• মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২৪ ১৪৩১

  • || ২৭ শাওয়াল ১৪৪৫

দৈনিক জামালপুর

রোহিঙ্গাদের কারণে উচ্চমাত্রায় খাদ্যনিরাপত্তার ঝুঁকিতে কক্সবাজার

দৈনিক জামালপুর

প্রকাশিত: ২৬ এপ্রিল ২০২৪  

রোহিঙ্গাদের কারণে চরম খাদ্য সংকটের ঝুঁকিতে রয়েছে কক্সবাজার। ফলে মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা। এ জেলা ২০১৭ সাল থেকে একটি বড় খাদ্য সংকট হিসেবে জিআরএফসি প্রতিবেদনে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। গত বছর জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোর পাশাপাশি জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী এবং কক্সবাজারের স্থানীয় মানুষের মধ্যে প্রায় ৩০ শতাংশ খাদ্য সহায়তা বাড়ানো হয়েছে। বৈশ্বিক খাদ্য সংকট নিয়ে ফুড সিকিউরিটি ইনফরমেশন নেটওয়ার্কের (এফএসআইএন) প্রকাশিত প্রতিবেদন ২০২৪-এ বলা হয়, গত বছর বাংলাদেশে নিষ্ফলা মৌসুমে প্রায় ১ কোটি ১৯ লাখ মানুষ তীব্র খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার উচ্চমাত্রার ঝুঁকির সম্মুখীন হয়ে থাকতে পারে, যার ৬৫ শতাংশ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী। সংস্থাটির মতে, এসব মানুষের তীব্র খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় বিশেষভাবে প্রভাব রেখেছে প্রতিকূল আবহাওয়া, বৈশ্বিক যুদ্ধ-সংঘাত ও উচ্চমাত্রায় দেশের অভ্যন্তরীণ খাদ্য মূল্যস্ফীতি। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) এবং বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচিসহ ১৬টি আন্তর্জাতিক সংস্থা এ নেটওয়ার্কের সদস্য। এটির অর্থায়নে রয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, বিশ্বজুড়েই গত বছর খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়। ঐ বছর ২৮ কোটি ২০ লাখের মতো মানুষ সংঘাত, বিশেষ করে গাজা ও সুদানে লড়াই চলার কারণে তীব্র ক্ষুধার সম্মুখীন হয়। বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা পরিস্থিতি সম্পর্কে প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২২ সালে রেকর্ড খাদ্যশস্য উৎপাদন ও ২০২৩ সালে খাদ্যের সহজলভ্যতার উন্নতি হলেও বাংলাদেশে অর্থনৈতিক ধাক্কায় খাদ্যপণ্যের দাম বাড়তিই রয়েছে। ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে দেশে খাদ্য মূল্যস্ফীতি পৌঁছায় ৭ দশমিক ৮ শতাংশে। অক্টোবরের শেষ নাগাদ তা এসে দাঁড়ায় ১২ দশমিক ৬ শতাংশে। রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে জ্বালানি, গমের মতো অত্যাবশ্যকীয় খাদ্যশস্য, সার ও গবাদিপশুর খাবার আমদানিতে বাংলাদেশের নির্ভরশীলতা মূল্যস্ফীতিতে ভূমিকা রাখে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে এসব পণ্যের আমদানি ব্যাহত হয়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয় টাকার ব্যাপক অবমূল্যায়ন ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়া। ফলে একদিকে খাদ্যশস্যের আমদানি কমার পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ খাদ্যশস্যের উৎপাদন খরচ বাড়ে। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, অব্যাহত উচ্চ খাদ্য মূল্যস্ফীতি ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর খাদ্যসুবিধা মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত করেছে। এসব মানুষের আয় ক্রমেই কমেছে ও তাদের খাদ্যপণ্য কেনার খরচ বেড়েছে। ২০২২ সালে ৭০ লাখের বেশি মানুষ অস্বাভাবিক মৌসুমি বন্যার শিকার হন এবং প্রধানত উত্তর-পূর্বাঞ্চলে গৃহহীন হন ২০ লাখের বেশি মানুষ। এতে তাদের সম্পদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এ কারণে ২০২৩ সালের অর্থনৈতিক ধাক্কা মোকাবিলা করার সক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়ে তাদের। আগস্টে চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে ভারি মৌসুমি বৃষ্টিতে আকস্মিক বন্যা ও ভূমিধস সৃষ্টি হয়। এর শিকার হন ১৩ লাখ মানুষ। ক্ষতিগ্রস্ত এসব মানুষের মধ্যে ছয় লাখের খাবার, সুপেয় পানি, ওষুধ ও বিদ্যুতের মতো মৌলিক সেবার বিশেষ প্রয়োজন দেখা দেয়। একই সময় রাজশাহীতে প্রচণ্ড তাপপ্রবাহ দেখা দেয় এবং দেশে ঘূর্ণিঝড় ও ভূমিধসের মতো ঘটনা ঘটে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৩ সালে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য দুটি রেশন কাটছাঁট খাদ্য গ্রহণের উপর ক্ষতিকারক প্রভাব ফেলেছিল। রেশন কাটছাঁটের কারণে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মাত্র ৩০ শতাংশ রোহিঙ্গা শরণার্থী পরিবারের গ্রহণযোগ্য খাদ্য গ্রহণের স্কোর ছিল, যা ২০২২ সালে ছিল ৫৬ শতাংশ। ২০২২ ও ২০২৩ সালে মিয়ানমারে দীর্ঘস্থায়ী সংঘাতের কারণে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মিয়ানমারে ফেরার কোনো প্রত্যাশিত সম্ভাবনা নেই। বাইরে কাজ করার সুযোগ, আয়, জমি এবং পানীয় জলের উৎসগুলোর উপর চাপের কারণে রোহিঙ্গা শরণার্থী এবং স্থানীয় সম্প্রদায়ের সদস্যদের মধ্যে উত্তেজনা আরো বাড়ছে। এনজিও এলান্সের শীর্ষ নেতা কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী খোকা জানান, অনেক এনজিও অর্থনৈতিক সংকটের কারণে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কার্যক্রম সীমিত পরিসরে নিয়ে এসেছেন। আনেকে কাজ গুটিয়ে চলে গেছেন। শুধু তাই নয় দাতা সংস্থাদের অনেকে আগের তুলনায় অর্থয়ান হ্রাস করেছে। ফলে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে খাদ্য সংকটের পাশাপাশি মানবিক বিপর্যয় আরো বাড়তে পারে বলে মনে করেন তিনি।

দৈনিক জামালপুর
দৈনিক জামালপুর