• বুধবার ২২ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৭ ১৪৩১

  • || ১৩ জ্বিলকদ ১৪৪৫

দৈনিক জামালপুর

ভয়ালরূপে গ্রীষ্ম

দৈনিক জামালপুর

প্রকাশিত: ১ মে ২০২৪  

মাসজুড়ে টানা তাপপ্রবাহের মধ্য দিয়েই বিদায় নিল দেশের সবচেয়ে উষ্ণতম মাস এপ্রিল। যাকে ঝড়-বৃষ্টিহীন ভয়ংকর এপ্রিল বললেও ভুল হবে না। ৭৬ বছরের টানা তাপপ্রবাহের রেকর্ড ভেঙেছে আগেই। মাসের শেষ দিনটায়ও দেশের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড দেখল দেশবাসী। যা ৩৫ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ উত্তপ্ত দিন। মঙ্গলবার প্রথম পর্যায়ে মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায় ৪৩ দশমিক ৭ ডিগ্রি রেকর্ড করা হলেও তা ছিনিয়ে নিয়ে রেকর্ড হয় যশোরে ৪৩ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

বিভিন্ন জেলার দেড়যুগ ও দুই যুগের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ডও ভেঙেছে এদিন। ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৮ দশমিক ৬ ডিগ্রি। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, এর আগে ১৯৭২ সালে রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪৫ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। এটিই বাংলাদেশের ইতিহাসের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড। আজ শুরু হওয়া মে মাসও যে খুব স্বস্তিতে যাবে না তা আগেই জানিয়ে রেখেছে আবহাওয়াবিদরা। তবে বৃহস্পতিবার থেকেই সারাদেশে ঝড়-বৃষ্টি শুরু হবে।

তখন তাপমাত্রা ৫-৭ ডিগ্রি কমে আসলেও আবার তাপমাত্রার পারদ চড়বে। এদিন মুন্সীগঞ্জ, ঝিনাইদহ, জামালপুর, গাইবান্ধা, নাটোর, কক্সবাজার, শেরপুর, সাতক্ষীরা ও টাঙ্গাইলে হিটস্ট্রোকে ১১ ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে।
আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, আগামী ২ থেকে ৭ মে পর্যন্ত সময়ে বৃষ্টি হতে পারে। বৃষ্টি হলেই যে তাপমাত্রা অনেক কমে যাবে, বিষয়টি তা নয়। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে তাপপ্রবাহের ধারা পরিবর্তনের তেমন সুযোগ নেই বলেও মনে করেন তিনি। আগামীকালের আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং ঢাকা ও বরিশাল বিভাগের দুই-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি ও বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।

কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলাবৃষ্টির সম্ভাবনাও রয়েছে। এ ছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বৈজ্ঞানিক প্রমাণ ও জলবায়ু সংক্রান্ত রেকর্ড থেকে বোঝা যায়, গত কয়েক দশক ধরেই বাংলাদেশে উষ্ণতার মাত্রা ও এর স্থায়িত্ব বাড়ছে। চলমান তাপপ্রবাহ নিয়ে বিশেষজ্ঞদের ভাষ্য, বাংলাদেশে বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ বেশি থাকায় প্রকৃত তাপমাত্রার চেয়েও চার থেকে পাঁচ ডিগ্রি বেশি গরম অনুভূত হচ্ছে। যে কারণে সাধারণের অস্বস্তিও বেশি।
মঙ্গলবার রাজধানীতে সকাল থেকেই ছিল সূর্যের চোখ রাঙানি। প্রখর তাপে ঘরের বাইরে বের হওয়ার সুযোগও সেভাবে ছিল না। প্রয়োজন ছাড়া নাগরিকদের সেভাবে রাজধানীর সড়কে চলাফেরা করতে দেখা যায়নি। তবে যারা ঘরের বাইরে বের হয়েছেন তাদের অধিকাংশকেই ছাতা ব্যবহার করতে দেখা গেছে। দুপুর ১২টায় মিরপুর ১০ নম্বরের হার্ট ফাউন্ডেশনের সামনে গাছের ছায়ায় যাত্রীর অপেক্ষায় সিএনজি ও একাধিক রিক্সাচালককে দেখা গেছে।

তারা জানান, এই গরমে যাত্রী পাওয়া বেশ কঠিন। মিরপুরে মেট্রোরেলের কারণে ওদিকেই যাত্রীদের বেশি ঝোঁক। তবে যাদের মেট্রোতে যাওয়ার সুযোগ নেই তারা বাসে বা সিএনজি অটোরিক্সাতে চেপে গন্তব্যে ছুটেছে। আগারগাঁও, বিজয় সরণী, ফার্মগেট, কাওরানবাজার, বাংলামোটরে যানবাহনের উপস্থিতি ছিল কম। কোথাও যানজটের দেখা মেলেনি।
৬ কারণে যশোরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ॥ স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস জানান, যশোরে তীব্র গরমে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। মঙ্গলবার মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে এ জেলায়। তবে তাপপ্রবাহে মোটাদাগে গাছ নিধনকে কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে। পরিবেশবিদরা এ উষ্ণায়নের জন্য ছয়টি কারণকে চিহ্নিত করছেন। এর মধ্যে কয়েকটি কারণ যশোরাঞ্চলে তাপপপ্রাহে বাড়তি ভূমিকা রাখছে বলেও ধারণা করা হচ্ছে। যশোর বন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪ সালের জরিপে সারাদেশে বৃক্ষের পরিমাণ ছিল ২২ দশমিক ৩৭ শতাংশ।  

সেখানে যশোরে এ হার ছিল ২২ দশমিক ৯২ শতাংশ। এর দশ বছর পর চলতি বছর আবার জরিপ হচ্ছে। তবে বন বিভাগের মতে, যশোরে গাছের পরিমাণ আরও বেড়েছে। বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. আবুল কালাম বলেন, ২০১৪ সালের জরিপে সারাদেশে বৃক্ষের পরিমাণ ছিল ২২ দশমিক ৩৭ শতাংশ। সেখানে যশোরের হার ২২ দশমিক ৯২ শতাংশ। নতুন জরিপ চলছে। জরিপ শেষ হলে যশোর জেলায় গাছের সঠিক তথ্য পাওয়া যাবে। তবে যশোরে অনেক গাছ লাগানো হয়েছে। এ কারণে এ হার আরও বেড়েছে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।
যশোর সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজে ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগে শিক্ষকতা করা প্রফেসর মো. ছোলজার রহমান এখন চট্টগ্রাম কলেজে ভূগোল ও পরিবেশের অধ্যাপক। যশোরাঞ্চলের পরিবেশ নিয়ে তার দীর্ঘদিনের গবেষণা রয়েছে। প্রফেসর মো. ছোলজার রহমান বলেন, পরিবেশের প্রতি অতীত ও বর্তমানের দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক আচরণের পাশাপাশি আরও কয়েকটি কারণ এ অঞ্চলের উষ্ণায়নের জন্য দায়ী। প্রথমত, গত ৬-৭ বছরের মধ্যে এ অঞ্চলের অনেকগুলো সড়ক-মহাসড়কের দুপাশের বৃক্ষ উজাড় করা হয়েছে।

এর মধ্যে যশোর-খুলনা, যশোর-কুষ্টিয়া, যশোর-বেনাপোল, যশোর-নড়াইল, যশোর-চৌগাছা-মহেশপুর সড়ক অন্যতম। জমির হিসাবে সড়কের পাশ থেকে প্রায় আটশ’ হেক্টর গাছ উজাড় করা হয়েছে। অল্প সময়ে একযোগে এই পরিমাণ গাছ কেটে ফেলা একটি বড় কারণ। দ্বিতীয়ত, করোনাকালে ঘরে অবস্থানের সময় এবং তারপর থেকে ঘরে-অফিসে এসি স্থাপনের হার বেড়েছে। এ শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রও উষ্ণায়নের আরেকটি কারণ। তৃতীয়ত, সামগ্রিকভাবে দেশের উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ অনেক বেড়েছে।

নানা ধরনের নির্মাণকাজের ইট-বালি-সিমেন্ট-পাথরসহ নির্মাণ সামগ্রীর কণা ও আঁশ বায়ুম-লে ছড়িয়ে পড়ছে এবং তা তাপ শোষণ ও বিকিরণ করছে। যা তাপমাত্রাকে বাড়িয়ে দিচ্ছে। চতুর্থত, দেশের বিপুল জনগোষ্ঠীর জন্য প্রচুর খাদ্যশস্য উৎপাদন করতে হচ্ছে। এজন্য শস্য আবাদের পরিমাণ-মাত্রা বাড়াতে হচ্ছে। ফলে বাড়ছে রাসায়নিক সার, কীটনাশকের ব্যবহার; মাটিতে কমছে জৈব উপস্থিতি। ফলে মৃত্তিকাও তাপ ধরে রাখছে। এই তাপ বিকিরণও বিরূপ প্রভাব ফেলছে।

পঞ্চমত, যশোর-খুলনা অঞ্চলের পরিবেশে বিরূপ প্রভাবের আরেকটি কারণ জলাশয় ভরাট করে ফেলা এবং জলাভূমি শুকিয়ে যাওয়া। এ অঞ্চলে প্রচুর জলাশয় ছিল। জলাশয়গুলো ভরাট হয়ে গেছে। নদী-খাল-বিল শুকিয়ে গেছে। ফলে জলাশয় যে তাপ শোষণ করত, তা আর শোষিত হচ্ছে না। এটি এ অঞ্চলের উষ্ণায়নের একটি বড় কারণ। ষষ্ঠত, ভূগর্ভস্থ পানির মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারে শুষ্ক মৌসুমে পানির লেয়ার অনেক নিচে নেমে যাচ্ছে। মৃত্তিকা যে তাপ ধারণ করত, এ পানি তার একটি অংশ শোষণ করে নিত।

কিন্তু লেয়ার নিচে নেমে যাওয়ায় এ তাপ বিকিরিত হয়ে পরিবেশে ফিরে যাচ্ছে। একইসঙ্গে প্রচুর কংক্রিটের ভবন ও স্থাপনা ভূপৃষ্ঠকে গ্রাস করছে; ঘন ঘন বাড়িঘরও প্রচুর তাপ শোষণ করে তা ধরে রাখছে। এসব কারণের সম্মিলন পরিবেশকে উত্তপ্ত করছে; যা এ তীব্র তাপপ্রবাহের জন্য দায়ী বলে মনে করেন প্রফেসর মো. ছোলজার রহমান। 
চুয়াডাঙ্গা ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, মঙ্গলবারেও মঙ্গলবার্তা দিল না চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিস। বরং এদিন তাপমাত্রার নতুন রেকর্ড গড়ল ৪৩ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস দিয়ে। সকাল থেকে যেন গরমে আরও বেশি হাঁসফাঁস করছে জেলাবাসী। চলতি মাসে তাপপ্রবাহের হাত থেকে নিস্তার পাবে না দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা চুয়াডাঙ্গার মানুষ। দেশজুড়ে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বিচার করলে প্রথম স্থানে রয়েছে চুয়াডাঙ্গা জেলা।

প্রচণ্ড তাপপ্রবাহের কারণে মঙ্গলবার পর্যন্ত এখানে হিট এলার্ট জারি রয়েছে। এপ্রিলের তাপপ্রবাহের কারণে রোগবালাই বেড়েই চলেছে। সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে বিপুলসংখ্যক মানুষ চিকিৎসা নিচ্ছেন। চুয়াডাঙ্গার প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ইনচার্জ জামিনুর রহমান জানিয়েছেন, মঙ্গলবার সকাল ৯টায় ৩৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। সে সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল শতকরা ৫৬ শতাংশ।

এরপর বেলা ১২টায় তাপমাত্রা দাঁড়ায় ৪১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ১৪ শতাংশ। বেলা ৩টায় সর্বকালের রেকর্ড ভেঙে তাপমাত্রা ৪৩ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছায়। সেইসঙ্গে বাতাসের আর্দ্রতার পরিমাণ ছিল ১২ শতাংশ।

মুন্সীগঞ্জ ॥ স্টাফ রিপোর্টার জানান, মুন্সীগঞ্জ সদরে তীব্র তাপপ্রবাহে দুই বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। তাদের একজন খেতে কৃষিকাজ করছিলেন এবং অপরজন জমি কেনা-বেচার কাজে জেলা রেজিস্ট্রি অফিসে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন। মঙ্গলবার সকাল ১০টা ৫০ মিনিটের দিকে কৃষক ওমর আলী (৬৫) ও ১১টা ১০ মিনিটের দিকে আব্দুল বাতেন মাঝিকে (৬৮) মৃত অবস্থায় মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। মৃত ওমর আলী মুন্সীগঞ্জ পৌরসভার মোল্লারচর এলাকার বারী হাজারির পুত্র ও শহরের মানিকপুরের বাসিন্দা বাতেন মাঝি ওলিউল্লাহ মাস্টারের পুত্র।
রাজশাহী ॥ স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী জানান, রাজশাহীর তাপমাত্রা বাড়তে বাড়তে এবার ১৯ বছরের রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। মঙ্গলবার বেলা ৩টায় রাজশাহীতে দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দিনের এই তাপমাত্রা গত ১৯ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের সিনিয়র পর্যবেক্ষক শহিদুল ইসলাম এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। আবহাওয়া অফিসের হিসাবে, রাজশাহীতে এখন অতি তীব্র তাপপ্রবাহ চলছে।

গত ৩০ মার্চ রাজশাহীতে মাত্র এক মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছিল। ৩১ মার্চ থেকে তাপমাত্রা বাড়তে শুরু করে। সেদিন থেকে কোনো বৃষ্টি হয়নি। প্রতিদিন তাপমাত্রা বাড়ছেই। এ অবস্থায় জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। সকাল থেকেই খুব জরুরি কাজ না থাকলে কেউ শহরের পথঘাটে বের হচ্ছেন না।
সাতক্ষীরা ॥ স্টাফ রিপোর্টার, সাতক্ষীরা জানান, এই জেলা ২১ বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড ভেঙেছে। প্রচ- তাপপ্রবাহে হিটস্ট্রোকে  আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় স্কুলশিক্ষক মো. ফারুক হোসেনের মৃত্যু হয়েছে। তিনি শহরের বেসরকারি নবারুণ  বালিকা বিদ্যালয়ের ইংরেজি বিষয়ের শিক্ষক ছিলেন। মঙ্গলবার সকালে খুলনার একটি বেসরকারি হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।

এর আগে রবিবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত স্কুলের ক্লাস নিয়ে বাসায় ফেরার পথে তিনি হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হন। প্রথমে তাকে সাতক্ষীরা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে রাতে খুলনা সিটি মেডিক্যালে ভর্তি করা হয়।  এদিকে মঙ্গলবার  সাতক্ষীরায়  সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪২.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ২১ বছরের মধ্যে এটিই সাতক্ষীরার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। বিকেল ৩টায় এই  তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল শতকরা ২৫ ভাগ। 
ঝিনাইদহ ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, ঝিনাইদহের শৈলকুপায় হিটস্ট্রোকে জাহাঙ্গীর হোসেন (৩৫) নামে এক গরু ব্যবসায়ীর মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে শৈলকুপা উপজেলার মালিপাড়া গ্রামে এই ঘটনা ঘটে। গরু ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর হোসেন শৈলকুপা উপজেলার ব্রহ্মপুর গ্রামের রুহুল আমিনের ছেলে।
জামালপুর ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, সদর উপজেলার ঘোড়াধাপ ইউনিয়নে হিটস্ট্রোকে আবুল কালাম (৫২) ওরফে কালা নামে একজন কৃষক মারা গেছেন। তিনি ওই ইউনিয়নের জোকা উত্তরপাড়া গ্রামের মৃত আজগর আলীর ছেলে। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। পারিবারিক ও স্থানীয় সূত্র জানায়, কৃষক আবুল কালাম সকালে তার ফসলি খেত দেখতে যান। প্রচ- তাপপ্রবাহের মধ্যেও খেতে কাজ করে বাড়িতে গিয়ে অসুস্থ বোধ করেন। তিনি হাতমুখ ধুয়ে শরীর মুছে প্রথমে পানি পান করেন। এরপর ভাত খাওয়ার সময় স্ট্রোক করে মারা যান। 
গাইবান্ধা ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলায় হিটস্ট্রোকে জহুরুল ইসলাম (৫৫) নামের এক শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। তিনি উপজেলায় অতি দরিদ্রদের কর্মসংস্থান কর্মসূচির (৪০ দিনের) শ্রমিক সর্দার ছিলেন। সোমবার রাত ৯টার দিকে ওই শ্রমিকের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন সাদুল্লাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা. সুরঞ্জন কুমার। 
টাঙ্গাইল ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে হিটস্ট্রোকে মুনছের আলী (১০৩) নামের এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কালিহাতী উপজেলার নারান্দিয়া ইউনিয়নের তালতলা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। কালিহাতী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোজহারুল ইসলাম তালুকদার ঠান্ডু বলেন, মুনছের আলী আওয়ামী লীগের একজন নিবেদিত কর্মী ছিলেন। তিনি সকালে বাড়ি থেকে বাজার করতে পার্শ্ববর্তী সিঙ্গুরিয়া বাজারে যান।

বাড়ির পাশের বাজার থেকে পায়ে হেঁটে বাড়িতে পৌঁছানোর পর বেলা ১১টার দিকে প্রচ- তাপমাত্রার কারণে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে বেলা সাড়ে ১১টায় বাড়িতেই তিনি মারা যান। তিনি আরও জানান, মুনছের আলীর মৃত্যুতে উপজেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে পরিবারের প্রতি গভীর শোক ও গভীর সমবেদনা প্রকাশ করছি।

নাটোর, লালপুর ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, নাটোরে খাইরুল ইসলাম (৫০) নামে এক সৌদী প্রবাসী হিটস্ট্রোকে মারা গেছেন। মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে নলডাঙ্গা উপজেলার খাজুরা ইউনিয়নের উজানপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। সিভিল সার্জন মশিউর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেন। সংবাদদাতা লালপুর জানান, তীব্র তাপপ্রবাহে ও পানির তৃষ্ণায় নাটোরের লালপুরে রেজাউল করিম (৫৫) নামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। ২৯ এপ্রিল সোমবার বিকেলে উপজেলার মোড়দহ গ্রামে এই ঘটনা ঘটে।

তিনি একই গ্রামের ইসাহাক আলীর ছেলে। জানা যায়, ২৯ এপ্রিল সোমবার সকালে রেজাউল করিম পার্শ্ববর্তী রাজশাহী জেলার বাঘায় তার মেয়ের বাড়িতে বেড়াতে যান। পরে বিকেল তিনটার দিকে বাড়িতে ফিরে আসেন। এ সময় তিনি প্রচ- তৃষ্ণা বোধ করেন। পরিবারের লোকজন তাকে শরবত এবং প্রচুর পানি পান করতে দেন। পরে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। এবং তিনি তার নিজ বাড়িতে মারা যান।
সাতদিনে হিটস্ট্রোকে ১০ মৃত্যু: স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ॥  বেসরকারি হিসাবে বেশি হলেও গত সাতদিন সারাদেশে হিটস্ট্রোকে ১০ জন মারা গেছেন বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম। মঙ্গলবার সকালে কন্ট্রোল রুমের কর্মকর্তারা এই তথ্য নিশ্চিত করেন। তবে এই তালিকায় মঙ্গলবারের হিটস্ট্রোকে যারা মারা গেছেন তাদের নাম নেই। অধিদপ্তর জানায়, সোমবারই তিনজন মারা গেছেন প্রচ- গরমে।

এ ছাড়া হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে আরও পাঁচজন দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি আছেন। গত ২২ এপ্রিল থেকে কন্ট্রোল রুম মনিটরিং করে সারাদেশ থেকে এই তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে বলে এক কর্মকর্তা জানান। কন্ট্রোল রুমের তথ্য বলছে, হিটস্ট্রোকে গতকাল মারা যাওয়া তিনজনের মধ্যে দুজনের মৃত্যু হয়েছে মাদারীপুর জেলায়। আরেকজনের মৃত্যু হয়েছে চট্টগ্রামে। সোমবার পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য বলছে, এই কদিনে হিটস্ট্রোকে ১০ জনের মৃত্যু ও পাঁচজনের হাসপাতালে ভর্তির তথ্য পাওয়া গেছে।

এ পর্যন্ত সারাদেশে হিটস্ট্রোকে মারা যাওয়া ১০ জনের মধ্যে ৮ জন পুরুষ ও ২ জন নারী। মারা যাওয়া ১০ জনের মধ্যে দুজন মাদারীপুরের। এ ছাড়া চুয়াডাঙ্গা, খুলনা, হবিগঞ্জ, রাজবাড়ী, ঝিনাইদহ, লালমনিরহাট, বান্দরবান ও চট্টগ্রাম জেলায় একজন করে মারা গেছেন।
কক্সবাজার ॥ স্টাফ রিপোর্টার জানান, ঈদগাঁও উপজেলার জালালাবাদ ইউনিয়নে মঈন উদ্দিন (৩৫) নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে তিনি হিটস্ট্রোকে মারা গেছেন। মঙ্গলবার সকাল ১০টায় এ ঘটনা ঘটে। মৃত হাফেজ মঈন উদ্দিন জালালাবাদ ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের পালাকাটা এলাকার মৃত ইলিয়াসের ছেলে।

পরিবারের সদস্যরা জানান, রাতে সবার সঙ্গে খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। সকাল ৭টার দিকে ঘুম থেকে ওঠে বুকের ব্যথা অনুভব করার কথা জানালে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যায়। কর্তব্যরত চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করলে মনির উদ্দিনের শরীরে হিটস্ট্রোকের লক্ষণ ধরা পড়ে। এ সময় প্রয়োজনীয় চিকিৎসা করার মুহূর্তে তার মৃত্যু হয়। স্থানীয় ওয়ার্ড মেম্বার মোবারক হোসেন ফরাজী মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

শেরপুর ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা  জানান, তীব্র তাপপ্রবাহে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে শেরপুরের জনজীবন। গত কয়েক দিন শেরপুরের তাপমাত্রা ৩৮/৩৯ ডিগ্রিতে ওঠানামা করলেও ৩০ এপ্রিল মঙ্গলবার তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি ছাড়িয়েছে, যা চলতি বছরে শেরপুরের রেকর্ড তাপমাত্রা। সোমবার তাপমাত্রা ছিল ৩৯ ডিগ্রির ওপরে। তীব্র তাপপ্রবাহে মঙ্গলবার দুপুরে শহরের চকপাঠক মহল্লার মো. ইস্রাফিলের দেড় বছর বয়সী কন্যাশিশু ইসরা মারা গেছে।
অপরদিকে, একই দিন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে পৌর শহরের আফসর আলী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ভাবনা আক্তার নামে অষ্টম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী গরমে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। পরে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ছাড়া দুপুরে শহরের উত্তরা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী ও জমসেদ আলী মেমোরিয়াল কলেজের ডিগ্রিপড়ুয়া এক শিক্ষার্থী জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। পরে চিকিৎসা দিয়ে বাড়িতে পাঠানো হয়। সোমবার নালিতাবাড়ী উপজেলার হাতিপাগার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির এক শিক্ষার্থী গরমে জ্ঞান হারিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়লে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

দৈনিক জামালপুর
দৈনিক জামালপুর