• শুক্রবার ১৭ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৩ ১৪৩১

  • || ০৮ জ্বিলকদ ১৪৪৫

দৈনিক জামালপুর

নিউক্লিয়ার যুগে প্রবেশের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে গেছে

দৈনিক জামালপুর

প্রকাশিত: ৬ অক্টোবর ২০২৩  

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ আগামীতে স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে উঠবে। এই রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র (আরএনপিপি) চালুর মধ্য দিয়ে আমরা সেই লক্ষ্যের দিকে আরো একধাপ এগিয়ে গেলাম। নিউক্লিয়ার যুগে প্রবেশের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ অনেক দূর এগিয়ে গেছে।
বৃহস্পতিবার রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য পরমাণু জ্বালানি গ্রহণ অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে দেওয়া ভাষণে এ কথা বলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাশিয়া ও প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বাংলাদেশের পরীক্ষিত বন্ধু প্রতীম দেশ। আজকের এই অর্জনে পাশে থাকায় রাশিয়া ও প্রেসিডেন্ট পুতিনকে বাংলাদেশ সরকার ও জনগণের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানাই। আশা করি, বাংলাদেশ-রাশিয়া বন্ধুত্ব ভবিষ্যতে আরো অটুট থাকবে।

তিনি আরো বলেন, ২০২৪ সালে আমাদের প্রথম ইউনিট ও ২০২৬ সালে দ্বিতীয় ইউনিট চালু হবে। আমরা সে লক্ষ্যেই এগিয়ে যাচ্ছি। অচিরেই প্রথম ইউনিট থেকে ১২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে। এ বিদ্যুৎ হবে অত্যন্ত পরিবেশবান্ধব।

শেখ হাসিনা বলেন, এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র পরিচালনার জন্য আমরা পৃথক আইন প্রণয়নের মাধ্যমে ‘নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড’ নামে একটি কোম্পানি গঠন করেছি। যেকোনো ধরনের দুর্যোগে আমাদের এ পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে দিকটা খেয়াল রেখে এ প্ল্যান্টের ডিজাইন প্রণয়ন এবং নির্মাণ কাজ পরিচালনা করা হচ্ছে। এছাড়া ব্যবহৃত জ্বালানি ব্যবস্থাপনার জন্য রাশিয়ান ফেডারেশনের সঙ্গে চুক্তি করেছি। রাশিয়ান ফেডারেশন এসব ফুয়েল তাদের দেশে ফেরত নিয়ে যাবে।

সরকার প্রধান বলেন, আমরা শান্তি রক্ষায় পরমাণু শক্তি ব্যবহার করবো। বিশ্বব্যাপী পারমাণবিক অস্ত্র সম্পূর্ণ নির্মূল ও পারমাণবিক অস্ত্র নিষিদ্ধকরণ চুক্তি বাস্তবায়নের প্রতি দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছি। আমরা ‘বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি নিয়ন্ত্রণ আইন’ প্রণয়ন করেছি। আমাদের স্বাধীন পরমাণু শক্তি নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ ‘আইএইএ’র সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রক্ষা করে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রতিটি স্তরে নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে।

তিনি বলেন, আমরা ১৯৯৬ সালে জ্বালানি নীতিতে পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করি। ‘রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প’ বাস্তবায়নের কার্যক্রম শুরু করি। ‘বাংলাদেশ নিউক্লিয়ার পাওয়ার একশন প্লান-২০০০’ প্রণয়ন করি এবং আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) সহযোগিতা চাই। আইএইএ’র আন্তরিক সহায়তায় আমরা একটি সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনাও গ্রহণ করি এবং একটি বিশেষ কমিটি করি। এরপর ২০০৯ সালে পুনরায় এই রূপপুর পরমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা নির্বাচনী ইশতেহারে রূপকল্প-২০২১ ঘোষণা দিয়েছিলাম। সেই ইশতেহারের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে আবারও রূপপুর প্রকল্পটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করি। বন্ধুরাষ্ট্র রাশিয়া এটি বাস্তবায়নে এগিয়ে আসে। এছাড়া আইএইএ শুরু থেকেই আমাদের নানাভাবে সহায়তা করে আসছে। এরপর ২০১৭ ও ২০১৮ সালে আমি এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রথম ও দ্বিতীয় ইউনিটের কংক্রিট ঢালাই উদ্বোধন করি। ২০২১ ও ২০২২-এ যথাক্রমে ইউনিট-১ ও ইউনিট-২ এর রিঅ্যাক্টর প্রেশার ভেসেল স্থাপন করি। আজ এ কেন্দ্রে পারমাণবিক জ্বালানি সংযুক্ত হলো।

শেখ হাসিনা বলেন, পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়াকে প্রস্তাবিত রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পরিচালকের দায়িত্ব দিয়েছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সে অনুযায়ী কিছু কাজও হয়েছিল। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘাতকেরা জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যা করার পর এই মেগা প্রকল্পসহ সব জনবান্ধব ও উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড থেমে যায়। সেই বিয়োগান্তক অধ্যায়কে ধারণ করে আজ দেশের জনগণকে অত্যন্ত আনন্দের দিন উপহার দিয়েছি। আওয়ামী লীগের নিরলস প্রচেষ্টায় পারমাণবিক জ্বালানি গ্রহণের মধ্য দিয়ে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র সফল পরিণতি লাভ করেছে।

অনুষ্ঠানে মস্কোর ক্রেমলিন থেকে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং ভিয়েনা থেকে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা’র (আইএইএ) মহাপরিচালক রাফায়েল মারিয়ানো গ্রসিও ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন।

দৈনিক জামালপুর
দৈনিক জামালপুর