• বুধবার ১৫ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ১ ১৪৩১

  • || ০৬ জ্বিলকদ ১৪৪৫

দৈনিক জামালপুর

সরগরম সারাদেশ

দৈনিক জামালপুর

প্রকাশিত: ২০ ডিসেম্বর ২০২৩  

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাকি মাত্র ১৭ দিন। এর মধ্যে নির্বাচনী প্রচার চালানো যাবে ১৫ দিন। তাই আর এক মিনিটও সময় নষ্ট করতে চান না প্রার্থী ও তাদের কর্মী-সমর্থকরা। সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত চলছে বিরামহীন প্রচার। মিছিল, মিটিং, পোস্টারিং ও মাইকিংসহ বিভিন্নভাবে চলছে ভোট প্রার্থনা। দলীয় প্রার্থীদের পাশাপাশি স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও এবার নির্বাচনের মাঠে অধিকতর সক্রিয়। সবকিছু মিলিয়ে ভোটের প্রচার চাঙ্গা। রাজধানীর বাড্ডা, গুলশান, রামপুরা, মৌচাক ও মালিবাগ এলাকা পরিদর্শন করে দেখা যায় সকাল থেকেই আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন দলের প্রার্থী ও তাদের কর্মী-সমর্থকরা দলে দলে নিজ নিজ সংসদীয় এলাকার রাজপথ ও অলি-গলি, বাজার ও দোকানপাট এবং বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটারদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করছেন। জনে জনে হাত মিলিয়ে দোয়া ও ভোট প্রার্থনা করছেন। এ সময় কর্মী-সমর্থকরা স্লোগান দিয়ে এলাকাবাসীর দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেন। অলি-গলি ও রাজপথে বিভিন্ন প্রার্থীর সাদা কালো পোস্টার চোখে পড়ে। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের পোস্টারে ছেয়ে গেছে পুরো নির্বাচনী এলাকা। রোড ডিভাইডার, বিদ্যুতের খাম্বা, মার্কেট ও আবাসিক ভবন এবং ফুট ওভারব্রিজগুলোতেও পোস্টারে সয়লাব। কোনো কোনো প্রার্থীর পক্ষে পিকআপ ভ্যান ও সিএনজির চারদিকে পোস্টার সাঁটিয়ে মাইক লাগিয়ে প্রচার চালানো হচ্ছে। এবার ৩০০ আসনের মধ্যে বড় বড় দলীয় প্রার্থীর পাশাপাশি অধিকাংশ আসনেই শক্তিশালী স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন। আবার কোথাও কোথাও ছোট ছোট নতুন নিবন্ধিত দলেরও শক্তিশালী প্রার্থী রয়েছেন। তাই নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে শুরু থেকেই প্রতিটি আসনের প্রার্থী ও তাদের কর্মী-সমর্থকরা জোর তৎপতা চালাচ্ছেন। সোমবার প্রতীক পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সরাসরি ভোটের মাঠে নেমে পড়েন তারা। কেউ কেউ বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী ও সমর্থকদের সঙ্গে নিয়ে শোডাউন করে পাড়া-মহল্লায় গণসংযোগ শুরু করেন। এর ফলে সরগরম হয়ে ওঠে প্রতিটি সংসদীয় এলাকা। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে থেকেই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, নির্বাচন কমিশন, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সতর্ক অবস্থানে থেকে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ বজায় রাখতে বাস্তবমুখী পদক্ষেপ নেয়। আর এ কারণে নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রার্থী ও তাদের কর্মী-সমর্থকরাও এ নির্বাচনকে অধিকতর গুরুত্ব দিয়ে মাঠে সক্রিয় হয়ে ওঠেন। এদিকে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে মঙ্গলবার রাজধানীতে বড় ধরনের শোডাউন করে বর্ণাঢ্য বিজয় র‌্যালি করে আওয়ামী লীগ। এই র‌্যালিতে বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী ও কর্মী-সমর্থক নিয়ে যোগ দেন ঢাকার বিভিন্ন আসনের প্রার্থীরা। বিশাল বিশাল নৌকা ও প্রার্থীদের ছবি সংবলিত নানা রঙের ব্যানার, পোস্টার ও প্ল্যাকার্ড বহন করে র‌্যালিতে অংশ নেন তারা। এ সময় ‘নৌকা নৌকা’ স্লোগানে মুখরিত হয় চারদিক। বিজয় র‌্যালি নির্বাচনী র‌্যালিতে পরিণত হয়। আজ বুধবার সিলেট থেকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরু করবেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। তফসিল ঘোষণার পর থেকে বিভিন্ন কৌশলে প্রার্থীরা নীরব প্রচার চালিয়ে গেলেও প্রতীক বরাদ্দের সঙ্গে সঙ্গে তারা সরব প্রচার শুরু করে। এরই অংশ হিসেবে প্রার্থীরা নিজ নিজ সংসদীয় এলাকার বিভিন্ন বয়সী ভোটারসহ সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে সালাম ও শুভেচ্ছা বিনিময়ের পাশাপাশি হাতে হাত মেলান, কোলাকুলি করেন। নিবন্ধিত ৪৪টি দলের মধ্যে এবার ২৭ টি রাজনৈতিক দল ও পাঁচ শতাধিক স্বতন্ত্র প্রার্থীসহ ১৯শ’র বেশি প্রার্থী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন। ৩০০ আসনের মধ্যে অর্ধেকের বেশি আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও প্রভাবশালী। তাই এসব আসনে এবার আওয়ামী লীগ বা জাতীয় পার্টির সঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে বলে নির্বাচন বিশ্লেষকরা মনে করছেন। ভোটের প্রচারেও তা লক্ষ্য করা যাচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট এলাকাবাসী মনে করছেন। রাজপথের বিরোধী দল বিএনপিসহ ক’টি দল জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করে লাগাতার আন্দোলন চালিয়ে গেলেও নির্বাচনের পরিবেশ এখনো পর্যন্ত উৎসবমুখর। রাজপথে আন্দোলনকারীদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা না গেলেও সংসদ সদস্য পদে অংশ নেওয়া প্রার্থী ও কর্মী-সমর্থকদের সরব উপস্থিতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এ কারণে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে নেতিবাচক বিভিন্ন বক্তব্য দিলেও এখন তারা আর এ বিষয়ে কথা বলছেন না। বরং কোনো কোনো দেশের কূটনীতিকরা দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে ইতিবাচক কথা বলছেন। নির্বাচন কশিনের (ইসি) কঠোর অবস্থানের কারণে এবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রার্থী ও তাদের কর্মী-সমর্থকরা অধিকতর সতর্ক। সংশ্লিষ্ট ইসি কর্মকর্তাদের পাশাপাশি সরকারের প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী রয়েছে তৎপর। নির্বাচনের আচরণবিধি প্রয়োগ করা হচ্ছে কঠোরভাবে। কেউ আচরণবিধি ভঙ্গ করলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা হচ্ছে। সবার জন্য ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ কারণে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখেই প্রার্থী ও তাদের লোকজন ভোটের প্রচার চালাচ্ছেন। জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয় সংবিধান অনুসারে প্রতি ৫ বছর পর পর। ৩০০ আসনের মধ্যে প্রতিটি সংসদীয় আসনে যিনি নির্বাচিত হন তিনিই ৫ বছরের জন্য এলাকার জনগণের প্রতিনিধিত্ব করেন। তাই এলাকার উন্নয়নে বজায় রাখতে সবাই চান নিজ পছন্দের প্রার্থী ভোটে জিতে আসুক। এ কারণেই পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে মাঠে সক্রিয় হচ্ছেন ভোটাররা। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দূর-দূরান্ত থেকে প্রার্থীদের স্বজন ও কর্মী-সমর্থকরা ছুটে আসছেন। কেউ কেউ আর্থিক সহায়তাও দিচ্ছেন নিজ পছন্দের প্রার্থীকে। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আর মাত্র ১৭ দিন বাকি থাকায় ইতোমধ্যেই শহর-বন্দর ও গ্রাম গঞ্জের হাট-বাজারের চায়ের দোকান, রেস্টুরেন্ট এমনকি চলন্ত বাস, ট্রেন লঞ্চেও নির্বাচন নিয়ে জোর আলোচনা চলছে। এসব আলাপ-আলোচনায় বিভিন্ন এলাকার প্রার্থী এবং কোন রাজনৈতিক দলের কি অবস্থা তাও স্থান পাচ্ছে। সেই সঙ্গে রাজপথের বিরোধী দল বিএনপির নির্বাচনে না আসা এবং তাদের ছাড়া নির্বাচনের সার্বিক পরিবেশ কেমন হবে তা নিয়েও আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটার ১১ কোটি ৯৬ লাখ ৯১ হাজার ৬৩৩ জন ভোটারের মধ্যে প্রায় ৪ লাখ তরুণ ভোটার। আর এই ভোটাররাই হবে এবার নির্বাচনে বিজয়ের ফ্যাক্টর। তাই সব প্রার্থীই তরুণ ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের পোস্ট দিচ্ছেন। ভোটে জিতলে তরুণদের জন্য কি কি করবেন তাও সামাজিক মাধ্যমের প্রচারে তুলে ধরছেন প্রার্থীরা।

দৈনিক জামালপুর
দৈনিক জামালপুর