• বৃহস্পতিবার ০৯ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২৫ ১৪৩১

  • || ২৯ শাওয়াল ১৪৪৫

দৈনিক জামালপুর

এক বছরে ঢাকার আড়াই সহস্রাধিক মামলা নিষ্পত্তি

দৈনিক জামালপুর

প্রকাশিত: ৭ মার্চ ২০২৪  

সাভার, আশুলিয়া, নবাবগঞ্জ, দোহার, ধামরাই, দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ ও কেরাণীগঞ্জ মডেল থানা নিয়ে গঠিত ঢাকা জেলা। গত বছরে ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ও জেলা দায়রা জজ আদালতে ঢাকা জেলাধীন এই সাতটি থানার ২ হাজার ৬০৮টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

২০২২ সালে মোট নিষ্পত্তিকৃত মামলার সংখ্যা ছিল ২ হাজার ১২৭টি। সে হিসাবে ২০২৩ বছর মামলা নিষ্পত্তির হার বেড়েছে ২২.৬১ শতাংশ। সাক্ষী উপস্থিতকরণে রাষ্ট্রপক্ষের নানামুখী উদ্যোগের ফলে এত বেশি মামলা নিষ্পত্তি করা সম্ভব হয়েছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, এটি দেশের দীর্ঘমেয়াদি বিচার প্রক্রিয়ার জন্য একটা বড় অর্জন। এর ফলে আইন-আদালতের প্রতি মানুষের আস্থা আরো বাড়বে ও আইন হাতে তুলে নেয়ার প্রবণতা কমে আসবে। শুধু মামলা নিষ্পত্তিই নয়, পুরোটা সময় প্রসিকিউশন বিভাগের ছিল উল্লেখযোগ্য আরো অনেক সাফল্য।

সাক্ষী উপস্থিতি:
বাংলাদেশের বিচারপ্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রিতার অন্যতম কারণ হলো সাক্ষীদের ঠিকমতো আদালতে উপস্থিত হয়ে সাক্ষ্য না দেওয়া। এতে একদিকে যেমন বিচারকাজে ধীর গতি আসে, তেমনি যথোপযুক্ত সাক্ষ্যপ্রমাণের অভাবে অনেক মামলার অভিযোগ প্রমাণে অনেক সময় অসমর্থ হয়ে পড়ে রাষ্ট্রপক্ষ, যা অপরাধীদের উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিতের পথে বড় রকমের প্রতিবন্ধকতা বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তাইতো বছরজুড়েই সাক্ষী উপস্থিতকরণে রাষ্ট্রপক্ষের আন্তরিকতা ছিল লক্ষণীয়। ২০২৩ সালের ঢাকা জেলার ৭ থানার বিচারাধীন মামলাগুলোয় ১২ হাজার ৩১৮ জন সাক্ষী আদালতে উপস্থিত হয়ে সাক্ষ্য দেন। সাক্ষীদের হাজিরা নিশ্চিত করতে হাজিরা ক্যালেন্ডার তৈরি করা হয়েছে। এছাড়াও সাক্ষীদের কাছে সমন পৌঁছেছে কিনা তা নিশ্চিত করতে সমন প্রাপ্তির পর তা কম্পিউটার ডাটাবেজে এন্ট্রিও করা হয়। সাক্ষী সমনপ্রাপ্ত হয়েছেন কিনা কোর্ট পুলিশের মাধ্যমে তাও নিশ্চিত করা হয় বছরজুড়ে।

এ প্রসঙ্গে ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের কোর্ট ইন্সপেক্টর মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘মামলা নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে সাক্ষী হাজিরা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়৷ সাক্ষী হাজিরার ক্ষেত্রে আমরা সাক্ষী হাজিরা ক্যালেন্ডার তৈরি করি। নতুন এ পদ্ধতি গ্রহণের ফলে আমরা প্রায় সাড়ে ১২ হাজার সাক্ষীকে হাজির করতে পেরেছি। এই সাক্ষী হাজির করতে পারার কারণে আড়াই হাজারের অধিক মামলা নিষ্পত্তি করা সম্ভব হয়েছে।’ মামলা নিষ্পত্তির এমন নজিরের ফলে মানুষের মাঝে আইন হাতে তুলে নেয়ার প্রবণতা কমে আসবে বলেও মন্তব্য করেন এই পুলিশ কর্মকর্তা।

৮০৩ জন আসামির জবানবন্দি:
২০২৩ সালে ৫১৯ জন আসামি ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারা মোতাবেক এবং নারী-শিশু আইনের ২২ ধারা মোতাবেক ২৮৪ জন আসামি ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে জবানবন্দি দিয়েছেন। ফলে ত্বরান্বিত হয়েছে বিচারকাজ। তাছাড়া বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মামলার ৬৫১ জন আসামির রিমান্ড মঞ্জুর হয় ঐ বছরে। ফলে বিভিন্ন মামলার চাঞ্চল্যকর তথ্যও উদঘাটিত হয়েছে।

নিলামকৃত অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা:
গতবছরে ১৭০৭টি মামলার ১৬,৭০৯টি আলামত ধ্বংস করা হয়েছে। বিচারে নিষ্পত্তিকৃত মামলার এক লাখ ১০ হাজার ৮৭৭ টাকা স্থায়ীভাবে সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও আদালত প্রাঙ্গণে ৬৮টি মামলার ১১০টি আলামত এবং সাভার থানা প্রাঙ্গণে ২৯টি মামলার ১৭৬টি আলামত প্রথমবারের মতো প্রকাশ্যে নিলাম করা হয়। নিলামকৃত মূল্য ২১ লাখ ৪৮ হাজার ৫৪৭ টাকা। অর্থাৎ এ সময়ে সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়া হয় মোট ২২ লাখ ৫৯ হাজার ৪২৪ টাকা।

আদালত প্রাঙ্গণে প্রথমবারের মতো প্রকাশ্যে নিলাম কার্যক্রম ঢাকা জেলা কোর্ট পুলিশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে বলে মনে করেন আদালত পরিদর্শক মো. মনিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, আলামত নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে আমরা প্রথমবারের মতো আদালত ও সাভার থানা প্রাঙ্গণে প্রকাশ্যে নিলামের ব্যবস্থা করি। সেক্ষেত্রে আমরা আলামতগুলো নিষ্পত্তি করি এবং নিলামে বিক্রি করি। এক্ষেত্রে আমরা ২২ লক্ষাধিক টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দিয়েছি। 

লক্ষাধিক মাদকদ্রব্য ধ্বংস:
গতবছর তদন্তাধীন ১৬৪৯টি বিভিন্ন মামলায় ১ লাখ ১৪ হাজার ৮৩ পিস ইয়াবা, ৭৭১ কেজি গাঁজা, ২ কেজি ৫৯ গ্রাম হেরোইন, দুই হাজার ২৯৫ বোতল ফেনসিডিল, চারহাজার ২৯৮ লিটার চোলাই মদ, ১৪ হাজার ৭৭০ পিস ট্যাপেন্টাডল ট্যাবলেট, ছায় হাজার ২৩০ পিস নেশাদার ইনজেকশন ও ১৫৩ বোতল বিদেশি মদ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে ধ্বংস করা হয়েছে।

উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মামলা নিষ্পত্তি প্রসঙ্গে ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর মো. আনোয়ারুল কবীর বাবুল বলেন, ২০২৩ সালে আমরা আড়াই সহস্রাধিক মামলা নিষ্পত্তি ও প্রায় ১৩ হাজারের মতো সাক্ষী হাজির করতে সক্ষম হয়েছি। এটা আমাদের জন্য একটা মাইলফলক। মামলার বিচারকাজ দ্রুত শেষ করতে আমরা স্বল্প সময়ের ব্যবধানে মামলার তারিখ নির্ধারণের চেষ্টা করেছি।

তিনি আরো বলেন, মামলার অভিযোগ প্রমাণের স্বার্থে সারাবছরই সাক্ষীদের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে যোগাযোগ করে তাদের হাজির করেছি। আদালতও সাক্ষীদের সাক্ষ্য আন্তরিকভাবে গ্রহণ করেছেন। বিচারকাজে এমন দ্রুততা বিচারব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা আনয়ন করবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

দৈনিক জামালপুর
দৈনিক জামালপুর