স্ত্রীকে শ্বাসরোধে হত্যা, স্বামীর আমৃত্যু কারাদণ্ড

রংপুরের পীরগাছা উপজেলায় যৌতুকের দাবিতে স্ত্রী আয়শা বেগম বিউটিকে শ্বাসরোধ করে হত্যার দায়ে স্বামী জসিম উদ্দিন ভুট্টোকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এছাড়া লাশ গুমের অভিযোগে ভুট্টুর বাবা বেলাল হোসেন, মা কুলসুম বেগম, মামাতো ভাই বিটু সরকার বিটু, আবু সাইদ, নুরুদ্দিন ও খাজির উদ্দিনকে ৭ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। দণ্ডপ্রাপ্তদের বাড়ি পীরগাছা উপজেলার কিশামত ছাওলা এলাকায়। মামলার অপর আসামি বিলকিস বেগমের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় আদালত তাকে বেকসুর খালাস প্রদান করেন। বুধবার দুপুরে রংপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালত (২)-এর বিচারক সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মো. রোকনুজ্জামান আসামিদের উপস্থিতিতে এ রায় প্রদান করেন। এসব তথ্য নিশ্চিত করেন রংপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতের সরকারি কৌঁসুলি মো. জাহাঙ্গীর হোসেন তুহিন। আদালত ও মামলার বিবরণে জানা যায়, রংপুরের পীরগাছা উপজেলার মমিন বাজার এলাকার আবু বক্কর সিদ্দিকের বড় মেয়ে আয়েশা বেগম বিউটির ১২ বছর আগে পার্শ্ববর্তী কিশামত ছাওলা গ্রামের বেলাল হোসেনের ছেলে জসিম উদ্দিন ওরফে ভুট্টুর সঙ্গে বিয়ে হয়। বিয়ের সময় নগদ ৪০ হাজার টাকা এবং দেড় ভরি সোনার গহনা, একটি নতুন বাইসাইকেল ও একটি বাছুর গরু জামাতা জসিম উদ্দিনকে দেওয়া করা হয়। ১২ বছরের সংসারে এই দম্পতির ঘরে জন্ম নেয় দুই কন্যা জেসমিন ও জুই। এর পরেও মাঝে মাঝে আসামি জসিম উদ্দিন যৌতুক দাবি করে আসছিলেন। যৌতুক দিতে অস্বীকার করলে তাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হয়। এর মধ্যে ২০১৮ সালের ৩১ মে আসামি কৌশলে তার দুই মেয়ে জেসমিন ও জুইকে নানার বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। পরদিন বিউটিকে বাবার বাড়ি থেকে মোটরসাইকেল নিয়ে আসার জন্য চাপ সৃষ্টি করে। এ নিয়ে কথা কাটাকাটি হলে একপর্যায়ে তাকে অমানুষিক নির্যাতন করে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। পুরো ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার জন্য বিউটির লাশ গোপনে তাদের বাড়ির অদূরে একটি পাটখেতে পুঁতে রাখে। দুর্গন্ধ বের হলে আশপাশের লোকজন সেখানে গিয়ে একটি লাশ মাটিচাপা দেওয়া অবস্থায় দেখতে পান। পরে পীরগাছা পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পাটখেত থেকে বিউটি বেগমের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। এ ঘটনায় নিহত বিউটি বেগমের বাবা আবু বক্কর সিদ্দিক বাদী হয়ে আসামি জসিম উদ্দিনসহ ৭ জনের নামে পীরগাছা থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পীরগাছা থানার উপ-পরিদর্শক আমিনুল ইসলাম তদন্ত শেষে ওই বছরের ৩১ ডিসেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। মামলার ২৭ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে আসামিদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় রংপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতের বিচারক এ রায় প্রদান করেন। সরকার পক্ষের বিশেষ পিপি জাহাঙ্গীর হোসেন তুহিন বলেন, যৌতুক না দেওয়ায় হত্যাকাণ্ডটি ঘটায়। সে কারণে স্বামীর আমৃত্যু কারাদণ্ড এবং তথ্য গোপন করায় ৫ জনকে ৭ বছর কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। এ রায়ে তারা সন্তুষ্টি প্রকাশ করছেন। অপরদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী আব্দুল হক প্রামাণিক জানান, তারা ন্যায্য বিচার পাননি। এ রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল দায়ের করবেন।