• শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪ ||

  • শ্রাবণ ১২ ১৪৩১

  • || ১৯ মুহররম ১৪৪৬

দ্বিতীয় পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রও হবে রূপপুরে

দৈনিক জামালপুর

প্রকাশিত: ৩ এপ্রিল ২০২৪  

পাবনার ঈশ্বরদীর রূপপুরেই হচ্ছে দেশের দ্বিতীয় পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। বর্তমান পারমাণবিক কেন্দ্রের পাশেই সমান ক্ষমতার এ প্রকল্পের কাজ ২০২৬ সালে শুরু হতে পারে। রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্রের পাশেই দ্বিতীয় প্রকল্পের জন্য ৮০০ একর ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে।

দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নকারী দেশ রাশিয়াকেই এ প্রকল্পের জন্য প্রাথমিকভাবে বাছাই করেছে বাংলাদেশ। রুশ রাষ্ট্রীয় পরমাণু শক্তি করপোরেশন রোসাটমকে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দিয়েছে ঢাকা। তা বাস্তবায়নে বাংলাদেশকে সহযোগিতা করতে রাজি হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী করণীয় চূড়ান্ত করা হবে।

প্রথম প্রকল্পের কারিগরি সহযোগিতার পাশাপাশি ৯০ শতাংশ আর্থিক খরচ ঋণ হিসেবে দিয়েছিল মস্কো। দ্বিতীয় প্রকল্পও এ প্রক্রিয়ায় বাস্তবায়িত হতে পারে বলে জানা গেছে।

রোসাটমের মহাপরিচালক আলেক্সি লিখাচেভ গতকাল মঙ্গলবার গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এ সময় প্রথম প্রকল্পের অগ্রগতি বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেন তিনি। পাশাপাশি দ্বিতীয় প্রকল্প বিষয়ে আলোচনা করেন। রোসাটম মহাপরিচালক গত সোমবার ঢাকা আসেন এবং নির্মাণাধীন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করেন।

গণভবনে গতকালের বৈঠকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সচিব মো. আলী হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর স্পিচ রাইটার মো. নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, শেখ হাসিনা চলমান প্রকল্পের কাজ শেষ করার পর রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের (আরএনপিপি) জায়গায় নতুন আরেকটি কেন্দ্র নির্মাণে রোসাটমকে আহ্বান জানিয়েছেন। আলেক্সি লিখাচেভ প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, আরএনপিপির ৮৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। ২০২৫ সালের মধ্যে কেন্দ্রটি উৎপাদনে আসবে এবং জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ যোগ করতে সক্ষম হবে। মহামারি এবং নিষেধাজ্ঞার কারণে প্রতিবন্ধকতা ছিল। তারপরও স্বাভাবিক গতিতে কাজ সম্পন্ন হয়েছে।

রোসাটমের মহাপরিচালক বলেন, প্রথম দুটি ইউনিটের নির্মাণকাজ শেষ হলেই আরএনপিপি এলাকায় আরও দুটি ইউনিটের নির্মাণকাজ শুরু করা হবে। তাঁর মতে, বিদ্যমান পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের সম্প্রসারণ আর্থিক দৃষ্টিকোণ, প্রযুক্তিগত ও পারমাণবিক নিরাপত্তার দিক দিয়ে বেশি লাভজনক। কারণ বাংলাদেশি, রাশিয়ানসহ প্রায় দুই হাজার ৫০০ কর্মী প্রথম প্রকল্পে কাজ করে দক্ষতা অর্জন করেছেন, যারা নতুন প্রকল্প বাস্তবায়নে ভূমিকা রাখতে পারবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোসাটম মহাপরিচালককে বিভিন্ন দেশে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পে বাংলাদেশের দক্ষতা কাজে লাগানোর পরামর্শ দেন।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান সমকালকে বলেন, এ জাতীয় প্রকল্প রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে আলোচনার মাধ্যমেই সম্পন্ন হয়। তবে চুক্তির বিষয়ে স্বচ্ছতা প্রয়োজন। প্রথম প্রকল্পে কী কী শর্তে রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি হয়েছে এবং বিদ্যুৎ পেতে বাংলাদেশ কী ধরনের ঝুঁকি নিয়েছে, তা জাতিকে জানানো হয়নি। আশা করি, দ্বিতীয় প্রকল্পের সময় এ বিষয়টি মাথায় রাখা হবে। আর্থিক ও নিরাপত্তার বিষয়টিতে স্বচ্ছতা থাকবে।

দক্ষিণবঙ্গে হচ্ছে না দ্বিতীয় প্রকল্প
দেশের দক্ষিণাঞ্চলে দ্বিতীয় পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। স্থান নির্বাচনে একটি প্রকল্প নেওয়া হয়, যার মেয়াদ শেষ হয় ২০২১ সালের জুনে। প্রকল্পের আওতায় প্রাথমিকভাবে চিহ্নিত ১৫টি স্থানের ওপর সমীক্ষা চালিয়ে পাঁচটি স্থান নির্বাচন করা হয়। যার মধ্যে ছিল বরগুনার তালতলী উপজেলার নিশানবাড়ী (পূর্ব), বরগুনা সদর উপজেলার কুমিরমারা ও পদ্মা মৌজা, তালতলী উপজেলার নিশানবাড়ী (পশ্চিম), পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার চরমোনতাজ ও মৌডুবি। পরবর্তী সময়ে আরও কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয় ওইসব স্থানে। শেষ পর্যন্ত ওই স্থানগুলো পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের বিভিন্ন মানদণ্ডে উত্তীর্ণ হতে পারেনি।

আগ্রহী অন্য দেশও
বাংলাদেশে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে রাশিয়ার পাশাপাশি আরও কয়েকটি দেশ আগ্রহ প্রকাশ করেছে। দেশগুলোর মধ্য রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ফ্রান্স, দক্ষিণ কোরিয়া ইত্যাদি। এর মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়া ও চীন কয়েক দফা সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপনে আগ্রহের কথা আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রও বিভিন্ন সময় ঢাকার সঙ্গে পারমাণবিক প্রকল্প বাস্তবায়নে সহযোগিতার বিষয়ে নিজেদের আগ্রহের কথা জানিয়েছিল। তবে ঢাকা প্রাথমিকভাবে মস্কোকেই দ্বিতীয় প্রকল্পের জন্য বেছে নিয়েছে।

পিছিয়ে সঞ্চালন লাইন
রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পের (আরএনপিপি) নির্মাণকাজ এগোচ্ছে সূচি অনুসারে। প্রথম ইউনিটের পরীক্ষামূলক বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হওয়ার কথা চলতি বছরের ডিসেম্বরে। কিন্তু বিদ্যুতের সঞ্চালন লাইনের নির্মাণকাজ এখনও শেষ হয়নি।   

আরএনপিপির এক কর্মকর্তা জানান, নিরাপত্তার স্বার্থে সঞ্চালন লাইন পুরোপুরি প্রস্তুত না হওয়া পর্যন্ত এ ধরনের কেন্দ্রে জ্বালানি ভরার কোনো সুযোগ নেই। কারণ আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) অনুমোদন মিলবে না। সে জন্য পিছিয়ে থাকা সঞ্চালন লাইনের নির্মাণকাজ দ্রুত শেষ করার তাগিদ দেওয়া হচ্ছে। সঞ্চালন লাইন এবং বিদ্যুৎকেন্দ্রের অগ্রগতি দেখতে আগামীকাল বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদবিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরীর রূপপুর বিদ্যুৎ প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করার কথা রয়েছে।

আর্থিক বিবেচনায় বাংলাদেশের একক প্রকল্প হিসেবে সবচেয়ে বড় প্রকল্প রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। প্রায় এক লাখ ১৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন এ প্রকল্পের ৯০ শতাংশ অর্থ ঋণ হিসেবে দিচ্ছে রাশিয়া, যেটা ২৮ বছরের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে।

রোসাটমের সার্বিক তত্ত্বাবধানে বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণকাজ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অ্যাটোমসট্রয়। দুটি ইউনিটে ১২০০ মেগাওয়াট করে ২৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে।

দৈনিক জামালপুর
দৈনিক জামালপুর