• শুক্রবার ০৩ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২০ ১৪৩১

  • || ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫

দৈনিক জামালপুর

লাখো মুসল্লির পদচারণায় মুখর তুরাগতীর

দৈনিক জামালপুর

প্রকাশিত: ২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪  

টঙ্গীর তুরাগতীরে বিশ্ব ইজতেমায় মুসল্লির ঢল নামছে। কিছুটা বৈরী আবহাওয়া সত্ত্বেও বৃহস্পতিবার ভোর থেকে স্রোতের মতো মুসল্লিরা ইজতেমা ময়দানে আসতে থাকেন। আসরের নামাজের আগেই কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় ১৬০ একরের ময়দান। পরে মুসল্লিরা রাস্তার আশপাশে শামিয়ানা টানিয়ে আশ্রয় নেন। আগের রাতে বেশ বৃষ্টি ছিল। তাতে কী? ভেজা স্যাঁতসেঁতে ময়দানে বসেই লাখ লাখ মুসল্লি গতকাল ফজরের পর ভারতের প্রখ্যাত বুজুর্গ মাওলানা আহমদ লাট ও জোহরের পর বাংলাদেশের মুরব্বি মাওলানা রবিউল হকের নির্দেশনামূলক বয়ান শোনেন। আসরের নামাজের পর মাওলানা ওমর ফারুক ও মাগরিবের পর ভারতের মাওলানা ইব্রাহীম দেওলা বয়ান করেন। তুরাগের তীরে আজ শুক্রবার ফজরের নামাজের পর মাওলানা আহমাদ বাটলারের আমবয়ানের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হচ্ছে এবারের বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব। অবশ্য গতকাল বৃহস্পতিবার তাবলিগ জামাতের রেওয়াজ অনুযায়ী ফজরের নামাজের পর নির্দেশনামূলক বয়ানের মধ্য দিয়ে ৫৮তম এ ইজতেমার কার্যক্রম শুরু হয়। ইজতেমা ময়দানে তিন দিনব্যাপী সুশৃঙ্খলভাবে অবস্থান, ইবাদত বন্দেগির নিয়মকানুন ও করণীয় বিভিন্ন দিক নিয়ে বয়ান করা হয়। উর্দু ভাষার মূল বয়ানকে মূল মঞ্চের চারপাশে বিদেশি বিভিন্ন ভাষাভাষী মেহমানের জন্য বাংলা ছাড়াও ইংরেজি, আরবি, ফার্সিসহ কয়েকটি ভাষায় তাৎক্ষণিক ভাষান্তর করে শোনানো হয়। ইমান, আমল, আখলাকসহ তাবলিগের ছয় উসুল বা মূলনীতির ওপর শীর্ষ মুরব্বিদের করা বয়ান প্রতিদিনই তাৎক্ষণিক ভাষান্তর করে শোনানোর ব্যবস্থা রয়েছে। আজ জুমার নামাজের আগে তালিম করবেন মাওলানা জিয়াউল হক; জুমা পড়াবেন মাওলানা যোবায়ের। জুমার পর বয়ান করবেন জর্ডানের খতিব ওমর; আসরের পর কাকরাইল মসজিদের খতিব মাওলানা যোবায়ের ও মাগরিবের পর মাওলানা আহমদ লাট। প্রথম পর্বের ইজতেমার মিডিয়া সমন্বয়কারী জহির ইবনে মুসলিম এসব তথ্য জানান। ভারত, পাকিস্তান, কুয়েত, সৌদি আরব, আফগানিস্তান, জাপান, ওমান, কানাডা, মোজাম্বিক, মালয়েশিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, সিঙ্গাপুর, ইতালি, জর্ডান, যুক্তরাজ্যসহ অন্তত ৪০টি দেশের প্রায় এক হাজার বিদেশি মেহমান ময়দানে পৌঁছেছেন। বিশ্ব ইজতেমায় বিদেশি মেহমানদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে কর্তৃপক্ষ। বিদেশি মেহমানদের খিত্তাকে ঘিরে বিশেষ নিরাপত্তাবলয় গড়ে তোলা হয়েছে। বিদেশি খিত্তার পাশে পুলিশ, র‍্যাবসহ বিভিন্ন বাহিনীর উপনিয়ন্ত্রণ কক্ষ স্থাপন করা হয়েছে। ইজতেমার নিরাপত্তায় মোতায়েন করা হয়েছে ছয় হাজার পুলিশ সদস্য। ইজতেমা আয়োজকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, মুসল্লিদের সার্বিক সেবা দেওয়ার জন্য ১০টি বিভাগ করা হয়েছে। বিভাগগুলো হলো– পাহারা, এস্কেবাল (অভ্যর্থনা), জুর্নেওয়ালী, পানি, বিদ্যুৎ, মাইক, সাফাই, রিজার্ভ, গোডাউন ও নজমওয়ালী জামাত। আশা করা হচ্ছে, আজ ইজতেমা ময়দান ছাপিয়ে কামারপাড়া, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কসহ আশপাশের অলিগলিতেও কাতারবদ্ধ হয়ে জুমার নামাজে অংশ নেবেন মুসল্লিরা। ময়দানের পশ্চিমে তুরাগ নদের পূর্ব পাশে নামাজের মিম্বার এবং উত্তর-পশ্চিম দিকে বিদেশি মুসল্লিদের কামরার পাশে বয়ান মঞ্চ নির্মাণ করা হয়েছে। নামাজের মিম্বার থেকে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের ইমাম এবং বয়ানের মঞ্চে বয়ানকারী অবস্থান করেন। বয়ান মঞ্চ থেকে আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করা হবে। এক বর্গকিলোমিটার আয়তনের ময়দানে বাঁশের খুঁটির ওপর বয়ান শোনার জন্য লাগানো হয়েছে বিশেষ ছাতা মাইক। বসানো হয়েছে পর্যাপ্ত বৈদ্যুতিক বাতি। দেশীয় তাবলিগ জামাতের মুসল্লিদের জন্য জেলাওয়ারি আলাদা খিত্তা রয়েছে। ধর্মমন্ত্রী ফরিদুল হক খান গতকাল ইজতেমা ময়দান পরিদর্শন করেছেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিশ্ব ইজতেমা নির্বিঘ্ন করতে সরকার সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। মুসল্লিদের সেবা ও নিরাপত্তায় জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, র‍্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষার সব দপ্তর নিয়োজিত রয়েছে। তাবলিগ জামাতের নিজেদের মধ্যে বিরোধের কারণে এবারও বিশ্ব ইজতেমা দুই পর্বে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। প্রথম পর্বে যোবায়েরপন্থিরা অংশ নিচ্ছেন। আর সাদ কান্ধলভীর অনুসারীরা ইজতেমা করবেন ৯, ১০ ও ১১ ফেব্রুয়ারি। সে হিসেবে এখন যারা মাঠে আছেন বা আসছেন, তারা সবাই মাওলানা যোবায়েরপন্থি। আরেক মুসল্লির মৃত্যু ইজতেমা ময়দানে আরেক মুসল্লির মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরের পর ঢাকার একটি হাসপাতালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। নিহতের নাম আবদুস সাত্তার (৭০)। তিনি নেত্রকোনা সদর থানার কুনিয়া গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে। এ নিয়ে এবারের ইজতেমায় তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের জিম্মাদার প্রকৌশলী গিয়াস উদ্দিন জানান, টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে বৃহস্পতিবার সকালে বমি হলে তাৎক্ষণিকভাবে আবদুস সাত্তারকে টঙ্গীর শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তাঁর অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে নিয়ে যাওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

দৈনিক জামালপুর
দৈনিক জামালপুর