• শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪ ||

  • শ্রাবণ ১২ ১৪৩১

  • || ১৯ মুহররম ১৪৪৬

একগুচ্ছ নির্দেশনা ॥ সচিবদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সভা

দৈনিক জামালপুর

প্রকাশিত: ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪  

নতুন সরকারের প্রথম সচিবসভায় প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের একগুচ্ছ নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আসন্ন মার্চ থেকে দেশে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ব্যবস্থা গড়ে তোলার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। খাদ্য নিরাপত্তা ব্যবস্থার লক্ষ্যে বোরো উৎপাদন বাড়াতে হবে। দ্রব্য মূল্য নিয়ন্ত্রণে পণ্য পরিবহনে চাঁদাবাজি বন্ধে কঠোর নজরদারির আওতায় আনতে হবে। নতুন প্রকল্প নেওয়ার ক্ষেত্রে সচিবদের খুবই সতর্ক হতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে সার্বিক সহযোগিতা প্রদানের পাশাপাশি আত্মপ্রত্যয়, আত্মবিশ্বাস ও আত্মসম্মান বজায় রেখে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করতে বলেছেন। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সকল ক্ষেত্রে দুর্নীতি কমিয়ে আনার পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সার্বিক ব্যবস্থা নিতে হবে। সোমবার সকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সচিব সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কথা বলেন। সভা শেষে মন্ত্রিপরিষদ সভাকক্ষে সচিবসভার সারসংক্ষেপ তুলে ধরে এ কথা বলেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এই সচিবসভা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সকাল ১০টায় শুরু হয়ে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত সাড়ে তিন ঘণ্টার বৈঠকে সকল সচিব এবং বিভিন্ন দপ্তরের সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রধানমন্ত্রী নিত্যপণ্য পরিবহনে চাঁদাবাজি শূন্যের কোটায় আনতে নজরদারি বাড়াতেও নির্দেশ দিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে (পণ্য পরিবহনে) চাঁদাবাজি হলে সংশ্লিষ্ট সবাইকে শক্তভাবে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, চাঁদাবাজি করলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। চাঁদাবাজ, দুর্নীতিবাজদের কোনো দল নেই। এদের কঠোর হাতে দমন করতে হবে। নির্বাচনী এজেন্ডা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাস্তবায়ন করতে হবে। এ দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে নতুন সরকারের প্রত্যাশা ও নির্দেশনার কথা শুনতে চান সচিবরা। এ সময় বিভিন্ন বিষয়ে সচিবদের নির্দেশনাও দেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় প্রধানমন্ত্রী, কর আদায়ের প্রতি সচিবদের মনোযোগী হতে নির্দেশনা দিয়েছেন। যাদের আয়কর দেওয়ার কথা, অথচ করের আওতায় আসেনি, তাদের করের আওতায় নিয়ে আসতে জোরালো নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি। এ ছাড়া, বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণের বিষয়ে নির্দেশনা দেন শেখ হাসিনা। বিনিয়োগের ক্ষেত্রে অহেতুক যেন হয়রানি হতে না হয়, সেই নির্দেশনাও দেন। প্রধানমন্ত্রী জানান, কোনো কারণে যদি কোনো বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হয়, তাহলে সেটা তিনি ভালোভাবে নেবেন না। তবে নতুন প্রকল্প নেওয়ার ক্ষেত্রে খুবই সতর্ক হতে হবে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রীর মূল লক্ষ্য হলো জনমানুষের অবস্থানের উন্নয়ন। কাজেই প্রকল্প থেকে জনমানুষের উন্নয়ন হয়েছে কি না, সেটা তিনি জানতে চাইবেন। কাজেই নতুন প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সেই বিষয়টি দেখতে বলেছেন। সভায় পাট, চামড়া ও কৃষিজাত পণ্য রপ্তানির বিশেষ সুযোগ দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তৈরি পোশাক খাতের মতো চামড়া, কৃষিজাত ও পাটজাত পণ্যেও একই ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে। এ ছাড়া বিদ্যুৎ ও জ্বালানি ব্যবহারে সাশ্রয়ী হতে বলেছেন। সেচ মৌসুমে যাতে কোনো বাঁধাগ্রস্ত না হয়, সেটা দেখতে বলেছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সভায় প্রধানমন্ত্রী সচিবদের জনকল্যাণ মূলক প্রকল্প গ্রহণে নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, আমাদের সরকার জনগণের সরকার। আমরা জনগণের জন্য কাজ করি। এ কাজে আপনাদের সহযোগিতা কামনা করি। প্রতি ক্ষেত্রে সরকারি ব্যয় কমিয়ে আনবেন। ব্যয় সংকোচন করতে পারলে সাশ্রয়ী অর্থে জনকল্যাণমূলক নতুন প্রকল্প হাতে নেওয়া যাবে। প্রত্যকে নিজেদের মন্ত্রণালয় ও অধিনস্তদের দুর্নীতির প্রবণতা কমিয়ে আনবেন। আপনারা চাইলে দুর্নীতি কমে যাবে। পর্যায়ক্রমে দেশকে দুর্নীতিমুক্ত করতে হবে। দুর্নীতিমুক্ত করতে পারলে দেশ আরও দ্রুত এগিয়ে যাবে। তিনি বলেন, সামনে বোরো ফসল। উৎপাদন বাড়াতে মার্চ থেকে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। একই সঙ্গে উৎপাদন বাড়াতে কৃষি সেক্টরকে সতর্ক থাকতে হবে। কৃষককে সার্বিক সহায়তা দিতে হবে। খাদ্য উৎপাদন বাড়িয়ে দেশের খদ্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে শিক্ষার নতুন কারিকুলমা সতর্কতার সঙ্গে বাস্তবায়ন করতে হবে। সভায় সকল সচিব উপস্থিত ছিলেন। সচিব পদমর্যাদায় অন্য যারা দায়িত্বে ছিলেন, তারাও উপস্থিত ছিলেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যে সচিবসভা হয়েছে, সেটা নির্দিষ্ট কোনো বিষয় নিয়ে হয়নি। প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে প্রত্যাশার কথা ও তার নির্দেশনা শুনতে চেয়েছি। প্রধানমন্ত্রী আমাদের সুস্পষ্টভাবে বলেছেন আত্মপ্রত্যয়, আত্মবিশ্বাস ও আত্মসম্মান বজায় রেখে নিজ নিজ দায়িত্ব চালিয়ে যেতে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সভায় ১৬ সচিব আলোচনায় অংশ নেন। কয়েকজন নির্দিষ্ট বিষয়ে উপস্থাপনও করেছেন। নির্বাচনী ইশতেহার, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, রমজানের প্রস্তুতি, খাদ্য নিরাপত্তা পরিস্থিতি, কৃষি উৎপাদন ও সার ব্যবস্থাপনা, কর্মমুখী শিক্ষা, নতুন পাঠ্যক্রম ও কর্মমুখী শিক্ষা, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি নিরাপত্তা, উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন, আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থাপনা, মুদ্রাস্ফীতি নিয়ে সচিবরা আলোচনা করেছেন। প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন সংসদ কার্যক্রমে সচিবরা যেন যথাযথভাবে সহায়তা করেন। বিশেষ করে প্রশ্নোত্তর পর্বে সহায়তা করতে বলেছেন। সংসদীয় কার্যাবলীতে কর্মকর্তাদের অবহিত হতে বলেছেন। তাদের এ বিষয়ে প্রশিক্ষণের কথাও বলেছেন তিনি। ২০৪১ সাল নাগাদ তিনি স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে চাচ্ছেন। আগামী পাঁচ বছরে সরকার পরিচালনার মূলনীতি হচ্ছে ইশতেহার। কাজেই ইশতেহার বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন। এ সময় সচিবদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আমাদের নির্বাচনী ইশতেহার দ্রুত বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নিবেন। একই সঙ্গে নতুন প্রকল্প নেওয়ার ক্ষেত্রে খুবই সতর্ক হতে হবে। এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রীর মূল লক্ষ্য হলো জনমানুষের অবস্থানের উন্নয়ন। কাজেই প্রকল্প থেকে জনমানুষের উন্নয়ন হয়েছে কি না, সেটা তিনি জানতে চাইবেন। কাজেই নতুন প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সেই বিষয়টি দেখতে বলেছেন। পণ্য পরিবহনে চাঁদাবাজি বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর। আইনশৃঙ্খলা রক্ষা এবং দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে বিশেষ নজরদারির রাখতে হবে। এ ক্ষেত্রে (পণ্য পরিবহনে) চাঁদাবাজি হলে সংশ্লিষ্ট সবাইকে শক্তভাবে ব্যবস্থা নিতে বলেছেন তিনি। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা এবং বাজারমূল্য নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী নজরদারি করতে বলেছেন। নজরদারির ক্ষেত্রে তিনি একটি সুনির্দিষ্ট কথা বলেছেন। অনেক সময় দ্রব্যমূল্যের ক্ষেত্রে বিভিন্ন পর্যায়ে চাঁদাবাজির খবর আসে। এ প্রসঙ্গ নানা আলোচনা হয়। এক্ষেত্রে তিনি সংশ্লিষ্ট সবাইকে খুবই শক্তভাবে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন। এটি যেন কোথাও না হয়। তিনি বলেন, চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে। মাহবুব হোসেন বলেন, আইনশৃঙ্খলার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী একটি বিষয়ের দিকে নজর দিতে বলেছেন। বিশেষ করে ছিনতাই, কিশোর গ্যাং বা এ রকম যেসব অপরাধ হচ্ছে, সেক্ষেত্রে স্থানীয় পর্যায়ে কমিটি গঠন করে নজর দিতে বলেছেন।

দৈনিক জামালপুর
দৈনিক জামালপুর