• শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪ ||

  • শ্রাবণ ১২ ১৪৩১

  • || ১৯ মুহররম ১৪৪৬

বাংলাদেশে বরাবরই সমালোচিত হেনরি কিসিঞ্জার

দৈনিক জামালপুর

প্রকাশিত: ১ ডিসেম্বর ২০২৩  

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বিতর্কিত ভূমিকা রাখা যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার মারা গেছেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ১০০ বছর। কয়েক দশকের ক্যারিয়ারে কিসিঞ্জার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। নিজ দেশে এবং সারাবিশ্বে তাঁকে নিয়ে তীব্র বিতর্ক থাকলেও যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতিতে স্থায়ী ছাপ রেখে গেছেন তিনি। দেশটির শীর্ষ কূটনীতিক ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করার বিরল সম্মান অর্জন করেন তিনি। জার্মান বংশোদ্ভূত সাবেক এই কূটনীতিক কানেক্টিকাটে তাঁর বাড়িতে মারা গেছেন। তাঁর মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে কিছু জানানো হয়নি। তিনি হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে শিক্ষকতা করেছেন। পরে ১৯৬৯ সালে তখনকার প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন তাঁকে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেন। মূলত এটিই তাঁকে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতিতে ব্যাপক প্রভাব তৈরির সুযোগ করে দেয়। নিক্সন প্রশাসনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবেও কাজ করেছেন তিনি। এরপর প্রেসিডেন্ট জেরাল্ড ফোর্ডের সময়েও কিসিঞ্জারের নেতৃত্বে পরিচালিত কূটনৈতিক প্রচেষ্টার ফল হিসেবে ইসরায়েল ও এর প্রতিবেশীদের মধ্যে ইয়ম কিপুর যুদ্ধ অবসানে মধ্যস্থতার সুযোগ এনে দেয়। এর মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যে সবচেয়ে বড় খেলোয়াড়ে পরিণত হয় যুক্তরাষ্ট্র। গত মে মাসে তাঁর বয়স ১০০ বছর পূর্ণ হয়। তবে তখনও তিনি সক্রিয় ছিলেন। জুলাই মাসে বেইজিং সফরে গিয়ে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে তাঁর বৈঠকটি বেশ আলোচনার জন্ম দেয়। চীন তাঁকে ‘পুরোনো বন্ধু’ হিসেবে মূল্যায়ন করে এসেছে সব সময়। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি এবং তাঁর সরকার পাকিস্তান ও চীনের পক্ষ নেয়। তিনি ২১টি বই লিখেছেন। স্ত্রী, আগের স্ত্রীর ঘরে দুই সন্তান ও পাঁচ নাতি-নাতনি রেখে গেছেন। তাঁর সোভিয়েত ইউনিয়ন নীতি এবং চিলির অগাস্টো পিনোশেসহ বিশ্বজুড়ে বহু কর্তৃত্বপরায়ণ শাসকগোষ্ঠীকে সমর্থন নিয়ে সমালোচনা আছে। শীতল যুদ্ধের সময়কার ‘রিয়ালপলিটিকে’র মূর্ত প্রতীক বলেও তাঁকে মনে করেন অনেকেই। এর অর্থ শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে জাতীয় স্বার্থ রক্ষা। যুক্তরাষ্ট্র আজও সেই ধারাতেই চলছে। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের চালানো গণহত্যাকে প্রচ্ছন্ন সমর্থন করে স্বাধীন বাংলাদেশেও তাঁর পরিচয় এক নিন্দিত চরিত্র হিসেবেই। তবে ১৯৭৪ সালে তিনি ঢাকা সফর এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তাঁর উপস্থিতিতে মার্কিন কর্মকর্তাদের এক অনুষ্ঠানে স্বাধীন বাংলাদেশকে ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হলে তিনিও পরোক্ষভাবে তাতে সায় দেন। এর পর থেকে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে অনেক বছর এ শব্দযুগলের বহুল ব্যবহার হয়। এ নিয়ে এই দেশে রাজনৈতিক বিতর্কও কম হয়নি। তাঁর প্রবল ভারতবিরোধী ভূমিকার কথাও বহুল চর্চিত। বিতর্কিত ‘নিক্সন টেপে’ হেনরি কিসিঞ্জার ভারতীয় এবং ইন্দিরা গান্ধীকে অকথ্য ভাষায় গালি দেন। পরে অবশ্য ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে তাঁর সুসম্পর্কের কথা শোনা যায়। তাঁকে দেওয়া নোবেল শান্তি পুরস্কার নিয়েও বিতর্ক হয়েছিল। ১৯৭৩ সালে তাঁকে ভিয়েতনামের লি ডাক থোর সঙ্গে নোবেল শান্তি পুরস্কার দেওয়া হয়। তবে থো সেই পুরস্কার গ্রহণে অস্বীকৃতি জানান। তাঁকে পুরস্কার দেওয়ার প্রতিবাদে পদত্যাগ করেছিলেন নোবেল কমিটির দুই সদস্য। নিউইয়র্ক টাইমস সে বছর পুরস্কারটিকে আখ্যায়িত করেছিল ‘নোবেল ওয়ার প্রাইজ’ হিসেবে।

দৈনিক জামালপুর
দৈনিক জামালপুর