• শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪ ||

  • শ্রাবণ ১২ ১৪৩১

  • || ১৯ মুহররম ১৪৪৬

আশ্রায়ণ উখিয়ায় শুখা, রত্নার জীবন বদলে দিয়েছে

দৈনিক জামালপুর

প্রকাশিত: ১০ জুন ২০২৪  

জীবন ভাগ্য পরিবর্তনের সুযোগ দেয় না, কিন্তু সুযোগ দিলে অনেকেই তা কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয়। উখিয়ার হাজোম রোডের আদর্শ গ্রামে আশ্রয়ণ প্রকল্পের শুখা বড়ুয়া ও রত্না ধরের গল্পগুলো একটু আলাদা। এই দুই নারীর একজন স্বামী পরিত্যক্ত, আরেকজন বিধবা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এক অনন্য উদ্যোগ আশ্রয়ণ প্রকল্প তাদের অন্ধকার ও হতাশায় ঘেরা জীবন পুনর্গঠনের সুযোগ দিয়েছে। তারা তাদের ভাগ্য পরিবর্তনের সেই সুযোগকে সঠিকভাবে ব্যবহার করেছেন। এখন তারা স্বাবলম্বী ও সুখী জীবন কাটানোর পাশাপাশি নিজেদের জীবিকা নির্বাহ করেন। বিয়ের কয়েক বছর পর টাকা না থাকায় স্বামী পরিত্যাক্তা শুখা বড়ুয়া দুই সন্তান নিয়ে কষ্টের মধ্য দিয়ে অন্যদের গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করে জীবন ধারণ করতেন। তিনি জানালেন, তিনি উখিয়ার বিভিন্ন স্থানে অসহায় অবস্থায় জরাজীর্ণ ভাড়া বাড়িতে থাকতেন। শুখা বড়–য়ার েিজরই বয়ান: ‘কিন্তু, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে বাড়ি পেয়ে আমার জীবনের মোড় ঘুরতে শুরু করে।’ ২০০২ সালে, উখিয়ার হাজোম রোডের আদর্শ গ্রামে আশ্রয়ণ প্রকল্পের অধীনে ৮৮টি পরিবারের মতো শুখা বড়ুয়া উপহার হিসাবে বাড়িটি পান। বাড়ি পাওয়ার পর, কীভাবে তিনি তার ভাগ্য বদলাতে পারেন তা ভাবতে থাকেন। বাড়ির পাশের ছোট জায়গাগুলোকে কাজে লাগানোর উপায় বের করেন। তিনি বলেন, ‘আমি বিভিন্ন ধরনের মৌসুমি সবজি ও নিত্যপ্রয়োজনীয় শাক-সবজি চাষ শুরু করি।’ তিনি বলেন, তিনি শুধু তার বাড়িতেই নয়, অন্যের বাড়ির অব্যবহৃত জায়গায়ও শাকসবজি এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস হলুদ, আদা ইত্যাদি চাষ করতে শুরু করেন। তার নিজের উক্তি : ‘আমি এতে ভাল ফল পেয়েছি, যার ফলে আমাকে কোনও সবজি কিনতে হয় না। বরং আমি আমার কাছের ও প্রিয়জনদের আমার ফলানো ফসল দিতে পারি।’ শুখা বড়ুয়া জানান, এ বছর এ পর্যন্ত তিনি ১২ হাজার টাকার সবজি বিক্রি করেছেন। ১০০ কেজির বেশি হলুদ উৎপাদন করেছেন। আর তা শুকিয়ে ২৫ কেজি হয়েছে। শুখা বড়ুয়ার সাফল্য দেখে অনেক নারী তার কাছে আসেন এবং তার কাছে চাষ পদ্ধতি শিখতে চান। তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমি ৩৫ জন অসহায় মহিলাকে কীভাবে সবজির ভাল ফলন করতে হয়, তা শিখিয়েছি। এখন আমি আমার জীবনের মূলমন্ত্র ঠিক করেছি এবং অন্যান্য অসহায় মহিলাকে প্রশিক্ষণ দিয়ে দিন কাটাচ্ছি।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে শুখা বড়ুয়া কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আমাকে এই বাড়িটি না দিলে, আমি স্বাবলম্বী হতে পারতাম না। আমার আগের জীবন ঘৃণায় ভরা ছিল, কিন্তু আমার বর্তমান জীবন অনেক সুখের।’ তিনি উল্লেখ করেন যে তার দুই সন্তান এখন স্কুলে পড়ছে। তিনি তাদের উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করার স্বপ্ন দেখেন। আরেকজন নারী রত্না ধর। তিনি বিধবা। তিনিও আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাড়িকে কেন্দ্র করে তার ভাগ্য পরিবর্তন করেছেন। রত্না জানান, ২৭ বছর আগে তার স্বামী মারা যান এবং তারপর তিনি গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করার জন্য জমিদারের আশ্রয়ে এখানে-সেখানে থাকতেন। কিন্তু ২০২২ সালে উখিয়ার হাজোম রোডের আদর্শ গ্রামে আশ্রয়ণ প্রকল্পের অধীনে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে একটি বাড়ি পাওয়ার পর তার ভাগ্য বদলে যায়। ৫ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে স্থানীয় বাজার থেকে একটি ছাগল কিনে তিনি ছাগল পালন শুরু করেন। এখন তার ১০টি ছাগল রয়েছে। রতœা বলেন, তিনি ইতোমধ্যে ঋণ পরিশোধ করেছেন এবং একটি নতুন ব্যবসা শুরু করার জন্য অর্থ সঞ্চয় করছেন। তিনি তার নিজের পরিবারের প্রয়োজন মেটাতে মৌসুমি শাকসবজি এবং অন্যান্য জিনিস উৎপাদন করেন। ফলে তাকে বাজার থেকে কোনও শাকসবজি কিনতে হয় না। তিন ছেলের জননী রতœা জানান, ছোট ছেলে তার সঙ্গে থাকে। অপর দুই ছেলে ইতিমধ্যেই প্রাপ্তবয়স্ক ও স্বাবলম্বী হয়েছে। তার ছোট ছেলে কাছাকাছি বাজারে একটি ঘড়ির দোকান খুলেছে এবং তার সহায়তায় সে এটি সম্প্রসারণের পরিকল্পনা করেছে। প্রধানমন্ত্রীর প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে রত্না বলেন, প্রধানমন্ত্রী তাকে বাড়ি না দিলে, এটা সম্ভব ছিল না। এই বাড়িটা তার ভাগ্য বদলে দিয়েছে। সবার জন্য আবাসন নিশ্চিত করার অঙ্গীকারের অংশ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামীকাল ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে আরও ১৮ হাজার ৫৫৬টি বাড়ি ও জমি প্রদান করবেন। তিনি আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের পঞ্চম ধাপের আওতায় গৃহহীন ও ভূমিহীন পরিবারের মধ্যে বাড়ি বিতরণ করবেন। সকালে প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করবেন। লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলা, ভোলার চরফ্যাশন উপজেলা এবং কক্সবাজার জেলার ঈদগাঁও উপজেলায় তার যোগাযোগের কথা রয়েছে। এ পর্যায়ে ২৬টি জেলার সব উপজেলাসহ মোট ৭০টি উপজেলাকে গৃহহীন ও ভূমিহীন মুক্ত ঘোষণা করা হবে। এর মাধ্যমে দেশের মোট ৫৮টি জেলা ও ৮৬৪টি উপজেলা গৃহহীন ও ভূমিহীন মুক্ত হবে। ২০২৩ সালের ২১শে মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের চতুর্থ ধাপে ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় আরও ৩৯,৩৬৫টি ঘর হস্তান্তর করেন, যেখানে প্রথম ধাপে ৬৩,৯৯৯টি, দ্বিতীয় ধাপে ৫৩,৩৩০টি ঘর বিতরণ করা হয়।

দৈনিক জামালপুর
দৈনিক জামালপুর