• সোমবার ২০ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৫ ১৪৩১

  • || ১১ জ্বিলকদ ১৪৪৫

দৈনিক জামালপুর

এই সরকারের অর্জন অনেক, আমরা জোটেই আছি

দৈনিক জামালপুর

প্রকাশিত: ২০ নভেম্বর ২০২৩  

‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি তো ব্যর্থ হয়েছে। আমরা জোটে থেকে বহুকিছু অর্জন করতে পেরেছি। শরিকদের জন্য আসন বৃদ্ধির বিষয়টি আওয়ামী লীগ বিবেচনা  করবে। তবে নির্বাচনে কে এলো আর কে এলো নাÑ এটা যার যার দলীয় সিদ্ধান্ত। সঠিক সময়েই নির্বাচন হবে, নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যে ৭ জানুয়ারি ভোটের দিন ঠিক রেখে তফসিলও ঘোষণা করেছে। আমরা দৃঢ়ভাবে আশাবাদী, মুক্তিযুদ্ধবিরোধী সকল অপশক্তিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে দেশের জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিয়ে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখবে।’

১৪  দলের অন্যতম শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি এবং সাবেক মন্ত্রী হাসানুল হক ইনু জনকণ্ঠের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন।

হাসানুল হক ইনু বলেন, নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমাদের দল জাসদ ১৪ দলীয় জোটের অধীনেই নির্বাচন করবে। ১৪ দলীয় এক্য জোট ঐক্যবদ্ধভাবে ২০২৪ সালের নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। সেই নির্বাচনে বিএনপি আসলেও ১৪ দল ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচন করবে, না আসলেও  ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচন করবে। তবে নির্বাচন বর্জনের নামে সরকার উৎখাতের পাঁয়তারাটা হচ্ছে অগণতান্ত্রিক। এটাকে আমরা অবশ্যই প্রতিহত করব।

তিনি বলেন, আর যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কথা বলা হচ্ছে, সেই তত্ত্বাবধায়ক সরকাররের অধীনে চারবার নির্বাচন হয়েছে। চারবারই যে বড় দল হেরেছে সে দল নির্বাচনের ফলাফল মানেনি এবং নির্বাচনে পক্ষপাতিত্ব হয়েছে বলেও অভিযোগ করেছে। যে বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকার চাইছে, তারাও কিন্তু দুইবার ওই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন করে হেরেছে এবং দু’বারই তারা প্রকাশ্যে বলেছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার সুষ্ঠু নির্বাচন করতে ব্যর্থ হয়েছে এবং নির্বাচনের মাধ্যমে যে সংসদ গঠিত হয়েছে সেই সংসদকে তারা মানেনি।

বর্তমান সরকারের গত ১৫ বছরের বিষ্ময়কর উন্নয়নের কথা তুলে ধরে আরও বলেন, বিএনপি-জামায়াতের শাসনকালের চাইতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নের ধারা অনেক এগিয়েÑ এটা সব তথ্যই বলে দিচ্ছে। এ সময়ে দেশে বিষ্ময়কর উন্নয়ন হয়েছে।  যুক্তরাষ্ট্র তার ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করত ভিসা নীতি নিয়েছে। কে ভিসা পেল আর কে ভিসা পেলো না- এটার জন্যে বাংলাদেশের রাজনীতি এদিক-ওদিক হবে না। বিএনপি-জামায়াত চক্র আবার সাংবিধান বানচালের প্রস্তাব দিয়েছে। এটা অস্বাভাবিক সরকার গঠন করার  প্রস্তাব বলেই আমি মনে করি।

২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে।  জাসদ ১৪ দলীয় জোটের সঙ্গেই নির্বাচনে যাচ্ছে। নির্বাচনে ১৪ দলের কি ভূমিকা থাকবে- এমন প্রশ্নের জবাবে হাসানুল হক ইনু বলেন, প্রথম কথা ১৪  দল একটি রাজনৈতিক আদর্শিক জোট এবং দীর্ঘ দিন ধরে আমরা এক সঙ্গে কাজ করছি। আন্দোলন নির্বাচন ও সরকার গঠনÑ সব প্রক্রিয়া আমরা ঐক্যের মাধ্যমে করছি। মনে রাখতে হবে যে, ’৭৫ -এ বঙ্গবন্ধু হত্যার পরে জেনারেল জিয়াউর রহমান, খন্দকার মোস্তাক এবং পরবর্তীতে হোসেন মুহাম্মদ এরশাদের সামরিক শাসকরা ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা দূর করে পাকিস্তান পন্থার দিকে দেশটাকে ঠেলে দেওয়ার অপচেষ্টা চালায়। শুধু তাই নয় সংবিধান পরিবর্তন করে ফেলে এবং একাত্তরের আঁস্তাকুড়ের ভাগাড় থেকে পরাজিত জামায়াত-শিবির, আলবদর রাজাকার যুদ্ধাপরাধীদের টেনে এনে বাংলাদেশের রাজনীতিতে পুনর্বাসন করে এবং রাজনীতিতে সক্রিয় করতে ব্যবস্থা নেয়। এ রকম একটি পরিস্থিতিতে সাম্প্রদায়িক শক্তি একাত্তরের পরাজিত শাক্তি ও ঘাতক দালালরা বাংলাদেশের রাজনীতির অঙ্গনে বিচরণ করার সুযোগ পায়। তারা বাংলাদেশকে সাম্প্রদায়িকীরণ করতে পাকিস্তান পন্থায় দেশ চালানোর উদ্যোগ গ্রহণ করে। এ রকম একটি পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে ১৪ দল এই সামরিক শাসনের ধারা থেকে, সাম্প্রদায়িকতার ধারা থেকে, হত্যা-ক্যু’র ধারা থেকে, বাংলাদেশকে টেনে তুলে সাংবিধানিক চেতনার ধারায় ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ গ্রহণ করে। সেই উদ্যোগের অংশ হিসেবে ১৪ দল এক্যবদ্ধ হয় এবং ভূমিকা রাখছে। এই হচ্ছে প্রেক্ষাপট।

১৪ দল জোটগতভাবে নির্বাচন করবে। কিন্তু শরিক দলগুলো কি গত নির্বাচনের চেয়ে এবার বেশি আসান দাবি করবে? সেক্ষেত্রে জাসদের কি ভূমিকা থাকবে? Ñএ প্রসঙ্গে হাসানুল হক ইনু বলেন, দেখুন প্রত্যেক সময়ে সংসদের পরিধি বাড়তে থাকে। দীর্ঘদিন ধরে আমরা ঐক্যের রাজনীতির ভেতরে এবং সরকারের অংশীদার হিসাবে দলীয় সংগঠনের প্রসার ঘটাচ্ছি। স্বাভাবিকভাবে আমরা আশা করি যে, গতবারের চেয়ে আসান বৃদ্ধি ও আসন বণ্টনে আমাদের শরিক আওয়ামী লীগ বিষয়টি বিবেচনা করবে।  আমরা সেই প্রস্তাবই দেব।

১৪ দলীয় জোটের পরিধি বাড়ছে কি না  কিংবা অন্য দল আসতে চাইলে কি হবে, তার উত্তরে তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ^াসী, সংবিধানের চার নীতিতে বিশ^াসী, সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী, জঙ্গিবাদ বিরোধী যে কোনো প্রগতিশীল সমাজতান্ত্রিক গণতান্ত্রিক দলকে আমরা ১৪ দলে স্বাগত জানাই। তবে এই মুহূর্তে তেমন কোনো প্রস্তাব নেই। সুতরাং এই মুহূর্তে ১৪ দলের পরিধি বাড়ছে না।

১৪ দলীয় জোটের শরিক দলগুলোর অনেক দাবিই মানা হয়নি। এ নিয়ে অনেকের মনোক্ষুণœ। এর পরেও কি এক সঙ্গে চলবেন? সে প্রসঙ্গে হাসানুল হক ইনু বলেন, ২৩ দফার ভিত্তিতে আমাদের ঐক্যটা হয়েছে। সেই ঐক্য অনুযায়ী অনেক কিছু হয়েছে অনেক কিছু হয়নি। তবে মোটা দাগে সংবিধানের চার নীতিতে আমরা ফেরত গিয়েছি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে স্বীকৃতি দিতে পেরেছি। আমাদের ত্রিশ লাখ শহীদের স্বীকৃতি দিতে পেরেছি। জয় বাংলা ধ্বনিকে রাষ্ট্রীয় ধ্বনি হিসেবে আমরা নির্দিষ্ট করতে পেরেছি। জাতির পিতা এখন মীমাংসিত বিষয়। ত্রিশ লক্ষ শহীদ মীমাংসিত বিষয়। সংবিধানের চার নীতি মীমাসিংত বিষয়। যুদ্ধাপরাধ মীমাংসিত বিষয়। যুদ্ধাপরাধের বিচার এবং সাজা মীমাংসিত বিষয়। এ বিষয়গুলো অর্জন করতে পেরেছি। তবে এখনো জামায়াতকে নিষিদ্ধ করতে পারিনি। সাম্প্রদায়িক শক্তিকে কিছুটা ছাড় দেওয়ার রাজনীতি এখনো বন্ধ করতে পারিনি। সুতরাং আমরা মনে করি যে, কিছু অর্জন হয়েছে। কিছু হয়নি। যেগুলো অর্জন হয়েছে তা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার জায়গাটা প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছি। বাকি যে সামরিক শাসনের রেশগুলো, সাম্প্রদায়িকতার রেশগুলো রয়েছে বা লুটপাটের যে সমস্যাগুলো রয়েছে দুনীতির যে সমস্য রয়েছে বৈষ্যম্যের যে সমস্যা রয়েছে এবং বাংলাদেশের নারী ক্ষমতায়নের সমস্যর রয়েছেÑ এ সব বিষয় নিয়ে আমাদের মতবিরোধ আছে। কিছুটা হয়েছে কিছুটা হয়নি। সুতরাং এটার জন্যে জোট ত্যাগ করার কারণ আমরা দেখি না। আমরা জোটে থেকে বহুকিছু অর্জন করতে পেরেছি, বাকি যেগুলো হয়নি-যেমন ধনী-দরিদ্র বৈষম্য কমানোর আন্দোলন, শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির আন্দোলন, নারীদের সম্মানের আন্দোলন, জামায়াত নিষিদ্ধের আন্দোলন অথবা সাম্প্রদায়িক শক্তিকে ঝেটিয়ে বিদায় কারার আন্দোলন, বিএনপিকে ’৭৫-এর খুনি এবং ৭৫ এর খুনির সঙ্গী হিসেবে রাজনীতির ময়দান থেকে বিতাড়িত করার যে আন্দোলনÑ এ আন্দোলগুলো ধারাবাহিকভাবে ঐক্যের ভেতরে থেকেই করা সম্ভব বলে মনে করি।

শরিকদের জন্য ছেড়ে দেওয়া আসনে যদি আওয়ামী লীগের কোনো প্রার্থী দাঁড়িয়ে যায়, সেক্ষেত্রে কি হবে? তার উত্তরে জাসদের সভাপতি বলেন, এটা জোটের সর্বোচ্চ নেত্রী শেখ হাসিনার নজরে আনব। আমরা আশা করি যেহেতু জোটের প্রার্থীর বাইরে আওয়ামী লীগের কোনো সদস্য নৌকা প্রতীক পাবে না। সুতরাং বিচ্ছিন্ন স্বতন্ত্র হিসেবে লড়াই করতেই পারে। সেক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ প্রশাসনিক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে এবং দেশবাসীকে বলে দেবে  ওই  আসনটি জোটের প্রার্থীর।

দেশে ব্যাপক উন্নয় হয়েছে কিন্ত বিরোধী দলগুলো বলছে উন্নয়নের নামে লুটপাট হয়েছে। এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য কি? এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন,  ’৭৫-এর পরে জেনারেল জিয়া ও এরশাদ এবং খালেদা জিয়ার বিএনপি-জামায়াতের সরকার ক্ষমতায় ছিল। এরা ধারাবাহিকভাবে যখন ক্ষমতায় ছিল সেখানে তারা কিছু কাজ করেছে। কিন্তু আপনি দেখবেন যে, এই খালেদা জিয়ার শাসন কালে, বিএনপি-জামায়াতের শাসনকাল, এরশাদের শাসনকাল জেনারেল জিয়ার শাসনকালে যে বার্ষিক প্রবৃদ্ধি- সেই প্রবৃদ্ধির হার খুবই কম ছিল। সুতরাং উন্নয়নটাতে ধীর গতি ছিল। দুর্নীতির জন্মদাতাও এই সামরিক শাসকরাই। সেই জিয়া-এরশাদের আমল থেকেই দুর্নীতি লুটপাটের ধারাটা শুরু হয়। সুতরাং একদিকে ধীর গতির উন্নয়ন, অন্যদিকে লুটপাটের সূচনা। সামরিক শাসনের ও বিএনপি জামায়াতের বৈশিষ্ট্যও ছিল দুর্নীতি লুটপাট।

 তিনি বলেন, শেখ হাসিনা তার ১৫ বছরের শাসনকালে বৈপ্লবিক উন্নয়নের ধারা সূচনা করেছেন। কোভিডের আগ পর্যন্ত ছয়-এর ওপরে এবং আট পর্যন্ত প্রবৃদ্ধি ছিল। সুতরাং বিএনপি-জামায়াতের শাসনকালের  চেয়ে শেখ হাসিনার উন্নয়নের ধারা অনেক এগিয়ে আছেÑ এটা তথ্যই বলে দিচ্ছে। বিস্ময়কর উন্নয়ন হয়েছে। এই উন্নয়নের সঙ্গে উন্নয়নের ট্রেনের  ভেতরে কিছু ঘরকাটা ইঁদুর দুর্নীতিবাজ লুটেরা সিনিডকেট বাসা বেঁধেছে। সুতরাং এই উন্নয়নের হাত ধরে কিছু লুটেরা গোষ্ঠীও উন্নয়নের ট্রেনের ভেতর ঘরকাটা ইঁদুরের ভূমিকা পালন করছে। তফাৎটা হচ্ছে, সামিরক শাসনকাল এবং বিএনপি-জামায়াতের আমলে যারা সরকারের ছত্রছায়ার দুর্নীতি করেছে, তাদের কোনোদিন গ্রেপ্তার করা হয়নি বা তদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষপ নেওয়া হয়নি। কিন্তু এই আমলে দেখবেন, এখানে গণমাধ্যমে যে কোনোভাবে খবরটা আসলেই শেখ হাসিনা সরকার কিন্তু পদক্ষেপ নিচ্ছে। আদালতের বারান্দায় দাঁড় করিয়ে দিচ্ছে তাকে। সুতরাং এখানে যারা দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত বা সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। অবশ্যই বলব যে, যতটুকু করা দরকার ততটুকু হয়নি। বুলডোজার ততটুকু চালানো হয়নি। তবে অবশ্যই বাংলাদেশের শেখ হাসিনা সরকারের শাসনকালে অন্তত আইনের ঊর্ধ্বে কেউ নয়- এই বিষয়টি প্রতিষ্ঠা করার এবং  ধারাবাহিকভাবে রাখার চেষ্টা করা হয়েছে। শুধু ব্যাবসায়ী বা দুর্নীতিবাজই নয়,  কোনো সংসদ সদস্য বা কোনো মন্ত্রী বা কোনো রাজনৈতিক নেতার বিরুদ্ধেও অভিযোগ আসলে তাদের বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে। যেটা অতীতে হয়নি। আমি তারপরও বলব উন্নয়নের সুফলটা ঘরে ঘরে পৌঁছাতে হলে দুর্নীতিবাজদের যে চক্র তাদেরকে বুলডোজার দিয়ে ধ্বংস করতে হবে। বিশেষ করে দ্রব্যমূল্য ঊর্ধ্বগতিতে জড়িত সিন্ডিকেটকে গুঁড়ো করে দিতে হবে। এখানে কোনো ছাড় দেওয়া যাবে না। জঙ্গি দমনে যেভাবে শূন্যসহিষ্ণু নীতি নেওয়া হয়েছে, ঠিক তেমনি শূন্যসহিষ্ণু নীতি গ্রহণ করে দুর্নীতির সিন্ডিকেটটিকে ধ্বংস  করে দিতে হবে।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিদেশীরা নাক গলাচ্ছেÑ এ বিষয়টি কিভাবে দেখছেন? এর উত্তরে জাসদ সভাপতি বলেন, রাজনীতি-অর্থনীতি বিষয়ে পশ্চিমা মহল এবং আমেরিকা এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ কতিপয় দেশ প্রায়ই পরামর্শের নামে, সহযোগিতার নামে বাংলাদেশের ব্যাপারে কিছু মন্তব্য, বিবৃতি, বক্তব্য বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে। কার্যত এটা স্বাধীন দেশের অভ্যন্তরে হস্তক্ষেপের শামিলই। আমি বলব, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে নাক গলানো এটা খুবই দুঃখজনক, দুর্ভাগ্যজনক। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে আমরা ইউরোপ এবং আমেরিকার সঙ্গে বন্ধুত্ব সম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা করেছি। আমদের অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ সহযোগীও তারা বটে। তাদের সঙ্গে একটা বন্ধুর সম্পর্ক বিদ্যমান। কিন্তু এই বন্ধুত্বের সম্পর্ক থাকার পরেও বাংলাদেশে ১৫ আগস্টের মতো সামরিক হস্তক্ষেপ ঘটে গেছে। ’৮২ সালে সামরিক হস্তক্ষেপের ঘটনা গেছে। ২০০৬ সালে আধাসামরিক হস্তক্ষেপ ঘটে গেছে এবং এসব সামরিক হস্তক্ষেপের যে তথ্য দেখছি, তাতে ইউরোপ ও আমেরিকার অনেকেই এমনকি রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে অনেকেই এসব ঘটনার সঙ্গে সম্পর্কিত এবং ক্ষেত্রে বিশেষে তারা সরাসরি সমর্থন দিয়েছে। এখনো আমেরিকা ও ইউরোপের কতিপয় দেশ বিশেষ করে সাজাপ্রাপ্ত খুনিদের আশ্রয় দান করেছে এবং তাদেরকে হস্তান্তর করছে না। বরং খুনিদের পক্ষেই ওকালতি করছে। ইউরোপ ও আমেরিকার ৫০ বছরের ইতিহাস দেখলে দেখা যায়, গণতন্ত্র এবং অর্থনীতি নিয়ে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ পরামর্শে যেসব বক্তব্য, বিবিৃতি দিচ্ছে, তা দ্রুত বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করার এবং নাক গলানোর শামিল।

সিপিবিসহ কয়েকটি বাম দল বলছে, আপনারা মূল আদর্শে থেকে সরে এসেছেন। আপনারা লেজুড়বৃত্তি রাজনীতি করছেন। এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য কি? এর উত্তরে তিনি বলেন, সিপিবি সবচেয়ে পুরনো বামপন্থি পার্টি। প্রথম কথা হচ্ছে, বাংলাদেশের বামপন্থিরা একে অপরের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করে।

সিপিবি সমালোচনা করছে, লেজুড়বৃত্তির কথা বলছে, সিপিবিসহ যে সব বামপন্থি বিএনপি, আওয়ামী লীগকে একই হাতের এপিট-ওপিট বলে, এটা আমি সঠিক মনে করি না। আওয়ামী লীগ হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষের দল, আর বিএনপি হচ্ছে সামরিক শাসনের  ঔরসজাত সাম্প্রদায়িক জঙ্গিবাদী একাত্তরের খুনি, পঁচাত্তরের খুনির সঙ্গী দল। সুতরাং একজন চরিত্রগতভাবেই সাম্প্রদায়িক। আর আওয়ামী লীগ একটি মধ্যপন্থি দল, তারা মৌলিকভাবে গণতান্ত্রিক দল। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থেকে উৎসারিত দল, জনগণের মধ্যে থেকে উঠে আসা একটি দল। তারা নীতিগতভাবে গণতান্ত্রিক। কিন্তু মাঝে মধ্যে বর্জুয়া চরিত্রের জন্য তারা সাম্প্রদায়িক শক্তির সঙ্গে কিছু দহরম-মহরম করে বা দ্বৈতনীতি অবলম্বন করে। আওয়ামী লীগের এই দ্বৈতনীতি অবলম্বন করা তার মূল চরিত্রকে পাল্টে দেয় না। কিন্তু বিএনপি গণতন্ত্রের কথা বলে গণতন্ত্রের মুখোশ পরে। তারা পাকিস্তানি আত্মা এবং সাম্প্রদায়িক দেহ নিয়ে বিচরণ করে। আওয়ামী লীগ মাঝে মাঝে দ্বৈতনীতি অবলম্বন করে কিন্তু ভ্রান্ত পথ অনুসরণ করে না। যাই হোক, এখানে মৌলিক পার্থক্য আছে। সুতরাং যারা আওয়ামী লীগ এবং বিএনপিকে একই পাল্লায় মাপে এবং সমদূরত্ব বজায় রাখে তারা কার্যত বিএনপিরই চুলায় আগুন দেয়। তারা কার্যত বিএনপিকেই প্রকারান্তরে সমর্থন করে। সুতরাং সমদূরত্বের নীতি কার্যত মুক্তিযোদ্ধা-রাজাকারের লড়াইয়ে যুদ্ধে রাজাকারদের পক্ষেই যায়। যারা সরাসরি এই বিএনপির সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়েছে, তাদেরকে বলব তারা আসালে রাজাকারের পক্ষ হয়ে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের সরকারকে উৎখাত করতে চাচ্ছে। এটা তো মানাই যায় না। সুতরাং সিপিবির প্রতি আমারা শ্রদ্ধা রেখেই বলছি, তাদের সমদূরত্বের নীতি হালকাভাবে গ্রহণ করাটা বাঞ্ছনীয় নয়। তাদের নীতি তারা পর্যালোচনা করবেন এবং আশা করব সিপিবি অতীতের মতো তাদের পূর্বসূরিদের মতো মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে চলে আসবেন এবং এখানে থেকে আমাদের ভেতর যে দোদ্যুল্যমান আছে  ত্রুুটি-বিচ্যুতি আছে সেটাকে দূর করার জোর লড়াই চালিয়ে যাবে।

সিপিবিসহ বাম জোট বলছে, তদারকি সরকার না হলে নির্বাচনে আসবে না। এটা তো বিএনপিরও দাবি। এ বিষয়টি কিভাবে দেখেছেন। এর জবাবে হাসানুল ইনু বলেন, সাংবিধানিক সরকারের চাইতে অসাবিংধানিক সরকার খারাপ।

তার চাইতে মহাখারাপ হচ্ছে সাম্প্রদায়িক জামায়াত তালেবানি সরকার। সুতরাং আমি একটা জামায়াত তালেবানি সরকার অথবা সামরিক সরকার অথবা ভূতের সরকারের চেয়ে চলমান সাংবিধানিক সরকারের পক্ষে থাকাটাই বাংলাদেশের জন্য মঙ্গলজনক। সাংবিধানিক সরকারের ত্রুুুুটি-বিচ্যুতি থাকতে পারে, সমালোচনা থাকতে পারে, সেটা সংশোধন করেই এগোতে হবে। কিন্তু সাংবিধানিক সরকারের ত্রুটি-বিচ্যুতিকে পুঁজি করে সাংবিধানিক সরকারকে উৎখাত করে একটি অস্বাভাবিক সরকার প্রতিষ্ঠার রাজনীতি হবে আত্মঘাতী রাজনীতি। আমি মনে করি, যারা তত্ত্ব¡াবধায়ক সরকারের কথা বলছে, সেটা কার্যত হচ্ছে বিএনপির প্রক্সি সরকার প্রতিষ্ঠা করা। নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান নয়। দ্বিতীয়ত, বিএনপি যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কথা বলছে, তার মূল কাজটা হবে আগুনে মানুষ পোড়ানো, জঙ্গি তা-ব চালানো, একুশে আগস্টের গ্রেনেড হামলা এবং একাত্তরের খুনি অপরাধীদের মাফ করে দেওয়ার কাজটা হচ্ছে এই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের। দ্বিতীয় কাজটা হবে তারা কোণঠাসা হয়ে পড়েছিল সাম্প্রদায়িক জামায়াত-বিএনপি চক্রকে রাজনীতির মাঠে আগামী নির্বাচনের আগেই ফেরত আনা। দুইটা দুষ্কর্ম করার জন্যই তত্ত্বাবধায়ক সরকার তারা দাবি করছে।

দ্বিতীয় ধাপে এই বিএনপির প্রক্সি সরকার এমন একটি নির্বাচন অনুষ্ঠান করবে, যাতে তালেবানিরা জামায়াতিরা বিএনপির হাত ধরে ক্ষমতা দখল করতে পারে। সুতরাং এটা দুই ধাপের সরকার বিএনপির রাজনৈতিক চাল চেলেছে। এর সঙ্গে নির্বাচনের কোনো সম্পর্ক নেই। নিরপেক্ষতার কোনো সম্পর্ক নেই। এটা মূলত কোণঠাসা হয়ে পড়ে জামায়াত-রাজাকার জঙ্গিদের রাজনীতির মাঠে ফেরত আনার এক মহাচক্রান্ত। 

দৈনিক জামালপুর
দৈনিক জামালপুর