রপ্তানি হচ্ছে বিস্কুট, ক্যান্ডি, নুডলস

রপ্তানিতে দেশের খাদ্য প্রক্রিয়াজাত শিল্পের অবদান বাড়ছে। অর্থনীতিতে এ শিল্পখাত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। প্রতি বছর এ খাত থেকে বৈদেশিক মুদ্রা আসছে প্রায় ৫০ কোটি ডলার। বাপার পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে ক্যান্ডি রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ৩০ মিলিয়ন ডলার। এই সময়ে প্রক্রিয়াজাত খাবার ক্যাটাগরিতে চতুর্থ উপার্জনকারী পণ্য ছিল ক্যান্ডি। বিস্কুট ও বেকারিজাত পণ্য তালিকার শীর্ষে ছিল এবং মসলা ও পানীয় যথাক্রমে দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে ছিল।

বাপা, ক্যান্ডি, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য শিল্প, রপ্তানি, মধ্যপ্রাচ্য, বাংলাদেশ এগ্রো-প্রসেসরস অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশের প্রক্রিয়াজাত খাদ্য শিল্পের রপ্তানি পণ্যের শীর্ষ পাঁচটির একটি এখন ক্যান্ডি। অথচ এক দশক আগেও এই পণ্যটি রপ্তানিকারকদের আগ্রহে ছিল না। এ ছাড়াও দেশের আরেকটি প্রধান রপ্তানি পণ্য হয়ে উঠেছে নুডলস। বাংলাদেশ এগ্রো-প্রসেসরস অ্যাসোসিয়েশনের (বাপা) তথ্য অনুযায়ী, ২০০৯-১০ অর্থবছরের শীর্ষ ১০ রপ্তানি পণ্যের তালিকায় সপ্তম স্থানে ছিল বিস্কুট ও বেকারিজাত পণ্য। কিন্তু বর্তমানে পানীয়র পরিবর্তে বিস্কুট ও বেকারিজাত পণ্য এই শিল্পের শীর্ষ রপ্তানি পণ্য হয়ে উঠেছে। এই তথ্যে প্রক্রিয়াজাত খাদ্য রপ্তানিতে স্পষ্টভাবে পরিবর্তনের দিকটি ফুটে উঠেছে। দেশের বৃহৎ খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ও রপ্তানিকারক প্রাণ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইলিয়াস মৃধা বলেন, এক দশক আগেও বাংলাদেশে ক্যান্ডি তৈরির কারখানা ছিল। কিন্তু আমরা এই মিষ্টান্ন পণ্যের জন্য বিদেশের বাজার খুঁজে বের করার চেষ্টা করিনি। তবে আমরা গত পাঁচ বছর ধরে অন্তর্জাতিক বাজার খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি। স্কয়ার ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেডের চিফ অপারেটিং অফিসার পারভেজ সাইফুল ইসলাম বলেন, বিদেশে মসলার চাহিদা বাড়ছে। বাপার তথ্য অনুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশ খাদ্য পণ্য রপ্তানি থেকে  প্রায় ৪৬ কোটি ডলার আয় করেছে, যার ৯১ শতাংশ এসেছে শীর্ষ ১০টি পণ্য থেকে। যেভাবে রপ্তানি বাড়ছে তাতে আগামী অর্থবছরে এ খাতের রপ্তানি আয় হবে ৫০ কোটি ডলার বা সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা। যদিও বাপা এখনো ২০২২-২৩ অর্থবছরের পণ্যভিত্তিক রপ্তানি আয়ের তথ্য সংকলন করেনি।

সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশীয় রপ্তানিকারকরা প্রাথমিকভাবে মূলত মধ্যপ্রাচ্য ও অন্যান্য অঞ্চলে কর্মরত বাংলাদেশীদের প্রাধান্য দিয়েছে। বিদেশীদের বিষয়টি মাথায় রেখে রপ্তানির তালিকায় উচ্চ মানের পণ্য যোগ করা হয়েছে। আরবরাও বাংলাদেশ থেকে পাঠানো মিষ্টান্ন এবং বিস্কুট কেনেন। আমরা মধ্যপ্রাচ্যে মিষ্টির সম্ভাবনা খুঁজে পাওয়া গেছে। সেখানের বাজারের যেসব ক্যান্ডি পাওয়া যায় সেগুলো তুরস্কের এবং বেশ ব্যয়বহুল। তাইা সেখানে বাজার ধরতে চেষ্টা করতে হবে। এ ছাড়া মধ্যপ্রাচ্য ও আসিয়ান অঞ্চলে ক্যান্ডি বিক্রি করা হচ্ছে। এ ছাড়া অস্ট্রেলিয়াতেও প্রচুর পরিমাণে ক্যান্ডি পণ্য সরবরাহ করা হয়। অতীতে বাংলাদেশী ভোক্তাদের ওপর মনোযোগ থাকলেও এখন সত্যিকার অর্থে বৈশ্বিক বাজারে প্রবেশ করতে পারছেন উদ্যোক্তারা। এদিকে বাংলাদেশের তৈরি নুডলস ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের বাজারে রপ্তানি হচ্ছে। অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের প্রধান নাজিম উদ্দিন বলেন, তারা প্রাথমিকভাবে মধ্যপ্রাচ্যকে বিস্কুট ও মিষ্টান্ন বিক্রির জন্য লক্ষ্যবস্তু করেছিল। শেষ পর্যন্ত তারা রপ্তানি আয় বাড়াতে পেরেছে। তিনি বলেন, আমাদের বিস্কুট ও ড্রাই কেক আরবসহ বিদেশী ভোক্তাদের কাছেও জনপ্রিয়। ২০০৯-১০ অর্থবছর থেকে প্রক্রিয়াজাত খাবার থেকে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় বেড়েছে সাত গুণেরও বেশি। বিদেশে বসবাসরত ও কর্মরত এক কোটি বাংলাদেশীর প্রায় এক-চতুর্থাংশই সৌদি আরবে বসবাস করেন। সুতরাং দেশটি প্রক্রিয়াজাত খাবারের বৃহত্তম গন্তব্য এবং আগামী বছরগুলোতে সেই অবস্থান বজায় থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।