• শনিবার ১৮ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৪ ১৪৩১

  • || ০৯ জ্বিলকদ ১৪৪৫

দৈনিক জামালপুর

নাটোরে আলো ছড়াচ্ছেন নারী ইউএনওরা

দৈনিক জামালপুর

প্রকাশিত: ৯ মার্চ ২০২৩  

নাটোরের ৭ উপজেলায় নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হিসেবে কাজ করছেন নারীরা। উপজেলা প্রশাসনের সবচেয়ে বড় এই পদে নিয়োগ পেয়ে আলো ছড়াচ্ছেন তারা। জাগরণের পতাকা হাতে নিয়ে উন্নয়ন আর অগ্রগতির দিকে এগিয়ে নিচ্ছেন নিজের এলাকাকে। নারীর মমতায় গড়ে তুলেছেন জনবান্ধব প্রশাসন।
উপজেলায় যে নারী ইউএনওরা কর্মরত রয়েছেন তারা সবাই নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে যোগ্যতার স্বাক্ষর রেখে চলছেন। পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তি সব মহলে তাদের গ্রহণযোগ্যতা বাড়িয়েছে। এ পর্যন্ত কোনো ইউএনওর বিরুদ্ধে অনিয়ম বা দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া যায়নি। সব মিলিয়ে এই নারী কর্মকর্তারা সময়ের সঙ্গে আরো উজ্জ্বল হয়ে জ্বলছেন।

দেশের শাসন ব্যবস্থায় সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে প্রশাসন ক্যাডারের ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ১৯৮২ সালের আগ পর্যন্ত এই ক্যাডারে নারীদের সুযোগ ছিল না। সুযোগ পেয়ে মেধাসহ সার্বিক যোগ্যতা দিয়ে সেই চিত্র আমূল বদলে দিয়েছে নারী কর্মকর্তারা। শীর্ষ পর্যায় থেকে তৃণমূল পর্যন্ত তারা নিজেদের প্রতিষ্ঠা করেছেন। তারই উদাহরণ যেনো নাটোর জেলার সবগুলো উপজেলাতেই নারী ইউএনওরা।

গত কয়েক বছর উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে নারীদের পদায়ন বেশি থাকলেও গত ২২ ফেব্রুয়ারিতে সিংড়া উপজেলায় মাহমুদা খাতুনের পদায়নের মাধ্যমে নারী নির্বাহী কর্মকর্তাদের শতভাগ পদায়ন নিশ্চিত হন।

গত ডিসেম্বরে জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে যোগদান করেন মাহমুদা শারমিন নেলী। তিনি জেলার প্রথম নারী অতিরিক্ত পুলিশ সুপার। বর্তমানে সদর সার্কেলের দায়িত্বে রয়েছেন।

জেলার সিভিল সার্জন হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন রোজি আরা বেগম। আর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্ব পালন করছেন বিসিএস ৩১ ব্যাচের রওনক জাহান।

জেলার নিম্ন আদালতের বিচারকার্যেও সরব ভূমিকা নারীদের। আদালতের ১৭ জন বিচারকের মধ্যে ৭ জন নারী বিচারক। এদের মধ্যে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ, ম্যাজিস্ট্রেট পদমর্যাদার বিচারক, লিগ্যাল এইড অফিসার, সহকারী জজ, সিনিয়র সহকারী জজ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন নারীরা।

প্রশাসন, বিচারকার্য বা আইনশৃঙ্খলা কার্যেই নয়, স্থানীয় সরকারের মতো প্রতিষ্ঠানে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হিসেবে নেতৃত্ব দিচ্ছেন নারীরা। বর্তমানে দেশের ছয়টি পৌরসভার মেয়র পদে রয়েছেন নারীরা। এদের মধ্যে নাটোরের দুই পৌরসভার মেয়র নারী।

তারা হলেন নাটোর পৌরসভার মেয়র উমা চৌধুরি জলি ও লালপুরের গোপালপুর পৌরসভার মেয়র রোখসানা মোর্ত্তোজা লিলি৷ অন্যান্য ক্ষেত্রগুলোতে চাপ সহনীয় পর্যায়ে থাকলেও জনসেবার সঙ্গে নিকট সম্পৃক্ত এই পদ অনেক বেশি চ্যালেঞ্জের বলে মনে করেন এই দুই মেয়র।

বিসিএস ৩৪ ব্যাচের ক্যাডার ও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সারমিনা সাত্তার বলেন, ‘ইউএনও হিসেবে কাজটা সবার আগে আমার ওপর অর্পিত দায়িত্ব। এটা আমাকে পালন করতেই হবে। জনসেবার জন্যই যে জনপ্রশাসন, এই সত্যিটাকেই প্রতিষ্ঠিত করতে চাই। আমি নারী বা পুরুষ, এটি আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়। আমার কাজ আমাকে গন্তব্যে নিয়ে যাবে। পুরুষরাই চ্যালেঞ্জ নিতে পারে শুধু, নারীরা পারে না- এমন প্রথা ভাঙ্গার সময় এখন।’

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহমুদা শারমিন নেলী বলেন, ‘যে কোনো চাকরির চেয়ে পুলিশের চাকরি অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং। আর তা যদি নারীর ক্ষেত্রে হয় তবে মাত্রাটা আরো বেশি হয়।’

জেলা সিভিল সার্জন রোজি আরা বেগম বলেন, ‘কর্মক্ষেত্রে পুরুষদের তুলনায় নারীদের অংশগ্রহণ এখনো তুলনামূলক কম। তবে নেতৃত্বগুণ থাকলে একজন নারীই তার সব সহকর্মীদের সুষ্ঠভাবে পরিচালনা করতে পারে। এ ক্ষেত্রে সাহস ও সদিচ্ছা দরকার।’

জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি সাবেক অধ্যক্ষ আব্দুর রাজ্জাক বলেন, প্রশাসনে পুরুষদের চেয়ে নারী কর্মকর্তাদের মধ্যে দুর্নীতির প্রবণতা কম। নারীরা কর্মস্থলে পুরুষের চেয়ে বেশি নিয়মানুবর্তিতা ও শৃঙ্খলার স্বাক্ষর রেখে চলেছেন যা ইতিবাচক। তাদের অংশগ্রহণ বাড়ালে জাতি উপকৃত হবে।

জেলা প্রশাসক (ডিসি) শামীম আহমেদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারী ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে প্রধান পৃষ্ঠপোষকতা করছেন। প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ে নারীর অংশগ্রহণ বাড়ছে। নাটোরের প্রশাসনে থাকা নারী কর্মকর্তারা তাদের কাজে সর্বোচ্চ মেধা ও দক্ষতার স্বাক্ষর রেখে চলেছেন। আমরা এই চর্চাকে উৎসাহিত করছি।

দৈনিক জামালপুর
দৈনিক জামালপুর