• সোমবার ২০ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৬ ১৪৩১

  • || ১১ জ্বিলকদ ১৪৪৫

দৈনিক জামালপুর

প্রতিবাদী প্রকাশে রাধারমণ লোকসংগীত উৎসবের সমাপ্তি

দৈনিক জামালপুর

প্রকাশিত: ১৯ নভেম্বর ২০২৩  

শিল্পের লক্ষ্য কেবল চিত্তের বিনোদন নয়। সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে প্রতিবাদী চেতনাকে ধারণ করেও তৈরি হয় শিল্পের পথরেখা। তেমনই এক শিল্পাশ্রিত প্রতিবাদের প্রকাশ ঘটল রাধারমণ লোকসংগীত উৎসবে। কাজী নজরুল ইসলামের ‘কারার ঐ লৌহ কপাট’ গানটির বিকৃতির প্রতিবাদে সরব হলো এই সংগীতাসর। অস্কারজয়ী ভারতীয় সুরকার এ আর রহমানের কম্পোজিশনে ‘পিপ্পা’ সিনেমায় গানটিক বিকৃতির প্রতিবাদে শুদ্ধ স্বরে গাওয়া হলো গানটি। ঘড়ির কাঁটায় তখন বিকেল সাড়ে চারটা। প্রায় অর্ধশত লোকগানের শিল্পী সমবেত হলেন মঞ্চে। তারা সকলে মিলে কণ্ঠে তুলে নিলেন ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধের প্রেরণাদায়ী গানটি।

দ্রোহী চেতনার উদ্দীপনামূলক নজরুলসংগীতটি মঞ্চের শিল্পীদের কণ্ঠ থেকে ছড়িয়ে গেল শ্রোতাদের কণ্ঠে। আসন ছেড়ে দাঁড়িয়ে গেলেন তারা। এরপর শিল্পী ও শ্রোতার সম্মিলিত সুরের স্রোতধারায় উচ্চারিত হলো মন-প্রাণ শিহরিত করা সেই কালজয়ী গীতবাণীÑ কারার ঐ লোহ-কপাট/ভেঙে ফেল, কর রে লোপাট/রক্তজমাট শিকল-পূজার পাষাণ-বেদী/ওরে ও তরুণ ঈশান! বাজা তোর প্রলয় নিশান ...। উৎসবের আয়োজক রাধারমণ সংগীতচর্চা কেন্দ্র ও সংগীত সংগঠন সমন্বয় পরিষদের শিল্পীরা পরিবেশন করেন গানটি। আর এ গানের আশ্রয়ে শনিবার শিল্পকলা একাডেমির উন্মুক্ত আঙিনায় অনুষ্ঠিত সমাপনী দিনের পরিবেশনা পর্বের সূচনা হয়। গানটি পরিবেশনের পর উৎসব আয়োজকদের পক্ষ পিপ্পা সিনেমা  থেকে নজরুলের গানটি বাদ দেওয়া অথবা পুনরায় শুদ্ধ স্বরে উপস্থাপনের দাবি জানানো হয়।
উৎসবের দ্বিতীয় দিনে বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত ভেসে বেড়িয়েছে আবহমান বাংলাটির পলিমাটির নির্যাসময় সুরধ্বনি। ভাটি বাংলার লোককবিদের গানের সুরে সিক্ত হয়েছে শিকড়সন্ধানী শ্রোতার অন্তর। পরিবেশিত হয়েছে রাধারমণ দত্ত, হাসন রাজা, শাহ আবদুল করিম, দূরবীন শাহ, দীন হীন, শেখ ভানু, সৈয়দ শাহানুর, কালা শাহ ও উকিল মুন্সীর গান। সেসব গীতবাণীতে উঠে এসেছে দেহতত্ত্ব, অনুরাগ, প্রেম, ভজন, মানবতার আর্তিসহ যাপিত জীবনের নানা বিষয়।
এদিন একক কণ্ঠের পরিবেশনায় সুতপা রায় গেয়ে শোনান ‘কেন পিরিতি বাড়াইলি রে বন্ধু ছেড়ে যাইবা যদি’ ও ‘হাত বান্ধিবো পাও বান্ধিবো মন বান্ধিবো কেমনে’ শীর্ষক সংগীত।

দীন শরতের গান শুনিয়েছেন অশীতিপর কীর্তনিয়া সুবল চন্দ্র বসাক। উকিল মুন্সীর গান গেয়েছেন ফকির চান। সিদ্ধার্থ বিশ্বাস গেয়েছেন ‘নিশীথে যাইও ফুল বনে’। বাউল গোলাপ পরিবেশন করেন ‘আমারে আসিবার কথা কইয়া’, ‘বাউলা  কে বানাই লো রে’ ও ‘আল্লা নবীর নাম লইয়া রে’। বাউল শাহানাজের গাওয়া গানের শিরোনাম ছিল ‘কোথায় ও রাখিলে আমার’ এবং আইজ পাশা খেলবো রে শ্যাম’। ফকির আমির আলী শুনিয়েছেন ‘পানসি দৌড়াইয়া যাইতাম’। বাউল জুবায়ের বক্ত সেবুল গেয়েছেন ‘আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম’ ও ‘লোকে বলে আমার ঘরে নাকি চাঁদ এসেছে’। মোশাররফ মাস্টার পরিবেশন করেন ‘নিশিতে জাগিয়া আকুল হইলাম’ ও ‘তুমি বিনে আকুল পরাণ’।

বাউল সিরাজ গেয়েছেন ‘প্রেমরোগে পাইলো আমারে’ ও ‘তুই যদি হইতি গলার মালা’। এছাড়া একক সংগীত পরিবেশন করেন লাভলী দেব, সাগর দেওয়ান, বাউলিনা শাহানা আক্তার, বাউল তসকির আলী প্রমুখ। ‘বন্ধু তোর লাইগা রে’ শীর্ষক দলীয় সংগীত পরিবেশন করে মরমী লোকগীতি শিল্পী গোষ্ঠী। ‘বন্দে মায়া লগাইছে’ গানের সুরে নৃত্য পরিবেশন করে পুষ্পাঞ্জলি নৃত্যকলা কেন্দ্র।

দৈনিক জামালপুর
দৈনিক জামালপুর