• বুধবার ০৮ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২৫ ১৪৩১

  • || ২৮ শাওয়াল ১৪৪৫

দৈনিক জামালপুর

শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ

দৈনিক জামালপুর

প্রকাশিত: ১৬ আগস্ট ২০২৩  

রাজধানীসহ সারাদেশে যথাযোগ্য মর্যাদায় জাতীয় শোক দিবস ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৮তম শাহাদতবার্ষিকী পালিত হয়েছে। এদিন বিনম্র শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করেছে সমগ্র জাতি। দেশজুড়ে নানা কর্মসূচিতে ছিল শোকের আবহ।
শোক দিবসে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার নেপথ্যে ষড়যন্ত্রকারী ও কুশীলবদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনতে গণতদন্ত কমিশন গঠনের দাবি জানিয়েছে বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আসা নানা শ্রেণিপেশার মানুষ।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সেনাবাহিনীর কিছুসংখ্যক বিপথগামী সদস্য ধানমন্ডির বাসভবনে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে। ঘাতকরা শুধু বঙ্গবন্ধুকেই হত্যা করেনি, তাদের হাতে একে একে প্রাণ হারিয়েছেন বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, বঙ্গবন্ধুর সন্তান শেখ কামাল, শেখ জামাল ও শিশুপুত্র শেখ রাসেল, পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজি জামাল।

পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যতম জঘন্য এ হত্যাকাণ্ড থেকে বাঁচতে পারেননি বঙ্গবন্ধুর অনুজ শেখ আবু নাসের, ভগ্নিপতি আবদুর রব সেরনিয়াবাত, তার ছেলে আরিফ, মেয়ে বেবি, সুকান্ত বাবু, বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে শেখ ফজলুল হক মণি, তার অন্তঃস্বত্ত্বা স্ত্রী আরজু মনি, আবদুল নাঈম খান রিন্টু, কর্নেল জামিলসহ পরিবারের ১৬ জন সদস্য ও ঘনিষ্ঠজন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৮তম শাহাদতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে মঙ্গলবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে জাতির পিতাকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে। সকালে বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে রক্ষিত জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে তার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় বিউগলে করুণ সুর বেজে ওঠে। সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল গার্ড অব অনার প্রদান করে। পরে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে নিয়ে দলের পক্ষে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন শেখ হাসিনা।

আওয়ামী লীগের পর বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে কেন্দ্রীয় ১৪ দলের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। এরপর বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ও প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।

এরপর শেখ হাসিনা পরিবারের শহিদ সদস্যদের কবরে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য বনানী কবরস্থানে রওনা হন। প্রধানমন্ত্রী ধানমন্ডি ৩২ নম্বর ত্যাগ করার পর বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে আরো শ্রদ্ধা জানায়- ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, শ্রমিক লীগ, কৃষক লীগ, যুবলীগ, যুব মহিলা লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগ, তাঁতী লীগ, বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি, সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম, বাংলা একাডেমি, জাতীয় জাদুঘর, শিশু একাডেমি, বাংলাদেশ বেতার, বঙ্গবন্ধু পরিষদ, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, শেখ রাসেল শিশু সংসদ, আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তানসহ সর্বস্তরের মানুষ।

এছাড়া জাতীয় শোক দিবসে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে শ্রদ্ধা নিবেন করেন।

শোক দিবস উপলক্ষে দিনব্যাপী কোরআন তেলাওয়াত, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ প্রচার, বঙ্গবন্ধুর সমাধি ও প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ, কালো ব্যাজ ধারণ, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, মিলাদ মাহফিল, রক্তদান কর্মসূচি, আলোচনা সভা, আলোকচিত্র প্রদর্শনী ও দুস্থদের মাঝে খাবার বিতরণ করা হয়।

ভোরে বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ দলের ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন ইউনিট কার্যালয়, সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বেসরকারি ভবন ও বাংলাদেশ মিশনসমূহে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত এবং কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়। শোক দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ বেতার এবং বাংলাদেশ টেলিভিশনে বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালা সরাসরি সম্প্রচারসহ বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার এবং সংবাদপত্রসমূহ বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করে।

বঙ্গবন্ধুর শাহাদতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে ১০০ বার কুরআন খতম ও বিশেষ মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। ইসলামিক ফাউন্ডেশন কুরআন খতম ও বিশেষ মোনাজাতের আয়োজন করে। কুরআন খতম শেষে জাতির পিতা ও তার পরিবারের শহিদ সদস্যদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।

এদিকে মন্দির, প্যাগোডা, গির্জাসহ বিভিন্ন উপাসনালয়ে দেশব্যাপী বিশেষ প্রার্থনা কর্মসূচির অংশ হিসেবে কেন্দ্রীয়ভাবে ১৫ আগস্টের প্রথম প্রহরে (রাত ১২টা ১ মিনিট) মিরপুর ব্যাপ্টিস্ট চার্চে (৩/৭-এ সেনপাড়া, পর্বতা, মিরপুর-১০) মোমবাতি প্রজ্জ্বলন ও বিশেষ প্রার্থনা, সকাল ৯টায় তেজগাঁও হলি রোজারি চার্চে বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করেছে খ্রিস্টান সম্প্রদায়। সকাল ১০টায় রাজধানীর মেরুল বাড্ডা আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ বিহারে বৌদ্ধ সম্প্রদায় এবং সকাল সাড়ে ১১টায় ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে হিন্দু সম্প্রদায় প্রার্থনা সভার আয়োজন করে।

এছাড়া জাতীয় প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করে জাতীয় প্রেসক্লাব, বিএফইউজে-বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন, বঙ্গবন্ধু সাংবাদিক পরিষদসহ সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠন।

বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে দুস্থ ও গরিব মানুষের মধ্যে খাবার বিতরণ করা হয়। রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে দরিদ্রদের মধ্যে খাবার বিতরণের ব্যবস্থা করে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলো। এদিকে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে সারাদেশের সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে দরিদ্র রোগীদের বিনামূল্যে চিকিৎসা দেওয়া হয়।

দৈনিক জামালপুর
দৈনিক জামালপুর