• মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১০ ১৪৩১

  • || ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

দৈনিক জামালপুর
সর্বশেষ:
হিটস্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে যে নির্দেশনাগুলো দিলো স্বাস্থ্য অধিদফতর বাংলাদেশ জলবায়ু উন্নয়ন অংশীদারিত্ব গঠন: প্রধানমন্ত্রী এক্সারসাইজ টাইগার লাইটনিং (টিএল)-২০২৪ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠিত প্রধানমন্ত্রীর থাইল্যান্ড সফরে সই হবে ৫ চুক্তি ও সমঝোতা বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরদারের তাগিদ আমরা নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধি করেছি: শেখ হাসিনা যুদ্ধের অর্থ জলবায়ু পরিবর্তনে ব্যয় হলে বিশ্ব বাঁচত দ্বিতীয় ধাপে মনোনয়নপত্র জমা দিলেন যারা বাংলাদেশ থেকে দক্ষ জনশক্তি নিতে চায় কিরগিজস্তান: সালমান এফ রহমান ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম : শেখ হাসিনা

তেল-গ্যাস অনুসন্ধান মার্কিন কোম্পানি এক্সন মবিল কাজ পাচ্ছে

দৈনিক জামালপুর

প্রকাশিত: ২৫ এপ্রিল ২০২৩  

গভীর সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের কাজ পাচ্ছে শীর্ষস্থানীয় মার্কিন বহুজাতিক কোম্পানি এক্সন মবিল। কোম্পানিটি সাগরের ১৫টি ব্লকে এই অনুসন্ধান চালাতে চায় বলে সরকারের কাছে লিখিত প্রস্তাব জমা দিয়েছে। ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গুরুত্বপূর্ণ এ প্রস্তাবের ব্যাপারে নীতিগত সম্মতি দিয়েছেন। তবে মার্কিন কোম্পানিটির সঙ্গে চ‚ড়ান্ত চুক্তি করার আগে তার সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করার নির্দেশ দিয়েছেন মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকদের।

বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ সোমবার বিকালে যুগান্তরকে বলেন, এক্সন মবিলের প্রস্তাবটি বিবেচনার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠিয়েছি। আমরা এ প্রস্তাবের ব্যাপারে ইতিবাচক আছি। প্রধানমন্ত্রীও এ ব্যাপারে সম্মতি দিয়ে আলোচনা চালিয়ে যেতে বলেছেন। ইতোমধ্যে বিষয়টি নিয়ে একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটি

আগামী সপ্তাহ থেকে কাজ শুরু করবে। তিনি বলেন, অনুসন্ধান শেষে যদি সবকিছু ফলপ্রসূ হয়, তাহলে এক্সন মবিলের সঙ্গে আন্তর্জাতিক উৎপাদন অংশীদারত্ব চুক্তি (পিএসসি) করা হবে। এজন্য পিএসসিকেও ঢেলে সাজানোর কাজ শুরু হয়ে গেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, দেশের বিদ্যমান জ্বালানি সংকট আর ক্রমবর্ধমান চাহিদার মধ্যে আশার আলো লুকিয়ে আছে সাগরের তলদেশে। যদিও মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমা জয়ের এক দশক পেরিয়ে গেলেও আশানুরূপ কোনো অগ্রগতি হয়নি। গভীর ও অগভীর সমুদ্রে চারটি বিদেশি কোম্পানি কাজ শুরু করলেও পরবর্তী সময়ে চলে যায় তিনটি কোম্পানি। বর্তমানে অগভীর সমুদ্রের দুটি ব্লকে ভারতীয় কোম্পানি ওএনজিসি অনুসন্ধান চালাচ্ছে। এমন বাস্তবতার মধ্যে সাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে মার্কিন বহুজাতিক কোম্পানি এক্সন মবিলের প্রস্তাব আশা জাগাচ্ছে সম্ভাবনার। গভীর সমুদ্রের ১৫ ব্লকের প্রায় সবকটিতেই আগ্রহ দেখিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ ও জ্বালানিবিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে জানিয়েছেন, সব ঠিকঠাকমতো চললে চলতি বছরেই মার্কিন কোম্পানিটির সঙ্গে সমঝোতায় পৌঁছানোর সম্ভাবনা রয়েছে। তবে বহুজাতিক তেল-গ্যাস কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি নিয়ে অনেক ক্ষেত্রেই দেখা দেয় নানা বিতর্ক। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা বলেন, দেশের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়েই সমঝোতা করা হবে।

এদিকে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় শীর্ষস্থানীয় মার্কিন বহুজাতিক কোম্পানির অনুসন্ধানের আগ্রহকে দেশের জ্বালানি খাতের জন্য বেশ সম্ভাবনাময় হিসাবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। একই সঙ্গে দরকষাকষির ক্ষেত্রে ভ‚রাজনৈতিক বিভিন্ন বিষয়ও বিবেচনায় রাখার পরামর্শ দেন তারা।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. বদরুল ইমাম বলেন, এটি একটি বড় ধরনের ইতিবাচক প্রস্তাব। কোনো অবস্থায়ই প্রস্তাবটিকে নেতিবাচকভাবে নেওয়া যাবে না। এক্সন মবিলের মতো প্রতিষ্ঠান বঙ্গোপসাগরে আগ্রহ প্রকাশ করায় অন্যান্য প্রতিষ্ঠানও এখানে বিনিয়োগে আগ্রহ দেখাবে।

তাদের মতে, সবকিছু ঠিকঠাকমতো পরিচালিত হলে গভীর সমুদ্র থেকে তেল-গ্যাস পেতে ৮ থেকে ১০ বছর সময় লাগতে পারে বলে জানিয়েছেন জ্বালানি খাতসংশ্লিষ্টরা।

বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, অনেক সম্ভাবনাময় হওয়া সত্তে¡ও বঙ্গোপসাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে এতদিন কার্যকর কোনো উদ্যোগ ছিল না। পাশের দেশ মিয়ানমার ও ভারত তাদের প্রান্তে সাগরে তেল-গ্যাস আবিষ্কারে অনেক এগিয়ে গেলেও বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে এখনো পিছিয়ে আছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সরকারকে জরুরি ভিত্তিতে সাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান করতে হবে। নতুবা অদূর ভবিষ্যতে দেশ গ্যাস সংকটে পড়তে পারে। কারণ, আমদানি করে গ্যাসের পুরো চাহিদা মেটানো অসম্ভব।

জানা যায়, গ্যাসের ঘাটতি মেটাতে উচ্চমূল্যে আমদানি করছে সরকার। স্থলভাগেও কমছে নিজস্ব গ্যাসের মজুত। এরপরও বঙ্গোপসাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে বাংলাদেশ পিছিয়ে আছে। এরই মধ্যে একাধিক বিদেশি কোম্পানি সাগরে অনুসন্ধান শেষ না করেই চলে গেছে। পূর্ণাঙ্গ জরিপের জন্য প্রয়োজনীয় মাল্টিক্লায়েন্ট সার্ভের কাজ ঝুলে আছে ৮ বছর ধরে। তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে আন্তর্জাতিক দরপত্র ডাকার কার্যক্রমও বারবার পিছিয়ে যাচ্ছে।

বঙ্গোপসাগরের অগভীর ও গভীর অংশকে মোট ২৬টি ব্লকে ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে অগভীর অংশে ব্লক ১১টি। আর গভীর সমুদ্রে ব্লক ১৫টি। অগভীর ব্লকে পানির গভীরতা ২০০ মিটার পর্যন্ত। এর পরে গভীর সমুদ্র ব্লক। অগভীর সমুদ্রের ৯ নম্বর ব্লকে ১৯৯৬ সালে সাঙ্গু গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার করে কেয়ার্নস এনার্জি, যা এখন পর্যন্ত দেশের একমাত্র সামুদ্রিক গ্যাসক্ষেত্র। ১৯৯৮ সালে সেখান থেকে গ্যাস উৎপাদন শুরু হয়। মজুত ফুরিয়ে যাওয়ায় ২০১৩ সালে গ্যাসক্ষেত্রটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। এছাড়া কুতুবদিয়ার সাগরতীরে গ্যাসের সন্ধান মিললেও তা বাণিজ্যিকভাবে উত্তোলনযোগ্য বিবেচিত হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক তেল-গ্যাস কোম্পানি কনোকোফিলিপস ২০০৮ সালের দরপত্র প্রক্রিয়ায় গভীর সমুদ্রের ডিএস-১০ ও ডিএস-১১ নম্বর ব্লক ইজারা নিয়েছিল। দুই বছর অনুসন্ধান কাজ করার পর গ্যাসের দাম বৃদ্ধি নিয়ে মতভেদের কারণে ২০১৪ সালে ব্লক দুটি ছেড়ে দেয় কনোকো। ২০১২ সালের ডিসেম্বরে ডাকা অন্য আরেক আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে গভীর সমুদ্রের ডিএস-১২, ডিএস-১৬ ও ডিএস-২১-এই তিন ব্লকের জন্য যৌথভাবে দরপ্রস্তাব জমা দিয়েছিল কনোকো ও স্টেট অয়েল। পরবর্তী সময়ে কনোকো নিজেকে সরিয়ে নেওয়ায় ব্লকগুলো ইজারা দেওয়া সম্ভব হয়নি। একই সময়ে অগভীর সমুদ্রের ব্লকগুলোর জন্য ভিন্ন একটি দরপত্র আহ্বান করে পেট্রোবাংলা। এই দর প্রক্রিয়া এসএস ১১ নম্বর ব্লক সান্তোস ও ক্রিস এনার্জি এবং এসএস ৪ ও এসএস ৯ নম্বর ব্লক ভারতীয় দুটি কোম্পানি ওএনজিসি ভিদেশ (ওভিএল) ও অয়েল ইন্ডিয়া (ওআইএল) ইজারা নেয়।

দৈনিক জামালপুর
দৈনিক জামালপুর