• শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪ ||

  • শ্রাবণ ১২ ১৪৩১

  • || ১৯ মুহররম ১৪৪৬

দখলমুক্ত হলো মেয়র আনিসুল হক সড়ক

দৈনিক জামালপুর

প্রকাশিত: ২৬ মে ২০২৪  

রাজধানীর তেজগাঁও-সাতরাস্তা হয়ে কারওয়ান বাজার রেলগেট সড়কটির নাম মেয়র আনিসুল হক সড়ক। কিছুদিন আগেও এ সড়ক ছিল পুরোপুরি ট্রাক-কাভার্ড ভ্যানের দখলে। তবে সম্প্রতি মেয়র আনিসুল হক সড়কটি পুরোপুরি দখলমুক্ত করেছে ট্রাফিক তেজগাঁও বিভাগ। ফলে এ সড়কে চলাচলরত মানুষের দীর্ঘদিনের ভোগান্তি দূর হয়েছে। জানা গেছে, কর্মদিবসগুলোতে মেয়র আনিসুল হক সড়কটি ভোর ৭টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত শতভাগ পরিষ্কার রাখার ঘোষণাও দিয়েছে ডিএমপির ট্রাফিক তেজগাঁও বিভাগ। ব্যাংক কর্মকর্তা ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, গত সপ্তাহ থেকেই এ রাস্তাটি পরিষ্কার থাকায় আমি ১৫ মিনিটে ফার্মগেট থেকে গুলশান অফিসে চলে যেতে পারছি; এমন ফাঁকা আগে দেখিনি। বছরের পর বছর যে সড়ক ছিল অবহেলিত, ট্রাফিক পুলিশের কাজে সেটি ফিরে পেয়েছে যান চলাচলের স্বাভাবিক অবস্থা। সরেজমিন দেখা গেছে, মেয়র আনিসুল হক সড়কের দুই পাশে সিটি কর্পোরেশনের প্রায় ৭ ফুট জায়গা নিয়ে করা হয়েছে রিকশার লেন। বলা হচ্ছে, এ পথে চলবে অযান্ত্রিক যান। তবে, বাস্তবতা ভিন্ন। স্থানীয় ব্যবসায়ী আলম বলেন, রিকশার জন্য যে রাস্তা দেওয়া হয়েছে, সেখানে প্রকৃতপক্ষে রিকশা তো চলতোই না; বরং এতে রাস্তাটা অকার্যকর হয়ে গেছে। ট্রাফিক তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মোস্তাক আহম্মেদ বলেন, ঢাকাবাসীর কাছে আনিসুল হক সড়ক একটি আবেগ। এটি পুনরুদ্ধার করতে গিয়ে আনিসুল হক অনেক কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছিলেন। তেজগাঁও ট্রাক স্ট্যান্ডের ধারণ ক্ষমতা ৭০০-৮০০, কিন্তু ট্রাক আসে প্রায় ৪ হাজার। এখানে কিছু গ্যারেজ ছিল, যেখানে ট্রাক ঠিক করতো, কিছু নষ্ট ট্রাক এখানে পড়ে থাকতো এবং অনেক ট্রাক এখানে রেখে দেওয়া হতো। এসব কারণে এ রাস্তায় কেউ আসতে চাইতো না। তিনি আরো বলেন, সন্ধ্যা ৭টা থেকে ১০টা পর্যন্ত ট্রাফিক কম থাকে। ট্রাক মালিক সমিতির অনুরোধে রাতে আমরা এই সময় এখানে ট্রাক থাকার সুযোগ দেবো। শুক্র ও শনিবার সড়কে গাড়ির চাপ কম থাকে, তাই এক লেনে ছুটির দিনে আমরা ট্রাক থাকার সুযোগ করে দেবো। তেজগাঁও ট্রাফিক জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) স্নেহাশীষ কুমার দাস বলেন, আমরা কয়েকদিন ধরেই বিভিন্ন মালিক সমিতি ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে মেয়র আনিসুল হক সড়ক শতভাগ পরিষ্কার রাখছি, সুষ্ঠু ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার স্বার্থে এবং প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকের প্রতি মানুষের মমত্ববোধ থেকে আজকের এ অবস্থা ধরে রাখতে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ডভ্যান চালক-শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি মো. মনির তালুকদার বলেন, আমরা ট্রাফিক পুলিশকে সবসময় সহায়তা করি এবং করবো। জায়গার জন্য সরকারের কাছে আবেদন করেছি, টিএনটির জায়গা আমাদের দিয়ে দিলে ইনশাল্লাহ এই সমস্যা থাকবে না। উল্লেখ্য, সাতরাস্তা থেকে কারওয়ান বাজার রেললাইন পর্যন্ত সড়কে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা বহু বছরের ট্রাক স্ট্যান্ডটি ২০১৫ সালের ২৯ নভেম্বর উচ্ছেদ করেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্র্যাত মেয়র আনিসুল হক। এ কারণে সে সময় বিক্ষুব্ধ চালক ও শ্রমিকদের ক্ষোভের মুখে পড়েন তিনি, হতে হয় অবরুদ্ধ, নিতে হয় জীবনের ঝুঁকি। তখন দখলদারদের ইট-পাটকেল আর পুলিশের টিয়ারশেলের মধ্যদিয়ে সড়কটিকে ঢাকাবাসীর জন্য উন্মুক্ত করেন তিনি। আনিসুল হকের মৃত্যুর পর থেকে ফের দখলদারদের হাতে চলে যায় সড়কটি। অথচ মেয়র আনিসুল হক সড়ক দিয়ে প্রতিদিন লাখ লাখ মানুষ যাতায়াত করছেন। সড়কটি সাতরাস্তা হয়ে কারওয়ান বাজার, তেজতুরী বাজার, ফার্মগেট ও তেজগাঁও, মহাখালী, বনানী, গুলশান, নিকেতন, হাতিরঝিল এবং রামপুরার সঙ্গে যুক্ত। ফার্মগেট-তেজগাঁও ঘিরে রয়েছে এক ডজন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এছাড়া এ সড়ক হয়ে জাতীয় নাক-কান-গলা ইনস্টিটিউট, সংবাদপত্র ভবন, ছাপাখানাসহ বহু সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী এবং মানুষ যাতায়াত করেন। এ রাস্তায় রয়েছে এসেনসিয়াল ড্রাগস, বিজি প্রেস ও বিসিকসহ প্রায় ১০টি কেপিআইভুক্ত প্রতিষ্ঠান। এটি দিয়ে প্রতিদিন ৩৫০০-৪০০০ ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান চলাচল করে। অথচ তেজগাঁও ট্রাকস্ট্যান্ডের পার্কিং ক্ষমতা ৭০০-৮০০ এর মতো।

দৈনিক জামালপুর
দৈনিক জামালপুর