• মঙ্গলবার ২১ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৭ ১৪৩১

  • || ১২ জ্বিলকদ ১৪৪৫

দৈনিক জামালপুর

বিজয়ের দিনে মেয়েদের ঐতিহাসিক জয় উপহার

দৈনিক জামালপুর

প্রকাশিত: ১৭ ডিসেম্বর ২০২৩  

এ দেশের সব মানুষ চিরকাল গর্ববোধ করবে যে দিনটির জন্য, সেই দিনটি—১৬ ডিসেম্বর। ১৯৭১ সালের এই দিনে পৃথিবীর মানচিত্রে জাতি নিজেদের জন্য বাংলাদেশ নামের একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশের নাম সংযোজিত করেছিল এক বীরত্বপূর্ণ সংগ্রামে বিজয় অর্জনের মধ্য দিয়ে। সেই মহান বিজয় দিবস ১৬ ডিসেম্বর।  ঘড়ির কাটায় এ দেশে এখন ১৭ ডিসেম্বরের প্রথম প্রহর হলেও দক্ষিণ আফ্রিকার ইস্ট লন্ডনের বাফেলো পার্কে এখনো ঠিক ১৬ ডিসেম্বরই আছে। বিজয়ের এমন দিনেই ঐতিহাসিক এক বিজয় উপহার দিলো বাংলাদেশের মেয়েরা। 
 বাংলাদেশের ব্যাটিং ছিল দারুণ। প্রথম চার ব্যাটারের সবাই স্পর্শ করলেন ত্রিশ। তাদের মধ্যে মুর্শিদা খাতুন খেললেন নব্বই ছাড়ানো ইনিংস। রেকর্ড গড়া পুঁজি নিয়ে বোলিং-ফিল্ডিং হলো দুর্দান্ত। দক্ষিণ আফ্রিকাকে অনায়াসে হারিয়ে জয়ের আনন্দে ভাসল বাংলাদেশ। তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে বাংলাদেশের মেয়েদের জয় ১১৯ রানে।

এই সংস্করণে রানের হিসাবে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জয় এটি। ২০১১ সালে সাভারের বিকেএসপিতে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ম্যাচে ৮২ রানে জয় ছিল আগের রেকর্ড।

দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ১৯ ওয়ানডেতে বাংলাদেশের এটি তৃতীয় জয়, দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে প্রথম। ২০১২ সালে মিরপুরে ২ উইকেটে ও ২০১৭ সালে কক্সবাজারে জয় ছিল ১০ রানে।

ইষ্ট লন্ডনে শনিবার এই সংস্করণে নিজেদের সর্বোচ্চ ২৫০ রান বাংলাদেশ করে স্রেফ ৩ উইকেট হারিয়ে। ২০২২ বিশ্বকাপে হ্যামিল্টনে পাকিস্তানের বিপক্ষে ২৩৪ রান ছিল আগের রেকর্ড।

বাংলাদেশের স্পিনারদের দাপটে দক্ষিণ আফ্রিকা গুটিয়ে যায় ১৩১ রানে। ১০০ বলে ক্যারিয়ার সেরা ৯১ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে রেকর্ড গড়া জয়ের নায়ক মুর্শিদা।

১২ চারে সাজানো ইনিংসে ম্যাচের সেরাও তিনি।

একটি রেকর্ডও গড়েছেন বাঁহাতি এই ব্যাটার। তার ইনিংসে বাউন্ডারি থেকে এসেছে ৪৮ রান, ওয়ানডেতে বাংলাদেশের কোনো ব্যাটারের যা সর্বোচ্চ। মুর্শিদা ছাড়িয়ে গেছেন সালমা খাতুনকে। ২০১৩ সালে ভারতের বিপক্ষে সালমার ৭৫ রানের ইনিংসে বাউন্ডারি থেকে এসেছিল ৪৪ রান।

ব্যাটিংয়ে ৪৮ বলে ৩৮ রানের কার্যকর ইনিংসের পর উইকেটের পেছনে স্পিনারদের বলে তিনটি ক্যাচ নিয়ে দলের জয়ে বড় অবদান রাখেন অধিনায়ক নিগার।

শেষের মতো ম্যাচে বাংলাদেশের শুরুটাও হয় এ দিন ভালো। টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে শামিমা সুলতানা ও ফারজানা হকের নৈপুণ্যে প্রথম ১৪ ওভারে আসে বিনা উইকেটে ৬৬ রান। ওই স্কোরেই পরের ওভারে শুরুর জুটি ভাঙে শামিমার বিদায়ে (৪৮ বলে ৩৪)।

দ্বিতীয় উইকেটে জুটি বেঁধে দলের স্কোর একশ পার করেন ফারজানা ও তিনে নামা মুর্শিদা। শামিমার মতো ফারজানাও থিতু হয়ে ইনিংস বড় করতে পারেননি। ৩৫ রান করতে তিনি খেলেন ৭৬ বল।

এরপরই ইনিংসের সেরা জুটি বাংলাদেশ পায় মুর্শিদা ও অধিনায়ক নিগারের সৌজন্যে। মুর্শিদা ফিফটি পূর্ণ করেন ৬০ বলে। ছাড়িয়ে যান তার আগের সেরা ৫৪ রানকে।


ফিফটির সম্ভাবনা জাগিয়ে আগেই থামেন নিগার। তার বিদায়ে ভাঙে ৮৭ বলে ৮০ রানের জুটি। চতুর্থ উইকেটে স্বর্ণা আক্তারের সঙ্গে ৫৩ বলে ৬০ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে দলের স্কোর আড়াইশতে নিয়ে যান মুর্শিদা। স্বর্ণা ২৮ বলে ২ চারে করেন ২৭ রান।

বোলিংয়েও বাংলাদেশের শুরুটা হয় দারুণ। দ্বিতীয় ওভারে দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক লরা উলভার্টকে ফিরিয়ে দেন সুলতানা। উইকেটের পেছনে ক্যাচ নেন নিগার। পরের ওভারে দারুণ ডেলিভারিতে আরেক ওপেনার তাজমিন ব্রিটসকে এবিডব্লিউ করে দেন পেসার মারুফা আক্তার।

তৃতীয় উইকেটে ৪১ রানের জুটি গড়ে ফেলেন আনেকা বোশ ও সুনে লুস। পাওয়ার প্লের পর নাহিদা ও রাবেয়া আক্রমণে আসার পর ফের একটু পরপরই উদযাপনের উপলক্ষ পায় বাংলাদেশ।

আনেকাকে নিগারের ক্যাচ বানিয়ে জুটি ভাঙেন নাহিদা। এরপর তিনি বিদায় করেন লুসকেও। রাবেয়া নিজের পরপর দুই ওভারে ফিরিয়ে দেন নাদিনে ডি ক্লার্ক ও ডেলমি টাকারকে।

ফাহিমা আক্রমণে আসেন ২৫তম ওভারে। নিজের দ্বিতীয় ওভারে ধরেন জোড়া শিকার। দারুণ এক ডেলিভারিতে সিনালো জাফটাকে বোল্ড করার পরের বলে ননকুলেকো এমলাবাকে ফিরিয়ে হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনাও জাগান তিনি।

একশর আগে ৮ ব্যাটারকে হারানোর পর মার্কসের ইনিংস সেরা ৩৫ রানের সুবাদে দক্ষিণ আফ্রিকার পরাজয়ের ব্যবধানই কমে শুধু।


এই সফরে এর আগে টি-টোয়েন্টি সিরিজও জয় দিয়ে শুরু করেছিল বাংলাদেশ। সেটি ছিল এই সংস্করণে দক্ষিণ আফ্রিকার মেয়েদের বিপক্ষে বাংলাদেশের দ্বিতীয় এবং দেশটির মাটিতে প্রথম জয়।

এবার দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম ওয়ানডে জয়ও ধরা দিল। সেটি এলো আবার বাংলাদেশের বিজয় দিবসে।

আগামী বুধবার সিরিজ জয়ের লক্ষ্যে পচেফস্ট্রুমে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে নামবে বাংলাদেশ দল।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বাংলাদেশ: ৫০ ওভারে ২৫০/৩ (শামিমা ৩৪, ফারজানা ৩৫, মুর্শিদা ৯১*, নিগার ৩৮, স্বর্ণা ২৭*; খাকা ১০-০-৪৩-০, ক্লাস ৮-০-৫২-০, মার্কস ৬-০-৪৩-১, ডি ক্লার্ক ৬-০-৩১-০, এমলাবা ১০-২-৩৭-১, টাকার ১০-১-৪৩-১)

দক্ষিণ আফ্রিকা: ৩৬.৩ ওভারে ১৩১ (উলভার্ট ৫, ব্রিটস ৪, আনেকা ১৬, লুস ৩১, টাকার ১৪, ডি ক্লার্ক ১, মার্কস ৩৫, জাফটা ১১, এমলাবা ০, ক্লাস ৭, খাকা ০*; মারুফা ৫-০-১৯-১, সুলতানা ৯-১-৩২-২, নাহিদা ৮.৩-০-৩৩-৩, রাবেয়া ৮-১-২৪-২, ফাহিমা ৫-০-১৬-২, রিতু ১-০-৬-০)

ফল: বাংলাদেশ ১১৯ রানে জয়ী

সিরিজ: ৩ ম্যাচের সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে বাংলাদেশ

প্লেয়ার অব দা ম্যাচ: মুর্শিদা খাতুন

দৈনিক জামালপুর
দৈনিক জামালপুর