• শুক্রবার ০৩ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২০ ১৪৩১

  • || ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫

দৈনিক জামালপুর
সর্বশেষ:
উপজেলা নির্বাচন সুষ্ঠু করার লক্ষ্যে কাজ করার নির্দেশ থাইল্যান্ডের সঙ্গে অংশীদারত্ব নতুন যুগে: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচনের প্রস্তুতি-প্রচারণা দেখতে আ`লীগকে বিজেপি’র আমন্ত্রণ ডলারের দাম বৃদ্ধির পরও হজ প্যাকেজের খরচ কমানো হয়েছে : ধর্মমন্ত্রী এবারও হজযাত্রীদের ইমিগ্রেশন ঢাকায় হবে: সৌদি রাষ্ট্রদূত দ্বাদশ সংসদের দ্বিতীয় অধিবেশন বসছে আজ এপ্রিলে রেমিট্যান্স এলো ১৯০ কোটি ৮০ লাখ ডলার প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনের সময় পেছাল খেটে খাওয়া মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করাই আওয়ামী লীগের লক্ষ্য যুক্তরাষ্ট্রে মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে প্রশ্ন তুললেন প্রধানমন্ত্রী

নৌবন্দর হচ্ছে রাজশাহীতে

দৈনিক জামালপুর

প্রকাশিত: ২২ অক্টোবর ২০২০  

মরা পদ্মায় জাহাজ চলবে। পণ্য আনা নেয়া হবে বাংলাদেশ ভারতের মধ্যে। পণ্য পরিবহন হবে সাশ্রয়ী। আর খানিকটা হলেও ফিরে পাবে পদ্মা তার হারানো রূপ। এমনি উদ্যোগ নিয়েছে বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ। গত ১২ অক্টোবর এর সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে রাজশাহী এসেছিলেন সংস্থাটির চেয়ারম্যান কমোডর গোলাম সাদেক। সরেজমিন পরিদর্শন করেছেন বিআইডবিøউটিএ ও নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি দল।

 

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এ নিয়ে মন্ত্রণালয়ের সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে বাংলাদেশের রাজশাহী আর ভারতের ধুলিয়ান নৌরুট চালুর। রাজশাহী থেকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদের ধুলিয়ান পর্যন্ত ৭৮ কিলোমিটার একটি নৌপথের অনুমোদন থাকলেও তা কার্যকর নেই। তাই রুটটি সংক্ষিপ্ত করে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার সুলতানগঞ্জ থেকে ভারতের মুর্শিদাবাদের মায়া নৌবন্দর পর্যন্ত আড়াআড়িভাবে কুড়ি কিলোমিটার পদ্মা নদী পাড়ি দিয়ে পণ্য আনা নেয়া করবে। শুরুতে পাথর বালি খাদ্য সামগ্রী আনা হবে।

 

অন্যদিকে এখান থেকে যাবে পাট ও কৃষিজাত পণ্য। মূলত পাথর বেশী আসবে। ব্যবসায়ীরা জানান, বাংলাদেশে উন্নয়ন কাজের জন্য যত পাথর ব্যবহার হয় তার বেশির ভাগ আসে ভারত থেকে। বর্তমানে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মতো বড় বড় প্রকল্পে ব্যবহার হচ্ছে মুর্শিদাবাদের পাকুর পাথর। যা সড়ক ও রেলপথের মাধ্যমে আসছে। সড়ক পথে আমদানি খরচে বেশি পড়ে। নৌপথে আনা গেলে খরচ কম পড়বে।

 

এক সময় রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে নৌবন্দর ছিল। পদ্মা নদীর ঘাট পর্যন্ত ছিল রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা। এ নৌবন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে পণ্য আনা-নেয়া হতো। বন্দরটি ছিল ব্যস্ততম। দেশ ভাগের পর নৌবন্দর বন্ধ হয়ে যায়। রেলপথও গুটিয়ে নেয়া হয়। মানুষও ভুলে যায় এখানকার নৌবন্দরের কথা। রাজশাহী নগরীর আলুপট্টি ঘাট, ফুদকিপাড়া ঘাট, কাজলার জাহাজ ঘাট। এমন ঘাটগুলো এখনও নাম নিয়ে বেঁচে আছে। প্রবীণরা এখনও প্রমত্ত পদ্মার ভরা যৌবনের কথা স্মৃতিচারণ করে বলেন, এক সময় পদ্মা দিয়ে কত জাহাজ চলত। বড় নৌকা আসা-যাওয়া করত। এখন এসব অতীত। সেই পদ্মা এখন মরণবাঁধ ফারাক্কার অভিশাপে বালিচরের নীচে চাপা পড়ে আর্তনাদ করছে।

 

১৯৭৪ সালে ফারাক্কা বাঁধ চালুর মাধ্যমে পদ্মার দফারফা করা হয়েছে। পদ্মায় পানির বদলে বালির উত্তাপ থাকে বছরের আটমাস ধরে। বালি জমতে জমতে পঁয়তাল্লিশ বছরে নদীর তলদেশ ভরতে ভরতে আঠারো ফুট ওপরে উঠে এসেছে। নদীর বুকে মাইলের পর মাইলজুড়ে জমেছে বিশাল ধূ ধূ বালুচর। নদীর মূলধারা বিভক্ত হয়ে পড়েছে অসংখ্য সরু ও ক্ষীণ স্রোতধারায়। ফারাক্কা পরবর্তী সময়ে গঙ্গা অববাহিকার নদীগুলোতে নাব্য সঙ্কটে নৌপরিবহন ব্যবস্থা ভয়ানকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সাড়ে তিনশো কিলোমিটারের বেশি প্রধান ও মধ্যম নৌপথ বন্ধ হয়ে গেছে। বছরের আটমাস পানি আটকে রাখলেও বর্ষার সময় ওপারের বন্যার চাপ সামলাতে ফারাক্কার গেটগুলো খুলে দিয়ে এপার ডুবিয়ে ফেলে। শুকনো মওসুমে শুকিয়ে মারা আর বন্যার সময় ডুবিয়ে মারার খেলা চলে আসছে বছরের পর বছর ধরে। নদী বিশেষজ্ঞরা বলছেন নৌরুট চালু করা ভাল খবর। তবে এজন্য ব্যাপক ড্রেজিং করে নদীর নাব্যতা ধরে রাখতে হবে। আর ফারাক্কার গেটও উন্মুক্ত রাখতে হবে। যাতে প্রয়োজনীয় পানির প্রবাহ থাকে।

 

সম্প্রতি নৌরুটের অবস্থা দেখার জন্য রাজশাহী এসেছিলেন বিআইডব্লিউটি’র চেয়ারম্যান কমোডর গোলাম সাদেক। নগর ভবনে সিটি মেয়র খায়রুজ্জামান লিটনের সাথে মত বিনিময় করেন। এ সময় মেয়র ভারতের মুর্শিদাবাদের ধুলিয়ান থেকে রাজশাহী হয়ে পাবনার ঈশ্বরদী পর্যন্ত পদ্মা নদীতে ড্রেজিং করার প্রয়োজনীয়তার উপর গুরুত্বারোপ করেন। ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নদীতে নাব্য আনা গেলে রাজশাহীতে আন্তর্জাতিক নৌবন্দর প্রতিষ্ঠা করা যাবে। যার মাধ্যমে রাজশাহীতে ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে। অর্থনীতি শক্তিশালী হবে। নৌ কর্তৃপক্ষ সূত্র জানায়, নদীতে ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে রুটটি আরিচা পর্যন্ত নেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। আগামী ১৫ নভেম্বর থেকে রুটটিতে পরীক্ষামূলকভাবে পণ্য পরিবহন শুরু করার পরিকল্পনার কথা।

দৈনিক জামালপুর
দৈনিক জামালপুর