• বুধবার ১৫ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ১ ১৪৩১

  • || ০৬ জ্বিলকদ ১৪৪৫

দৈনিক জামালপুর

জি-২০ সম্মেলন: শেখ হাসিনা-মোদি বৈঠকে প্রাধান্য পাবে নির্বাচন

দৈনিক জামালপুর

প্রকাশিত: ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩  

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৮ সেপ্টেম্বর ভারতের নয়া দিল্লি সফরে যাচ্ছেন। ওইদিন বিকালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন তিনি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ওই বৈঠকে সব ছাপিয়ে প্রাধান্য পাবে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠান। বৈঠকে শেষে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর আখাউড়া থেকে আগরতলা পর্যন্ত ১০ দশমিক ১ কিলোমিটার রেললাইন প্রকল্প উদ্বোধন করার কথা রয়েছে। এ ছাড়া নয়া দিল্লিতে জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গ্লোবাল সাউথের সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য তুলে ধরবেন। জি-২০ সম্মেলনে চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধেরও আহ্বান জানাবে বাংলাদেশ। 

কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন খুব কাছাকাছি হওয়ায় প্রধানমন্ত্রীর এ সফর ঢাকার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই শেখ হাসিনার এ সফর ঘিরে ঢাকার কূটনীতিকরা একই সঙ্গে বৈশ্বিক ও দ্বিপক্ষীয় গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলো নিয়ে ব্যস্ত। সম্ভবত আগামী নির্বাচনের আগে বাংলাদেশ-ভারতের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ৮ সেপ্টেম্বরের বৈঠকটিই হবে বর্তমান সরকারের মেয়াদে শেষ দ্বিপক্ষীয় বৈঠক। বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে সম্প্রতি একদিকে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, জনগণের আকাক্সক্ষার ভিত্তিতেই নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া নির্ধারণ করতে হবে। 

অন্যদিকে ভারতের গণমাধ্যমগুলো বলছে, আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিতে শেখ হাসিনার সরকারের আবারও ক্ষমতায় আসা প্রয়োজন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, শেখ হাসিনা এবং নরেন্দ্র মোদির মধ্যে বৈঠকে তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, বিদ্যুৎ জ্বালানি খাতে সহযোগিতা, জনযোগাযোগ, অভিন্ন নদীর পানিবণ্টন, নদীর অববাহিকাভিত্তিক পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা, সীমান্ত সুরক্ষা, নিরাপত্তা সহযোগিতা, নির্বাচন, মাদক চোরাচালান ও মানব পাচার রোধসহ আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক একাধিক বিষয়ে আলোচনা হবে।

এদিকে বিশ্বের ২০টি শিল্পোন্নত এবং উন্নয়নশীল রাষ্ট্রের জোট জি-২০ শীর্ষ সম্মেলন ঘিরে বাংলাদেশের প্রত্যাশা অনেক। আসন্ন সম্মেলনে বাংলাদেশ গ্লোবাল সাউথের সমস্যাগুলো সমাধানের উদ্দেশ্যে উপস্থাপন করবে। জলবায়ু পরিবর্তন, অভিবাসন, খাদ্য ও জ্বালানি নিরাপত্তা, বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থাসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যেসব সমস্যা মোকাবিলা করছে সেগুলো সমাধানে জোটের সদস্যদের দৃষ্টি আকর্ষণ করবে বাংলাদেশ। একই সঙ্গে এ সম্মেলনে চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধেরও আহ্বান জানাবে। জি-২০ সম্মেলন উপলক্ষে গত সপ্তাহে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ‘জি ২০ : ঢাকা টু দিল্লি’ শীর্ষক এক সেমিনারেরও আয়োজন করেছিল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

শেখ হাসিনার আসন্ন দিল্লি সফর প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন সাংবাদিকদের বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে আলোচনার বিষয়ে আমাদের প্রধানমন্ত্রী বলতে পারবেন। এ ছাড়া জি-২০ সম্মেলনের সাইড লাইনে আরও কিছু দেশের সরকারপ্রধানের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা ভারতকে ধন্যবাদ জানাই। তারা জি-২০ সম্মেলনে আমাদের আমন্ত্রণ করে সম্মান দেখিয়েছে। 

দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্য থেকে শুধু বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে ভারত। আমাদের অতিথি হিসেবে হিসেবে দাওয়াত দেওয়ার পেছনের বড় কারণ বাংলাদেশ গ্লোবাল সাউথের মুখপাত্র। জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশে নেতৃস্থানীয় পর্যায়ে কাজ করছে। বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে সোচ্চার। আমরা যদিও এলডিসি (স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা) থেকে বের হয়ে যাচ্ছি; কিন্তু আমরা ৪৮টি এলডিসি দেশের নেতা ছিলাম বহু বছর এবং এখনও আমরা এলডিসির ব্যাপারে সোচ্চার, আমরা আমাদের এলডিসি ইস্যু তুলে ধরব, দক্ষিণের ইস্যুগুলো তুলে ধরব, জলবায়ু ও অভিবাসন ইস্যু তুলে ধরব। এ সম্মেলনে আমরা আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়ে যুদ্ধ বন্ধেরও আহ্বান জানাব। আমাদের হারানোর কিছু নেই, জি-২০ সম্মেলনে বাংলাদেশ বিশ্বের বড় কণ্ঠস্বর হবে।

এবারের জি-২০ সম্মেলন উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন দিল্লি সফর প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশ-ভারত সবসময়ই সর্বোচ্চ রাজনৈতিক পর্যায়ে তিস্তা ইস্যু নিয়ে আলোচনা করেছে। আমরা এটাকে সবসময় আলোচনার এজেন্ডায় রাখতাম। এবারও আমরা আশা করছি, প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে কথা বলবেন। বাংলাদেশ মনে করে, দুই দেশের পানিবণ্টন সমস্যা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান হবে। কারণ দুই দেশ পারস্পরিক বোঝাপড়ার ভিত্তিতে কাজ করতে মানসিকভাবে একমত। আমাদের আরও কিছু সমস্যা আছে। আমাদের ৫৪টি অভিন্ন নদী রয়েছে। গঙ্গার পানি চুক্তি আরেকটি বিষয়, যা শিগগিরই শেষ হয়ে যাবে।

বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা গত সপ্তাহে ঢাকায় এক সেমিনারে বলেন, নয়া দিল্লিতে আসন্ন জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে শুধু বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে ভারত। কারণ ভারত বাংলাদেশকে গুরুত্ব দিয়ে থাকে। বিশ্বকে অনেক কিছু বলার আছে বাংলাদেশের। এ দেশের অনেক উন্নয়ন সাফল্য রয়েছে। জি-২০ সম্মেলন এমন এক সময়ে হতে যাচ্ছে যখন ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে বিশ্বব্যাপী সরবরাহ ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ সম্মেলনে গ্লোবাল সাউথের কথা শুনতে চায় ভারত। আমরা বাংলাদেশের সহযোগিতা চাই। আফ্রিকার দেশগুলো কী বলে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন কী বলে, এগুলো শুনতে চায় ভারত।

এ প্রসঙ্গে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ও রাষ্ট্রদূত মো. ওয়ালিউর রহমান সময়ের আলোকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর খুবই স্বাভাবিক এবং সেখানে তাকে দাওয়াত করা হয়েছে। তিনি জি-২০ সম্মেলনে অংশ নেবেন, বক্তৃতা দেবেন এবং তার বক্তৃতা হবে দক্ষিণের অর্থনীতি বিষয়ে। অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রী উন্নয়নশীল বিশ্বের হয়ে কথা বলবেন এবং কীভাবে আমরা আরও সামনে এগোব সেই বার্তা দেবেন।

সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মো. তৌহিদ হোসেন সময়ের আলোকে বলেন, দুই প্রতিবেশী রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে সামনে যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে, আমাদের প্রত্যাশা ওই বৈঠকে দুই প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে যেসব বিষয়ে আলোচনা হবে তা যেন গণমাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। আমার অনুমান, পশ্চিমা চাপ নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হবে। পশ্চিমা চাপ নিয়ে আলোচনার বিষয়টি আমরা কখনো প্রমাণ করতে পারব না, সরকারও হয়তো কখনো স্বীকার করবে না। এর বাইরে দুই প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে আসলে কী আলোচনা হবে তা আমরা জানি না, কেউ জানে কি না তা নিয়েও আমার সন্দেহ আছে।

দুই প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে বৈঠকে কোন বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন-এমন প্রশ্নের জবাবে সাবেক এই পররাষ্ট্র সচিব বলেন, মাস চারেক পরই বাংলাদেশের নির্বাচন। তাই সরকার এখন এগুলো নিয়ে চিন্তিত হবে না। তবে আলোচনা করবে, গতানুগতিক আলোচনা হবে। তিস্তার সমস্যা সমাধান বা সীমান্তে হত্যা বন্ধ হয়ে যাবে-এমন কিছু হবে না। পরস্পরের প্রতি আস্থা, বাংলাদেশের ভালো চাওয়া, বিদ্যমান সমস্যাগুলো সমাধানের আশ্বাস এবং প্রকল্পের অর্থ কীভাবে খরচ হবে বাহ্যিকভাবে এগুলোই প্রকাশ পাবে। এগুলো আমার অনুমান। তবে ভারতের অবস্থানটা কী হবে সেটা আমাদের দেখতে হবে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক অতিরিক্ত সচিব ও রাষ্ট্রদূত মো. মাহফুজুর রহমান সময়ের আলোকে বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে আসন্ন বৈঠকের গুরুত্ব অনেক বেশি। যারা বাংলাদেশের প্রো-সরকারি ফোর্স তারা প্রত্যেকেই অপেক্ষা করছে, ভারতের দিক থেকে কোনো না কোনো ফর্মের একটা নিশ্চয়তা পাওয়া যাবে, যা বাংলাদেশে বর্তমান সরকারের ধারাবাহিকতার জন্য সুবিধা হবে। গত ১২-১৪ বছরে প্রো-সরকারি ফোর্সের মধ্যে বিশ্বাস জন্মেছে, ভারতের সমর্থনেই তারা টিকে আছ। তারা দেখছে, যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমা বিশ্ব বিভিন্ন সময়েই অনাকাক্সিক্ষত আচরণ করে। এ সময়ে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে মূল ফোকাসটা হচ্ছে নির্বাচন।

দৈনিক জামালপুর
দৈনিক জামালপুর