• শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪ ||

  • শ্রাবণ ১২ ১৪৩১

  • || ১৯ মুহররম ১৪৪৬

বৈদেশিক ঋণের প্রকল্পে বিশেষ নজর দিতে নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

দৈনিক জামালপুর

প্রকাশিত: ১৭ মে ২০২৪  

আসন্ন ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য দুই লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন বাজেট বা বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। দেশে চলমান অর্থনৈতিক চাপের কারণে এবার উন্নয়ন বাজেটে মাত্র দুই হাজার কোটি টাকা বাড়ানো হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (এনইসি) সভায় এই উন্নয়ন বাজেট অনুমোদন দেওয়া হয়। গত ৭ মে পরিকল্পনা কমিশনের বর্ধিত সভায় এডিপি খসড়া চূড়ান্ত করা হয়। গতকাল সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সভাপতিত্ব করেন। সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনামন্ত্রী মেজর জেনারেল (অব.) আবদুস সালাম ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী মো. শহীদুজ্জামান সরকার বিস্তারিত তুলে ধরেন। পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, সভায় প্রধানমন্ত্রী বৈদেশিক ঋণনির্ভর প্রকল্প বাস্তবায়নে বাড়তি পরিশ্রম করার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, যেসব প্রকল্পে বৈদেশিক ঋণ ও অনুদান আছে সেগুলো বাস্তবায়নে বিশেষ নজর দিতে হবে। এ ছাড়া তিন মাস পর পর এসব প্রকল্পের অগ্রগতি সম্পর্কে একনেকে একটি প্রতিবেদন দিতে হবে। প্রকল্প বাস্তবায়নের দক্ষতা বাড়াতে প্রকল্প পরিচালকরা প্রশিক্ষণ নিয়ে যেন একই স্থানে কাজে যোগ দিতে পারেন, সেই নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, প্রকল্পের শুরুতেই সম্ভাব্যতা সমীক্ষা সঠিকভাবে করতে। সে জন্য যেসব প্রতিষ্ঠান সম্ভাব্যতা সমীক্ষার কাজ করে তাদের নিবন্ধন করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘দেখা যায় অনেক উপজেলায় একাধিক প্রকল্প, আবার অনেক উপজেলা অবহেলিত থাকে। এটা বন্ধ করতেই জেলাভিত্তিক প্রকল্প হাতে নেব, যাতে উন্নয়ন সমভাবে বণ্টন হয়।’ এক প্রশ্নের জবাবে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘আমরা যে বৈদেশিক ঋণ নিচ্ছি, সেগুলো বিচার-বিশ্লেষণ করেই নেওয়া হয়। আগের মতো সুতা লাগানো ঋণ নেওয়া হয় না। কারণ ঋণ দিয়ে এটা করতে হবে, ওটা করতে হবে—এসব থাকলে আমরা সেই ঋণ নিই না। ’ পরিকল্পনা বিভাগের সিনিয়র সচিব সত্যজিত কর্মকার বলেন, চলতি অর্থবছরে ৩০ জুনের মধ্যে ৩৫৬টি প্রকল্প শেষ হবে, যা এযাবৎকালে সর্বোচ্চ। কোনো চিকিৎসক প্রকল্প পরিচালক হলে তাঁকে আলাদা প্রশিক্ষণ দিতে এনইসি সভায় প্রধানমন্ত্রী অনুশাসন দিয়েছেন। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, মোট বরাদ্দের বৈদেশিক ঋণ বা অনুদান লক্ষ্যমাত্রা এক লাখ কোটি টাকা। তবে এবারও উন্নয়ন বাজেটে পরিবহন ও বিদ্যুৎ খাতকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এ দুই খাতে তুলনামূলকভাবে অর্থ বরাদ্দও থাকছে বেশি। জানা গেছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের এডিপি প্রণয়নে গত ১৪ মার্চ নির্দেশনা দেয় পরিকল্পনা কমিশন। সেই নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে সব বাস্তবায়নকারী মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কাছ থেকে এডিপির জন্য মোট দুই লাখ ৭৬ হাজার ৪০২ কোটি ৪৬ লাখ টাকার প্রাথমিক চাহিদা পাওয়া যায়। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন এক লাখ ৮৫ হাজার ৩৯১ কোটি ১৯ লাখ টাকা ও প্রকল্প ঋণ অনুদান ৯১ হাজার ১১ কোটি ২৭ লাখ টাকা। পরে অর্থ বিভাগ থেকে পাঠানো নির্দেশনা অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের এডিপির আকার দুই লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণপূর্বক কার্যক্রম বিভাগকে অবহিত করা হয়। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন এক লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা বা ৬২.২৬ শতাংশ। উন্নয়ন ব্যয় মেটাতে বৈদেশিক ঋণ অনুদানের টার্গেট এক লাখ কোটি টাকা বা ৩৭.৭৪ শতংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ছিল ৮৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। সে হিসাবে এডিপিতে এক অর্থবছরের ব্যবধানে বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ বাড়ছে ১৬ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। জানা গেছে, এবার এডিপিতে এক হাজার ৩৩৭টি প্রকল্প রাখা হয়েছে। এর মধ্যে বিভিন্ন সংস্থা নিজস্ব অর্থায়নের প্রকল্প রয়েছে ৭৯টি। আগামী অর্থবছরের এডিপিতে সর্বোচ্চ বরাদ্দপ্রাপ্ত ১০টি প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৫১ হাজার ৯৭০ কোটি টাকা। এগুলোর মধ্যে রয়েছে চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি প্রকল্প, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, মেট্রো রেল লাইন-১ প্রকল্প, পাওয়ার গ্রিডের নেটওয়ার্ক শক্তিশালীকরণ প্রকল্প এবং পদ্মা রেল ও বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল প্রকল্প। এডিপিতে ৫৮টি মন্ত্রণালয় এবং বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ পাচ্ছে ১০টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৩৮ হাজার ৮০৮ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগের জন্য। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের জন্য দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩২ হাজার ৪২ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগের জন্য ২৯ হাজার ১৭৬ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ১৬ হাজার ১৩৫ কোটি টাকা এবং স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জন্য ১৩ হাজার ৭৪১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এ ছাড়া রেলপথ মন্ত্রণালয়ের জন্য ১৩ হাজার ৭২৫ কোটি টাকা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের জন্য ১২ হাজার ৮৮৬ কোটি, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের জন্য ১১ হাজার ৩৮৭ কোটি, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের জন্য চার হাজার ৫৮৮ কোটি, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জন্য ১০ হাজার ৩৭৩ কোটি এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের জন্য আট হাজার ৬৮৭ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। চলতি অর্থবছরের এডিপি বাস্তবায়নের বিষয়ে জানতে চাইলে আইএমইডি সচিব আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন জানান, গত জুলাই থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ১০ মাসে এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে ৪৯.২৬ শতাংশ। গত অর্থবছরের একই সময়ে এ হার ছিল ৫৫.৩৩ শতাংশ। এনইসি বৈঠকে সব সচিবদের সামনে এ তথ্য তুলে ধরে এডিপি বাস্তবায়ন বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

দৈনিক জামালপুর
দৈনিক জামালপুর