• সোমবার ২৯ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৬ ১৪৩১

  • || ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫

দৈনিক জামালপুর

‘পড় বই, গড় দেশ : বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’ : সৈয়দ ফারুক হোসেন

দৈনিক জামালপুর

প্রকাশিত: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪  

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজধানীর বাংলা একাডেমিতে রেকর্ড ২১তম বারের মত মাসব্যাপী ‘অমর একুশে বইমেলা-২০২৪’ এর উদ্বোধন করেন। 

‘পড় বই, গড় দেশ : বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রতিপাদ্য নিয়ে বাংলা একাডেমির উদ্যোগে -এর চত্বর এবং সংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পৃথিবীর বৃহত্তম বার্ষিক এই বই মেলার আয়োজন করেছে।অমর একুশে গ্রন্থমেলা আমাদের কাছে ব্যাপকভাবে একুশে বইমেলা নামেই পরিচিত। স্বাধীন বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী মেলাগুলোর মধ্যে অন্যতম এই মেলার ইতিহাস স্বাধীন বাংলাদেশের মতোই প্রাচীন।এবার ২০২৪ সাল লিপইয়ার বা অধিবর্ষ। তাই ফেব্রæয়ারি মাস ২৯ দিনের। শুরু হয়েছে ভাষার মাস ফেব্রæয়ারি। ১৯৫২ সালের এ মাসেই মাতৃভাষা বাংলার জন্য ছাত্র-জনতা বুকের তাজা রক্তে রাজপথ রঞ্জিত করেছে। সে স্মৃতি বাঙালি জাতির কাছে আজো চির অ¤øান। ফেব্রæয়ারি এলেই ভাষা শহীদদের স্মরণে বাংলা একাডেমি মাসব্যাপী আয়োজন করে বইমেলার। বইমেলা বাঙালির প্রাণের মেলা। বইমেলা এলেই পাঠক-লেখক আর প্রকাশকদের নিয়ে তৈরি হয় অন্যরকম এক অনুভূতির জায়গা। সরগরম থাকে মেলাপ্রাঙ্গণ। বইমেলাকে কেন্দ্র করে বইপ্রেমীরা প্রিয় লেখকের বই কেনার জন্য ছুটে আসেন মেলায়। বলতে গেলে ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে বাঙালির প্রাণের এ মেলা।আমাদের বাঙালির স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতা অর্জনের পথচলাকে সঙ্গী করে সাথে নিয়ে এসেছে বাঙালির প্রাণের মেলা ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা'। মাতৃভাষাকে রক্ষা ও প্রতিষ্ঠা করার জন্য রাজপথে প্রাণ উৎসর্গ করেছিলেন বাংলার দামাল ছেলেরা। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রæয়ারি ভাষার জন্য প্রাণ দেন তারা। সেই থেকে বাংলা ভাষা ও ভাষাশহীদদের স্মরণে প্রতিবছরের ফেব্রæয়ারিতে হয় অমর একুশে বইমেলা। পাঠক, লেখক ও প্রকাশকদের এক মহামিলন মেলায় পরিণত হয়েছে এবারের বইমেলা। বই ও লেখকদের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্কটা আত্মিক বলেই হয়তো এর নাম প্রাণের মেলা।বইপ্রেমী মানুষের কাছে এই মেলা বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। তারা অধীর আগ্রহে এই মাসটির জন্য অপেক্ষা করেন। জাতীয়ভাবেও এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।লেখক, প্রকাশক ও পাঠকের মধ্যে সরাসরি যোগাযোগের বার্ষিক মিলনমেলা হলো এই একুশে বইমেলা। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রম্নয়ারিতে বাংলা ভাষার জন্য আত্মোৎসর্গের বীরত্বপূর্ণ ঘটনাকে স্মৃতিতে অম্স্নান রাখতেই ফেব্রম্নয়ারি মাসে আয়োজিত বইমেলার নামকরণ 'অমর একুশে গ্রন্থমেলা'। সারাদেশ থেকে আসা লেখক, কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, সংস্কৃতিকর্মীসহ সর্বস্তরের মানুষের পদচারণায় মুখরিত হচ্ছে এ বছরের বইমেলা। মেলায় সুন্দর-বর্ণোজ্জ্বল থরে থরে সাজানো বইগুলো পাঠকদের বিমোহিতই করছে না, এখানে লেখক-পাঠক-প্রকাশকগণের পরস্পর ভাব বিনিময়ের সুযোগ ঘটছে। বাঙালির প্রাণের মেলা ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’র। এই মেলার সঙ্গে ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস, শহীদদের রক্তস্নাত বর্ণমালা জড়িয়ে রয়েছে।বায়ান্নর চেতনা থেকে একাত্তর– আর এর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে চুয়ান্ন, বাষট্টি, ছেষট্টি ও ঊনসত্তরের আন্দোলন।এই বইমেলা এবং যারা এর আয়োজক তাদের যেন রকমারি সাজগোজের কোন কমতি থাকেনা। এই বইমেলার মাধ্যমে সবাই যেন বাঙালি জাতিকে আরো উঁচু স্থানে নিয়ে যেতে থাকে।‘বই’ একালে আমাদের খুব প্রিয় সঙ্গী। জ্ঞান, আনন্দ ও বিনোদনের এক গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম।যে জাতির বই-পুস্তক সংখ্যা যত বেশি তার মেধাগত সমৃদ্ধিও তত বেশি।মানুষকে বইমুখী করে তোলার জন্য বইমেলার রয়েছে এক অনবদ্য অবদান। সকল বয়সের মানুষের জন্য এখানে থাকে উপযুক্ত বইয়ের পর্যাপ্ত কালেকশন। অমর একুশের গ্রন্থমেলা বাঙালি জাতির প্রাণের মেলা। প্রাণের এই বইমেলার জন্য  প্রতিবছর ফেব্রæয়ারি মাসে বাঙালি জাতি অপেক্ষায় থাকে।  তাদের জাতীয় এই গ্রন্থমেলার জন্য লেখক-প্রকাশক পাঠক সবাই যেন বইমেলার প্রহরের অপেক্ষায় থাকে। ১৯৭২ সালের ৮ ফেব্রæয়ারি শ্রী চিত্তরঞ্জন সাহা বাংলা একাডেমীর বর্ধমান হাউসের সামনের বটতলায় এক টুকরো চটের ওপর কলকাতা থেকে আনা ৩২টি বই সাজিয়ে বইমেলার শুরু করেন। এই ৩২টি বই ছিলো চিত্তরঞ্জন সাহা প্রতিষ্ঠিত স্বাধীন বাংলা সাহিত্য পরিষদ (বর্তমানে মুক্তধারা প্রকাশনী) থেকে প্রকাশিত মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতে অবস্থানকারী বাংলাদেশি শরণার্থী লেখকদের লেখা বই।৬৩৫টি প্রতিষ্ঠানকে মোট ৯৩৭টি ইউনিট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে এবার। এর মধ্যে একাডেমি প্রাঙ্গণে ১২০টি প্রতিষ্ঠানকে ১৭৩টি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৫১৫টি প্রতিষ্ঠানকে ৭৬৪টি ইউনিট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।গতবছর বইমেলায় অংশ নিয়েছিল ৬০১ প্রতিষ্ঠান। সেই হিসাবে এবার প্রকাশনা সংস্থা বেড়েছে ৩৪টি। এবারের বইমেলা চলছে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রায় সাড়ে ১১ লাখ বর্গফুট জায়গায়। মেলায় ৩৭টি (একাডেমি প্রাঙ্গণে একটি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৩৬টি) প্যাভিলিয়ন রয়েছে।বইমেলা শুধু বইয়ের মেলা নয়; বরং তা আমাদের ঐতিহ্যেরও ধারক এবং বাহক। সেই ঐতিহ্য ফুটিয়ে তুলতে প্রতি বছরই অমর একুশে বইমেলায় নির্মাণ করা প্যাভিলিয়ন ও স্টলগুলোতে দেখা যায় বৈচিত্র্য ও নান্দনিকতার বহিঃপ্রকাশ। গ্রামীণ পরিবেশ, রিকশাচিত্র, সুপারবোর্ড কিংবা ককশিটসহ নানা উপকরণ দিয়ে এসব স্টল কিংবা প্যাভিলিয়ন বৈচিত্র্যময় করে তুলতে প্রকাশনীগুলোর কমতি থাকে না।এবার শুধু মেলার আকারের পরিবর্তন হয়েছে বিষয়টি এমন নয়। প্রযুক্তির ছোঁয়া লেগেছে এখানেও। কাগজের বই থেকে এখন আগ্রহ বাড়ছে ই-বুক বা ডিজিটাল বুকে। উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে অডিও বুকেরও৷ নামকরা প্রকাশকেরাও ই-বুকে আগ্রহী হচ্ছেন। বইমেলার উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী কিন্তু ডিজিটাল প্রকাশক হওয়ার তাগিদ দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর ডিজিটাল প্রকাশনার এই ভাবনায় উদ্বুদ্ধ হয়েছেন অনেক প্রকাশক। ইতিমধ্যে অনেকে বইয়ের অডিও, ভিডিও ফরম্যাট করার চেষ্টা করছেন।ফলে আমরাও প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাব।চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের যুগে বিশ্ব প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার লক্ষ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ অর্থাৎ ‘স্মার্ট নাগরিক’, ‘স্মার্ট সরকার’, ‘স্মার্ট অর্থনীতি’ ও ‘স্মার্ট সমাজ’ গড়ার কর্মপন্থা নির্ধারণ করা হয়েছে। সেখানে নলেজ ভিত্তিক সমাজ স্মার্ট বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার একটি নিয়ামক এবং একুশের বই মেলা তার সহযাত্রী। অডিও ও ই-বইয়ের মধ্য দিয়ে ব্যবসারও অগ্রগতি হবে।ভাষা আন্দোলনের পথ ধরে স্বাধীনতা এসেছে। বাঙালির যাপিত জীবনে মেলার গুরুত্ব অপরিসীম। নিজস্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে তুলে ধরার জন্য বছরজুড়েই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন মেলার আয়োজন করা হয়।স্বাধীনতার পরও ভাষা ও সংস্কৃতির উপর বারবারই এমন আক্রম হয়েছে এবং আমাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।বইমেলার মধ্যে দিয়ে আমরা সেই ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার চেষ্টা করতে হবে।বইমেলাকে ঘিরে লেখক, পাঠক তথা বইপ্রেমীদের প্রত্যাশা অনেক। লেখকের প্রত্যাশা হলো পাঠক যেন ভালোবেসে তার একটি বই কিনেন। পাঠক প্রত্যাশা করেন মেলা থেকে যেন তিনি তার প্রিয় লেখকের বই কিনতে পারেন।বইমেলাকে ঘিরে ভাষার মাস ফেব্রæয়ারি জুড়েই শাহবাগ, ছবির হাট, দোয়েল চত্বর, টিএসসিসহ পুরো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকাটি এক আনন্দমুখর পরিবেশের জন্ম দেয়।সব লেখক, পাঠক ও প্রকাশকের মনোজগৎ সমৃদ্ধ হোক জ্ঞানের আলোয়।ডিজিটাল বাংলাদেশের পর এবার সরকারের লক্ষ্য স্মার্ট বাংলাদেশ। বাংলা সংস্কৃতিকে এগিয়ে নিতে প্রকাশকদের এখন থেকে ডিজিটালি বই প্রকাশের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে হবে।
রেজিস্ট্রার, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়, জামালপুর
 

দৈনিক জামালপুর
দৈনিক জামালপুর