• শুক্রবার ০৩ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৯ ১৪৩১

  • || ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫

দৈনিক জামালপুর

রাজনৈতিক কারণে নয় অপরাধের মামলায় তারা জেলখানায়

দৈনিক জামালপুর

প্রকাশিত: ২০ এপ্রিল ২০২৪  

বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক কারণে কোন মামলা হয়নি জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন,  অগ্নিসন্ত্রাস, অস্ত্রপাচার, গ্রেনেড হামলাসহ বিভিন্ন অপরাধের মামলা। তারা অপরাধ করেছে, আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সেটাই তো বাস্তবতা। বরং এসব মামলাগুলো দ্রুত শেষ করা উচিত।

শুক্রবার গণভবনে বাংলাদেশ কৃষক লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সংগঠনটির নেতাকর্মীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়কালে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আজকে (বিএনপি) সব জায়গায় কান্নাকাটি করে বলছে তাদের বিরুদ্ধে মামলা। তাদের জিজ্ঞেস করতে হবে মামলাগুলো কিসের মামলা? অগ্নিসন্ত্রাস, নাশকতা, অস্ত্রপাচার, গ্রেনেড হামলাসহ বিভিন্ন অপরাধের মামলা। তারা অপরাধ করেছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, তারা (বিএনপি) ৩ হাজার ৮০০ গাড়ি পুড়িয়েছে, বাস, লঞ্চ, রেল পুড়িয়েছে, জীবন্ত মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করেছে। তাদের বিরুদ্ধে মামলা হবে না তো কি হবে। ওদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা তো রাজনৈতিক নয়, প্রত্যেকটা মামলা হচ্ছে অগ্নিসন্ত্রাসের মামলা, তারা মানুষ হত্যা করেছে আগুন দিয়ে, ২৮ অক্টোবর যে ঘটনা তারা ঘটাল নির্বাচন ঠেকাতে গিয়ে রেলে আগুন দিয়ে মা-শিশু পুড়িয়ে মেরেছে, যারা এগুলো করল তাদের বিরুদ্ধে কি মামলা হবে না? এসব মামলা আরও দ্রুত শেষ করে এগুলোর শাস্তি দিয়ে দেওয়া উচিত বলেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।

আওয়ামী লীগ প্রতিশোধপরায়ণ না দেখে বিএনপি এখনো কথা বলার সুযোগ পাচ্ছে মন্তব্য করে দলটির প্রধান শেখ হাসিনা বলেন, তাদের ভাগ্য ভালো, আমরা ক্ষমতায় আছি, আমরা তাদের মতো প্রতিশোধপরায়ণ নই দেখে তারা এখনো কথা বলার সুযোগ পায়। তারা সারাদিন কথা বলে মাইক লাগিয়ে, তার পর বলবে কথা বলার সুযোগ পায় না।

বিরোধী দলে থাকার সময়কার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ অফিসে তো আমরা ঢুকতেই পারতাম না। কিভাবে তারা অত্যাচার করেছে আমাদের ওপর, আমরা তো তার কিছুই করিনি। প্রতিশোধ নিতে ব্যস্ত থাাকিনি। আমরা আমাদের সব শক্তি-মেধা কাজে লাগিয়েছি দেশের উন্নয়নে, দেশের মানুষের জন্য কাজ করতে।

সারাদেশের কারাগারের সব অপরাধীই  বিএনপি দলীয় কি নাÑএমন প্রশ্ন রেখে আওয়ামী লীগপ্রধান বলেন, তারা (বিএনপি) যেভাবে বলছে তাদের ৬০ লাখ লোক গ্রেপ্তার হয়েছে। ৬০ লাখ  লোকের তো ধারণ ক্ষমতাও  নেই জেলে। তার পরও যতটুকু ধারণ ক্ষমতা আছে সবই বিএনপির লোকÑএটাই তো তারা বলতে চাচ্ছে। তার মানে, বাংলাদেশে যত অপরাধ সব করে বিএনপি!

তিনি বলেন, কান্নাকাটি করে তারা সব জায়গায় বলছে, এত লক্ষ লোক তাদের গ্রেপ্তার। তারা যত লক্ষ গ্রেপ্তার বলছে, সব যদি তাদের হয়, তা হলে তো জেলে অন্য অপরাধী  নেই। যত অপরাধী আছে জেলে, সবই বিএনপির! সেখানে চুরি, ডাকাতিসহ যা আছে ওদের হিসাবে সব অপরাধী হচ্ছে বিএনপির। ওরা এটাই তো বলতে চাচ্ছে।

বিভিন্ন সময় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ওপর অত্যাচারের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, আজকে তারা চিৎকার করে তাদের ওপর অত্যাচার হচ্ছে,  কি অত্যাচার হচ্ছে তাদের ওপর? তারা যে অত্যাচার করেছে, সেই জিয়াউর রহমানের ক্ষমতায় আসার পর থেকে আওয়ামী লীগের ওপর। অত্যাচারের যে স্টিম রোলার চালিয়েছিল, যেভাবে হত্যা করেছিল, খালেদা জিয়া আসার পর ২০০১ এর নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগের কোনো নেতাকর্মী ঘরে থাকতে পারেনি।

তিনি বলেন, ধরে নিয়ে যেভাবে অত্যাচার করা হয়েছে এবং আমাদের কত নেতাকে মেরে ফেলেছে। সংসদ সদস্য আহসান উল্লাহ মাস্টার থেকে শুরু করে আমাদের বহু নেতাকর্মীকে তারা হত্যা করেছে। ওরা শুধু আওয়ামী লীগ না, ওরা দেশের মানুষের ওপর নির্মম অত্যাচার-নির্যাতন চালিয়েছে। আজ তাদের মুখে নানা কথা শুনতে হয়।

কৃষি সমবায়ের ওপর গুরুত্বারোপ করে শেখ হাসিনা বলেন, সরকার বছরে ২৬ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিচ্ছে। জাতির পিতার দেখানো পথে সমবায় কৃষি নিশ্চিত করা হলে দেশে কখনো খাদ্যের অভাব হবে না। তিনি বলেন, এক সময় যারা নুন ভাতের কথা বা ডাল ভাতের কথা চিন্তা করতে পারত না, এখন তারা মাছ-মাংস, ডিমের কথাও চিন্তা করে। ফলে যারা সরকারের সমালোচনা করেন তাদের সেগুলো মাথায় রেখে উন্নয়ন হয়েছে কি না তা বিবেচনা করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বীজ উৎপাদনে বিএডিসিসহ নানা গবেষণা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল নানা সময়ে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেই কৃষি গবেষণায় জোর দেয়। বীজ, মাছ, ধান, সবজিসহ বিভিন্ন ফসল উৎপাদন বাড়িয়ে বিদেশী নির্ভরতা কমিয়ে এনেছে আওয়ামী লীগ সরকার। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করে আওয়ামী লীগ দেশের মানুষের পুষ্টির চাহিদা পূরণ করছে।

সরকারপ্রধান বলেন, খাদ্য সংরক্ষণ, খাদ্য ব্যবস্থাপনায় কৃষকদের জন্য নতুন নতুন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে সরকার। গবেষণার প্রতি গুরুত্ব দেওয়ার পাশাপাশি কৃষকদের প্রতি গুরুত্ব দেওয়ার ফলেই এদেশের কৃষি সমৃদ্ধ হয়েছে। তিনি আরও বলেন, বিএনপি কখনোই চায়নি এ দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হোক, তারা চেয়েছে অন্য দেশ থেকে ভিক্ষা করে দেশ চালাতে।

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে দলের কেন্দ্রীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে শুভেচ্ছা জানান সংগঠনের সভাপতি কৃষিবিদ সমীর চন্দ ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক বিশ্বনাথ সরকার বিটু।

কৃষক লীগ নেতাদের গণভবনের শাক-সবজি উপহার ॥ কৃষক লীগ নেতাদের গণভবনে উৎপাদিত বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজি উপহার দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কৃষক লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে শুক্রবার সকালে গণভবনে শুভেচ্ছা বিনিময় শেষে বাসায় ফেরার সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে উপস্থিত নেতাদের এ উপহার তুলে দেওয়া হয়।

গণভবনে উৎপাদিত পালং শাক, পাট শাক, ডাঁটা শাক, পুঁইশাক, লাউ, করলা, বরবটিসহ বিভিন্ন ধরনের শাক-উপহার দেওয়া কৃষক লীগ নেতাদের। উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীদেরও এসব শাক-সবজি উপহার দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে শাক-সবজি পেয়ে কৃষক লীগ নেতাদের বেশ উৎফুল্ল দেখা যায়। তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।

এ প্রসঙ্গে কৃষক লীগ সভাপতি সমীর চন্দ গণমাধ্যমকে বলেন, গণভবনে উৎপাদিত লাউ, চিচিঙ্গা, করলা, বরবটি, ঢেঁড়শ, বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজি উপহার দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী তাঁর নিজস্ব তত্ত্বাবধানে তাঁর বাসভবনে (গণভবনে) উৎপাদিত শাক-সবজি কৃষক লীগ নেতাকর্মীদের উপহার দেওয়াতে আমরা যেমন উৎফুল্ল হয়েছি, তেমনি নিজেরাও প্রধানমন্ত্রীর মতো একজন ভালো খামারি হওয়ার জন্য প্রেরণা পেয়েছি।

সমীর চন্দ আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন এক ইঞ্চি জায়গাও ফাঁকা না রেখে উৎপাদনের আওতায় আনতে হবে। তা হলেই খাদ্যের জন্য আমাদের কারো মুখাপেক্ষী হতে হবে না। আমাদের নিয়ে কেউ ষড়যন্ত্র করতে পারবে না।

দৈনিক জামালপুর
দৈনিক জামালপুর