• মঙ্গলবার ১৪ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৩১ ১৪৩১

  • || ০৫ জ্বিলকদ ১৪৪৫

দৈনিক জামালপুর

দুধ ও মাংসের ঘাটতি মেটাতে নতুন উদ্যোগ

দৈনিক জামালপুর

প্রকাশিত: ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩  

দুধ একটি পুষ্টিকর খাদ্য। কিন্তু এই দুধ পেতে হলে প্রাণিজাত পণ্যের উৎপাদন বাড়াতে হবে, এই উপলব্ধি এসেছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের। আর এই উপলব্ধি থেকে নতুনভাবে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। বিশেষ করে বিদ্যমান প্রাণিসম্পদ যা রয়েছে, এর চেয়ে ২০ শতাংশ বাড়ানোর পরিকল্পনার কথা জানালেন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।

প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়নের জন্য প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এই প্রকল্পের জন্য বিশ্বব্যাংক ৩ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে। এ ছাড়া সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে যোগ হচ্ছে ৩৯৪ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। তবে এই প্রকল্পের শেষ করার মেয়াদ বাড়তে পারে বলে আভাস পাওয়া গেছে। শেষ করার কথা চলতি বছর ডিসেম্বর মাসে। কিন্তু শেষ হবে আগামী ২০২৫ সালে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ৩ সেপ্টেম্বর পরিকল্পনা কমিশনে এই প্রকল্পের সময় বাড়ানো নিয়ে এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। কৃষি, পানি সম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য একেএম ফজলুল হকের সভাপতিত্বে বৈঠকে বেশ কিছু মতামত দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে প্রশ্ন করা হয়েছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কাছে। এর আগে এই প্রকল্প নিয়ে গত ১৫ মে একবার বৈঠক হয়। সে সময় বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু সেসব সিদ্ধান্ত পরবর্তী বৈঠকে অর্থাৎ গত সেপ্টেম্বরে তা প্রতিফলিত হয়নি বলে কমিশন থেকে অভিযোগ উপস্থাপন করা হয়েছে।

প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. তোফাজ্জেল হোসেন সময়ের আলোকে জানিয়েছেন, এই প্রকল্পের সুনির্দিষ্ট কিছু উদ্দেশ্য রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, খামারি পর্যায়ে বিদ্যমান পশুর উৎপাদনশীলতা ২০ শতাংশ বাড়ানো। পাশাপাশি ৫ হাজার ৫০০ প্রাণিজাত পণ্য উৎপাদনকারী সমিতি গঠন করা। যাদের মাধ্যমে পণ্য সংরক্ষণ করা হবে ও প্রক্রিয়াজাত প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমন্বিতভাবে মার্কেট লিংকেজ তৈরি করা। যেন ভেল্যু চেইন ব্যবস্থার উন্নতি হয়। এ ছাড়াও নিরাপদ প্রাণী ও প্রাণিজাত পণ্য উৎপাদন ও মান নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা উন্নত করা।

কীভাবে এই প্রকল্পের কাজ হবে? এই প্রশ্নে বাস্তবায়নকারী সংস্থা প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, প্রথমে ১ লাখ ৯১ হাজার খামারি চিহ্নিত করা হবে। এরপর তাদের বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এর আওতা হবে ৩টি পাবর্ত্য জেলা ছাড়া ৬১ জেলার ৪৬৬টি উপজেলা। তিনি আরও জানান, ভেল্যু চেইনভিত্তিক ৫ হাজার ৫০০টি প্রডিউসার গ্রুপ তৈরি করা হবে। এদেরকে মোবিলাইজেশন করা হবে। পাশাপাশি ৪ হাজার ২০০ জন লাইভস্টক সার্ভিস প্রোভাইডার নিয়োগ করা হবে।

জানা গেছে, যারা সৃজনশীল খামারি, তাদের জন্য একটি করে প্রদর্শনী খামারি স্থাপন করা হবে। ভ্যাকসিনেশন ক্যাম্পইন করে গবাদিপশুর খুরারোগ নিয়ন্ত্রণ করা হবে। গাভির মান উন্নয়নের জন্য ৫০টি সর্ম্পূণ বিশুদ্ধ জাতের ডেইরি বকনা সংগ্রহ করা হবে। ৪৬৫টি উপজেলায় উন্নত ঘাস উৎপাদনের জন্য নার্সারি স্থাপন করা হবে। গোবর ব্যবস্থাপনায় ৪৮টি প্রদর্শনী কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। বায়োগ্যাস উৎপাদনে ৪৬টি খামারে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি সরবরাহ করা হবে। উপকূলীয় এলাকায় গবাদিপশুর জন্য ২০টি স্থানে নিরাপদ পানির ব্যবস্থা করা হবে।

এই প্রকল্পে আওতায় ১০০টি ছোট আকারের কারখানায় ফিড প্রসেসিং যন্ত্রপাতি স্থাপনে ম্যাচিং গ্রান্ট প্রদান করা হবে। ৩৭০ জন পশু খাদ্য উৎপাদন উদ্যোক্তাকে মিক্সড রেশন তৈরির যন্ত্রপাতি স্থাপনে সহায়তা করা হবে। বাজারভিত্তিক চাহিদা পশু খাদ্য উৎপাদনে ৩২ জন উদ্যোক্তাকে যন্ত্রপাতি সরবরাহ করা হবে। উপজেলা পর্যায়ে ১৭০টি মাংসের কাঁচা বাজার উন্নয়ন করা হবে। জেলা পর্যায়ে ২০টি মানসম্মত পশু জবাইখানা নির্মাণ করা হবে। ৩০০ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে দুধ খাওয়ানো কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। নির্দিষ্ট উপজেলায় প্রত্যেক বছর প্রাণিসম্পদ প্রদর্শনী করা হবে। উপজেলা পর্যায়ে মিনি ডায়াগনোস্টিক ল্যাব স্থাপন করা হবে।

এদিকে বিশ্বব্যাংক এই প্রকল্পের জন্য বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে চাহিদা অনুযায়ী পরিবেশ বিশেষজ্ঞ, সামাজিক বিশেষজ্ঞ নিয়োগ করা যেতে পারে। এর জন্য প্রয়োজনে অর্থ বরাদ্দ রাখতে হবে। তবে প্রকল্পের কাজ পুরোপুরিভাবে শুরু করার জন্য আইএমইডি মতামত নেওয়া যেতে পারে।

দৈনিক জামালপুর
দৈনিক জামালপুর