• মঙ্গলবার ১৪ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৩১ ১৪৩১

  • || ০৫ জ্বিলকদ ১৪৪৫

দৈনিক জামালপুর

ম্যাক্রোঁ-ল্যাভরভ আসছেন প্রধানমন্ত্রী যাচ্ছেন জি-২০ সম্মেলনে

দৈনিক জামালপুর

প্রকাশিত: ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩  

চলতি সেপ্টেম্বর মাসের প্রথমার্ধ বাংলাদেশের কূটনৈতিক ক্যালেন্ডারে বেশ ব্যস্ত একটি সময়। এই সময়েই বাংলাদেশ সফরে আসছেন রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ এবং ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। এই সময়ে একাধিক হাইপ্রোফাইল সফর নির্ধারিত রয়েছে, যেখানে হতে পারে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি ও সমঝোতা।

এই দুই নেতার সফরের মাঝে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ আন্তর্জাতিক গোষ্ঠী জি-২০’র শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সব মিলিয়ে ব্যস্ত কূটনৈতিক সূচির মধ্যেও ঐতিহাসিক সফরে ল্যাভরভ-ম্যাক্রোঁকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত বাংলাদেশ।

হাইপ্রোফাইল সফরের শুরুটা হবে আগামী ৭ সেপ্টেম্বর রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভের ঢাকা সফর দিয়ে। এর চারদিন পরই ১১ সেপ্টেম্বর ঢাকায় আসছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। এ দুটি সফরই ঢাকার কাছে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ প্রায় ৩৩ বছর পর ফ্রান্সের কোনো প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশের মাটিতে পা রাখতে চলেছেন। কোনো রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকায় আসার ঘটনা এটাই হবে ইতিহাসে প্রথমবার।

এর মধ্যে আবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জি-২০ সম্মেলনে অংশ নিতে ৮ সেপ্টেম্বর বিকেলে নয়াদিল্লি যাবেন। এ জোটের এবারের শীর্ষ সম্মেলনে অতিথি দেশ হিসেবে অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ পেয়েছে বাংলাদেশ।

ঢাকার কূটনৈতিক পাড়ার এই ব্যস্ততা নিয়ে রবিবার বিস্তারিত প্রতিবেদন করেছে ভারতের প্রভাবশালী দৈনিক দ্য হিন্দু। এতে বলা হয়েছে, সম্প্রতি শেখ হাসিনা জোহানেসবার্গে ব্রিকসের সদস্যপদ নিয়ে আলোচনা শেষে ফেরার কয়েকদিন পরই ঢাকা সফরে যাচ্ছেন রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগামী ৯ এবং ১০ সেপ্টেম্বর ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে জি-২০ শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন থেকে শুরু করে সদস্য, পর্যবেক্ষক ও আমন্ত্রিত দেশের শীর্ষনেতারা উপস্থিত হবেন। সম্মেলনে অংশ নেবেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও।

জি-২০ সম্মেলনের আগে আগামী ৭ সেপ্টেম্বর রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভের ঢাকায় আগমনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের কূটনৈতিক ব্যস্ততা শুরু হবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা নিয়ে নানা অভিযোগ তুলে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ক্রমবর্ধমান চাপ দিয়ে চলেছে বাংলাদেশের ওপর। যদিও এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে নিষেধাজ্ঞা আরোপকারীদের সঙ্গে বাণিজ্যিক চুক্তিতে না গিয়ে ব্রিকস দেশগুলোর দিকে ঝোঁকার ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি।

রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় জ্বালানি কোম্পানি রোসাটম রূপপুরে বাংলাদেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করছে। ল্যাভরভের সফর আশা জাগিয়েছে, বিদ্যুৎকেন্দ্রটির নির্মাণ কাজ হয়তো শীঘ্র সম্পন্ন হবে। ২০২২ সালের অক্টোবরে নির্মাণস্থলে রিঅ্যাক্টর ভেসেল স্থাপনের চূড়ান্ত পর্যায়ের কাজের উদ্বোধন করেছিলেন শেখ হাসিনা এবং রোসাটমের মহাপরিচালক আলেক্সি লিখাচেভ।

রোসাটমের সঙ্গে ২০১৫ সালে স্বাক্ষরিত এক হাজার ২৬৫ কোটি ডলারের চুক্তিটি বাংলাদেশের ইতিহাসে বৃহত্তম চুক্তি। এর প্রায় ৯০ শতাংশ অর্থায়নই করছে রাশিয়া। তবে ইউক্রেনে সামরিক অভিযানের কারণে রাশিয়া আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়ায় ঋণের কিস্তি পরিশোধ নিয়ে জটিলতা দেখা দিয়েছে। ঢাকা সফরকালে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ল্যাভরভ শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন বলে আশা করা হচ্ছে এবং এটি স্পষ্ট যে, উভয় পক্ষই তৃতীয় মুদ্রায় কিস্তি পরিশোধের উপায় নিয়ে আলোচনা করতে পারে। আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার কারণে অনেক অংশীদার দেশের জন্যই রাশিয়াকে মার্কিন ডলারে অর্থপ্রদান কঠিন হয়ে পড়েছে। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে মস্কোর বেশকিছু অর্থ চীনা মুদ্রা ইউয়ানে পরিশোধ করা হয়েছে; যেমনটি করেছে ভারতীয় তেল কোম্পানিগুলো।

তাই ল্যাভরভের ঢাকা সফরে গভীরভাবে নজর রাখা হচ্ছে। কারণ এই সফরে বেশকিছু আর্থিক ও ভূ-রাজনৈতিক প্রবণতা প্রতিফলিত হতে পারে। সূত্র জানিয়েছে, দেশে ল্যাভরভের সঙ্গে আলোচনা শেষ করে আগামী ৮ সেপ্টেম্বর দিল্লি পৌঁছাবেন শেখ হাসিনা এবং পরবর্তীতে জি-২০ সম্মেলনে ফের মুখোমুখি হবেন তারা।

কূটনৈতিক সূত্রগুলো ইঙ্গিত দিয়েছে, শেখ হাসিনা নয়াদিল্লিতে থাকাকালীন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হতে পারে। তবে ফরাসি প্রেসিডেন্টকে স্বাগত জানাতে দেশে ফেরার তাড়া থাকায় এবার হয়তো আজমির শরীফ পরিদর্শনে যেতে পারবেন না বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।

২০২১ সালে প্যারিসে শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানিয়েছিলেন ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ এবং তারপর থেকে উভয় পক্ষই প্রতিরক্ষা সম্পর্ক বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।

ঢাকার সঙ্গে ফ্রান্সের সম্পর্ক ঐতিহাসিক। ১৭শ শতাব্দীতেও ঢাকায় বাণিজ্য মিশন ছিল প্যারিসের। স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়া প্রথম পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যে একটি ছিল ফ্রান্স। সাম্প্রতিক সময়ে দেশটি ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে তার কৌশলগত অবস্থান জোরদারে মনোনিবেশ করেছে এবং ঢাকার সঙ্গে প্যারিসের সামরিক সম্পর্ক বৃদ্ধির সম্ভাবনা এখন দৃষ্টিসীমার মধ্যে।

দ্য হিন্দুর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এগুলো ছাড়াও ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে বাংলাদেশ সরকার যে চাপের সম্মুখীন হচ্ছে, সে বিষয়ে ফরাসি প্রেসিডেন্টকে সরাসরি অবহিত করার সুযোগ দেবে ম্যাক্রোঁর ঢাকা সফর। বাংলাদেশ সফর করা সবশেষ ফরাসি প্রেসিডেন্ট ছিলেন ফ্রাঁসোয়া মিতেরঁ। ১৯৯০ সালে ঢাকায় এসেছিলেন তিনি।

দৈনিক জামালপুর
দৈনিক জামালপুর