• বুধবার ০১ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৮ ১৪৩১

  • || ২১ শাওয়াল ১৪৪৫

দৈনিক জামালপুর

এক রাষ্ট্রকে খুশি করতে অন্যের বিরাগভাজন কাম্য নয় : সেনাপ্রধান

দৈনিক জামালপুর

প্রকাশিত: ১৯ এপ্রিল ২০২৪  

সেনাবাহিনী প্রধান এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, সব দেশই আমাদের বন্ধু। তাই মিয়ানমারের নেতৃত্বের সঙ্গে যুক্ত হতে গেলে কিছু বিষয় রয়েছে। তাদের নেতৃত্বের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ আছে। কিন্তু তাদের জেষ্ঠ্য কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখাটা নিজেদের ঝুঁকিতে ফেলে দেয়ার মতো। কাজেই একটি বন্ধু রাষ্ট্রকে খুশি করতে গিয়ে অন্য রাষ্ট্রের বিরাগভাজন হতে পারি না। এই বাস্তবতাটি আমাদের বিবেচনায় রাখতে হয়। 

বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ আয়োজিত (বিআইআইএসএস) ‘প্রতিরক্ষা কূটনীতি’ শীর্ষক সেমিনার প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বিআইআইএসএস মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এ সেমিনারে সেনাপ্রধান আরও বলেন, অভিপ্রায় হঠাৎ করে বদলে যেতে পারে। কিন্তু সক্ষমতা হঠাৎ করে বদলায় না। আজ একজন বন্ধু আছে, কিন্তু কাল সে বন্ধু নাও থাকতে পারে। জাতীয় স্বার্থ ও মাতৃভূমি সুরক্ষার জন্য আমাদের তৈরি থাকতে হবে। পররাষ্ট্রনীতির মূলমন্ত্র সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়। আর সামরিক বাহিনী পররাষ্ট্রনীতির উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য সবকিছু করছে।

তিনি বলেন, অস্বীকার করার কোনও উপায় নেই যে সরকারের সব সংস্থাই দেশের স্বার্থের জন্য কাজ করে। সুযোগ খুঁজে বের করা এবং সহায়ক পরিবেশে কাজ করা হচ্ছে সবচেয়ে ভালো বিষয়। একা একা সফলতা অর্জন করা অসম্ভব। কীভাবে সবার সঙ্গে সহযোগিতা করা যায়, সেটি হচ্ছে বড় চ্যালেঞ্জ। সরকারের সব সংস্থাই  দেশের স্বার্থের জন্য কাজ করে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাদের মধ্যে সমন্বয় নিশ্চিত করা বড় চ্যালেঞ্জ। দেশের স্বার্থ ও কৌশলের জন্য সামরিক কৌশল দরকার এবং এর মাধ্যমে বিভিন্ন ইস্যুতে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আমাদের অবস্থান ঠিক করি। বিচ্ছিন্নভাবে এটি অর্জন করার সুযোগ নেই। মাঝে মাঝে আমাদের তাই ভাবনা আসে কে  নেতৃত্ব দেবে বা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব কার হাতে থাকবে। এটি কখনও কখনও সমস্যার তৈরি করে বলে তিনি জানান।

এসময় সরকারি কাজ সমন্বয়ের জন্য একটি সংস্থার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, অনেক বিষয় আছে যেটি আমরা শুরু করেছিলাম, কিন্তু শেষ করতে পারিনি। কারণ পরবর্তীতে সেটি আমাদের হাতে থাকেনি। যখনই আমি ব্যবসা খাতের জন্য একটি সম্ভাবনা খুঁজে বের করলাম, সেটি পরবর্তীতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে চলে যায়। কাজেই এখানে যে প্রস্তাব এসেছে সেটি আমি সমর্থন করি এবং মনে করি একটি সংস্থা দরকার যেটি সমন্বিত উদ্যোগ নিশ্চিত করবে যার মাধ্যমে যেটি অর্জন করা হয়েছে সেটি হারিয়ে যাবে না এবং এর ভবিষ্যৎ কার্যক্রম ঠিক করবে। সামরিক বাহিনীর মূল কাজ হচ্ছে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা এবং আমরা এটি কখনও ভুলি না। আমরা সবসময় এটির জন্য তৈরি।

সেমিনারে চিফ অব জেনারেল স্টাফ লেফটেনেন্টে জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, অনেকের হয়তো প্রতিরক্ষা কূটনীতি নিয়ে ভুল ধারণা আছে। কিন্তু আমাদের কূটনীতিকরা এর প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি খুব ভালো মতো বোঝেন। আর্মড ফোর্সেস ডিভিশনের প্রিন্সিপ্যাল স্টাফ অফিসার থাকা অবস্থায় নিজের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, অনেক কূটনীতিক আমার অফিসে আসতেন এবং বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করতেন। যা পরবর্তীতে বিচার-বিবেচনা করা হতো।

এসময় চারটি বিষয় ভিত্তিক বক্তব্য উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েল আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. এএসএম আলী আশরাফ, বিআইআইএসএস’র রিসার্চ ফেলো এএসএম তারেক হাসান শিমুল, দক্ষিণ সুদান জাতিসংঘ মিশনের সাবেক ডেপুটি ফোর্স কমান্ডার মেজর জেনারেল (অব.) মাইন উল্লাহ চৌধুরী এবং ব্রুনাইয়ের সাবেক রাষ্ট্রদূত এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) মাহমুদ হোসেন। 

অধিবেশন শেষে একটি উন্মুক্ত আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। এসময় আলোচকরা বলেন, একটি দেশের বৈদেশিক ও নিরাপত্তা নীতির উদ্দেশ্য পূরণে এবং কূটনৈতিক সম্পর্ককে এগিয়ে নেয়ার জন্য প্রতিরক্ষা কূটনীতি একটি কার্যকর কূটনৈতিক হাতিয়ার। এবং সংকট প্রতিরোধের ব্যবস্থা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। বাংরাদেশের দৃষ্টিকোণ থেকে প্রতিরক্ষা কূটনীতিকে বিশ্বশান্তি রক্ষার্থে সশস্ত্র বাহিনীর ব্যবহার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া হিসেবে বিবেচনা করা হয়। যা দেশের জাতীয় স্বার্থ ও পররাষ্ট্র নীতির লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করে। তারা আরও বলেন, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে সশস্ত্র বাহিনীর অংশগ্রহণ প্রতিরক্ষা কূটনীতির একটি দৃষ্টান্ত। বাংলাদেশকে বৈশ্বিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার প্রতি তার প্রতিশ্রুতি প্রদর্শনের পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী এর গুরুত্ব ও প্রভাব বৃদ্ধি করার সুযোগ করে দিয়েছে। দেশের কূটনৈতিক অঙ্গনে প্রতিরক্ষা কূটনীতির ধারণা ও আবেদন বিস্তৃত হচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন বক্তারা।

বিআইআইএসএস’র চেয়ারম্যান রাষ্ট্রদূত এএফএম গওসোল আজম সরকারের সভাপতিতে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন, বিআইআইএএসএস’র মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. আবু বকর সিদ্দিক খান, সাবেক রাষ্ট্রদূত শমসের মুবিন চৌধুরী, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়/সংস্থার পদস্থ কর্মকর্তা, বিদেশি দূতাবাসের উর্ধ্বতন প্রতিনিধি, উর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তা, সাবেক কূটনীতিকরা। 

দৈনিক জামালপুর
দৈনিক জামালপুর