• সোমবার ২৯ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৬ ১৪৩১

  • || ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫

দৈনিক জামালপুর

সাফল্য অর্জনকারী পত্নীতলার ৪ জয়িতা’র গল্প

দৈনিক জামালপুর

প্রকাশিত: ১১ জুন ২০২৩  

জয়িতা হচ্ছে সমাজের সকল বাধা বিপত্তি অতিক্রম করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সফল নারীর একটি প্রতিকী নাম। 

মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দিক নির্দেশনায় ও মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উদ্যোগে প্রতিবছর দেশব্যাপী “জয়িতা অন্বেষণে বাংলাদেশ” শীর্ষক অভিনব প্রচারাভিযানের মাধ্যমে বিভিন্ন ক্ষেত্রে তৃণমূলের সফল নারী, তথা জয়িতাদের অনুপ্রাণিত করা। 

 

এরই ধারাবাহিকতায় নওগাঁ জেলার পত্নীতলা উপজেলায় ২০২৩ সালে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে বিশেষ সাফল্য অর্জনকারী শ্রেষ্ঠ জয়িতা হিসাবে নির্বাচিত হয়েছেন ৪ জন আত্মপ্রত্যয়ী এবং সংগ্রামী নারী। তারা হলেনঃ

 

অর্থনৈতিকভাবে সাফল্য অর্জনকারী শ্রেষ্ঠ জয়িতা খুশি বেগম

অর্থনৈতিকভাবে সাফল্য অর্জনকারী শ্রেষ্ঠ জয়িতা খুশি বেগম
অর্থনৈতিকভাবে সাফল্য অর্জনকারী শ্রেষ্ঠ জয়িতা খুশি বেগম

পত্নীতলা উপজেলার কাটাবাড়ি এলাকার মফিজ উদ্দিন ও অমিছার  বেগমের মেয়ে খুশি বেগম। শিক্ষাগত যোগ্যতা অষ্টম শ্রেণী পাস। সে একজন গৃহিনী এক সন্তানের জননী।

খুশি বেগমের প্রথম দিকে আর্থিক সচ্ছলতা না থাকায় অন্যের বাড়িতে থেকে এবং কাজ করে সংসার চালাতে হতো। কোন কোন সময় অভাবের তাড়নায় ভাতের মার খেয়েও থাকতে হয়েছে। ফসলের মাঠে দিনমজুরের কাজ করেছে। বর্তমান অবস্থা সচল স্বাবলম্বী তার মাসিক আয় প্রায় আট হাজার টাকা। একটি ছেলে সন্তান আছে সে অষ্টম শ্রেণীতে লেখাপড়া করে।

খুশি বেগম বলেন, আমি আগে দরিদ্র অসচ্ছল ছিলাম। পরিশ্রম করে আজ আমি আত্মনির্ভরশীল ও স্বাবলম্বী হয়েছি। সমাজের মানুষ এখন সবাই আমাকে সম্মান করে ভালোবাসে। আমার ভালো কাজগুলি অনেকেই অনুকরণ করে অর্থনৈতিকভাবে সফল হচ্ছে।

বর্তমানে সামাজিকভাবে আমার গ্রহণযোগ্যতা বেড়েছে আমি অর্থনৈতিকভাবে অন্যকে সার্বিক সহযোগিতাও করে থাকি এবং প্রতিমাসে নির্দিষ্ট পরিমাণের কিছু টাকা সঞ্চয় করি। 

সফল জননী অর্জনকারী শ্রেষ্ঠ জয়িতা মিনতি রানী

সফল জননী অর্জনকারী শ্রেষ্ঠ জয়িতা মিনতি রানী
সফল জননী অর্জনকারী শ্রেষ্ঠ জয়িতা মিনতি রানী

উপজেলার আমাইড় ইউপির বাসকইল গ্রামের বধিষ্ঠি ও কমলা বলার মেয়ে মিনতি রানী। বয়স প্রায় ৫০ বছর। মিনতি রাণীর অষ্টম শ্রেণীতে পড়ার সময় বিয়ে হয় এবং কিছুদিন পর কোল আলোকিত করে আসে একটি ছেলে সন্তান।  পারিবারিক র্অথনৈতিক অবস্থা ভালো না হলেও ছেলেকে পড়ালেখা করান। এসময় পাড়া প্রতিবেশীর অনেকই বলেন বেশি পড়াশোনা করে কি হবে, বেশি পড়ালেখা ভালো না। এরপরও আমি হাল ছাড়িনি আমার নিজের উপরে আত্মবিশ্বাস ছিল আমার ছেলেকে পড়াশোনা করাবো এবং মানুষের মত মানুষ করবো। সেই ইচ্ছা এবং আত্মবিশ্বাস নিয়ে সামনে এগোতে থাকি। নিজে ইউপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করি এবং সংরক্ষিত মহিলা আসনে একজন মহিলা সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হই। 

আজ আমি কষ্ট করে প্রতিষ্ঠিত হয়েছি। সমাজের উন্নয়নকর্মী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছি এবং ছেলেকে মাস্টার্স পাশ করিয়েছি। বর্তমানে আমার আর্থিক অবস্থা সচ্ছল। আমার বাড়ি আছে, গাভি আছে ছয়টি, এক একর জমি আছে, যেখানে আমি চাষ করি। আমার কষ্ট আজ সার্থক হয়েছে। এখন আমি নিজেকে গর্বিত মা ও সমাজ উন্নয়ন কর্মী ভাবতে পারি।

 

নির্যাতনের বিভীষিকা মুছে নতুন জীবনের শুরু কর‌া শ্রেষ্ঠ জয়িতা জুলেখা বেগম

নির্যাতনের বিভীষিকা মুছে নতুন জীবনের শুরু  করা শ্রেষ্ঠ জয়িতা জুলেখা বেগম
নির্যাতনের বিভীষিকা মুছে নতুন জীবনের শুরু  করা শ্রেষ্ঠ জয়িতা জুলেখা বেগম

উপজেলার আমাইড় ইউপির কান্তাকিসমত গ্রামের রহিম উদ্দিন ও সাহেরা বেগমের মেয়ে জুলেখা বেগম (৩৯)। আর্থিক অভাবের কারণে পড়াশোনায় সমস্যা হলেও, অন্যের সহযোগিতায় এসএসসি পাস করেন তিনি, কিন্ত অভাবের কাছে হার মেনে তার বাবা তাকে বিয়ে দিয়ে দেন। স্বামীর সংসারে যৌতুকের দাবিতে প্রতিনিয়ত তার উপর নির্যাতন চলতো। স্বামী বিভিন্ন সময়ে মাদক সেবন করে দিনের পর দিন তাকে নির্যাতন করতো। তিনি সব সহ্যকরে স্বামীর সংসারে রয়ে যান। পরবর্তীতে বিকশিত নারী নেটওয়ার্ক এর প্রশিক্ষণ পেয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। 

বর্তমানে জুলেখার একটি গরুর খামার আছে। যেখান থেকে তিনি আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছেন। মেয়েকে লেখা-পড়া করাছে। তার স্বামীও এখন মাদক সেবন ও নির্যাতন করেনা। জুলেখা এখন খুব খুশি সে কষ্ট করে প্রতিষ্ঠিত হয়ে নির্যাতনের বিভীষিকা মুছে ফেলে স্বামী ও মেয়েকে নিয়ে সুখে সংসার করছে এবং সমাজে নারীদের মা ও পুষ্টি বিষয়ক বিষয়ে কাজ করছে।

 

সমাজ উন্নয়নে অবদান রেখেছেন যে নারী শ্রেষ্ঠ জয়িতা আফ‌রোজা নাস‌রিন

সমাজ উন্নয়নে অবদান রেখেছেন যে নারী শ্রেষ্ঠ জয়িতা আফ‌রোজা নাস‌রিন
সমাজ উন্নয়নে অবদান রেখেছেন যে নারী শ্রেষ্ঠ জয়িতা আফ‌রোজা নাস‌রিন

উপজেলার আকবরপুর ইউপির দক্ষিণ লক্ষনপুর এলাকার অহীর মন্ডল ও আলিয়া বেগমের মেয়ে আফরোজা নাসরিন। এসএসসি পাস করার পর বিয়ে হয়ে যায়। বিয়ের পর দুই সন্তানের জননী হন তিনি। তাদের সংসারের অবস্থা অনেকটা শোচনীয় ছিল। নুন আনতে পান্তা ফুরায়‌ এমন অবস্থা। এসময় তিনি শ্বশুরবাড়ি থেকে স্বামী সংসার নিয়ে গ্রামের বাড়ি এসে অন্যের বাসায় কাজ করে বাচ্চাদের লেখাপড়া করান এবং কিছু জমি ক্রয় করেন।

৪৪ বছর বয়সী আফরোজা নাসরিন মানুষের চাওয়ায় ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত সদস্য পদে দাড়িয়ে বিপুল ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তার নেতৃত্বে এখন সমাজের পরিবর্তন হচ্ছে। 

তিনি বাল্যবিবাহ মুক্ত, মাদকমুক্ত সমাজ ও নারীদের অধিকার আদায়ে বিশেষ ভূমিকা পালন করছেন। নারীদের সংগঠন তৈরি করে ন্যায় বিচার ও সুশাসনের প্রতিষ্ঠার জন্য বিভিন্ন গ্রহণযোগ্য ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন। মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তনে সহযোগিতা করতে পেরে নিজেকে তিনি গর্বিত মনে করেন।

 

দৈনিক জামালপুর
দৈনিক জামালপুর