• রোববার ১৯ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৫ ১৪৩১

  • || ১০ জ্বিলকদ ১৪৪৫

দৈনিক জামালপুর

অগ্নিসন্ত্রাস দিয়ে কিছুই অর্জন করা যায় না

দৈনিক জামালপুর

প্রকাশিত: ২২ নভেম্বর ২০২৩  

সন্ত্রাস-নৈরাজ্যের অবসান ঘটিয়ে বিএনপি-জামায়াত জোট চেতনায় ফিরবে আশাবাদ ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, অগ্নিসন্ত্রাসের মাধ্যমে মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করে কিছুই অর্জন করা যায় না। এটা অন্যায়। কোনো কিছু অর্জন করতে হলে জনগণের শক্তির প্রয়োজন। সেজন্য অগ্নিসন্ত্রাসের পথ পরিহার করে জনগণের কল্যাণে কাজ করা প্রয়োজন। সশস্ত্র বাহিনী দিবস-২০২৩ উপলক্ষ্যে মঙ্গলবার ঢাকা সেনানিবাসের আর্মি মালটিপারপাস কমপ্লেক্সে ‘মুক্তিযুদ্ধে খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের উত্তরাধিকারীদের সংবর্ধনা প্রদান’ অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন। এছাড়া এদিন সেনাকুঞ্জে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে প্রধানমন্ত্রী দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, দেশের উন্নয়নে বর্তমান সরকারের ভূমিকা ও আগামীদিনের পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন। এই অনুষ্ঠানে সশস্ত্র বাহিনীর কর্মকর্তা ছাড়াও দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তি ও ঢাকায় নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরা যোগ দেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জানি না, একজন মানুষ কীভাবে আরেকটা জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে মারে। এমনটি দেখেছিলাম ৭১ সালে। তখন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বস্তিতে আগুন দিত। আর মানুষ বেরিয়ে এলে সঙ্গে সঙ্গে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারত। দুঃখের বিষয় ২০১৩-১৪ সালে এবং এখন সেই অগ্নিসন্ত্রাস দেখছি।’ তিনি বলেন, ‘জনগণের অকল্যাণ করে, তাদের পুড়িয়ে মেরে কিছু অর্জন করা যায় না-অন্তত এই বিষয়টা যেন যারা এগুলো করছে তারা বুঝতে পারে।’ ৭৫-এর হারাতে বসা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে তার সরকার আবার ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যে জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে লাখো বাঙালি স্বাধীনতার জন্য নিজের বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছিল, পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর সেই স্লোগানও নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। যে ৭ মার্চের ভাষণ এ দেশের মানুষকে উজ্জীবিত করেছিল, সেই ভাষণও নিষিদ্ধ ছিল। কিন্তু আজ সেই ভাষণ আন্তর্জাতিক প্রামাণ্য দলিল হিসাবে স্থান পেয়েছে। আড়াই হাজার বছরে সামরিক-বেসামরিক নেতারা যত ভাষণ দিয়েছে, জাতির পিতার ৭ মার্চের ভাষণ তার মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ স্বীকৃতি পেয়েছে।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘নতুন প্রজন্মকে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ ও বীরত্বের ইতিহাস জানানো দরকার। স্বাধীনতা পেয়েছি বলেই আজকে আমরা নিজেদের পরিচয় দিতে পারি। কিন্তু একসময় সেটা পারিনি। এখন আমাদের স্বাধীন দেশে আমরা স্বাধীনভাবে চলতে পারি।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের সশস্ত্র বাহিনী শুধু দেশে নয়, বিদেশে শান্তিরক্ষা মিশনে বিরাট অবদান রেখে যাচ্ছে। দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ইতোমধ্যে অনেকে জীবন দিয়েছেন। তাদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি।’ এর আগে প্রধানমন্ত্রী সকালে সেনানিবাসে শিখা অনির্বাণে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে সশস্ত্র বাহিনীর বীর শহিদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। প্রধানমন্ত্রী শিখা অনির্বাণে পৌঁছলে সেনাপ্রধান জেনারেল এসএম শফিউদ্দিন আহমেদ, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল এম. নাজমুল হাসান, বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল শেখ আবদুল হান্নান এবং সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লেফটেন্যান্ট জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান তাকে স্বাগত জানান। সেখানে তাকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়। শিখা অনির্বাণে পুষ্পস্তবক অর্পণের পর প্রধানমন্ত্রী সশস্ত্র বাহিনী বিভাগে যান। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘১৯৭১ সালের এইদিনে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর অকুতোভয় সদস্যরা এবং বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণ সম্মিলিতভাবে দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সমন্বিত আক্রমণ সূচনা করে। সেই আক্রমণের ফলে আমাদের বিজয় ত্বরান্বিত হয় এবং ফলে আমরা স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ অর্জন করি।’ মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারই প্রথম ২০০০ সালে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মাসিক সম্মানি ভাতা প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। বর্তমানে ২ লাখ ৩৭ হাজার ৪৩ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা বা তাদের উত্তরাধিকারদের মুক্তিযোদ্ধা সম্মানি ভাতা প্রদান করা হচ্ছে। এছাড়া খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের উত্তরাধিকারদের বছরে দুটি উৎসব ভাতা, বিজয় দিবস ভাতা এবং নববর্ষ ভাতা নিজ নিজ অ্যাকাউন্টে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সরাসরি প্রদান করা হচ্ছে। যুদ্ধাহত ও শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারকে সম্মানি ভাতা ও উৎসব ভাতা প্রদান করা হচ্ছে। এছাড়াও বিশেষ আবেদনের প্রেক্ষিতে ভাতাপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের শিক্ষা ভাতা, কন্যা বিবাহ অনুদান এবং দেশে-বিদেশে চিকিৎসাসহ বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে। ২০২১-২২ অর্থবছর হতে সাধারণ মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি ভাতা ২০ হাজার টাকায় উন্নীত করার পাশাপাশি সব মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও নাতি-নাতনিদের মেধাভিত্তিক স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে বঙ্গবন্ধু ছাত্রবৃত্তি প্রদান করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নের গতি অব্যাহত রেখেই আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। সেটাই আমাদের লক্ষ্য।’ তিনি বলেন, ‘গত ১৫ বছরে দেশের অনেক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। আজকের বাংলাদেশ বদলে যাওয়া বাংলাদেশ। উন্নয়নের এ ধারা অব্যাহত রাখতে হবে। কারণ আমাদের উন্নয়ন শহরকেন্দ্রিক নয়, প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল পর্যায় পর্যন্ত আমরা উন্নয়নের ছোঁয়া পৌঁছে দিতে পেরেছি। নানা ধরনের ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে আমরা দেশকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা এনে দিতে পেরেছি। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট দেশে পরিণত করতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’ মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এবং তিন বাহিনীর প্রধানগণ মঞ্চে ছিলেন। অনুষ্ঠানে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লেফটেন্যান্ট জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান স্বাগত বক্তব্য দেন। সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কিছু লোক লাশের ওপর দিয়ে ক্ষমতা দখলের কথা ভাবছে, যা খুবই অমানবিক। মানুষ যখন একটু শান্তিতে ছিল, স্বস্তিতে ছিল, একটু আশার আলো দেখছিল এবং সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল ঠিক সেই সময়ে অগ্নিসন্ত্রাস, হরতাল, অবরোধ মানুষের জীবনটাকে আবার ব্যাহত করছে। তিনি বলেন, ‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’-এই পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে আমরা চলছি। এই নীতি নিয়ে আমরা আমাদের সমুদ্র-স্থল সীমানা নিয়ে সমস্যার সমাধান করেছি। ছিটমহলগুলো আমরা শান্তিপূর্ণভাবে বিনিময় করতে পেরেছি। এছাড়া পার্বত্য শান্তিচুক্তি করে রিফিউজিদের ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করেছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৯৬ সালে সরকার এসেই আওয়ামী লীগ সরকার সশস্ত্র বাহিনীতে নারী সদস্যদের অন্তর্ভুক্ত করে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনেও আমাদের নারী সদস্যরা অনেক সুনাম করেছে। নারীর ক্ষমতায়ন এবং নারীর কর্মক্ষমতা আমরা বৃদ্ধি করতে পেরেছি।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা কারও সঙ্গে যুদ্ধ চাই না, আমরা শান্তিতে বাস করতে চাই। কিন্তু আমার দেশকে বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে রক্ষা করার জন্য, আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য যেন যথাযথ প্রস্তুতি আমাদের থাকে সেটা আমাদের সব সময় মনে রাখতে হবে।’

দৈনিক জামালপুর
দৈনিক জামালপুর