• রোববার ১৯ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৫ ১৪৩১

  • || ১০ জ্বিলকদ ১৪৪৫

দৈনিক জামালপুর

ফুটবল মাঠ কাঁপাচ্ছেন মিতু-তৃষ্ণা

দৈনিক জামালপুর

প্রকাশিত: ২১ জুলাই ২০২৩  

পঞ্চগড়ের দুই নারী ফুটবলার মিতু ও তৃষ্ণা। তারা এখন খেলছেন জাতীয় দলে৷ তারা দুই বান্ধবী ও সতীর্থ পাথরাজ সরকারি কলেজ মাঠে ফুটবল খেলার অনুশীলন করেছিলেন। বাধার গণ্ডি পেরিয়ে গ্রামের মাঠ থেকে এখন আন্তর্জাতিক ফুটবল মাঠে খেলছেন তারা।

এ খেলার মধ্য দিয়ে নিজেদের জাতীয় নারী ফুটবলার হিসেবে অবস্থান করে নিয়েছেন, তেমনি উত্তরের জেলা পঞ্চগড়কেও চিনিয়ে দিচ্ছেন বিভিন্নভাবে। খেলার সুবাদে ঢাকায় থাকেন তারা। সম্প্রতি বাড়িতে আসলে কথা হয় এ প্রতিবেদকের সঙ্গে।


জানা গেছে, তৃষ্ণা ও মিতুর বাড়ি জেলার বোদা উপজেলায়। বোদা পাইলট বালিকা স্কুল অ্যান্ড কলেজের এবার এসএসসি পরীক্ষার্থী তারা। মিতু বোদা পৌরসভার কলেজপাড়া এলাকার রব্বানীর মেয়ে ও তৃষ্ণা রানী রায় একই পৌরসভার ভাসাইনগর এলাকার উমের রায়ের মেয়ে।


ছোটবেলা থেকেই তাদের খুব খেলাধুলার আগ্রহ ছিল। খেলতে ঘর থেকে বাইরে বের হলেও মানুষজনের মুখ থেকে শুনতে হতো নানা কটু কথা। মেয়েদের ফুটবল খেলে কী হবে? কী লাভ? এমন সব সমালোচনা সহ্য করেও এখন হয়ে উঠেছেন এ জেলার নারী ফুটবলার। এটা সম্ভব হয়েছে বোদা ফুটবল একাডেমির পরিচালক মোফাজ্জল হোসেন বিপুলের মাধ্যমে। সমাজের নিন্দুকদের কঠোর সমালোচনা সহ্য করেই নারী ফুটবলার হিসেবে গড়ে তুলেছেন তৃষ্ণা-মিতুকে।


তৃষ্ণা ও মিতু অনূর্ধ্ব-১৫ জাতীয় দলের খেলার সুযোগ পান ২০২২ সালে। সে বছর ২৮ অক্টোবর বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বিএফএফ) মৌখিকভাবে তাদেরকে ট্রায়ালের জন্য ঢাকায় ডাকা হলে ২৬-২৭ অক্টোবর ট্রায়ালে উত্তীর্ণ হন তারা। এরপর অনূর্ধ্ব ১৭ জাতীয় দলে ফুটবল খেলেন তারা। জাতীয় দল থেকেই দেশের মাটিতে ভারত, নেপাল, ভুটান ও রাশিয়ার বিপক্ষে খেলেন তারা। সেখানে দুটিতে রানার্স-আপ অর্জন করেন। এরপর দেশের বাইরে সিঙ্গাপুরে খেলে এ নারী দুই ফুটবলার।


একাডেমির খেলোয়াড়েরা বর্তমানে দেশের বিভিন্ন ক্লাব ও বিকেএসপিতে অবস্থান করছেন। তবে বালক খেলোয়াড় দলের চেয়ে প্রমীলা দল নিয়ে বেশি চমক সৃষ্টি হয়েছে। জেএফএ কাপসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এ একাডেমির প্রমীলা খেলা করছেন। বিপুলের এই একাডেমিতে বর্তমানে বালক ও প্রমীলা মিলে প্রায় দুই শতাধিক খেলোয়াড় রয়েছেন। একাডেমি থেকে তারা জাতীয়-স্থানীয়ভাবে ব্যাপক সুনাম অর্জন করছেন।

নুশরাত জাহান মিতু বলেন, ছোটবেলা থেকেই খেলার প্রতি খুব ঝোঁক ছিল। কিন্তু মেয়ে বলে অনেক কটু কথা শুনতে হয়েছে। তারপরেও সেসব সহ্য করে বিপুল স্যারের মাধ্যমে আজকে গ্রামের মাঠ থেকে জাতীয় অঙ্গনে খেলছি। ভারত, নেপাল, ভুটান ও রাশিয়ার বিপক্ষে দেশের মাটিতে খেলার সুযোগ হয়েছে। সিঙ্গাপুরেও খেলেছি আমরা। এর সব কিছু সম্ভব হয়েছে আমাদের প্রশিক্ষক, স্কুলের শিক্ষকদের উৎসাহের জন্য।


তৃষ্ণা রানী রায় বলেন, ফুটবল খেলাটা খুব শৌখিন খেলা। আমার খুব স্বপ্ন ছিল যে, আমি একজন ভালো খেলোয়ার হব। সে স্বপ্ন ধরেই আমি বোদা ফুটবল একাডেমিতে আসলে বিপুল স্যার আমাকে জায়গা করে দেন। আমি জাতীয় দল থেকে ভারত, নেপাল, ভুটান ও রাশিয়ার বিরুদ্ধে খেলেছি ও দেশের বাইরে সিঙ্গাপুরেও খেলেছি। আমার পরিবার, স্কুলের শিক্ষকরা সহযোগিতা করেছিল বলেই আমি এ পর্যন্ত আসতে পেরেছি।


নুসরাত জাহান মিতুর বাবা রব্বানী বলেন, ছোট থেকেই ফুটবল খেলার প্রতি আগ্রহ ছিল মেয়ের। জাতীয় দলে খেলার স্বপ্ন ছিল মিতুর। তাই পরিবার থেকে সামর্থ অনুযায়ী সহযোগিতা করেছি। আজ মেয়ের স্বপ্ন পূরণ হয়েছে।


বোদা পাইলট বালিকা স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রধান শিক্ষক রবিউল আলম সাবুল বলেন, মেয়ে দুটি আমার বিদ্যালয়ের ছাত্রী। আজ মিতু ও তৃষ্ণা জাতীয় দল থেকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে খেলছে। তাদের এ অর্জন আমার প্রতিষ্ঠানের জন্য অনেক সুনামের। আমরা চাই মিতু-তৃষ্ণার মতো আমাদের জেলার আরো খেলোয়াড় জাতীয় দলে খেলার সুযোগ পাক।


প্রশিক্ষক মোফাজ্জ্বল হোসেন বিপুল বলেন, বোদা ফুটবল একাডেমি গড়ে তুলি ২০১৬ সালে। এখান থেকে আমাদের যাত্রা শুরু। আজ তৃষ্ণা ও মিতু জাতীয় পর্যায়ে ফুটবল খেলছে। তাদের দেখে স্থানীয় অনেক মেয়েরা ফুটবল খেলতে একাডেমিতে ভর্তি হয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। তাদের এগিয়ে নিতে অভিভাবক ও শিক্ষকদের সহযোগিতা ছিল। তারা সহযোগিতা না করলে আমি তাদের এ জায়গায় পৌঁছে দিতে পারতাম না।


জেলা ক্রীড়া কর্মকর্তা গৌতম কুমার সরকার বলেন, আসলে তৃষ্ণা ও মিতু তৃণমূল এলাকা বোদা থেকে উঠে এসেছে সত্যিই এটা গর্বের। এটা শুধু পঞ্চগড় জেলা নয়, গোটা বাংলাদেশের জন্য সুনাম অর্জন করেছে। তারা দেশের বাইরেও খেলেছে। ভবিষ্যতে আরো আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে খেলবে এমনটাই প্রত্যাশা করি।

দৈনিক জামালপুর
দৈনিক জামালপুর