• বুধবার ১৫ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৩১ ১৪৩১

  • || ০৬ জ্বিলকদ ১৪৪৫

দৈনিক জামালপুর

ভুয়া সনদে বিদেশ যাত্রা রোধে ব্যবস্থা নিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ

দৈনিক জামালপুর

প্রকাশিত: ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩  

অনেকেই পেশাগত ভুয়া সনদ নিয়ে বাংলাদেশ থেকে বিদেশে যাচ্ছেন। এসব ভুয়া সনদ দেওয়ার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সোমবার মন্ত্রিসভা  বৈঠকে এ নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। বিদ্রোহের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড রেখে ‘আনসার ব্যাটালিয়ন আইন-২০২৩’ এর খসড়া অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এছাড়া মন্ত্রিসভা নির্দিষ্ট হারে ভাতা দিয়ে সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ইন্টার্ন করার সুযোগ রেখে একটি নীতিমালার অনুমোদন দিয়েছে। একই সঙ্গে জাতীয়করণকৃত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ‘যোগ্যতা’ না থাকা শিক্ষকদের ডিগ্রি ও প্রশিক্ষণের সময় ২০২৫ সাল পর্যন্ত বাড়িয়ে বিধিমালার সংশোধনী অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। সোমবার মন্ত্রিসভা বৈঠকের নিয়মিত বৈঠকে এই অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মন্ত্রিসভা  বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের কাছে অভিযোগ আসছে, যারা বিদেশে যাচ্ছেন অনেকেই ভুয়া সার্টিফিকেট নিয়ে যাচ্ছেন। অনেকেই ভুয়া চিকিৎসক ও ইঞ্জিনিয়ার- এ ধরনের সার্টিফিকেট নিয়ে যাচ্ছেন। কীভাবে তারা এ ভুয়া সার্টিফিকেট নেন। এ ভুয়া সার্টিফিকেটসহ তারা বিদেশ যান। কিছু অসাধু লোক তাদের এ কাজে সহযোগিতা করেন। যারা এ কাজটা করেন তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো তাদের সহযোগিতা করবে।

কত সংখ্যক এমন ভুয়া সনদ নিয়েছেন- জানতে চাইলে মাহবুব হোসেন বলেন, সংখ্যাটা নিয়ে আলোচনা হয়নি। অভিযোগ করা হয় যে, এমন পাওয়া যাচ্ছে। দেখা গেলো একটা ভুয়া সার্টিফিকেট দিয়ে বিদেশে গেছে এবং ওই দেশে গিয়ে সে ধরা পড়েছে। তখন একটা বিব্রতকর অবস্থা  তৈরি হয়। ওখানে তারা একটা অস্বস্তির মধ্যে পড়ে যায়। এখন এ বিষয়টা শক্ত হাতে হ্যান্ডেল করার জন্য বলা হয়েছে।

বিদ্রোহের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদ- ॥ বিদ্রোহের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদ- রেখে ‘আনসার ব্যাটালিয়ন আইন- ২০২৩’ এর খসড়া অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ২০২২ সালের ২৮ মার্চ এই আইনটি মন্ত্রিসভা নীতিগত অনুমোদন দিয়েছিল। আগের আইনে বড় একটা গ্যাপ ছিল। কিছু ক্ষেত্রে শাস্তির বিধান ছিল না। বিদ্রোহ কিংবা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির বিষয়গুলো সুনির্দিষ্ট করা ছিল না। সেগুলোকে সুনির্দিষ্ট করে আইনের খসড়াটা আজকে চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

এ কর্মকর্তা জানান, নতুন আইনের বিভিন্ন অপরাধের মধ্যে রয়েছে, সরকারি বা ব্যাটালিয়ন সদস্যের সম্পত্তি চুরি করা, যুক্তিসংগত কারণ বা কর্তৃপক্ষের বিনা অনুমতিতে প্যারেডে অনুপস্থিত থাকা, কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকা, দায়িত্ব পালনে অনীহা প্রদর্শন করা। এক্ষেত্রে চাকরি থেকে বরখাস্ত, চাকরি থেকে বাধ্যতামূলক অপসারণের শাস্তির কথা বলা হয়েছে। বিদ্রোহের জন্য শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদন্ড, যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড রয়েছে। আপিল করারও ব্যবস্থা থাকবে। তাদের শাস্তি মওকুফের বিষয়ে রাষ্ট্রপতির কাছেও তারা আবেদন করতে পারবেন।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, বিদ্রোহ সংঘটন ও এতে প্ররোচনা প্রদান, বিদ্রোহের কারণ সৃষ্টি বা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত বা এতে যোগদান করা, বিদ্রোহস্থলে উপস্থিত হয়ে তা দমনের জন্য যথেষ্ট প্রচেষ্টা গ্রহণ না করা, বিদ্রোহ সম্পর্কে জেনে বা ষড়যন্ত্রের কথা যুক্তিসংগতভাবে জানা সত্ত্বেও সে বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে না জানানো, কোনো ব্যাটালিয়ন সদস্যকে সরকারের প্রতি তার কর্তব্য ও আনুগত্য থেকে বিরত রাখা, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বিদ্রোহের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যাটালিয়ন সদস্য বা আনসার ব্যাটালিয়নবহির্ভূত কোনো ব্যক্তিকে অস্ত্র, গোলাবারুদ বা দ্রব্যসামগ্রী দিয়ে বা অন্য কোনো উপায়ে সাহায্য করা, বিদ্রোহের সঙ্গে সম্পৃক্ত অন্য যে কোনো অপরাধ সংঘটন করা- এক্ষেত্রে মৃত্যুদন্ড বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদ- বা অন্যান্য ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদন্ডের বিধান রাখা হয়েছে।

তিনি জানান, ১৯৯৫ সালের আইনে বিদ্রোহের ক্ষেত্রে এসব বিষয় ছিল না। এছাড়া খসড়া আইনে প্রতিষ্ঠানের ভেতরে দুটি আদালত রাখার বিধান রাখা হয়েছে। একটি হবে সংক্ষিপ্ত আনসার আদালত, আরেকটি হবে বিশেষ আনসার আদালত। সংক্ষিপ্ত আদালত একজন অতিরিক্ত মহাপরিচালকের নেতৃত্বে হবে। গুরুতর অপরাধের জন্য হবে বিশেষ আদালত, এই আদালতের প্রধান হবেন মহাপরিচালক। এ দুটি আদালতে কি কি অপরাধের বিচার হবে সে বিবরণ খসড়া আইনে দেওয়া হয়েছে।

সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ইন্টার্নশিপ, থাকবে ভাতা ॥ নির্দিষ্ট হারে ভাতা দিয়ে সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ইন্টার্ন করার সুযোগ রেখে একটি নীতিমালার অনুমোদন দিয়েছে সরকার। মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেন, নীতিমালার আলোকে এখন সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে, মন্ত্রণালয়ে, আধাসরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে প্রতিবছর শিক্ষার্থীদের ইন্টার্ন করার সুযোগ দেওয়া হবে। সেটা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা ডিপার্টমেন্ট ঠিক করবে। সেখানে শিক্ষার্থীদের একটা ভাতাও দেওয়া হবে। তারা কী কাজ করবেন, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে তাদের সঙ্গে বসবে। তিন থেকে ছয় মাস মেয়াদে তারা কাজ করবেন।

তিনি বলেন, সরকারি প্রতিষ্ঠানে ইন্টার্নশিপের সুযোগ দেওয়ার জন্য নীতিমালা করা হলেও প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি প্রতিষ্ঠানেও এই সুযোগ নিশ্চিত করার নির্দেশনা দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন যে, এই নীতিমালাটা শুধু সরকারি প্রতিষ্ঠান নয়, সব বেসরকারি এবং শিল্প প্রতিষ্ঠানে যেন এই সুযোগটা থাকে। সে অনুযায়ী নীতিমালাটি পুনর্গঠন করা হবে। নীতিমালার জন্য কী যোগ্যতা লাগবে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, একেকটা প্রতিষ্ঠানের চাহিদা একেক রকম, সে অনুযায়ী সুযোগ দেওয়া হবে। এটা ওই প্রতিষ্ঠান ঠিক করবে যে, তাদের কী ব্যাকগ্রাউন্ডের শিক্ষার্থী দরকার।

প্রাথমিকের ‘যোগ্যতা’ না থাকা শিক্ষকদের ডিগ্রি-প্রশিক্ষণের সময় বাড়ল ॥ জাতীয়করণকৃত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ‘যোগ্যতা’ না থাকা শিক্ষকদের ডিগ্রি ও প্রশিক্ষণের সময় ২০২৫ সাল পর্যন্ত বাড়িয়ে বিধিমালার সংশোধনী অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।  বৈঠক শেষে সচিবালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন এ তথ্য জানিয়েছেন।  মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ২০১৩ সালে ২৬ হাজার ১৯৩টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করা হয়। সেই সময় যখন সরকারিকরণের প্রক্রিয়া করা হয় তখন যে বিধিমালা আমরা অনুসরণ করেছিলাম দেখা গেছে, সেই অনুসারে অনেকেরই কাক্সিক্ষত যোগ্যতা ছিল না। তখন ২০১৭ সাল পর্যন্ত একটা শর্ত দেওয়া হয়েছিল যে, যাদের কয়েকটি ডিগ্রি ও প্রশিক্ষণ নেই, যারা এটি নিতে পারবে, তাদের আত্মীকরণ করা হবে। তখন দেখা গেছে, বিভিন্ন কারণে অনেকেই এটা করতে পারেননি। এরই মধ্যে করোনা মহামারি চলে গেল। তাই আরেকটু সময় বাড়াতে আজকে এটি তোলা হয়েছে। তিনি বলেন, এখন ২০২৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত তাদের সুযোগ দেওয়া হবে। এ সময়ের মধ্যে তারা অর্জন (ডিগ্রি ও প্রশিক্ষণ) করতে পারবেন। সার্টিফিকেট অব এডুকেশন বা সমমান পরীক্ষার সনদ অর্জনের সুযোগ তাদের দেওয়া হয়েছে। সরকারি শিক্ষক যারা হন তাদের এ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।

নারায়ণগঞ্জ ও সাতক্ষীরায় হচ্ছে নতুন দুটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ॥ নারায়ণগঞ্জ ও সাতক্ষীরায় নতুন দুটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনে আইন অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সোমবার  তার কার্যালয়ে মন্ত্রিসভা  বৈঠকে এই অনুমোদন দেওয়া হয়। আইন দুটি হলো- জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, নারায়ণগঞ্জ আইন-২০২৩ এবং সাতক্ষীরা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০২৩।  বৈঠক শেষে সচিবালয়ে ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেন, অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো এ দুটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হবে।

দৈনিক জামালপুর
দৈনিক জামালপুর