• শনিবার ১৮ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৪ ১৪৩১

  • || ০৯ জ্বিলকদ ১৪৪৫

দৈনিক জামালপুর

চাহিদা বাড়ছে মহিষের দইয়ের, আয় ৫০ কোটি টাকা

দৈনিক জামালপুর

প্রকাশিত: ৯ মার্চ ২০২৩  

লক্ষ্মীপুরের চরাঞ্চলে দিনদিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ঐতিহ্যবাহী মহিষের দই। জেলার রামগতি এবং কমলনগর উপজেলায় বিয়েসহ প্রায় সব অনুষ্ঠানে অতিথিদের খাবারের শেষে পাতে তুলে দেওয়া হয় মহিষের দই। গ্রামের ভাষায় যাকে শেষ খানা বলে। মহিষের কাঁচা দুধের টক দই সুস্বাদু হওয়ায় লক্ষ্মীপুরে বিয়েসহ সামাজিক অনুষ্ঠানে অতিথিদের আপ্যায়নে এর বিকল্প নেই।
দূরদূরান্ত থেকে অনেকেই এসব এলাকায় ছুটে আসেন মহিষের দইয়ের জন্য। কেউ বসে খান, কেউ আবার বাসাবাড়ির জন্য কিনে নিয়ে যান। উপকূলীয় এলাকার বিভিন্ন বাজারে মহিষের দই বিক্রি হচ্ছে ব্যাপকহারে। বিশেষ করে সদর উপজেলার মজুচৌধুরীর হাট, কমলনগর উপজেলার তোরাবগঞ্জ, মুন্সিরহাট, মতিরহাট, করইতেলা, লরেন্স, হাজিরহাট, লুধুয়া, চৌধুরী বাজার, করুণানগর, রামগতির জমিদার হাট, আলেকজান্ডার, বিবিরহাট, রামগতি বাজার এলাকাসহ অন্তত ৪০টি হাটের শতাধিক দোকানে বিক্রি হচ্ছে মহিষের কাঁচা দই। মহিষের দইর ব্যবসার সঙ্গে জড়িত রামগতি-কমলনগরের কয়েকশ মানুষ। তাদের জীবিকার একমাত্র উপায় মহিষের দই।

জানা গেছে, এ এলাকায় দৈনিক ১০ থেকে ১২ টনের বেশি মহিষের দুধের দই তৈরি হয়। বছরে প্রায় সাড়ে তিন হাজার টন মহিষের দই এ জেলায় বেচাকেনা হয়। জেলার মেঘনা নদীর মাঝে জেগে ওঠা বিচ্ছিন্ন চরে ব্যাপক হারে মহিষের বাথান (পাল) রয়েছে। সদর উপজেলার চর রমনী মোহন, চর মেঘা, রায়পুর উপজেলার হাজীগঞ্জ, টুনির চর, চর গাসিয়া, রামগতি উপজেলার চর আবদুল্লাহ, তেলিরচর, মৌলভীর চর, চর মুজাম, চর আলেকজান্ডার, চর বাদাম, কমলনগর উপজেলার চর কাঁকড়া, মাইজের চর, চর শামছুদ্দিন এলাকায় মহিষ পালন করা হয়। সেখান থেকেই দই তৈরির প্রধান উপকরণ দুধ সংগ্রহ করা হচ্ছে।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, রামগতি উপজেলার বিভিন্ন দ্বীপ চরে ছয় হাজার ৩০০, কমলনগরে ছয় হাজার, সদর উপজেলায় পাঁচ হাজার ৭০০ এবং রায়পুরে এক হাজার ২০০ সহ জেলায় মোট ২০ হাজার মহিষ রয়েছে।

মহিষের বাথানের মালিক হোসেন মিয়া, মোসলেহ উদ্দিন, কাদের মিয়া ও নুরুল আমিন জানান, মেঘনার নদীর বিভিন্ন চরে তারা দেশীয় জাতের মহিষ পালন করেন। একেকটি মহিষ দৈনিক পাঁচ থেকে সাত কেজি করে দুধ দেয়। সেগুলো দইয়ের ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করেন তারা। প্রতি কেজি দুধের বর্তমান বাজার মূল্য ৫০ থেকে ৬০ টাকা। প্রতিদিন সকালে বিভিন্ন চরে গিয়ে মহিষের দুধ সংগ্রহ করেন ব্যবসায়ীরা। পরে সেগুলো ট্রলারযোগে নিয়ে এসে পৌঁছে দেন দধির দোকানগুলোতে।

কমনগরের চর শামসুদ্দিন এলাকার মহিষ বাথানের মালিক ও দই বিক্রেতা রফিকুল ইসলাম জানান, চরে তার ১০০ মহিষ আছে। ৬০ থেকে ৬৫টি মহিষ থেকে দুধ সংগ্রহ করেন তিনি। দুধ দিয়ে নিজেই দই তৈরি করেন। সেগুলো পাইকারি এবং খুচরা বিক্রি করেন।

দুধ থেকে দই তৈরির প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি জানান, মহিষের কাঁচা দুধ থেকেই দই তৈরি করা হয়। দুধ সংগ্রহ করার পর প্রথমে পরিষ্কার মাটির পাত্রে পরিমাণ মতো দুধ দেওয়া হয়। এরপর পাত্রের মুখে কাগজ দিয়ে বেশ কয়েকটি চটের বস্তাচাপা দিয়ে রাখা হয়। টানা ১২ থেকে ১৫ ঘণ্টা পর্যন্ত বস্তার নিচে চাপা থাকে, এতে কোনো বাতাস বের হতে বা ঢুকতে পারে না। এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দুধ জমাট বেধে কাঁচা দইয়ে পরিণত হয়। প্রতিকেজি দুধ থেকে প্রায় ৯০০ গ্রাম দই তৈরি হয়। সাধারণত এসব দই বসানোর সময় দুধের সঙ্গে চিনি মেশানো হয় না। তবে পরিবেশনের সময় দইয়ের সঙ্গে চিনি বা মিষ্টি দেওয়া হয়। প্রতিদিন অন্তত দেড় থেকে দুই মণ দই বিক্রি করেন তিনি।

লক্ষ্মীপুর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডা. জোবায়ের হোসেন জানান, লক্ষ্মীপুরের মহিষের দই অত্যন্ত পুষ্টিকর এবং সুস্বাদু। জেলায় প্রতিদিন ১০ টনের বেশি মহিষের দই উৎপাদন হচ্ছে। বছরে প্রায় ৫০ কোটি টাকা আয় হচ্ছে মহিষের দই বিক্রি করে। দইয়ের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় মহিষ ও দুধের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ খামারিদের নানাভাবে সহযোগিতা করছে।

দৈনিক জামালপুর
দৈনিক জামালপুর