• শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪ ||

  • শ্রাবণ ১২ ১৪৩১

  • || ১৯ মুহররম ১৪৪৬

ইরানের হামলায় ভেঙ্গে গেলো ইসরায়েলের অহংকার

দৈনিক জামালপুর

প্রকাশিত: ১৪ এপ্রিল ২০২৪  

রবিবার গভীর রাতে ইসরায়েলের মাটিতে ইরান থেকে সরাসরি কয়েক শত শত ড্রোন, ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ও ত্রুত গতির ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে নজিরবিহীন হামলা চলিয়েছে ইরান।

ইরানের প্রতিশোধমূলক এই স্ট্রাইকের ফলে বড় ধরনের একটি আঞ্চলিক সংঘাতের হুমকি তৈরি হয়েছে। কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের ভূখণ্ড রক্ষার জন্য প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

ইরানের হামলার পরপর ইসরায়েলি ভূখণ্ডের ভেতের ব্যাপক বিস্ফোরণের খবর পাওয়া গেছে। সারা দেশজুড়ে বিমান হামলার সতর্কতামূলক সাইরেন বাজানো হচ্ছে। ইরানি হামলায় সাত বছর বয়সী একটি মেয়ে গুরুতর আহত হয়েছে। যদিও ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর দাবি, ইরানের ছোড়া অধিকাংশ ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের আকাশসীমার বাইরেই ভূপাতিত করা হয়েছে।

হামলার পরপরই ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ফোনালাপ করেছেন। তাদের ফোনালাপ বিষয়ে জানা গেছে, জো বাইডেন ইরানের নির্লজ্জ আক্রমণে কূটনৈতিক প্রতিক্রিয়া সমন্বয় করতে রোববার ‘জি-সেভেন’ অন্তর্ভুক্ত দেশগুলোর নেতাদের নিয়ে একটি জরুরি বৈঠকের আহ্বান করবেন।

হোয়াইট হাউসের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা উদ্ধৃত করে বলেছেন, বাইডেন নেতানিয়াহুকে বলেছেন যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি পাল্টা আক্রমণের বিরোধিতা করবে। 

এতে গাজায় ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধের মধ্যেই বৃহত্তর আঞ্চলিক যুদ্ধের ক্রমবর্ধমান ঝুঁকি বাড়ছে।

ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র ড্যানিয়েল হাগারি বলেছেন, ক্রুজ মিসাইলসহ বেশ কয়েক ডজন ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে ইরান। তাদের হামলায় ২০০টির বেশি ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে। এদের বেশিরভাগ ইসরায়েলি সীমার বাইরে প্রতিহত করা হয়েছে। তবে ইরানের এই সমন্বিত আক্রমণে একটি ইসরায়েলি সামরিক স্থাপনার সামান্য ক্ষতি হয়েছে।

ইসরায়েলের চ্যানেল ১২টিভি নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ইসরায়েলি কর্মকর্তার উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, হামলার ‘উল্লেখযোগ্য প্রতিক্রিয়া’ জানানো হবে।

গত ১ এপ্রিল সিরিয়ার দামেস্কে অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেটে হামলা চালিয়ে দেশটির কয়েকজন সামরিক কর্মকর্তাকে হত্যা করে ইসরায়েল। এ ঘটনার প্রতিশোধ নিতে একের পর এক হুঁশিয়ারি দিয়ে আসছিল ইরান। এ হামলা তারই জবাব।

জাতিসংঘে ইরানি মিশন বলেছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ‘দূরে থাকার’ জন্য সতর্ক করা হয়েছে। তবে, মিশনটি আরো জানিয়েছে, ইরান এখন ‘বিষয়টি শেষ হয়েছে বলে মনে করেছে’। তবে এও হুঁশিয়ারি করেছে যে, ইসরায়েলি শাসক যদি আরেকটি ভুল করে, ইরানের প্রতিক্রিয়া জানাতে আরো কঠোর হবে।

মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব লয়েড অস্টিন বলেছেন, আমেরিকা ইরানের সঙ্গে সংঘাত চায় না। তবে মার্কিন বাহিনীকে রক্ষা করতে এবং ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা সমর্থন করতে দ্বিধা করবে না।

জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস ইরানের হামলার নিন্দা জানিয়েছেন। অঞ্চলব্যাপী বিধ্বংসী কর্মকাণ্ড বৃদ্ধির প্রকৃত বিপদ সম্পর্কে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন তিনি।

রাশিয়ার ডেপুটি ইউএন অ্যাম্বাসেডর দিমিত্রি পলিয়ানস্কি টেলিগ্রাম সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপে বলেছেন, ইসরায়েলের একটি চিঠি ছাড়াও তাদের নিরাপত্তা পরিষদ ইরানের কাছ থেকে একটি চিঠি পেয়েছিল। যা তার আক্রমণটি আত্মরক্ষার অধিকার নিয়ন্ত্রণকারী জাতিসংঘের সনদ কাঠামোর মধ্যে ছিল।

পলিয়ানস্কি বলেন, এটি সতর্ক করে দেয় যে, যদি ইসরাইল জবাব দেয়, ইরান আরো শক্তিশালী এবং সিদ্ধান্তমূলকভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবে।

বাইডেন শুক্রবার ইরানকে হামলার বিরুদ্ধে সতর্ক করেছিলেন। একইসঙ্গে তিনি ইসরায়েলের পাশে দাঁড়ানোর অঙ্গীকার করেছেন।

বহুদিনের বৈরিতা থাকলেও এই প্রথমবারের মতো ইসরায়েলে সরাসরি হামলা করলো ইরান। সিরিয়ায় ইরানি কনস্যুলেটে হামলার পাল্টা জবাব হিসেবে এই হামলা করলো দেশটি। 

ইসরায়েলের দাম্ভিকতা ভেঙে দেওয়ার জন্য ইরান হিসাব-নিকাশ করে এই আক্রমণ করেছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

দৈনিক জামালপুর
দৈনিক জামালপুর