• বুধবার ১৫ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৩১ ১৪৩১

  • || ০৬ জ্বিলকদ ১৪৪৫

দৈনিক জামালপুর

রাজধানীর বাজারে জুড়ীর বাতাবি লেবু

দৈনিক জামালপুর

প্রকাশিত: ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩  

মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার গোয়ালবাড়ী ইউপির উঁচু নিচু টিলা ভূমি বেষ্টিত গ্রামগুলোতে চাষ হয় বাতাবি লেবু। বর্তমানে চলছে বাতাবি লেবু হার্বেস্টিং এর মৌসুম। প্রতিটা বাগানে জুুম পড়েছে গাছ থেকে বাতাবি লেবু পাড়ার বা হার্বেস্টিং করার। প্রতি বছরের মতো এবারও  বাতাবি লেবু যাচ্ছে সিলেট, ঢাকা ও চট্টগ্রামে। সময়ের পরিক্রমায় সারাদেশ ব্যাপী এ ফলের চাহিদা বেড়েছে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এবছর ৬৬ হেক্টর জমিতে বাতাবি লেবুর চাষ হয়েছে। ফলনের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে ৭২০ টন। গোয়ালবাড়ী ইউপির কচুরগুল, লালছড়া, রুপাছড়া, হায়াছড়া, শুকনাছড়া, জড়িছড়া, লাঠিটিলা ও ডোমাবাড়ী রয়েছে ছোট বড় প্রায় শতাধিক বাতাবি লেবুর (জাম্বুরা) বাগান।


সরেজমিন দেখা যায়, জুড়ী লাঠিটিলা সড়কের কালামাটিতে বাতাবি লেবুগুলো বস্তাবন্দি করে একটি বড় ট্রাকে তোলা হচ্ছে। বিভিন্ন এলাকা থেকে ছোট পিকআপে কালামাটিতে নিয়ে আসছে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। এখান থেকে বড় ট্রাকে করে নিয়ে যাওয়া হবে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর কাঁচা বাজারে।

এক সময় সিলেটের বাজারে অবহেলিত ছিল জুড়ীর বাতাবি লেবু। বিক্রি নিয়ে ছিল শঙ্কা! কালের বিবর্তনে এখন ঢাকা, চট্টগ্রামসহ প্রায় সারাদেশে বিখ্যাত হয়ে উঠেছে জুড়ীর অবহেলিত ফল। টক, মিষ্টি ও কিছুটা তিতা আছে এই ফলে একে স্থানীয়রা তার নাম রেখেছে (মাতু জামির) আবার কেউ কেউ (জাম্বুরা) নামে চিনে। সারাদেশব্যাপী চাহিদা থাকায় এখন মৌলভীবাজারের অন্যতম মূল্যবান হয়ে উঠেছে বাতাবিলেবু। 


মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলা ও সিলেটের জৈন্তা এলাকায় আবাদ হয় বাতাবি লেবু। জুড়ীতে এসবের বাম্পার ফলন হয় বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। স্থানীয় কৃষক ও ব্যবসায়ীদের দেওয়া তথ্য অনুসারে বছরে আনুমানিক শতাধিক ট্রাক জাম্বুরা জুড়িতে আবাদ হয়। এক সময়ের অবহেলিত ফল এখন জুড়ীর সম্ভাবনাময়। স্থানীয় বাজারে মৌসুমে এই ফলের তেমন চাহিদা না থাকলেও রয়েছে শহরে।

জুড়ীতে ২০২১ সালে গবেষণা করে বাতাবি লেবুর আরো দুটি জাত উদ্ভাবন হয়েছে, জুড়ী ১ ও জুড়ী ২ নামে। এই জাতের জাম্বুরা সাইজে অনেক বড় হয় এবং খেতে খুব সুস্বাদু। 

শুকনাছড়া, লালছড়া ও জড়িছড়া এলাকার স্থানীয় একাধিক কৃষকের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, এক সময় বাতাবি লেবুর তেমন চাহিদা ছিল না শুধু সিলেট বিভাগে বিক্রি করা হতো। চাহিদা না থাকায় আমরা বিক্রি নিয়ে চিন্তিত থাকতাম। এখন সরাসরি রাজধানী ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় শহরে বিক্রি করা হয়। এখন এই ফলের অনেক মূল্যায়ন বেড়েছে, মানুষের চাহিদা বেড়েছে, তাই বিক্রি নিয়ে এখন কোনো অসুবিধা হয় না। তবে চাষিরা বিভিন্ন রোগবালাই ও কাঠবিড়ালির উপদ্রবের কারণে অতিষ্ঠ। 


স্থানীয় বাতাবি লেবু ব্যবসায়ী কালা মিয়া ও হেলাল উদ্দিন জানান, এই এলাকায় তাদের বেশ কয়েকটা বাগান বছর চুক্তি অগ্রিম কেনা। সে সব বাগান থেকে সময় মতো লেবার দিয়ে জাম্বুরা হার্বেস্টিং করে মেইন সড়কের সাইটে নিয়ে আসেন। এর পরে জাম্বুরার আকারভেদে বাছাই করে বস্তাবন্দী করে বড় ট্রাক যোগে রাজধানী যাত্রাবাড়ীর কাচা বাজারে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে আড়তদার বস্তা আকারে পাইকারি বিক্রি করেন। 

ঢাকা যাত্রাবাড়ীর ফল ব্যাবসায়ী মারুফ আহমদ জানান, এখানে জুড়ীর উপজেলার বাতাবি লেবু ‘অমৃত’ খুব বেশি চাহিদা। ক্রেতারা অনেক বেশি পছন্দ করে তাই দ্রুত বিক্রি করতে পারি। এগুলোর স্বাদ বেশি এবং কোনো কেমিক্যাল না থাকায় ক্রেতাদের চাহিদা বেশি। 

জুড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকতা মো. মাহমুদুল আলম খান বলেন, সারাদেশে বাতাবি লেবুর চাহিদা থাকলেও সঠিক জাতের বাতাবি লেবু বাজারে পাওয়া যায় না। দিন দিন বাতাবি লেবুর চাহিদা বৃদ্ধির কারণে জুড়ী কৃষি অফিস বাতাবি লেবু-১ ও ২ এবং বারি বাতাবি লেবু ৫ এর চারা বিতরণ করা হয়েছে।

তিনি বলেন, এছাড়া চারা গাছ পরিচর্চার জন্য ৬ ধরণের সার, চুন, দুই ধরণের কীটনাশক, এক ধরণের ছত্রাক নাশক, স্প্রে মেশিন, সিকেচার, গ্রাফটিং নাইফ এবং মালচিং পেপার বিতরণ করা হয়েছে।

দৈনিক জামালপুর
দৈনিক জামালপুর