• সোমবার ২০ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৫ ১৪৩১

  • || ১১ জ্বিলকদ ১৪৪৫

দৈনিক জামালপুর

বেসরকারি খাতে জ্বালানি তেল পরিশোধন ও বিক্রির সুযোগ

দৈনিক জামালপুর

প্রকাশিত: ২২ নভেম্বর ২০২৩  

দেশে জ্বালানি তেলের ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোক্তাদের জ্বালানি খাতে সম্পৃক্ত করছে সরকার। এখন থেকে অপরিশোধিত তেল আমদানি করে তা পরিশোধন করে বিক্রি করতে পারবে বেসরকারি কম্পানিগুলো।

বেসরকারি পর্যায়ে রিফাইনারি স্থাপন, অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানিপূর্বক মজুদ, পরিশোধন, পরিবহন ও বিপণন নীতিমালা-২০২৩ জারি করেছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। গত সোমবার নীতিমালাটি গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়।

পরিশোধিত জ্বালানি তেলের বিপণন শুরুর প্রথম তিন বছর উৎপাদিত ৬০ শতাংশ ডিজেল, পেট্রল, অকটেন, জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল কিনে নেবে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। পাশাপাশি জ্বালানি পণ্য রপ্তানিরও সুযোগ পাবেন বেসরকারি বিনিয়োগকারীরা।

নীতিমালায় বলা হয়, প্রতিষ্ঠানের বাকি ৪০ শতাংশ জ্বালানি তেল নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ও নিজস্ব নিবন্ধিত বিপণন নেটওয়ার্কের মাধ্যমে বিক্রি করতে পারবে বেসরকারি কম্পানি। তবে বিক্রয় নেটওয়ার্কের স্বল্পতার কারণে কোনো বেসরকারি রিফাইনারি ৪০ শতাংশ তেল বিক্রি করতে না পারলে এর যেকোনো পরিমাণ বিপিসির কাছে বিক্রি করতে পারবে।

সে ক্ষেত্রে সরবরাহের ন্যূনতম দুই মাস আগে বিপিসিকে তা জানাতে হবে। পরবর্তী দুই বছরে বেসরকারি রিফাইনারিগুলো তাদের উৎপাদিত তেলের সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় বিক্রি করতে পারবে। বিপিসির চাহিদা না থাকলে সংস্থাটির অনাপত্তি গ্রহণ সাপেক্ষে বিদেশে পরিশোধিত জ্বালানি তেল রপ্তানিও করতে পারবেন বেসরকারি রিফাইনারি মালিকরা।
নীতিমালায় আরো বলা হয়েছে, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধির কারণে জ্বালানি তেলের চাহিদা, ব্যবহার, মজুদ সক্ষমতা বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে।

বেসরকারি পর্যায়ে রিফাইনারি প্লান্ট স্থাপন হলে দেশে পরিশোধন ও জ্বালানি মজুদ সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে এবং বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়সহ নতুন নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
বিপিসি সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে বছরে জ্বালানি তেলের চাহিদা প্রায় ৭৫ লাখ মেট্রিক টন। তার মধ্যে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল পরিশোধন সক্ষমতা মাত্র ১৫ লাখ টন। ইস্টার্ণ রিফাইনারিতে পরিশোধিত হয়ে পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা অয়েলসহ সরকারি বিপণন কম্পানির মাধ্যমে সারা দেশে সরবরাহ করা হয়। সক্ষমতা বাড়াতে ইস্টার্ন রিফাইনারি ইউনিট-২ স্থাপনের প্রকল্প নিচ্ছে বিপিসি, যা ২০২৭ সালে নির্মাণ সম্পন্ন হবে।

এটি হলে আরো ৩০ লাখ টন অপরিশোধিত জ্বালানি তেল পরিশোধন করা সম্ভব হবে। বর্তমানে বছরে প্রায় ৫০ লাখ টন পরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি করতে হয়।
জ্বালানি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, দেশে রিফাইনারি স্থাপন, অপরিশোধিত তেল আমদানি, পরিশোধন ও বিক্রিতে অংশগ্রহণের জন্য বসুন্ধরা গ্রুপ, পারটেক্স গ্রুপ, পেট্রোম্যাক্স ও অ্যাকোয়া রিফাইনারিসহ কয়েকটি বেসরকারি কম্পানি প্রস্তাব দিয়েছে মন্ত্রণালয়ে। এরই মধ্যে বসুন্ধরা গ্রুপ চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে রিফাইনারি স্থাপনের জন্য ভূমিসহ অবকাঠামো উন্নয়ন শুরু করেছে।

 

উদ্যোক্তাদের যোগ্যতা

নীতিমালায় বলা হয়, উদ্যোক্তাদের জ্বালানি পণ্য উৎপাদন, বিপণন বা সরবরাহ ও প্লান্ট পরিচালনার ক্ষেত্রে ন্যূনতম তিন বছরের বাস্তব অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। অথবা এসংক্রান্ত ন্যূনতম পাঁচ বছরের বাস্তব অভিজ্ঞতাসম্পন্ন বিদেশি স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগের চুক্তি থাকতে হবে।

রিফাইনারি স্থাপনে আগ্রহী বেসরকারি উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠানের বিগত পাঁচ বছরের মধ্যে যেকোনো তিন বছরে প্রতিবছর টার্নওভার কমপক্ষে পাঁচ হাজার কোটি টাকা হতে হবে। উদ্যোক্তাকে দেশে নিজস্ব কিংবা যৌথ মালিকানায় বার্ষিক ন্যূনতম ১৫ লাখ মেট্রিক টন জ্বালানি তেল পরিশোধনের ক্ষমতাসম্পন্ন রিফাইনারি স্থাপন করতে হবে। রিফাইনারিতে নিজস্ব জেটি সুবিধা থাকতে হবে। আবেদনের সময় অফেরতযোগ্য ফি হিসেবে এক কোটি টাকার পে অর্ডার বিপিসির অনুকূলে জমা দিতে হবে।

 

পরিবহন ব্যবস্থাপনা

উৎপাদিত জ্বালানি তেল পরিবহনের জন্য নিজস্ব মালিকানায় বা ব্যবস্থাপনায় ১৫০০ থেকে ২০০০ মেট্রিক টন তেল পরিবহনে সক্ষম চার থেকে পাঁচটি কোস্টাল ট্যাংকার থাকতে হবে। যার প্রতিটি ডাবল হাল ডাবল বটম হতে হবে। ৮০০ থেকে এক হাজার মেট্রিক টন ধারণক্ষমতার চার থেকে পাঁচটি বে-ক্রসিং শ্যালো ড্রাফট ট্যাংকার থাকতে হবে। এসব জাহাজ আবশ্যিকভাবে শ্রেণিভুক্ত এবং ডাবল হাল ডাবল বটম বিশিষ্ট হতে হবে।

সড়কপথে পরিবহনের জন্য পর্যাপ্ত ট্যাংকলরির ব্যবস্থা থাকতে হবে। ট্যাংকলরির ধারণক্ষমতা ন্যূনতম ৯ হাজার লিটার থেকে সর্বোচ্চ ১৮ হাজার লিটার হতে হবে।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ম. তামিম কালের কণ্ঠকে বলেন, বেসরকারি খাতকে সরকার সুযোগ দিচ্ছে, সেই উদ্যোগটি ভালো। তবে এখানে রিফাইনারি হচ্ছে একটি পার্ট। আরেকটি পার্ট হচ্ছে বাজারজাতকরণ। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের হাতে ছেড়ে দিলে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) মাধ্যমে জ্বালানি তেলের দাম নির্ধারণ করাতে হবে। ঠিক এলপিজির মতো। সরকার নিজেও দাম নির্ধারণ করতে পারবে না। কারণ সরকার নিজেও এই ব্যবসায় সংশ্লিষ্ট।

দৈনিক জামালপুর
দৈনিক জামালপুর