• বৃহস্পতিবার ০২ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৯ ১৪৩১

  • || ২২ শাওয়াল ১৪৪৫

দৈনিক জামালপুর

প্রার্থিতা চূড়ান্তের পথে

দৈনিক জামালপুর

প্রকাশিত: ২৬ নভেম্বর ২০২৩  

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে মনোনয়নপ্রত্যাশীর পাশাপাশি সারাদেশে আওয়ামী লীগের কোটি কোটি নেতাকর্মী-সমর্থকদের সব উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার আজ অবসান ঘটতে পারে। শনিবার রাতে চতুর্থ দফা বৈঠক শেষে সারাদেশের প্রায় তিনশ’ আসনের দলীয় প্রার্থিতা চূড়ান্ত করেছে আওয়ামী লীগ। আজ রবিবার সন্ধ্যায় পঞ্চম দফায় বৈঠকে বসে সব আসনের প্রার্থীতা চূড়ান্ত শেষে রাতেই তালিকা প্রকাশ করা হতে পারে। প্রতিবারের মতো এবারেও আওয়ামী লীগের প্রার্থী তালিকায় থাকছে অনেক নতুন চমক। তালিকা প্রকাশের পরই দেশবাসীর সামনে পরিষ্কার হবে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত কাদের কপালে জুটল কাক্সিক্ষত দলীয় প্রতীক নৌকা, আর কোন কোন মন্ত্রী-এমপিরই বা এবার কপাল পুড়ল। দলীয় প্রার্থী ঘোষণার পর এবার শুরু হবে নির্বাচনী জোটের শরিক ও মিত্রদের সঙ্গে আসন বণ্টনের আনুষ্ঠানিক সমঝোতার প্রক্রিয়া। তবে জোটের আসন বণ্টনের ক্ষেত্রে এবার খুবই সতর্ক অবস্থানে থাকবে আওয়ামী লীগ। সারাদেশের তিনশ’ আসনে দলের একক প্রার্থিতা ঘোষণার আগে আজ রবিবার সকাল ১০টায় দলীয় ও সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভাপতি শেখ হাসিনার বাসভবনে দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলের ৩ হাজার ৩৬২ জন মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে আজকের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা দেবেন। একই সঙ্গে দল যাঁদের মনোনয়ন দিয়েছে, সব ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধভাবে তাঁদের বিজয়ী করার প্রয়োজনীয় নির্দেশও দিতে পারেন শেখ হাসিনা। এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের শনিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নির্বাচন উপলক্ষে গঠিত আওয়ামী লীগের জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সব সদস্য এবং আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী সব প্রার্থীকে (জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি, মনোনয়নপত্রের রিসিভ কপি, প্রযোজ্য ক্ষেত্রে অনলাইন ফরমের ফটোকপিসহ) যথাসময়ে সভায় উপস্থিত থাকার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, টানা চতুর্থ দিনের মতো শনিবার রাতে দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সভায় বাকি থাকা চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের বেশিরভাগ আসনের দলের মনোনয়ন চূড়ান্ত করা হয়। আজ পঞ্চম দফা বৈঠক শেষে সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ড তিনশ’ আসনেই দলের প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করে তা ঘোষণা করা হবে বলে জানা গেছে। শেষ দিন শনিবারের বৈঠকেও চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কয়েকটি আসনে বর্তমান এমপিদের বাদ দিয়ে সেখানে নতুন মুখ আনা হয়েছে। তবে কাদের কপাল পুড়ল এ ব্যাপারে মনোনয়ন বোর্ডের কোনো সদস্য বলতে রাজি হননি। শুধু এটুকু আভাস দিয়েছেন, বিগত ছয়টি বিভাগের মতো বাকি দুই বিভাগের প্রার্থিতা চূড়ান্ত করতে অধিক জনপ্রিয় ও গ্রহণযোগ্যতাকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। দলটির একাধিক সূত্রে জানা গেছে, তিনশ’ আসনেই দলের একক প্রার্থিতা চূড়ান্ত করা হলেও সবাই যে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন তা নয়। জোট-মহাজোটের হিসাবের অঙ্কে সমঝোতা হলে যেসব আসন শরিক ও মিত্র দলগুলোকে ছেড়ে দেওয়া হবে, সেসব আসন থেকে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীদের মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে। সে কারণেই চূড়ান্ত প্রার্থীদের মাঝে দলের প্রধান শেখ হাসিনা স্বাক্ষরিত নৌকা প্রতীক বরাদ্দের চিঠির সঙ্গে দলীয় মনোনীত সব প্রার্থীদের কাছ থেকেই মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের একটি করে চিঠিও নেওয়া হতে পারে। যাতে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে কোনো প্রার্থীই বিদ্রোহ করে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে দাঁড়াতে না পারেন। জানা গেছে, ১৪ দলীয় জোট, মহাজোট এবং নির্বাচনী মিত্রদের সঙ্গে আসন বণ্টনে এবার সতর্কতার সঙ্গে হিসাব নিকাশ করছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। সংশ্লিষ্ট দলের সাংগঠনিক অবস্থা এবং প্রার্থীর ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তার পাশাপাশি কোনো আসন ছাড়া হলে সেখানে আওয়ামী লীগের মধ্যে কী ধরনের প্রতিক্রিয়া হতে পারে, তা বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে। সেই সঙ্গে কী ধরনের কৌশল নেওয়া হলে নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বাড়ানো যাবে, তা-ও হিসাবে রাখা হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। জানা গেছে, আজ রবিবার ৩০০ আসনে দলীয় প্রার্থী তালিকা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করবে আওয়ামী লীগ। এরপর শুরু হবে শরিকদের মধ্যে আসন বণ্টনের আনুষ্ঠানিক আলোচনা। সমঝোতা হওয়া আসনগুলোতে দলীয় প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের নির্দেশ দেওয়া হবে। জোটগত নির্বাচনের বাইরে থাকা বাকি সব আসনে সব দলের প্রার্থীদের জন্য উন্মুক্ত রাখা হবে, এসব আসনে শরিক দলগুলোর প্রার্থীরা স্ব-স্ব দলের প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করবে, এতে ভোট কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতিও যেমন বাড়বে, তেমনি কোনো আসনেই কোনো দলের প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে পারবে না। অপর একটি সূত্রে জানা গেছে, চ্যালেঞ্জিং জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দুই ধরনের পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে আওয়ামী লীগ। শেষ পর্যন্ত বিএনপি নির্বাচনে এলে আওয়ামী লীগের জোটের পরিধি বাড়তে পারে এবং সে ক্ষেত্রে দলীয় বা জোটের মনোনয়নও ভিন্নতর হবে। বিএনপি আসলে জোট-মহাজোট গঠন করে শক্তিশালী প্রার্থীদের রেখে দুর্বল প্রার্থীদের নির্বাচন থেকে সরিয়ে রাখা হবে। আর শেষ পর্যন্ত বিএনপিসহ তাদের মিত্ররা নির্বাচনে না আসলে বিগত নির্বাচনগুলোর মতো জোট-মহাজোটের পথে না গিয়ে সবাইকে এককভাবে নির্বাচনে নামাতে চায় আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরও শনিবার সাফ জানিয়ে দিয়েছেন যে, প্রয়োজন না হলে জোটের দিকে যাবে না আওয়ামী লীগ। তিনি বলেন, শেখ হাসিনা ১৪ দলীয় জোটের চেয়ারম্যান। আমরা শরিকদের বিষয়ে এখনো ঠিক করিনি। কারণ জোটের বিপরীতে জোট হয়। আমাদের প্রতিপক্ষের যদি একটা বড় জোট হয়, সেটার বিপরীতে আমাদেরও জোট হবে। তা ছাড়া আমরা কেন অহেতুক জোট করতে যাব? প্রয়োজন না থাকলে জোট করব না। জোট করব যাদের নিয়ে মানুষের কাছে তাদের গ্রহণযোগ্যতাও থাকতে হবে। দলটির একাধিক সূত্রে জানা গেছে, জাপার সঙ্গে এখনো পর্যন্ত কোনো সমঝোতা না হলেও আওয়ামী লীগ আগেই ঘোষণা দিয়েছে তারা দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চৌদ্দ দলীয় জোটের ব্যানারেই নির্বাচন করবে। তবে ১৪ দলীয় জোটের শরিক দলের মধ্যে কতটি আসন ছেড়ে দেওয়া হবেÑ তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। আওয়ামী লীগের তিনশ’ আসনে একক প্রার্থী ঘোষণার পর পরই শরিকদের সঙ্গে আসন সমঝোতা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শরিকদের সঙ্গে বৈঠক করতে পারেন। তবে জোটের শরিকদের মধ্যে যেসব প্রার্থীর জনপ্রিয়তা ও গণভিত্তি রয়েছে তাদের ক্ষেত্রেই কেবল ছাড় দেবে আওয়ামী লীগ। এলাকায় কোনো গণভিত্তি নেই, জোটের এমন কোনো নেতাকে ছাড় দিয়ে আসন হারানোর ঝুঁকি নেবে না দলটি। প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ সর্বাধিক ৫৫-৬০টি আসনে সমঝোতার ভিত্তিতে ছাড় দিতে পারে। এক্ষেত্রে ১৪ দলীয় জোটের শরিকদের জন্য ১২-১৫ আসনে ছাড় দেওয়া হতে পারে। বিগত তিনটি সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন-সমঝোতার ভিত্তিতে নির্বাচন করেছে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি। সবশেষ ২০১৮ সালের অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন-সমঝোতায় ২২ আসনে ‘লাঙ্গল’ প্রতীকে জয়ী হয়েছিলেন জাপার প্রার্থীরা। তবে এবার আওয়ামী লীগের সঙ্গে জাপার আসন-সমঝোতা হবে কি না, হলেও জাপাকে কতটি আসন ছাড় দেওয়া হবে- তা নিয়ে বিভিন্ন সূত্র নানা আভাস দিচ্ছে। আওয়ামী লীগের সঙ্গে এবার জাপার আসন সমঝোতার বিষয়টি এখনো পর্যন্ত যেমন ধোঁয়াশায় ঢাকা, তেমনি জাপার ভেতরের বিভক্তি সেই ধোঁয়াশা অবস্থাকে আরও গাঢ় করে তুলেছে। দলটির চেয়ারম্যান জিএম কাদের, নাকি দলটির প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও সংসদের বর্তমান বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের নেতৃত্বে জাপা নতুন সংসদে যাবেÑ তা-ও এখনো নিশ্চিত নয়। আওয়ামী লীগের সঙ্গে শেষ পর্যন্ত সমঝোতা হলে সেটি জিএম কাদের নাকি বেগম রওশন এরশাদের সঙ্গে হবে, তা নিয়েও রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন তথ্য। তবে আওয়ামী লীগের একাধিক সিনিয়র নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যেহেতু জাতীয় পার্টি এবার এককভাবে তিনশ’ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দিয়েছে, তাই আওয়ামী লীগও চাইবে তারা নিজেরা নির্বাচন করে বিজয়ী হয়ে সংসদে প্রকৃত বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করুক। সমঝোতার পরিবর্তে সবাই আলাদা প্লাটফরমে নির্বাচন করলে সেক্ষেত্রে জাতীয় পার্টি দেশের প্রকৃত বিরোধী দল হিসেবে ভূমিকা পালন করতে পারবে, দেশের জনগণও তাদের প্রধান বিরোধী দল হিসেবে মেনে নেবে। তেমনি হলে জাপার আসন সংখ্যাও বাড়তে পারে। জোটের প্রার্থী নির্ধারণে জনপ্রিয়তাই মূল মাপকাঠি হবে জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের শুক্রবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, শরিক দল হোক, আর যে-ই হোক, আমাদের বিবেচনায় যেটা আসবে, আমরা আমাদের দলে প্রার্থী নির্বাচনে জনপ্রিয় প্রার্থীকেই বাছাই করছি। অন্য দল থেকে এলেও তার জনপ্রিয়তা থাকতে হবে। জনগণের কাছে যারা গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে তাদের মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে না। যাদের বাদ দেওয়া হয়েছে তারা ইলেক্টবল না; উইনেবল না। শরিকদের ব্যাপারেও একই পথ অবলম্বন করা হবে। উল্লেখ্য, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর চার দিনে ৩ হাজার ৩৬২টি মনোনয়ন ফরম বিক্রি করেছে আওয়ামী লীগ। ৩০০ আসনের বিপরীতে বিপুল পরিমাণ এই আবেদন থেকে টানা বৈঠক করে প্রার্থীদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তফসিল অনুযায়ী, আগামী ৭ জানুয়ারি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ৩০ নভেম্বর; বাছাই ১ থেকে ৪ ডিসেম্বর।

দৈনিক জামালপুর
দৈনিক জামালপুর