• শুক্রবার ১৭ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৩ ১৪৩১

  • || ০৮ জ্বিলকদ ১৪৪৫

দৈনিক জামালপুর

কলেজছাত্র খুনের ঘটনায় নবীগঞ্জ শহর রণক্ষেত্র

দৈনিক জামালপুর

প্রকাশিত: ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪  

হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলায় সহপাঠীদের ছুরিকাঘাতে প্রাণ গেছে কলেজছাত্র রাইসুল হক তাহসিনের। মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে নবীগঞ্জ শহরের ওসমানী রোডের চৌদ্দহাজারী মার্কেটের সামনে এ হত্যাকাণ্ড ঘটে। এ হত্যাকাণ্ডের জেরে বুধবার সন্ধ্যার পর থেকে রাত ১১ টা পর্যন্ত দফায় দফায় দুইপক্ষের চার ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষে পুলিশ সদস্যসহ অন্তত অর্ধশতাধিক লোক আহত হয়েছেন। এ সময় মার্কেট ও দোকানপাট ভাঙচুর করা হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে পুলিশ। নবীগঞ্জ শহরের নতুন বাজার এলাকায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। জানা যায়, বুধবার নবীগঞ্জ থানার এসআই সুমন সরকার কুর্শি ইউপি চেয়ারম্যান সৈয়দ খালেদুর রহমানের মালিকানাধীন রাজ ম্যানশনে হত্যাকাণ্ডের ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ দেখতে যান। তখন আনমনু গ্রামের লোকজনের সঙ্গে তর্ক-বিতর্ক হলে চেয়ারম্যান খালেদুর রহমান জানাজার পর দক্ষ লোক নিয়ে সিসিটিভি ফুটেজ চেক করতে বলেন। পরে ইউপি চেয়ারম্যান চলে গেলে আনমনু গ্রামের লোকজন সিসিটিভি ছিনিয়ে নিতে চাইলে রাজা ম্যানশনের লোকজন বাধা দেন। এরপর থেকেই শুরু হয় দফায় দফায় সংঘর্ষ। সংঘর্ষের সময় রাজা কমপ্লেক্স ও আনমনু গ্রামের বেশ কয়েকটি দোকান ভাঙচুর করা হয়। চার ঘণ্টাব্যাপী চলা সংঘর্ষে উভয়পক্ষের লোকজন ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করেন। এতে অন্তত অর্ধশতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন। সংঘর্ষের সময় ব্যবসায়ী ও পথচারীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করে। শহরের দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। লোকজন দিগ্বিদিক ছুটোছুটি করেন। সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ৪৫ রাউন্ড টিয়ারশেল ও ১৫ রাউন্ড রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। এদিকে বুধবার সন্ধ্যায় নবীগঞ্জ জেকে উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে রাইসুল হক তাহসিনের জানাজা শেষে তাকে দাফন করা হয়। নিহত রাইসুল হক তাহসিন নবীগঞ্জ সরকারি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র ও বানিয়াচং উপজেলার কালাইনজুড়া গ্রামের বাসিন্দা এবং নবীগঞ্জ শহরের শেরপুর রোডের রাজন ওয়ার্কশপের সত্ত্বাধিকারী রাজন মিয়ার ছেলে। পুলিশ জানায়, নবীগঞ্জ সরকারি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী রাইসুল হক তাহসিন ও মান্না আহমেদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। তারা সহপাঠী হিসেবে এক সঙ্গে চলাফেরা করে। কয়েক মাস আগে রাইসুল হক তাহসিন ও মান্না আহমেদের মধ্যে তুচ্ছ বিষয়ে বিরোধ থেকে মনোমালিন্য দেখা দেয়। ফলে তাদের বন্ধুত্বের সম্পর্কে দূরত্বের সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে তাদের মনোমালিন্য শত্রুতায় পরিণত হয়। ফলে দুই গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পড়ে তারা। এক গ্রুপ তাহসিনের নেতৃত্বে ও অপর গ্রুপ মান্নার নেতৃত্বে ছিল। মঙ্গলবার নবীগঞ্জ সরকারি কলেজে দ্বাদশ শ্রেণির তাহসিনের বন্ধু মারুফ ও মান্নার বন্ধু প্রান্তিকের মধ্যে থুথু ফেলাকে কেন্দ্র করে বাগবিতণ্ড হয়। পরে সিনিয়রদের হস্তক্ষেপে তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টি সমাধান হলেও মান্না ও তার লোকজন তাহসিনের ওপর চরমভাবে ক্ষিপ্ত হয়। তাহসিনের সহপাঠী ও খালাতো ভাই নিয়াল আহমেদ মাহি জানান, পরিকল্পিতভাবে কলেজের ঘটনার সূত্রে ধরে ও পূর্বের আক্রোশ থেকে মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর নবীগঞ্জ শহরের রাজা কমপ্লেক্সের পেছনে তাহসিনকে একা পেয়ে প্রথম দফায় মারপিট করে মান্না ও তা সাঙ্গপাঙ্গরা। এ সময় স্থানীয় লোকজন মারামারি থেকে তাদেরকে নিভৃত করেন। পরে রাত ৯টার দিকে তাহসিন, মাহি, মারুফ, মিনহাজ পৌরসভার প্রাঙ্গণে বইমেলায় যায়। কিছু সময় অবস্থান করে বইমেলা থেকে ইজিবাইকে ফেরার পথে ওসমানী রোডের চৌদ্দহাজারি মার্কেটের সামনে নেমে পড়ে। একপর্যায়ে সেখানে উপস্থিত হয় মান্নাসহ আরো ৭-৮ জন। পরে চৌদ্দহাজারি মার্কেটের সামনে তাহসিন ও মান্না গ্রুপ পূর্ববিরোধ নিয়ে বাগবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ে। এ সময় উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় তাদের ছুরিকাঘাতে তাহসিন গুরুতর আহত হয়। আহত তাহসিনকে উদ্ধার করে নবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে সিলেট প্রেরণ করেন। অ্যাম্বুলেযোগে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথিমধ্যে তাহসিন মারা যায়। নবীগঞ্জ থানার ওসি মো. মাসুক আলী বলেন, দুপক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় ৭ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। ফের এ ধরনের ঘটনা এড়াতে শহরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। আটক করা হয়েছে ১৪ জনকে। অন্যদিকে কলেজ ছাত্র তাহসিন হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এখনো কোনো মামলা হয়নি। তবে জড়িতদের ধরতে পুলিশের অভিযান চলছে।

দৈনিক জামালপুর
দৈনিক জামালপুর