• শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪ ||

  • শ্রাবণ ১২ ১৪৩১

  • || ১৯ মুহররম ১৪৪৬

অর্থ আদায়ে মামলা করবে মন্ত্রণালয়

দৈনিক জামালপুর

প্রকাশিত: ২২ মে ২০২৪  

বীর মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় ঢুকে পড়া মিথ্যা তথ্য প্রদানকারী আট হাজার ব্যক্তিকে চিহ্নিত করে তাদের নামের গেজেট বাতিল করেছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। অভিযোগ তারা মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্তির জন্য যেসব তথ্য দিয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। তালিকা থেকে বাদ পড়া ব্যক্তিরা বছরের পর বছর মাসিক ২০ হাজার টাকা করে সম্মানি ভাতা, দুই ঈদে ১০ হাজার টাকা করে উৎসব বোনাস, দুই হাজার টাকা করে বৈশাখী ভাতা এবং পাঁচ হাজার টাকা করে বিজয় দিবসের ভাতা নিয়েছেন। শুধু ভাতা বাবদ এক মাসে নিয়েছেন এক কোটি ৬০ লাখ টাকা। বছরে নিয়েছেন ১৯ কোটি ২০ লাখ টাকা। বিপুল পরিমাণ সরকারি এ অর্থ আদায়ে এবার মুক্তিযোদ্ধার মিথ্যা তথ্য দিয়ে তালিকায় ঢুকে পড়া ওই সব ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা করবে মন্ত্রণালয়। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

তবে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, তালিকায় অন্তর্ভুক্তির আগে উপজেলা কমিটি এবং জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) সুপারিশ ছিল। ওই দুই জায়গার সুপারিশের পরই তাদের নামে মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে সরকারি গেজেট প্রকাশ করেছে মন্ত্রণালয়। প্রশ্ন হচ্ছে, তারা কিসের ভিত্তিতে সুপারিশ করেছে। ভিত্তিহীন তথ্য যাছাইয়ের দায়িত্ব উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারসহ সংশ্লিষ্ট কমিটির সদস্যদের। আবার উপজেলা কমিটির পাঠানো তথ্য যাছাইয়ের দায়িত্ব জামুকার। যেসব উপজেলা কমান্ডারের সুপারিশে এরা মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় ঢুকেছে সেই কমান্ডারের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জামুকায় যাচাই-বাছাইয়ের সঙ্গে সম্পৃক্তদের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেওয়া হবে তা কিন্তু পরিষ্কার নয়।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টরা জানান, তালিকায় নাম ঢুকাতে এনআইডি (জাতীয় পরিচয়পত্র) সংশোধন করে বয়স জালিয়াতি করা হয়েছে। করেছে বাবা-মায়ের নামের পরিবর্তন। যুদ্ধক্ষেত্রে সহযোদ্ধা হিসাবে যাদের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে তারা বিশেষ সুবিধার বিনিময়ে সাক্ষ্য দিয়েছেন।

জামুকার সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায় দীর্ঘ প্রায় ৫ বছর ধরে যাচাই-বাছাই শেষে চূড়ান্ত তালিকা থেকে মিথ্যা তথ্য প্রদানকারীদের নাম বাদ দিতে জামুকায় লিখিত প্রতিবেদন পাঠায় জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড। জেলা থেকে প্রাপ্ত তালিকা যাচাই করে মন্ত্রণালয়ে পাঠায় জামুকা। মন্ত্রণালয় জামুকার তালিকা ধরে গেজেট বাতিল করে। বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা-সমালোচনা চলছে।

এ বিষয়ে মুক্তিযুদ্ধবিষয়কমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা আ ক ম মোজাম্মেল হক যুগান্তরকে বলেন, যাদের গেজেট বাতিল করা হয়েছে-তাদের বিরুদ্ধে মামলা করবে মন্ত্রণালয়। মামলার বিষয়ে ইতোমধ্যে আইনগত মতামতের জন্য বিশেষজ্ঞদের কাছে ফাইল পাঠানো হয়েছে।

এ বিষয়ে সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন এবি তাজুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, সব সম্ভবের দেশ বাংলাদেশ। তারা জালজালিয়াতি করে সনদ নিয়েছেন। সনদ দিয়েছেন কারা? কারা সুপারিশ করেছেন? যখন তাদের মুক্তিযোদ্ধা সনদ দেওয়া হয় এবং সম্মানি ভাতা পাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে তখন কি কোনো যাচাই-বাছাই করা হয়নি? যারা যাচাই-বাছাই করেছেন তাদের কি কোনো দায় নেই?

তিনি আরও বলেন, উপজেলা পর্যায়ে কমান্ডাররা বিভিন্ন কারণে পক্ষপাতিত্ব করেন। অনেকে জাল কাগজপত্র তৈরি করেন। অনেকে ওই সব কাগজের বৈধতা দেন। এভাবেই সমস্যা সৃষ্টি হয়। জাতির গর্বিত সন্তানদের নামে অসৎ প্রতারকরা ঢুকে পড়ে এবং ফায়দা হাসিল করে। তারপরও বলব যাদের নামের গেজেট বাতিল করা হয়েছে তাদের কাছ থেকে রাষ্ট্রীয় অর্থ আদায় কঠিন হবে। তারা প্রতিকারের জন্য উচ্চ আদালতে যাবেন এবং আদালত তাদের পক্ষে রায় দিলে তখন নতুন আরেকটি বিকর্ত সৃষ্টি হবে।

বিগত জাতীয় সংসদে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ যুগান্তরকে বলেন, বিষয়টি হাস্যকর। একবার তালিকাভুক্ত হয়, আবার বাতিল করা হয়। আবার তালিকাভুক্ত হয়। এ যেন একটা তামাশা। মহান মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদান রাখা বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে ছেলেখেলা হচ্ছে। এখন যে তথ্যের ভিত্তিতে আট হাজার লোককে মুক্তিযোদ্ধার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হলো, সেই তথ্যই যে সঠিক তার গ্যারান্টি কি? পরবর্তীতে বিষয়টি নিয়ে যে কোনো প্রশ্ন উঠবে না-এ নিশ্চয়তা কে দেবেন। আর সম্মানি ভাতার টাকা আদায় করতে পারবে বলে মনে করছেন না কাজী ফিরোজ রশিদ।

মন্ত্রণালয়ের আইন অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব শাহানা সারমিন যুগান্তরকে বলেন, গেজেট বাতিল করা মানে হলো বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে স্বীকৃতি বাতিল করা। এখন কেউ যদি মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে সরকারি অর্থ গ্রহণ করে থাকলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ আইনে রয়েছে। আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে।

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, গেজেটে বাতিল হওয়া ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে শিগগিরই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তারা যে ভাতা গ্রহণ করেছে তা আদায় করা হবে। মৃত ব্যক্তির পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে ভাতার টাকা আদায় করা হবে। যাদের দেওয়ার সামর্থ্য নেই, সেটি পরবর্তীতে সরকার সিদ্ধান্ত নেবে। মিথ্যা তথ্যে সনদ গ্রহীতার ছেলেমেয়ে সরকারি চাকরিতে ঢুকলে তাদের চাকিরিচ্যুত করা হবে।

তবে বাতিল করা গেজেটের অনেকেই মুক্তিযোদ্ধা সনদ ফিরে পেতে উচ্চ আদালতে মামলা করেছেন। এই মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তাদের বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না বলে জানান কর্মকর্তারা।

খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধরা শ্রেণিভেদে সর্বোচ্চ ৩৫ হাজার টাকা থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত সম্মানি ভাতা পেয়ে থাকেন। যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধরা শ্রেণিভেদে সর্বোচ্চ ৪৫ হাজার টাকা থেকে ২৭ হাজার টাকা পর্যন্ত ভাতা পাচ্ছেন। শহিদ পরিবারকে ৩০ হাজার এবং সাধারণ বীর মুক্তিযোদ্ধারা মাসিক ২০ হাজার টাকা সম্মানি ভাতা পাচ্ছেন। এছাড়া দুই ঈদে ১০ হাজার টাকা করে উৎসব ভাতা এবং ২ হাজার টাকা করে বৈশাখী ভাতা পাচ্ছেন। বর্তমানে ১ লাখ ৮৭ হাজার ২৯০ জন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে ভাতা দিচ্ছে সরকার।

দৈনিক জামালপুর
দৈনিক জামালপুর