• শুক্রবার ১৭ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৩ ১৪৩১

  • || ০৮ জ্বিলকদ ১৪৪৫

দৈনিক জামালপুর

৬৫ কোটি টাকার সেতুতে উঠতে হয় মই দিয়ে

দৈনিক জামালপুর

প্রকাশিত: ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪  

দুই ধাপে ৬৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সেতুতে উঠার জন্য প্রয়োজন হচ্ছে মই। দৃশ্যটি বেমানান হলেও চাঁদপুরে ভাষাবীর এম এ ওয়াদুদ সেতুর বর্তমান চিত্র এটি। সেতু দিয়ে এখন সিএনজি অটোরিকশা, অটো বাইক যাত্রী পারপার করলেও সেতুর ফরিদগঞ্জ অংশের শেষ ভায়াডাক্টটির ঢালাইয়ের কাজ সম্পন্ন না হওয়ায় সেতু পারাপারে যাত্রীদের মই ব্যবহার করতে হচ্ছে। সরেজমিনে দেখা যায়, সেতুর চাঁদপুর সদরের অংশের ভায়াডাক্টের কাজ শেষে সংযোগ সড়ক সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু রেলিংয়ের কাজ হয়নি। অপরদিকে, ফরিদগঞ্জ অংশে শেষ ভায়াডাক্টটির রড বাঁধাই হলেও ঢালাই না হওয়ায় সড়কের সঙ্গে সংযোগ হয়নি। ফলে সেতুটি ব্যবহার করা যাত্রীদের মই বেয়ে সেতুতে উঠে গাড়িতে চড়তে হচ্ছে। জানা যায়, ২০১৭ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী ও বর্তমান সমাজকল্যাণ মন্ত্রী ড. দিপু মনি এমপি এবং চাঁদপুর-৪ ফরিদগঞ্জ আসনের সাবেক এমপি মরহুম ড. মোহাম্মদ শামছুল হক ভূঁইয়া যৌথভাবে ডাকাতিয়া নদীর ওপর ২৭৪.২০ মিটার এ সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। গত বছর সেতুটির চাঁদপুর সদর অংশের কাজ শেষ হলে উদ্বোধনের পর সেতু দিয়ে পারাপার শুরু করেন ডাকাতিয়া নদীর দুই পাড়ের যাত্রীরা। সিএনজি, অটোরিকশা ও মোটরসাইকেল নিয়ে সেতুর এক পাড়ের যাত্রীরা ওপরে উঠলেও ফরিদগঞ্জ অংশ থেকে মই ছাড়া সেতুতে উঠা যায় না। ৩৬ কোটি ৮৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ঢাকার প্রথম শ্রেণির ঠিকাদার নবারণ টেড্রার্স লিমিটেড নদীর উপরে সেতুটির মূলকাজ সম্পন্ন করে। পরে ২০২০-২১ অর্থবছরে দ্বিতীয় ধাপের কাজের জন্য ২৮ কোটি ৯৫ লাখ ৮২ হাজার ৮৫৪ টাকা ব্যয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রিজভী কনস্ট্রাকশন ও ইউনুছ আল মামুন (জেবি) যৌথভাবে কাজ শুরু করে। নির্মাণকাজের মেয়াদ ডিসেম্বর ২০২১ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও পরবর্তীতে মেয়াদ বৃদ্ধি করে তা জুন-২০২৩ পর্যন্ত করা হয়। পরে তা ডিসেম্বর পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হলেও অদ্যাবধি নির্মাণকাজ শেষ হয়নি। সেতুর চাঁদপুর সদর উপজেলার অংশের ভায়াডাক্টের কাজ সম্পন্ন হলেও গত ৮ মাসে ফরিদগঞ্জ অংশের কাজ শেষ করতে পারেনি ঠিকাদার। এলজিইডি তাদেরকে বারবার নিমার্ণকাজ শেষের জন্য তাগাদা দিয়ে সময় বেধে দিলেও অদ্যাবধি ভায়াডাক্টের কাজই শেষ করতে পারেনি ঠিকাদার। এরপর সংযোগ সড়কের নির্মাণ কাজতো রয়েছেই। স্ত্রী ও সন্তান নিয়ে মই বেয়ে উঠে গাড়িতে উঠা আলাউদ্দিন, শহিদ হোসেন, ইব্রাহিম হোসেনসহ যাত্রীরা সেতুর কারণে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তারা জানান, ৭ বছরেও সেতুটি নির্মাণকাজ শেষ করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। সেতুতে যান চলাচলের উপযোগী করতে আর কতদিন লাগবে কেউ জানে না। শিমুল সর্দার, ইব্রাহিম সর্দারসহ বেশ কয়েকজন জানান, মই বেয়ে উঠতে গিয়ে এরমধ্যে নারীসহ বেশ কয়েকজন গুরুতর আহত হয়েছেন। এ অঞ্চলের মানুষের স্বপ্ন কবে যে বাস্তবে রূপ নিবে তা কেউই বলতে পারছে না। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সেতুর নির্মাণকাজ বন্ধ হয়ে যায়। এছাড়া নিবার্চনের পর চুরির ঘটনাকে কেন্দ্র করে এখানে সমস্যা সৃষ্টি হয়। ঠিকাদারের লোক ও অবৈধ সুবিধাভোগীদের কারণে আমাদের দুঃখ শেষ হচ্ছে না। চাঁদপুর এলজিইডির পক্ষে সেতুর দায়িত্বে থাকা এলজিইডির উপ-সহকারী প্রকৌশলী আইউব খান জানান, জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং পরবর্তীতে চুরিজনিত ঘটনাকে কেন্দ্র করে অস্থিরতা তৈরি হওয়ায় শেষের দিকে এসে কাজ থমকে দাঁড়িয়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কিছু বিল ছাড়া হলে তাদেরকে দিয়ে বাকি কাজ শেষ করানো সম্ভব হবে।

দৈনিক জামালপুর
দৈনিক জামালপুর