• বৃহস্পতিবার ০২ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৮ ১৪৩১

  • || ২২ শাওয়াল ১৪৪৫

দৈনিক জামালপুর

অগ্নিসেনা হলেন ১৫ নারী ফায়ার ফাইটার

দৈনিক জামালপুর

প্রকাশিত: ৮ ডিসেম্বর ২০২৩  

‘গতি সেবা ত্যাগ’ মূলমন্ত্রকে সামনে রেখে যেকোনো দূর্যোগ দুর্ঘটনায় জীবন বাজি রেখে সবার আগে ঝাপিয়ে পড়ে ফায়ার ফাইটাররা। দেশ ও জনগনের সেবায় নিবেদিত প্রাণ এই সংস্থাটির প্রতিষ্ঠার ৪ দশক পার হলেও নিয়োগ দেয়া হতো না কোনো নারী অগ্নিসেনা। ফলে কোনো নারী যতই স্বপ্ন দেখুক- ফায়ার ফাইটার হওয়ার স্বপ্ন অধরাই থেকে গেছে দীর্ঘ সময় ধরে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার নারীর ক্ষমতায়নের স্লোগানকে ধারণ করে সব সেক্টরেই কম বেশি নিয়োগ পেতে শুরু করে নারীরা। এরই ধারাবাহিকতায় সারাদেশ থেকে ২ হাজার ৭শর বেশি প্রার্থী থেকে সব যোগ্যতা ও পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া ১৫ নারীকে প্রথমবারের মতো নিয়োগ দিয়েছে ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদফতর। এরমাধ্যমে একদিকে সৃষ্টি হলো নতুন ইতিহাস, অন্যদিকে ছোটবেলা থেকে লালিত স্বপ্ন পুরোন হলো নিয়োগ পাওয়া ১৫ নারী অগ্নিসেনাদের। তারা বলছেন, ফায়ার ফাইটারদের চ্যালেঞ্জ নিতে প্রস্তুত তারা। সেই সঙ্গে প্রথমবারের মতো নারী অগ্নিসেনা হিসেবে নিয়োগ পেয়ে আনন্দ ও উচ্ছাসে ভাসছেন সবাই। তেমনই একজন চাঁপাইনবাবগঞ্জে বিজনেস ম্যানেজমেন্ট টেকনিক্যাল কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী ইয়াসমিন খাতুন। বৃহস্পতিবার (৭ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর মিরপুর-১০ নম্বরে অবস্থিত ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স ট্রেনিং কমপ্লেক্সে ফায়ার সার্ভিসে যোগদান করা প্রথম ব্যাচের মহিলা ফায়ার ফাইটারদের এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের অনুভূতির কথা জানান অনেকে। এসময় ইয়াসমিন বলেন, ফায়ার সার্ভিস যেকোনো দুর্যোগে অংশ নেয়। ছোটবেলা থেকেই ফায়ার ফাইটারদের এই কাজ আমার অনেক পছন্দের। পাশাপাশি ফাইটারদের চ্যালেঞ্জিং কাজগুলো ভালোবাসতাম। আমি যদি কখনো সুযোগ পাই, ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্সে যোগদান করবো, এমনটিই ছোট বেলা থেকে স্বপ্ন বুনেছি। ইয়াসমিন বলেন, আমি যখন ফায়ার সার্ভিসে নারী ফায়ার ফাইটারদের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিটি দেখি আবেদন করি। সুযোগও মিলে গেলো। প্রতিটা ডিপার্টমেন্টে মহিলা আছে কিন্তু এই ডিপার্টমেন্টে কোনো নারী ছিল না। আমরা এখন ইতিহাসের অংশ। হাটহাজারী কলেজের শিক্ষার্থী নাজমুল নাহার দিনা নারী ফায়ার ফাইটার হিসেবে নিয়োগ পাওয়ায় উচ্ছ্বসিত। তিনি বলেন, ফায়ার সার্ভিস একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। আমার প্রধান লক্ষ্য থাকবে সেবা করা। মেহেরপুর জেলা থেকে নিয়োগ পাওয়া প্রিয়াঙ্কা বলেন, আমরা ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সর গর্বিত একজন অগ্নিযোদ্ধা হতে চাই। যারা কিনা বাংলাদেশের দুর্যোগ, দুর্ঘটনা ও উদ্ধার কাজে কাজ করবে। এটা আমাদের কাছে আশীর্বাদস্বরূপ এবং আমরা অত্যন্ত আনন্দিত এই ডিপার্টমেন্টের একজন ফায়ার ফাইটার হিসেবে যোগদান করতে পেরে। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন বলেন, ফায়ার ফাইটার মহিলা ব্যাচের ১৫ জন নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এটা ইতিহাসের একটা অংশ, প্রধানমন্ত্রীর নারীর ক্ষমতায়নের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী এই অগ্নিসেনা বা ফায়ার ফাইটার হিসেবে তাদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ইতোপূর্বে ফায়ার সার্ভিসে নারী কর্মকর্তা থাকলেও ছিল না কোনো নারী ফায়ার ফাইটার। ফায়ার সার্ভিস ডিজি বলেন, ২৭০০ জনের বেশি প্রার্থী নারী ফায়ার ফাইটার পদে আবেদন করেছিলেন। সেখান থেকে বাছাই করে ১৫ জনকে আমরা নিয়োগ দিয়েছি। গত নভেম্বরে ১৮ তারিখ এই নারী ফায়ার ফাইটাররা যোগদান করেছেন। এরপর তাদের তিন সপ্তাহের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, কেন ফায়ার সার্ভিসে মহিলা ফায়ার ফাইটার নিয়োগ করলাম এরকম একটা প্রশ্ন আসতেই পারে। অগ্নি দুর্ঘটনা বা যে কোনো দুর্যোগ দুর্ঘটনায় যেসব মহিলারা আক্রান্ত বা আহত হন তাদের উদ্ধার করার ক্ষেত্রে অভিযান পরিচালনা করতে হয়। অভিযানে যদি মহিলা ফাইটার থাকে তাহলে কাজটি সহজ হয়। আরেকটি উদ্দেশ্য হচ্ছে রাষ্ট্রীয়ভাবে নারীর ক্ষমতায়নে যে উদ্যোগ প্রধানমন্ত্রী গ্রহণ করেছেন সেটির অংশ হিসেবে ফায়ার সার্ভিসের নারী ফায়ার ফাইটার নিয়োগ করা হলো। যা বললেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী: বিজিবি-পুলিশসহ সব সেক্টরেই নিয়োগ পেয়ে নারীরা সাহসিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন। ফায়ার সার্ভিসে ছিল না নারী অগ্নিসেনা। ফায়ার সার্ভিসে প্রথমবারের মতো সব যোগ্যতায় উত্তীর্ণ ১৫ নারীকে নিয়োগ দিয়েছি। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এসব কথা বলেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিক নির্দেশনায় আমরা প্রত্যেকটি উপজেলায় ফায়ার সার্ভিস স্টেশন স্থাপন করেছি। এরপরও উপজেলার বাইরেও যেখানে প্রয়োজন সেখানেই ফায়ার সার্ভিস স্টেশন তৈরি করছি। দেশ যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে সেভাবে চাহিদা অনুযায়ী ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা, কর্মচারী, ফায়ার ফাইটার বা অগ্নিসেনা নিয়োগ, আধুনিকায়ন, প্রযুক্তিগত ব্যবহার ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছি। অত্যাধুনিক সরঞ্জামাদি দিয়ে ফায়ার সার্ভিসকে সমৃদ্ধ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ফায়ার সার্ভিসের সেবা অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং। শুধু চ্যালেঞ্জিং নয়, সব সময়ে যে কোনো পরিস্থিতির জন্য তৈরি থাকতে হয়। হঠাৎ অগ্নিকাণ্ড বা ভূমিকম্প হতে পারে। যেকোনো কিছু মোকাবিলার জন্যই তাদেরকে প্রস্তুত থাকতে হয়। ফায়ার সার্ভিসে প্রথমবারের মতো নিয়োগ পাওয়া নারী ব্যাচের সদস্যরা আরো ভালো করবেন বলেও প্রত্যাশা রাখেন আসাদুজ্জামান খান। উল্লেখ্য, চলতি বছরের ২০ জুন ফায়ারফাইটার নিয়োগের জন্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী ফায়ারফাইটার (মহিলা) পদে ২ হাজার ৭০৭ জন আবেদনকারীর মধ্যে প্রাথমিক যাচাই-বাছাই, শারীরিক যোগ্যতা ও মেডিকেল টেস্ট, লিখিত পরীক্ষা ও মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে ১৫ জনকে চূড়ান্তভাবে ফায়ারফাইটার (মহিলা) পদে নিয়োগের জন্য নির্বাচিত করে নিয়োগপত্র জারি করা হয়। ১৮ নভেম্বর নারী ফায়ারফাইটাররা আনুষ্ঠানিকভাবে ফায়ার সার্ভিসে যোগদান করেন। এখন তাদের বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ চলছে।

দৈনিক জামালপুর
দৈনিক জামালপুর