• শুক্রবার ১৭ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৩ ১৪৩১

  • || ০৮ জ্বিলকদ ১৪৪৫

দৈনিক জামালপুর

পাউবোর উদাসীনতায় কৃষকের শত বিঘা ফসল নষ্ট

দৈনিক জামালপুর

প্রকাশিত: ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪  

পাবনার সাঁথিয়ায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) সেচ খালের রেগুলেটরের একটি পাল্লার অভাবে পানি ঢুকে শতাধিক বিঘা জমির পেঁয়াজ, ঢেড়শ, ভুট্টা ও গমক্ষেত নষ্ট হয়েছে। আরো শতাধিক বিঘা জমি হুমকির মুখে রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত জমি থেকে অর্ধেক ফসলও আসবে না বলে জানিয়েছেন কৃষকরা। ক্ষেতুপাড়া ইউনিয়নের ক্ষেতুপাড়া, গাধুলি, বালিয়াকান্দি প্রভৃতি গ্রামের চাষিরা জানান, গাধুলি গ্রামে পানি উন্নয়ন বোর্ডের এস-১৯ সেচ ক্যানেল থেকে সংযুক্ত হয়ে টি-৭ খাল তাদের ক্ষেতুপাড়া মাঠ পর্যন্ত গেছে। টি-৭ খালটি দীর্ঘ বছর ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় ছিল। এ খাল দিয়ে পানি সরবরাহ হতো না। কিছুদিন আগে এ খালটি ঠিকাদারের মাধ্যমে পাউবো কর্তৃপক্ষ যেনতেনভাবে সংস্কার করে। তবে, এ খালের মাথায় স্থাপিত রেগুলেটরটির ভাঙা পাল্লা (উপরের অংশ) মেরামত করা হয়নি। এতে টি-৭ খাল দিয়ে ক্ষেতুপাড়া, গাধুলি, বালিয়াকান্দি গ্রামের ফসলি ক্ষেতে পানি ঢুকতে শুরু হয়। খালটির শেষ প্রান্তও সংস্কার করা হয়নি। ফলে খাল উপচে পানি আশেপাশের উঠতি ফসলি জমিতে ঢুকে পড়েছে। এতে অনেক জমির ফসল মারাত্মক ক্ষতির শিকার হয়েছে। চাষিরা জানান, তাদের মাঠের মধ্য দিয়ে যাওয়া খালে এখন কোনো পানির প্রয়োজন নেই। তবে পাউবো কর্মকর্তাদের দেখভালের অভাবে এবং উদাসীনতায় তারা ক্ষতির শিকার হলেন। তারা আরো জানান, বড় খাল থেকে তাদের মাঠের খালে পানি আসা বা বন্ধ করার জন্যই তো রেগুলেটর দেওয়া হয়েছে। সেই রেগুলেরটরের পাল্লা মেরামত না করে পাউবো শুধু খালটি সংস্কার করেছে। একটি পাল্লা মেরামত করলে তারা এমন ক্ষতির শিকার হতেন না। সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, ক্ষেতুপাড়ার গাধুলি নামক স্থান থেকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের এস-১৯ সেচ ক্যানেল এর সঙ্গে টি-৭ খাল সংযুক্ত। এই টি-৭ এর রেগুলেরটির পাল্লা (উপরের অংশ) ভাঙা। স্লুইসগেট অরক্ষিত থাকায় ঐ ক্যানেল দিয়ে পানি ঢুকছে। একদিক দিয়ে পানি অপচয় হচ্ছে অন্যদিকে চাষির ফসল নষ্ট হচ্ছে। স্থানীয় কৃষকরা তাদের সাধ্যমতো মাটি ও বালুর বস্তা খালের পানি ঢোকা বন্ধের চেষ্টা করছেন। ক্ষেতুপাড়া গ্রামের কৃষক আব্দুল মালেক জানান, তাদের মাঠের মধ্য দিয়ে যাওয়া খালটি কেউ দেখভাল করেনি। ক্যানেল (খাল) দিয়ে পানি ঢুকে তার চোখের সামনে তার দুই বিঘা জমির পেঁয়াজ ক্ষেত নষ্ট হয়েছে। পেঁয়াজের ক্ষেতে অতিরিক্ত পানি ঢোকায় তার জমির মাটি এখন কাদা মাটিতে পরিণত হয়েছে। তিনি আরো জানান, লিজ নেয়া জমিতে এক লাখ টাকা ঋণ নিয়ে পেঁয়াজের আবাদ করেছেন। স্বাভাবিক ফলন হিসেবে তার অন্তত ১২০ মণ পেঁয়াজ পাওয়ার আশা ছিল। কিন্তু এখন ক্ষেতের যে অবস্থা তাতে অর্ধেক ফলনও পাওয়া যাবে না। তার অন্তত দুই লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানান। একই এলাকার চাষি ফজর আলী জানান, আড়াই বিঘা জমিতে পেঁয়াজ আবাদ করেছেন। তিনি অন্তত ১৫০ মণ পেঁয়াজ পাওয়ার আশা করেছিলেন। কিন্তু তার ক্ষেত পানিতে স্যাঁতস্যাঁতে হয়ে যাওয়ায় অর্ধেক ফলন পাবেন কি-না সন্দেহ। আরেক চাষি মাহালম জানান, তিনি প্রায় এক বিঘা জমিতে ঢেড়শ আবাদ করেছেন। কিন্তু পানি চুইয়ে তার ক্ষেতের মাটি অতিরিক্ত ভিজে গেছে। এতে গাছ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। চাষি শাহজাহান আলী জানান, আড়াই বিঘা জমিতে পেঁয়াজ আবাদ করেছেন। তিনি ১২ হাজার টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বীজ কিনেছিলেন। এত খরচ করা ক্ষেতের ফসল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। পাউবো দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে তারা আরো ক্ষতির শিকার হবেন। এ রকম বহু চাষি তাদের ক্ষতির কথা জানিয়েছেন। সরিষা, গম, ভুট্টা আবাদ করা বেশকিছু চাষি জানান, ফসলি জমির জন্য তাদের রাতের ঘুম নেই। তারা পালা করে রাত জেগে জমি পাহারা দিচ্ছেন। যে জমিতে পানি ঢুকছে সেখানে বাঁধ দিয়ে তারা পানি আটকানোর চেষ্টা করছেন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর পাবনার প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, এখন মাটি যদি ভিজে জমাটবদ্ধ হয়ে যায় তাহলে রবিশস্যের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে। পানি উন্নয়ন বোর্ড পাবনার নির্বাহী প্রকৌশলী (যান্ত্রিক পওর বিভাগ) নওফেল উদ্দিন আহমেদ জানান, তারা বিষয়টি জেনেছেন। রেগুলেটরটির ওপরের একটি অংশ না থাকায় পানি ঢুকছে। এটি কেউ আগে জানালে খাল সংস্কারে টেন্ডারের সঙ্গেই সম্পন্ন করা যেত। এখন খুব শিগগিরই মেরামতের ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। এতে চাষিরা ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাবেন বলে আশা করছেন তিনি।

দৈনিক জামালপুর
দৈনিক জামালপুর