• রোববার ১৯ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৫ ১৪৩১

  • || ১০ জ্বিলকদ ১৪৪৫

দৈনিক জামালপুর

মাশরুমে স্বাবলম্বী কুষ্টিয়ার সাগর

দৈনিক জামালপুর

প্রকাশিত: ২১ জুলাই ২০২৩  

লেখাপড়ার পাশাপাশি মাশরুম চাষ করে এলাকায় তাক লাগিয়ে দিয়েছেন কুষ্টিয়ার সাগর হোসেন নামে এক কলেজছাত্র। বর্তমানে তিনি বছরে ২০-২২ লাখ টাকা মাশরুম বিক্রি করছেন। এছাড়াও তার মাশরুম সেন্টারে আরো পাঁচ যুবক কাজ করে এখন স্বাবলম্বী।

মাত্র তিন বছরেই তিনি নিজেকে একজন সফল উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তার উৎপাদিত মাশরুমের চাহিদা রয়েছে ঢাকা, বরিশালসহ বিভিন্ন জেলায়।


তরুণ উদ্যোক্তা সাগর হোসেন কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়নের হোগলা গ্রামের কৃষক বাবু প্রামাণিকের ছেলে। বর্তমানে তিনি রাজবাড়ি সরকারি কলেজের অর্থনীতি বিভাগের (সম্মান) শেষ বর্ষের ছাত্র।


এলাকাবাসী ও উদ্যোক্তা সাগরের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পড়াশোনার জন্য প্রায় তিন বছর আগেও সাগর হোসেন রাজবাড়ি শহরের একটি ভাড়া মেসে থাকতেন। সেখানে শিক্ষিত বেকার যুবকদের চাকরি না পাওয়ার নিদারুণ হতাশার গল্প শুনে তিনি ভয় পেয়েছিলেন। চাকরি না করে কীভাবে স্বাবলম্বী বা উদ্যোক্তা হবেন? নিজের ও অন্যের কর্মসংস্থান করবেন, তা নিয়ে ভাবতে শুরু করেন।


একপর্যায়ে একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে একটি অনুষ্ঠানে মাশরুম চাষের একটি প্রতিবেদন দেখেন। প্রতিবেদন দেখে তিনি মাশরুম চাষে উদ্বুদ্ধ হন এবং যুব উন্নয়ন ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর থেকে প্রশিক্ষণ নেন।


এরপর তিনি তার টিউশনি করে জমানো ও বাবার কাছ থেকে ধার নেয়াসহ মোট পাঁচ লাখ টাকা দিয়ে ২০ শতাংশ জমির একটি টিনশেড ঘরে ২০২১ সালে মাশরুম চাষ করেন। তার এই কাজে সহযোগিতা করার জন্য তিনি মাসিক বেতনে তিনজন কর্মচারী নিয়োগ দেন। তখন তিনি অনার্স  প্রথম বর্ষের ছাত্র।


আরো জানা যায়, সাগর হোসেন প্রথম বছরেই মাশরুম চাষে ব্যাপক লাভের সম্ভাবনা দেখতে পান। পরবর্তী বছর ২০২২ সালে মাশরুম চাষের পাশাপাশি বীজ উৎপানদের কাজও শুরু করেন। এরপর আর তাকে জীবন ও জীবিকার জন্য পেছনে তাকাতে হয়নি। গরম মৌসুমে তিনি প্রতিমাসে ৪০০-৪৫০ কেজি মাশরুম উৎপাদন করেন। যার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ৯০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা।


এছাড়াও তার সেন্টারে শীত মৌসুমের প্রতি মাসে এক হাজার থেকে এক হাজার ৫০০ কেজি মাশরুম উৎপাদন করেন। যার বাজার মূল্য দুই লাখ ২০ হাজার থেকে তিন লাখ ৩০ হাজার টাকা। তার প্রতিকেজি মাশরুম উৎপাদন করতে খরচ হয় ৬৫-৭০ টাকা। আর ২২০ টাকা কেজি দরে ঢাকা, বরিশালসহ বিভিন্ন জেলায় বিক্রি করছেন। এছাড়া তিনি প্রতিমাসে এক লাখ থেকে এক লাখ ৫০ হাজার টাকার বীজ বিক্রি করেন।


সরেজমিন দেখা যায়, হোগলা গ্রামের একটি বাগানের মধ্যে টিনশেড দোচালা ঘরে স্বাস্থ্যকর পরিবেশে মাশরুম চাষ ও বীজ উৎপাদন করা হচ্ছে।


সাগর হোসেনের ভাষ্য, প্রতিকেজি মাশরুম উৎপাদনে তার ৬৫-৭০ টাকা খরচ হয়। তিনি প্রতিকেজি ২২০ টাকা পাইকারী দরে ঢাকা, বরিশালসহ বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করেন। তিনি বছরে ২০-২২ লাখ টাকা মাশরুম বিক্রি করেন। খরচ বাদে তিনি ছাত্রজীবনেই বছরে ৮-১০ লাখ টাকা আয় করছেন। তার মাশরুম সেন্টারে আরো তিন থেকে পাঁচজন যুবক সারা বছর কাজ করেন। তাদের প্রতিমাসে প্রায় ৫০ হাজার টাকা বেতন দেন তিনি।


তরুণ এই উদ্যোক্তার দাবি, মাশরুমকে কৃষিপণ্যের স্বীকৃতি প্রদানের পাশাপাশি চাষিদের সরকারিভাবে সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা হোক। কৃষিখাতকে বাণিজ্যিক ও আধুনিক করার জন্য সরকারিভাবে জনবল ও বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।

ঐ মাশরুম সেন্টারের শ্রমিক তারিকুল ইসলাম তারিক জানান, তিনি পড়াশোনার পাশাপাশি সেখানে কাজ করে মাসে ১০ হাজার টাকা আয় করছেন। সহযোগিতা পেলে ভবিষ্যতে তিনিও একজন সফল উদ্যোক্তা হবেন।


জানতে চাইলে যশোরের কৃষি সম্প্রসারণ প্রকল্পের কর্মকর্তা মাসুম আব্দুল্লাহ বলেন, কঠোর পরিশ্রম ও অদম্য ইচ্ছা থাকায় ছাত্রজীবনেই সাগর সফল মাশরুম চাষি হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। কৃষি বিভাগ মাশরুম চাষ বৃদ্ধি ও বেকারদের কাজে লাগাতে প্রশিক্ষণ ও প্রণোদনার ব্যবস্থা করছেন।


ইউএনও বিতান কুমার মন্ডল জানান, তিনি মাশরুম উৎপাদনের স্থানটি পরিদর্শন করেছেন। উদ্যোক্তাদের পণ্যের প্রচার ও প্রসারের লক্ষ্যে এবং উদ্যোক্তাদের সামাজিকভাবে মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য উপজেলা প্রশাসন এরই মধ্যে উদ্যোক্তা অ্যাপস ও ম্যাপসের ব্যবস্থা করেছেন। প্রয়োজনবোধে সহজশর্তে ঋণের ব্যবস্থা নেয়া হবে।

দৈনিক জামালপুর
দৈনিক জামালপুর