• শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪ ||

  • শ্রাবণ ১২ ১৪৩১

  • || ১৯ মুহররম ১৪৪৬

বিদ্যালয়ের পাশেই ফের চালু অবৈধ ইটভাটা

দৈনিক জামালপুর

প্রকাশিত: ৩ মে ২০২৪  

আবাসিক এলাকা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কৃষিজমিতে আইন করে ইটভাটা স্থাপন নিষিদ্ধ করেছে সরকার। তথাপি মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার ফাসিয়াতলা বাজার ও পাঁচটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সংলগ্ন মেসার্স অর্ণিমা কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড ব্রিকস ফিল্ড (এমওবি) নামে একটি অবৈধ ইটভাটা আবারো চালু হয়েছে। ভাটার চিমনি থেকে বের হওয়া ধোঁয়ায় দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। ভাটার ধোঁয়ায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের শ্বাসকষ্টসহ নানা ধরনের রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এর আগে, অনুমোদনহীন এই ইটভাটাটি প্রায় আড়াই বছর বন্ধ ছিল। বর্তমানে ইটভাটাটির পরিবেশের ছাড়পত্র ও লাইসেন্স কোনো কিছু নেই। 
ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১৩ অনুযায়ী, কৃষিজমিতে ইটভাটা স্থাপন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এ ছাড়া আবাসিক, সংরক্ষিত বা বাণিজ্যিক এলাকা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ১ কিলোমিটার, বনাঞ্চল থেকে ২ কিলোমিটার এবং ইউনিয়ন বা গ্রামীণ সড়ক থেকে অন্তত আধা কিলোমিটারের মধ্যে ইটভাটা স্থাপন করা যাবে না।

কিন্তু এ আইন লঙ্ঘন করে কালকিনি উপজেলার আলীনগর ইউনিয়নের ফাসিয়াতলা এলাকায় হাফিজুর রহমান মিলন এমওবি নামে এই অবৈধ ইটভাটা পরিচালনা করে আসছে। একই সঙ্গে তিনি আড়িয়াল খাঁ নদ থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে বলে অভিযোগ রয়েছে। হাফিজুর রহমান কালকিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও আলীনগর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান।

অভিযোগের বিষয়ে ভাটা মালিক হাফিজুর রহমান মিলন বলেন, আমার ইটভাটাটি বৈধ, অনুমোদনও আছে। দু’বছরের বেশি সময় বন্ধ ছিল, এখন নতুন ইট পোড়ানোর জন্য সংশ্লিষ্ট দফতরে আবেদন করেছি। পরিবেশসহ সব বিভাগে আমার লাইসেন্স নবায়নের জন্য আবেদন করা হয়েছে। অনুমোদনের অপেক্ষায় আছি। আর সবাই এভাবেই ইটভাটা চালায়। আমার ইটভাটা মানুষের কোনো ক্ষতি করছে না।

দীর্ঘদিন বেআইনিভাবে ইটভাটা চলার কারণে ২০২১ সালে প্রশাসন স্থানীয়দের সহযোগিতা নিয়ে ঐ ইটভাটা বন্ধ করে দেয়। দীর্ঘ দুই বছরের বেশি সময় বন্ধ থাকার পর চলতি বছরের মার্চ মাসে আবারো চালু করে অনুমোদনহীন এ ইটভাটা। বর্তমানে কাঠ ও কয়লা মিশ্রিত করে ইট পোড়ানো হচ্ছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ফাসিয়াতলা বাজার ঘেষে একটি ইটভাটার কার্যক্রম চলছে। ভাটার চারপাশেই ঘরবসতি। ৪০০ থেকে ৫০০ মিটারের মধ্যে ফাসিয়াতলা মার্চেন্টস প্রাথমিক বিদ্যালয়, কালিনগর উচ্চ বিদ্যালয়সহ তিনটি মাদরাসা রয়েছে। ইটভাটার ধোঁয়ায় এলাকার পরিবেশ দূষণসহ ধুলাবালির মধ্য দিয়ে যাতায়াতে সমস্যা হচ্ছে পথচারীদের। ইটভাটার কারণে বাজারের গ্রামীণ সড়কটি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

ফাসিয়াতলা বাজার কমিটির সভাপতি নজিব খান বলেন, ইটভাটার দূষিত ধোঁয়ায় আমরা স্বাস্থ্যঝুঁকিতে আছি। অবৈধ এই ভাটাটি বন্ধের জন্য এর আগেও আমরা অনেক প্রতিবাদ করেছি। ডিসি ও ইউএনওর কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। তারপর আড়াই বছরের মতো বন্ধ ছিল। এখন আবার ক্ষমতাবলে ভাটা চালু করেছে। এই ভাটার আশেপাশে তিনটি মাদরাসা, দুটি স্কুল, ঘনবসতি, হাটবাজার রয়েছে। ভাটাটি সবার ক্ষতির কারণ হচ্ছে। আমরা দ্রুত এই ইটভাটাটি বন্ধের দাবি জানাই।

কালকিনি উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা উত্তম কুমার দাশ বলেন, আমি জানতাম এমওবি নামে ইটভাটাটি বন্ধ। এটি চালু হয়েছে কবে তা আমার জানা নেই। যদি তিনি অনুমতি ছাড়া অবৈধভাবে ইটভাটা চালু করেন; তাহলে ঐ ভাটা বন্ধসহ তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

পরিবেশ অধিদফতর ফরিদপুর কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. সাঈদ আনোয়ার বলেন, বাজার বা লোকালয়ে গড়ে ওঠা কোনো ইটভাটা পরিবেশের ছাড়পত্র পাবে না। যদি কোনো ইটভাটা পরিবেশের ছাড়পত্র ছাড়া পরিচালিত হয় তাহলে সেটা অবৈধ ইটভাটা। এসব ইটভাটা বন্ধে আমাদের নিয়মিত অভিযান চলছে। অচিরেই এমওবি ইটভাটাটি বন্ধে অভিযান চালানো হবে।

দৈনিক জামালপুর
দৈনিক জামালপুর