• শনিবার ১১ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২৮ ১৪৩১

  • || ০২ জ্বিলকদ ১৪৪৫

দৈনিক জামালপুর

তীব্র দাবদাহের মধ্যে ঠাকুরগাঁওয়ে আরো ৪ হাজার গাছ কাটছে বন বিভাগ

দৈনিক জামালপুর

প্রকাশিত: ২৭ এপ্রিল ২০২৪  

গত বছর ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার বড়বাড়ি, আমজানখোর ও চাড়োল ইউনিয়নের প্রায় ৪০ কিলোমিটার রাস্তার ৫ হাজার গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। ঐ রাস্তাগুলোর মধ্যে ৮ কিলোমিটার রাস্তায় নতুন গাছ লাগালেও বাকি রাস্তাগুলোতে নতুন করে গাছ লাগানোর কোনো অগ্রগতি দেখা যায়নি। এর মধ্যেই দরপত্রের মাধ্যমে আবারো ধনতলা ও পাড়িয়া ইউনিয়নের ৩৭ কিলোমিটার রাস্তার ৪ হাজার গাছ কাটা শুরু হয়েছে। তীব্র দাবদাহের এমন দুঃসময়ে গাছ কাটায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। জেলার বন বিভাগের তথ্যমতে, নিয়ম অনুযায়ী আয়তনের তুলনায় ২৫ ভাগ বনভূমি থাকার কথা থাকলেও ঠাকুরগাঁও জেলা রয়েছে ২ ভাগের কম বনভূমি। এসব গাছপালা কেটে ফেলা হলে শূন্যের কোঠায় পৌঁছাবে বনভূমি। সবকিছু জানার পরেও গেল মাসে ৮ ইউনিয়নে রাস্তায় থাকা অবশিষ্ট গাছগুলো কেটে ফেলার জন্য দরপত্র দিয়েছে বন বিভাগ। এর মধ্যে দুই ইউনিয়নে শুরু হয়েছে গাছ কাটা। শুক্রবার সরেজমিন দেখা যায়, দরপত্র পাওয়া দিনাজপুরের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ করা শ্রমিকরা রাস্তার গাছ কাটছেন। গত এক সপ্তাহ ধরে এ কার্যক্রম শুরু করেছেন তারা। দরপত্রের কার্যাদেশ অনুযায়ী ৪ হাজার গাছ কাটবেন তারা। এক সপ্তাহে ৩ শতাধিক গাছ কাটা হয়েছে বলে জানান কর্মরত শ্রমিকরা। বন বিভাগের আহ্বান করা দরপত্র অনুযায়ী, উপজেলার পাড়িয়া ইউনিয়নের লোহাগাড়া হতে তিলকরা সরাকন্দি পর্যন্ত ৫ কিলোমিটার ও ধনতলা ইউনিয়নের পাঁচপীর থেকে ফুটানী হাট পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার, তিলময় বাবুরবাড়ি হতে এনামুল চেয়ারম্যানের বাড়ি হয়ে বাহার জিলা পর্যন্ত ৫ কিলোমিটার ও সিন্দুরপিন্ডি হতে খোঁচাবাড়ি হয়ে তীরনই নদীর শেষ সীমানা ও দলুয়া হয়ে পান্তা ভিটা পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটারসহ ৩৭ কিলোমিটার রাস্তার পাশের বিশাল আকৃতির গাছগুলোর গায়ে সিরিয়াল নম্বর দেওয়া হয়েছে কাটার জন্য। মাঠে কাজ শেষ করে রাস্তা দিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন কৃষক মাজেদুর রহমান। তিনি বলেন, মাঠে কাজ করে শরীর যখন ক্লান্ত হয় তখন গাছের নিচে গিয়ে বসলে একটু আরাম পাওয়া যেত। এই গরমে অল্প কাজ করলে শরীর পুড়ে যাওয়ার মত অবস্থা। এখন গাছগুলো কেটে ফেলা হচ্ছে। কোথাও গিয়ে একটু স্বস্তি পাওয়ার মত জায়গা থাকলো না। গাছগুলোতে পাখি বাসা বানিয়েছে। তাদেরও থাকার জায়গা রইলো না। পথচারী আব্দুল জলিল বলেন, দুই পাশ দিয়ে গাছ থাকায় রাস্তাটা দিয়ে হেঁটে বা সাইকেল নিয়ে গেলে স্বস্তি পাওয়া যেতো। এখন যেভাবে গাছ কাটা শুরু করেছে এলাকায় আর কোনো গাছ থাকবে না। জেলায় আবহাওয়া অফিস না থাকলেও রংপুর আবহাওয়া অফিস থেকে জানা গেছে, গরমের তীব্রতায় মানুষের হাঁসফাঁস অবস্থা। জেলায় প্রতিনিয়ত ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা অতিক্রম করছে। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মুখোমুখি হয়েছে জেলার মানুষ। তীব্র দাবদাহে স্বস্তি পেতে বৃষ্টির অপেক্ষা সাধারণ মানুষের। পাড়িয়া ইউপি সদস্য আইয়ুব আলী বলেন, নিয়ম অনুযায়ী দরপত্র হয়েছে এবং গাছ কাটছে ঠিকাদার। এতে বাধা দেওয়ার সুযোগ নেই। তবে গ্রামবাসীর দাবি গরমের দিনগুলো পার করে গাছ কাটা হোক। এটা নিয়ে উপজেলা প্রশাসন এবং বন বিভাগকে প্রয়োজনে লিখিতভাবে জানাবো আমরা। ঠাকুরগাঁও বনবিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা তাছলিমা খাতুন বলেন, গাছগুলো কাটার উপযোগী এবং যারা লাগিয়েছেন তাদের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে দরপত্র আহ্বান করে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে কাটার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। ঠাকুরগাঁওয়ের জেলা প্রশাসক মাহবুবর রহমান বলেন, পরিস্থিতি বিবেচনা করে আপাতত গাছগুলো কাটা বন্ধ রাখার কথা বন বিভাগ ও ঠিকাদারকে বলা হয়েছে। গরম কমার পরে তারা কেটে নেবেন।

দৈনিক জামালপুর
দৈনিক জামালপুর