• বৃহস্পতিবার ০৯ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২৬ ১৪৩১

  • || ২৯ শাওয়াল ১৪৪৫

দৈনিক জামালপুর

২০৩০ সালের মধ্যেই ছয় মেট্রোরেল পথ, উপকৃত হবে অর্ধকোটি মানুষ

দৈনিক জামালপুর

প্রকাশিত: ৮ নভেম্বর ২০২৩  

রাজধ‌ানীর দুই কোটি বা‌সিন্দার যানজট ও বায়ু দূষণের মুখোমুখি হ‌ওয়া নৈ‌মি‌ত্তিক ব্যাপার। এ সমস্যা দুটি থে‌কে নগ‌রবাসী‌র পরিত্রাণের পাশাপাশি জীবনযাত্রায় স্বাচ্ছন্দ্য আনতে ঢাকা ও এর সংলগ্ন এলাকায় ১২৮ কিলোমিটারজু‌ড়ে ছয় লাইনের মেট্রোরেল নেটওয়ার্ক গড়ার মেগা পরিকল্পনায় এগিয়ে যাচ্ছে সরকার। এ নেটওয়ার্ক বাস্তব রূপ পেলে ৫০ লাখের বেশি মানুষ এটি ব্যবহার করে উপকৃত হ‌বে। এজন‌্য অপেক্ষা করতে হবে ২০৩০ সাল পর্যন্ত।
যানজট নিরসনে সরকারের অগ্রাধিকারভিত্তিক চলমান প্ৰকল্প ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের আওতায় ১২৮ কিলোমিটারের ম‌ধ্যে ৬৭ কিলোমিটার উড়াল এবং ৬১ কিলোমিটার হবে পাতাল মেট্রোরেলের পথ। শক্তিশালী নেটওয়ার্কের আওতায় এ প্রকল্পে মোট স্টেশন হবে ১০৪টি। এর মধ্যে উড়াল ৫১টি ও পাতাল হবে ৫৩টি।

প্রকল্প সূ‌ত্রে জানা যায়, পু‌রো রাজধানী‌কে রে‌লের আওতায় আনতে যাচ্ছে সরকার। এরই পরিপ্রেক্ষি‌তে দেশের প্রথম ভূগর্ভস্থ এই মেট্রোরেল লাইনের ভৌত অবকাঠামোগত কাজ চলতি বছরের শুরুতে শুরু হয়। দ্বিতীয় মেট্রোরেল লাইন আনুষ্ঠানিকভাবে ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট মে‌ট্রোরেল লাইন-১ নামে পরিচিত। এ প্রকল্পের সময়সীমা ২০২৬ পর্যন্ত হলেও কাজ শুরুতে দেরির কারণে আরো দুই বছর সময় লাগতে পারে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হা‌সিনা গত শ‌নিবার আনুষ্ঠানিকভাবে দেশের তৃতীয় মেট্রোরেল, এমআরটি লাইন-৫ (উত্তর রুট) নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন। এ প্রকল্পের সময়সীমা ২০২৮ সাল পর্যন্ত। এছাড়া এমআরটি লাইন-৪ ও এমআরটি লাইন-৫ (দক্ষিণ রুট) এর জন্য অন্যান্য প্রস্তুতিমূলক কাজও চলামান র‌য়ে‌ছে। তবে এখনো প্রকল্পটি অনুমোদন পায়নি।

এসব বিষয়ে বাস্তবায়নকারী ও পরিচালন সংস্থা ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন সিদ্দিক ডেইলি বাংলা‌দেশ‌কে বলেন, আমরা নির্ধারিত সময়ের আগেই এমআর‌টি লাইন-৬ (প্রথম মেট্রোরেল) সম্পন্ন করেছি। সুতরাং আমরা নি‌র্দিষ্ট সময়সীমা অর্থাৎ ২০৩০ মধ্যে মে‌ট্রো নেটওয়ার্ক পরিকল্পনাও বাস্তবায়নে সক্ষম হবো।

দেশের প্রথম মেট্রোরেল লাইন হচ্ছে এমআর‌টি লাইন-৬। উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০.১০ কিলোমিটারের এ লাইনটি বাস্তবায়‌নের অনু‌মোদন পায় ২০১২ সালের ডিসেম্বরে। প্রক‌ল্পের সময়সীমা ছিল ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত। এর ম‌ধ‌্যে গত বছরের ডিসেম্বরে ১২ কিলোমিটার রেল লাইন উত্তরা-আগারগাঁও সেকশন চালু হ‌য়ে‌ছে। এরই ধারাবা‌হিকত‌ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হা‌সিনা গত শ‌নিবার আগারগাঁও-মতিঝিল সেকশনের উদ্বোধন করেন। বা‌কি ১ দশমিক ১৬ কিলোমিটার রেললাইন মতিঝিল-কমলাপুর ‌রেলস্টেশনের কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়ে‌ছে ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে। এ প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে ৩৩ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা হয়েছে, যা পূ‌র্বের ব‌্যয়ের চেয়ে প্রায় ১১ হাজার ৪৮৭ কোটি টাকা বেশি।

এদিকে এমআরটি লাইন-১, দেশের প্রথম আন্ডারগ্রাউন্ড অর্থাৎ দেশের প্রথম ভূগর্ভস্থ ৩১.২৪ কিলোমিটার মেট্রোরেল লাইন এবং পরিবহন খাতের সবচেয়ে বড় অবকাঠামো প্রকল্প। এর ব্যয় ধরা হ‌য়ে‌ছে ৫২,৫৬১.৪৩ কোটি টাকা। 

প্রকল্প সূ‌ত্রে জানা যায়, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ১৯.৮৭ কিলোমিটার অংশ ভূগর্ভস্থ হবে। অন্য অংশটি নতুন বাজার থেকে পূর্বাচল পর্যন্ত ১১ দশমিক ৩৬ কিলোমিটার প্রসারিত হবে। দুটি অংশের জন্য থাকবে ১৯টি স্টেশন।

আরো জানা যায়, প্রকল্পটি বাস্তবায়‌নের অনুমোদন পায় ২০১৯ সালের অক্টোবরে। ২০২০ সা‌লে প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ার কথা ছিল। তবে করোনাভাইরাস সম্পর্কিত বিধিনিষেধের কারণে শুরু করা সম্ভব হয়‌নি। শেষ পর্যন্ত এই বছরের ফেব্রুয়ারিতে নারায়ণগঞ্জের পিতলগঞ্জে একটি ডিপোর জন্য জমি উন্নয়নের মাধ্যমে নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ডিপো নির্মাণের জন্য জাপান-বাংলাদেশের একটি যৌথ কোম্পানিকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত ১২টি প্যাকেজের মধ্যে একটির জন্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। 

কাজ শুরুর বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক আবুল কাশেম ভূঁইয়া ডেইলি বাংলা‌দেশ‌কে বলেন, আমরা আশা করছি এই অর্থবছরের শেষ নাগাদ আন্ডারগ্রাউন্ডের কাজ শুরু করতে পারবো।

ডিএমটিসিএল সূত্র জানায়, ভূগর্ভস্থ কাজের জন্য প্রতিটি প্যাকেজের চুক্তির মেয়াদ পাঁচ বছরের, যার ফলে সময়সীমার মধ্যে কাজ শেষ করা অসম্ভব। এছাড়াও জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির একটি নথি, যা নরম ঋণে খরচের ৭০ শতাংশ প্রদান করবে। এ লাইনটি ২০২৮ সালে খোলা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

এমআর‌টি লাইন-৫ (উত্তর রুট): প্রথম পূর্ব-পশ্চিম মেট্রো করিডোর সাভারের হেমায়েতপুর থেকে গাবতলী, মিরপুর ও গুলশান হয়ে ভাটারা পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণের জন্য অক্টোবর ২০১৯ সালে অনুমোদন দেয় কর্তৃপক্ষ। সেখা‌নে ভূগর্ভস্থ স্টেশনসহ রেললাইন এবং উচ্চতর সেকশন থাকবে। এমআর‌টি ৬ এবং ১ এর মতো এই লাইনটিও জাপানি সফট লোনের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হবে। 

এ প্রকল্প বাস্তবায়‌নে গত শ‌নিবার মতিঝিল মেট্রো স্টেশনে আনুষ্ঠানিকভাবে ৪১ হাজার ২৩৯ কোটি টাকার প্রকল্পের নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। 

সূ‌ত্রে জানা যায়, হেমায়েতপুরে ডিপোর জন্য ভূমি উন্নয়নের কাজ শুরু করে গত ১৬ জুলাই লাইনের ভৌত কাজ শুরু হয়। ২৩ মে এক হাজার ১৮৯ কোটি টাকা ব্যয়ে কাজের জন্য জাপানের টিওএ কর্পোরেশন এবং বাংলাদেশের স্পেকট্রা গ্রুপের একটি যৌথ উদ্যোগ সংস্থাকে নিয়োগ দিয়েছে ডিএমটিসিএল। প্রকল্পের সময়সীমা ২০২৮ সাল পর্যন্ত ধরা হ‌য়ে‌ছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত ১০টি প্যাকেজের মধ্যে মাত্র একটির জন্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। 

প্রকল্প সূ‌ত্রে আরো জানা যায়, এমআর‌টি লাইন- ৫ (দক্ষিণ রুট) প্রথম মেট্রোরেল প্রকল্পটিতে জাপান ছাড়াও অন্য সংস্থা অর্থায়ন করবে। এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক এর অর্থায়নে ডিএম‌টি‌সিএল চতুর্থ লাইন, এমআরটি লাইন-৫ (দক্ষিণ রুট) এর জন্য একটি সম্ভাব্যতা সমীক্ষা পরিচালনা করা হ‌য়ে‌ছে। ১৭.৩ কিলোমিটার লাইনটি গাবতলী থেকে শুরু হয়ে কল্যাণপুর, শ্যামলী, আসাদ গেট, রাসেল স্কয়ার, পান্থপথ, কারওয়ান বাজার, হাতিরঝিল, রামপুরা এবং আফতাবনগর হয়ে দাশেরকান্দিতে শেষ হবে। এ লাইনের স্টেশ‌নের বেশিরভাগ ভূগর্ভস্থ অংশ। প্রকল্পটির প্রাথমিক আনুমানিক ব্যয় হবে ৪৭ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা।  

প্রকল্প সূ‌ত্রে আরো জানা যায়, এ প্রকল্প বাস্তবায়‌নে এডিবি এবং দক্ষিণ কোরিয়া- উভয়ই অর্থায়নে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এডিবি প্রধান অর্থদাতা হিসেবে রয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। প্রকল্পের সময়সীমা ধরা হ‌য়ে‌ছে ২০৩০ সাল পর্যন্ত।

প্রস্তাবিত এমআরটি লাইন-২ প্রকল্পটি গত বছর একটি বড় ধাক্কার সম্মুখীন হয় যখন কর্তৃপক্ষ এটির অর্থায়ন ও বাস্তবায়নের উপায় পরিবর্তন করে। জাপানের সঙ্গে জিটুজি (সরকার-টু-সরকার) পি‌পি‌পি (পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ) মডেলের অধীনে এটি বাস্তবায়িত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু মেট্রো কর্তৃপক্ষ এখন সরকারি উদ্যোগে এটি বাস্তবায়ন করতে চায়। কারণ, তারা জাপানের কোম্পানির দেওয়া শর্তগুলোকে অগ্রহণযোগ্য মনে করেছে। কর্তৃপক্ষ লাইনের প্রাথমিক প্রান্তিককরণও পরিবর্তন করেছে। গাবতলী থেকে মোহাম্মদপুর, নীলক্ষেত, আজিমপুর, কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার, গুলিস্তান, মতিঝিল, কমলাপুর, মুগদা, ডেমরা হয়ে চট্টগ্রাম রোড পর্যন্ত ২৪ কিলোমিটার লাইন হওয়ার কথা ছিল। তবে নতুন এলাইনমেন্ট অনুযায়ী লাইনটি নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত বাড়ানো হবে। এটির গুলিস্তান থেকে সদরঘাট পর্যন্ত একটি বর্ধিত অংশ থাকবে, যার মোট দৈর্ঘ্য ৩৫ কিলোমিটার হবে, যা এটিকে দীর্ঘতম মেট্রো রেললাইনে পরিণত করবে। এ প্রকল্প‌টি ২০২৪ সালে শুরু হওয়ার কথা। কিন্তু অর্থ-সম্পর্কিত পরিবর্তনগুলো আরো বিলম্বের কারণ হতে পারে। বর্তমানে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ প্রকল্পটির সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য অর্থদাতাদের সন্ধান করছে।

এমআরটি লাইন-৪ ঢাকার বাইরের অংশের সঙ্গে সংযোগ লাইন। কমলাপুর থেকে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত লাইনটি ভূগর্ভস্থ করার কথা ছিল। কিন্তু বাংলাদেশ রেলওয়ে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রেললাইন সম্প্রসারণ করায় মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ পরিকল্পনা পরিবর্তন করে। ফ‌লে সাইনবোর্ড হ‌য়ে ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জের মদনপুর পর্যন্ত এর নতুন এলাইনমেন্ট হবে। এতে ১৬ কিলোমিটার লাইনে ভূগর্ভস্থ এবং উঁচু- উভয় অংশ থাকবে। 

এ বিষ‌য়ে ডিএম‌টি‌সিএল এর এম‌ডি এম এ এন সিদ্দিক বলেন, দক্ষিণ কোরিয়া ও অন্যান্য সংস্থা এমআর‌টি লাইন-২ এবং এমআরটি লাইন-৪ এর জন্য অর্থায়নে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এমআরটি লাইন-৪ এর নির্মাণকাজ শেষ হবে ২০৩০ সালের মধ্যে।

দৈনিক জামালপুর
দৈনিক জামালপুর