বস্তাবন্দী অবস্থায় একটি অজ্ঞাত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরে পুলিশ জানতে পারে সেই অজ্ঞাত ব্যক্তি জালালাবাদ থানাধীন বস্তন্তরগাঁও এলাকার মৃত ছোয়াব আলীর ছেলে। মরদেহের পরিচয় শনাক্ত করেন তার ছোট ভাই জাহাঙ্গীর আলী। ।

সংবাদ সম্মেলনে এসএমপি উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) সুহেল রেজা জানান, নদী থেকে লাশ উদ্ধারের খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানতে পেরে নিখোঁজ ভাইয়ের সন্ধানে থানা ও ওসমানী মেডিকেলে যান জাহাঙ্গীর আলী। তিনি লাশ শনাক্তের পাশাপাশি থানায় অজ্ঞাতদের আসামি করে গত ২২ ফেব্রুয়ারি হত্যা মামলা দায়ের করেন। তদন্তের এক পর্যায়ে সন্দেহভাজন হিসেবে লক্ষ্মীপুর সদর থানার রাজাপুর গ্রামের মৃত ছিদ্দেক আলীর ছেলে শাহজাহানকে জিজ্ঞাসাবাদ করেও কোনো তথ্য পায়নি পুলিশ। তখন পুলিশের তদন্ত অন্যদিকে মোড় নেয়া শুরু করে। পুলিশ তদন্তে নেমে নিহত সাজ্জাদ আলীর বসতঘরে গিয়ে তার কোনো কাপড় পায়নি। পরবর্তীতে বাসার ছাদের উপরে কাপড় শুকানোর রশির কিছু অংশ সংগ্রহ করে নিহত সাজ্জাদ আলীর হাত-পা বাঁধার রশির সঙ্গে মিল পায়। এরপর পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হত্যা মামলার বাদী জাহাঙ্গীর আলীকে থানায় নিয়ে যায়। এসময় তিনি পুলিশকে প্রাথমিকভাবে নিহত সাজ্জাদ আলীকে হত্যার কথা জানালে তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে হত্যাকাণ্ড ব্যবহৃত দা জালালাবাদ থানাধীন বসন্তরাগাঁও এলাকার কবরস্থান থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। সেই সঙ্গে রশিও উদ্ধার করা হয়।

পুলিশের এ কর্মকর্তা আরো জানান, এই হত্যাকাণ্ডের সঙেগ্ জড়িত নিহত সাজ্জাদ আলীর ভাই জাহাঙ্গীর আলী ও সিরাজ আলী। মূলত নিহত সাজ্জাদ আলী উত্তরাধিকারভাবে প্রাপ্ত জায়গা-জমির ভাগ-বাটোয়ারা করার তাগিদ দেয়ায় তাদের মধ্যে মনোমালিন্যের সৃষ্টি হয়। এর জেরেই হত্যা করা হয় তাকে। ঘটনা আড়াল করার জন্য জাহাঙ্গীর আলী নিজেই বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেন।

উপ-কমিশনার জানান, ভাই হত্যার দায় স্বীকার করে গত মঙ্গলবার আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন জাহাঙ্গীর আলী। এ ঘটনায় পুলিশ এরই মধ্যে ৩ জনকে গ্রেফতার করেছে।