• বৃহস্পতিবার ০৯ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২৬ ১৪৩১

  • || ২৯ শাওয়াল ১৪৪৫

দৈনিক জামালপুর

জন্ম-মৃত্যু সার্ভার উন্নয়নের দায়িত্বে এবার এনটিএমসি

দৈনিক জামালপুর

প্রকাশিত: ৮ নভেম্বর ২০২৩  

কয়েক মাস ধরে জন্ম ও মৃত্যু সনদ সংগ্রহে ব্যাপক ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন সাধারণ নাগরিকরা। বিশেষ করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে আসন্ন ভর্তি মৌসুমের আগে চোখে যেন অন্ধকার দেখছেন অভিভাবকরা। মাসের পর মাস ভোগান্তি পোহালেও কোনো সমাধান হচ্ছিল না জন্মনিবন্ধন সনদ নিয়ে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রিভ সিস্টেমস জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধনের রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়কে শর্তানুযায়ী সবকিছু বুঝিয়ে দেয়নি বলে অভিযোগ দপ্তরটির। এমন প্রেক্ষাপটে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন তথ্য ব্যবস্থার (বিডিআরআইএস) দায়িত্ব পেয়েছে জাতীয় টেলিযোগাযোগ তদারকি কেন্দ্র বা এনটিএমসি। ভবিষ্যতে কখনো বিডিআরআইএস সার্ভারে কোনো জটিলতা হবে না এমন লক্ষ্যেই সিস্টেমটি তৈরি করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন এনটিএমসির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান। আগামী ছয় সপ্তাহের মধ্যে জন্ম ও মৃত্যু সনদ-সংক্রান্ত জটিলতার নিরসন হবেও দাবি সংস্থাটির।

২০০৪ সালে প্রণীত এবং ২০০৬ সাল থেকে কার্যকর হওয়া আইনের মাধ্যমে অন্তত ১৯টি সেবার ক্ষেত্রে জন্মনিবন্ধন সনদ প্রয়োজনীয় করা হয়। বিশেষ করে পাসপোর্ট ইস্যু, বিবাহবন্ধন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি, ড্রাইভিং লাইসেন্স

নেওয়া, জমি নিবন্ধন-সংক্রান্ত সেবা পেতে এবং ১৮ বছর বয়সের নিচে যাদের জাতীয় পরিচয় (এনআইডি) নেই তাদের জন্য জন্মনিবন্ধন সনদ খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি দলিল। তবে সার্ভার জটিলতা, ডাটাবেজের তথ্য ফাঁস হওয়ার মতো ঘটনায় জন্মনিবন্ধন সনদ পাওয়া এক প্রকার সোনার হরিণ পাওয়ার মতো হয়ে যায়। জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধক জেনারেলের কার্যালয় থেকে ইন্টারনেটে নাগরিকদের তথ্য ছড়ানোর পর দেখা দেয় সার্ভার জটিলতা। ঘণ্টার পর ঘণ্টা সার্ভার বন্ধ এবং ‘ডাউন’ থাকার ফলে জন্মসনদ পেতে ব্যাপক ভোগান্তি ও হয়রানি পোহাতে হয়।

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে সরেজমিন নাগরিকদের ভোগান্তি পোহাতে দেখা যায়। বিশেষ করে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) আওতাধীন এলাকার বাসিন্দাদের অবস্থা বেশ নাজেহাল। যদিও প্রক্রিয়া সহজ করতে আঞ্চলিক কার্যালয়ের বদলে ওয়ার্ড কাউন্সিলর কার্যালয় থেকে জন্মসনদ নেওয়ার একটি প্রক্রিয়া ইতোমধ্যে চালু করেছে ডিএনসিসি। এই প্রক্রিয়ায় ওয়ার্ড কাউন্সিলর জন্ম নিবন্ধন সনদ ইস্যু করছেন। এ জন্য বিডিআরআইসি ওয়েবসাইটে গিয়ে প্রথমে নিবন্ধন করতে জন্মসনদের কপি প্রিন্ট করতে হয়। তারপর সেই প্রিন্টেড কপিতে স্বাক্ষর করেন ওয়ার্ড কাউন্সিলর। তবে সার্ভার জটিলতায় এই প্রক্রিয়াও বিঘ্ন হচ্ছে। এ জন্য সেবাপ্রত্যাশীদের কোনো কম্পিউটার দোকানে গিয়ে প্রিন্টেড কপি নিয়ে আসতে বলা হচ্ছে ওয়ার্ড কাউন্সিলর কার্যালয় থেকে; কিন্তু দোকানগুলোতে সার্ভার ডাউন বা স্লো থাকার কারণে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হচ্ছে। কোনো কোনো আবেদনকারী সব ধাপ সম্পন্ন করে যখন ‘ওয়ান টাইম পাসপোর্ট’ (ওটিপি) এর ধাপে যান তখন সার্ভার থেকে আর কোনো সাড়া পান না। ডিএনসিসি ২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মোহাম্মদ ইব্রাহিম বলেন, দুই দিন ধরে চেষ্টা করছি; কিন্তু এখনো জন্মসনদ পাইনি। কাউন্সিলর অফিস থেকে বলেছে কোনোভাবে যদি প্রিন্টেড কপি আনতে পারি, তাহলে কাউন্সিলর সিল ও স্বাক্ষর করে দেবেন। একবার ওটিপি পর্যন্ত যেতে পেরেছি সার্ভারে। আরেকবার সব করে যখন ‘সাবমিট’-এ দিয়েছি তখন সার্ভার দেখাচ্ছে ‘টাইম আউট’।

ভোগান্তির পরিমাণ এতটাই বৃদ্ধি পায় যে, ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্যে ক্ষোভ জানান। এমনকি স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের অধীন এ প্রতিষ্ঠানটির কারিগরি উন্নয়নে এগিয়ে আসতে হয় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগকে। আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের উপস্থিতিতেও দফায় দফায় সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সার্ভারজনিত নাগরিকদের ভোগান্তির বিষয়টি আমলে নিতে চান না রেজিস্ট্রার জেনারেল রাশেদুল হাসান। এর আগেও তথ্য ফাঁসের ঘটনার বিষয়টিও প্রথমে অস্বীকার করে এড়িয়ে যেতে চেয়েছিলেন এই কর্মকর্তা। সার্ভার জটিলতা নিয়ে জানতে চাইলে কালবেলাকে তিনি বলেন, কোথাও সার্ভার জটিলতা নেই। সব ঠিক আছে।

এ বিষয়ে ডিএনসিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা মকবুল হোসাইন বলেন, নাগরিকরা যেন সহজে সেবা পান, সেজন্য জন্মসনদের বিষয়টি মেয়র বিকেন্দ্রীকরণ করেছেন। আগে শুধু ১০টি আঞ্চলিক কার্যালয় থেকে জন্মনিবন্ধন করা যেত। সেবাটি সহজ করার জন্য আঞ্চলিক কার্যালয়ের বদলে এখন ওয়ার্ড কার্যালয় থেকে সনদ প্রদান করা হচ্ছে। বর্তমানে নগরবাসী খুব স্বল্প সময়ের মধ্যে সনদ সংগ্রহ করতে পারছেন। কেউ কেউ জানাচ্ছেন, আবেদন করতে সার্ভারে কিছুটা সময় লাগছে। আসলে এই সার্ভারটি সিটি করপোরেশন রক্ষণাবেক্ষণ করে না। সিটি করপোরেশন সার্ভারটির ব্যবহারকারী।

ডিএসসিসির ভারপ্রাপ্ত প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ফজলে শামসুল কবির বলেন, আমাদের সার্ভারের কারণে মানুষকে আর ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে না। ওখানে সার্ভার স্লো, সার্ভার ডাউন বলে মাসের পর মাস মানুষ ঘুরত। আমাদের এখানে আসছে, সর্বাধিক দ্রুততম সময়ের মধ্যে আমরা জনগণকে সনদ করে দিচ্ছি। সর্বোচ্চ দুদিনের মধ্যেই সনদ পাচ্ছেন।

জন্ম-মৃত্যু সার্ভার সম্পর্কে জানতে চাইলে আইসিটি বিভাগের সচিব সামসুল আরেফিন কালবেলাকে বলেন, এই সিস্টেমের কারিগরি সহায়তা এখন এনটিএমসিই দেবে।

এরই মধ্যে এনটিএমসিকে বিডিআরআইএসের যাবতীয় দায়িত্ব নিতে এনটিএমসিকে চিঠি দিয়েছে রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়। রেজিস্ট্রার জেনারেল রাশেদুল হাসান স্বাক্ষরিত চিঠিটি গত ৩১ অক্টোবর তারিখে ইস্যু করা হয় বলে কালবেলাকে নিশ্চিত করেছেন এনটিএমসি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান।

দৈনিক জামালপুর
দৈনিক জামালপুর