• বুধবার ১৫ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ১ ১৪৩১

  • || ০৬ জ্বিলকদ ১৪৪৫

দৈনিক জামালপুর

ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে আ`লীগের ‘রোড টু স্মার্ট বাংলাদেশ ক্যাম্পেইন

দৈনিক জামালপুর

প্রকাশিত: ২০ ডিসেম্বর ২০২৩  

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বাড়ানোর পাশাপাশি বিভিন্ন অপপ্রচারের জবাব এবং সরকারের ১৫ বছরের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরতে প্রথমবারের মতো ৩০০ আসনে ৬ লাখ নেতাকর্মীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগের জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির নেওয়া ‘রোড টু স্মার্ট বাংলাদেশ ক্যাম্পেইন’-এর আওতায় প্রশিক্ষণ নিয়ে তারা প্রত্যেক ভোটারের বাড়িতে যাওয়ার কাজ শুরু করেছেন। সারা দেশে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক ও বর্তমান নেতাকর্মীরা এই দায়িত্ব পেয়েছেন। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রত্যেককে ২০০ ভোটারের দায়িত্ব নিতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে তারা শেখ হাসিনার উন্নয়ন ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার বার্তা প্রত্যেক ভোটারের কাছে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব পালন করছেন। এই লক্ষ্য বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে দেশব্যাপী আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক জেলা অফিসগুলোকে স্মার্ট কার্যালয় হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে। আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ বুধবার সিলেট থেকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদের নির্বাচনি প্রচারণা আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করবেন। সকালে সিলেটে পৌঁছে হজরত শাহজালাল (রহ.) ও হজরত শাহপরান (রহ.)-এর মাজার জিয়ারত করবেন তিনি। এরপর স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করবেন। পরে নগরীর আলিয়া মাদরাসা মাঠে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত নির্বাচনি জনসভায় বক্তব্য রাখবেন তিনি। এবারও বিভিন্ন বিভাগে ও জেলায় আওয়ামী লীগের নির্বাচনি জনসভায় বক্তব্য রাখবেন শেখ হাসিনা। এর মধ্যে পাঁচ বিভাগের আট জেলায় ৯টি নির্বাচনি জনসভার তারিখ চূড়ান্ত হয়েছে। জানা গেছে, আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা ২১ ডিসেম্বর বিকাল ৩টায় রংপুর বিভাগের পঞ্চগড় ও লালমনিরহাট, রাজশাহী বিভাগের নাটোর ও পাবনা এবং চট্টগ্রাম বিভাগের খাগড়াছড়িতে ভার্চুয়ালি নির্বাচনি জনসভায় বক্তব্য রাখবেন। আগামী ২৯ ডিসেম্বর বেলা ৩টায় বরিশাল জেলা সদরে নির্বাচনি জনসভায় বক্তব্য রাখবেন শেখ হাসিনা। পরদিন ৩০ ডিসেম্বর গোপালগঞ্জ-৩ আসনে নিজের নির্বাচনি এলাকায় (টুঙ্গিপাড়া ও কোটালীপাড়া) এবং মাদারীপুর-৩ নির্বাচনি জনসভায় বক্তব্য রাখবেন আওয়ামী লীগের সভাপতি। ১৮ সেপ্টেম্বর রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে ‘রোড টু স্মার্ট বাংলাদেশ’ কর্মশালায় মাস্টার ট্রেইনার প্রশিক্ষণ কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়। পরে ২০০ মাস্টার ট্রেইনারকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এই ২০০ মাস্টার ট্রেইনার সারা দেশে ৬ লাখ নেতাকর্মীকে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। এর সার্বিক দেখভালের দায়িত্ব পালন করছেন সাবেক সচিব কবির বিন আনোয়ার। প্রতিটি ভোটারের ঘরে পৌঁছানোর লক্ষ্য নির্ধারণের এই উদ্যোগকে বলা হচ্ছে ‘অফলাইন ক্যাম্পেইন’। সবার ওপরে রয়েছেন ‘মাস্টার ট্রেইনার’। অন্যদিকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ৬ লাখ নেতাকর্মী সরাসরি ভোটারের মুখোমুখি হয়ে মাঠপর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়ন ও ভবিষ্যতের বাংলাদেশের জন্য তার ভাবনা কী, তা তুলে ধরছেন। তারা ভোটারদের নানা প্রশ্নের জবাব দিচ্ছেন। পাশাপাশি বিরোধী দলের অপপ্রচারের পালটা বক্তব্য তুলে ধরছেন, যা ভোটারকে সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করবে বলে এই কার্যক্রমের উদ্যোক্তারা মনে করেন। এই উদ্যোগ সমন্বয়ের জন্য একজন ফোকাল পয়েন্ট নিযুক্ত করা হয়েছে। কর্মীদের তথ্য দিয়ে সহায়তা করতে কাজ করবে কেন্দ্রীয় কল সেন্টার। এছাড়া এই পুরো কর্মযজ্ঞ অত্যাধুনিক প্রযুক্তি দিয়ে সমন্বয় করছে একটি তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ দল। তাদের বিশ্বাস, এই প্রচারের ফলে আগামী নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বাড়বে। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় পাঁচ জন নেতা ইত্তেফাককে জানান, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে শুরু থেকেই নানা কৌশলে অগ্রসর হচ্ছে আওয়ামী লীগ। বিএনপির আন্দোলন মোকাবিলার পাশাপাশি নিজেদের নির্বাচনি প্রস্তুতিও এগিয়ে নিয়েছে দলটি। বিএনপিবিহীন এই নির্বাচনে ভোটের মাঠ জুড়ে উৎসবের আমেজ ধরে রাখতে চায় ক্ষমতাসীনেরা। একই সঙ্গে নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ দেখানো এবং উল্লেখযোগ্যসংখ্যক ভোটার কেন্দ্রে আনাই এখন ক্ষমতাসীনদের সামনে প্রধান চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে ‘রোড টু স্মার্ট বাংলাদেশ ক্যাম্পেইন’-এর মাধ্যমে ভোটার উপস্থিতির হার অনেক বাড়বে বলে তারা আশাবাদ ব্যক্ত করেন। সিলেট আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে প্রধানমন্ত্রীর আজকের জনসভাটি জনসমুদ্রে রূপ দিতে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত রাজনৈতিক দলের প্রধানেরা সিলেটের হজরত শাহজালাল (রহ.) এবং হজরত শাহপরান (রহ.)-এর মাজার জিয়ারত শেষে ঐতিহ্যবাহী আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে জনসভার মাধ্যমে নির্বাচনি প্রচারণা শুরু করেন। এবারও আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা এই ধারা বজায় রাখছেন। আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে নৌকার আদলে তৈরি করা হয়েছে জনসভামঞ্চ। বিভাগের প্রতিটি জেলা-উপজেলা থেকে দলীয় নেতা-কর্মীরা এসে উপস্থিত হবেন। জনসভায় অন্তত ১০ লাখ মানুষের সমাগম ঘটবে বলে আশা করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সর্বশেষ ২০২২ সালের ২১ জুন বন্যাকবলিত সিলেটের মানুষের দুঃখ-দুর্দশার করুণ চিত্র দেখতে হেলিকপ্টারযোগে এই বিভাগে যান। এর আগে ২০১৮ সালের ২২ ডিসেম্বর সিলেট সফর করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। ঐ বছরের ৩০ জানুয়ারি সিলেটে প্রাকনির্বাচনী জনসভায় যোগদান করেন। এর আগেও তিনি সিলেটে অনেকবার এসেছেন। এর মধ্যে ২০০১ সালের ফেব্রুয়ারি, আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে তিনি তিন বার সিলেট সফর করেন। ১৯৮১ সালের ২৯ মে শেখ হাসিনা প্রথম বার সিলেটে আসেন। ঐ সময় তিনি সিলেট আলিয়া মাদ্রাসা মাঠের এক জনসভায় বক্তব্য রাখেন। এরপর ১৯৮৬ সালের ১০ অক্টোবর তিনি সিলেট সফর করেন। ঐ সময়ও একই মাঠে বক্তব্য রাখেন। এর প্রায় দুই বছর পর ১৯৮৭ সালের ৯ অক্টোবর সিলেটের হরিপুরে আসেন। ১৯৮৯ সালের ২০ মার্চে তিনি সিলেট শহরের পুলের মুখে এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেন। এর পরদিন ২১ মার্চ তিনি সিলেটের বালাগঞ্জ, বিশ্বনাথ ও জগন্নাথপুরে সফর করেন। ১৯৯০ সালের ৩ জানুয়ারি সিলেটের মোগলাবাজারে এক কৃষক সমাবেশে যোগ দেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী। ১৯৯১ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি তিনি সিলেট সফরে আসেন এবং ঐ সময় আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে নির্বাচনি জনসভা করেন। এরপর ১৯৯৩ সালের ২৯ জুন তিনি সিলেট সফরে আসেন। ১৯৯৭ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি এবং একই বছরের ১৯ ও ২০ অক্টোবর বঙ্গবন্ধুকন্যা আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে আয়োজিত সিলেট বিভাগ আন্দোলনে যোগ দেন। পরে ২০০১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি, ২৭ আগস্ট ও ২৬ সেপ্টেম্বর; ২০০৪, ২০০৫, ২০১০ সালের ৩ এপ্রিল, একই বছরের নভেম্বর, ২০১২ সালের ২৪ মার্চ, ২০১৩ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সালের ১৮ জুন, ২০১৬ সালের ২১ জানুয়ারি ও ২৩ নভেম্বর তিনি সিলেট সফর করেন। এরপর ২০১৭ সালের ৩০ এপ্রিল হাওরের ফসলহানিতে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পাশে দাঁড়াতে তিনি সুনামগঞ্জের শাল্লায় যান।

দৈনিক জামালপুর
দৈনিক জামালপুর